এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:০৭- আজ: সোমবার-২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:০৭- আজ: সোমবার
২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

নারী: দীর্ঘশ্বাসে খসে পড়া প্রজাপতির পাখনা

ড. নূর সালমা জুলি

কাইস, কির্স, কিন্টার

নীরবতা…

আলোর বর্ণমালা অনায়ত্ত বলে

ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকি

আর

চোখের তারায় কেবল একমনে নেচে যায়—

মাঠের পারের দূরের দেশের বহুরঙা প্রজাপতিটা।

(নূর সালমা জুলি)

বাতাসের প্রবহমানতা, জলের স্বচ্ছতা, বৃক্ষরাজির পারস্পরিক আলাপন, প্রজাপতিদের ওড়াউড়ি—এমন কিছুর মাঝ দিয়ে বয়ে যায় সময়। চলমান সময়ের হাত ধরে মানুষেরা ঘর বানায়। অনির্দিষ্টতায় ভরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেই বানিয়ে তোলা ঘরে তারা আমন্ত্রণ জানায় সুখ, স্বস্তি আর শান্তিকে। আর এদের সঙ্গে মনের কখনো সচেতন কখনোবা অচেতন প্রশ্রয়ে জায়গা দেয় কতকগুলো বানিয়ে তোলা নিয়মকে। যা কালের চক্রে নিয়ম থেকে অনিবার্য প্রথায় রূপান্তরিত হয়ে জাতীয় জীবনে মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়। সমাজ কাঠামোর এসব নিয়ম ব্যক্তিমানুষের স্বার্থকে রক্ষা করবে এটাই কাম্য। কিন্তু এই নিয়মের বেড়াজালে যখন মানুষ আটকে পড়ে, নাভিশ্বাস উঠে তার তখন প্রশ্নেরা মিছিল করে আসে। প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ নিজেকে প্রভুর আসনে বসিয়ে নারীকে করেছে আজ্ঞাবহ দাস। অথচ সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস বলে এর নির্মাণে উভয়ের সমান ভূমিকা রয়েছে।

 

অনেকে তা স্বীকারও করেন। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। প্রতিদিনের ঘরকন্নার জীবনে নারী কেবল ‘অপর’ হয়ে রয়ে যায়। এই ব্যাপারটা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রক্ত সঞ্চালনের মতো হয়ে গেছে। তাই নারীর মানবীয় সত্তাকে পুরুষ যেমন মানতে চায় না, নারীও তেমনি এই কাঠামোর মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে গিয়ে নিজেকে অনুভব করার বোধ হারিয়ে ফেলে।

 

আমাদের জীবনাচরণ আমাদের মস্তিষ্ক তথা চিন্তনের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে, কতক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণও করে। সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষার আলো নারীর চিন্তনের ক্ষেত্রে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। মানুষের পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্মে মানুষের মর্যাদা না পাওয়ার ব্যাপারটা নারী উপলব্ধি করতে শুরু করে। অবশ্য কোনো কোনো পুরুষও এক্ষেত্রে নারীর সহযাত্রী হয়েছে। তবে সমাজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে লড়াইটা নারীর। আর এই লড়াইয়ে নারীর অপর পক্ষ পুরুষতন্ত্র এবং এই মানসিকতা ধারণকারী নারীও।

 

আধুনিক নারীচিন্তকদের পুরোধা বলে যাঁকে অভিহিত করা হয় তিনি মেরি উলস্টোনক্রাফট (১৭৫৯-১৭৯৭)। ফরাসি বিপ্লবের ফলে যখন সাম্য, মৈত্রী আর স্বাধীনতার বাণী ইথারে ইথারে ভেসে বেড়াচ্ছে ঠিক তার তিন বছর পর মেরি লিখলেন A Vindication of the Rights of Woman.

 

 

নারীমুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে যে বইয়ের (A Vindication of the Rights of Woman)প্রকাশ অধিকার প্রশ্নে নারীর সংগ্রামী পথ চলার আনুষ্ঠানিক সূচনা বলে স্বীকৃত। যেন এর ভেতর দিয়ে একটি লিখিত ইশতেহারে ম্যারি ডাক দিয়েছিলেন এক অলিখিত বিপ্লবের। (খানম, ২০২১ : পৃ. ০৭)

 

মাত্র আটত্রিশ বছরের জীবনে মেরিকে সহ্য করতে হয়েছে ‘বৈরী সামাজিক পরিবেশ, বিরোধপূর্ণ পারিবারিক আবহ, প্রকট দারিদ্র্য’। তবে এসবের মাঝে থেকেও মুক্তি ও জ্ঞানের অদম্য আকাঙ্ক্ষায় তিনি যাপন করেছেন এক ঝোড়োগতির জীবন। ছয় সপ্তাহের একাগ্র সাধনায় লেখা হয় এই নারীবাদী আন্দোলনের বীজগ্রন্থটি। মেরি সামাজিক রীতিনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। নারীর জন্য তৈরি করা কাঠামোর বাইরে বের হয়ে এসে নারীর বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কথা বলেছেন। এগুলো থেকে দূূরে রেখে নারীকে অসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে সমাজ অবিবেচকেরই পরিচয় দিয়ে আসছে। একই পদ্ধতিতে নারী ও পুরুষের জীবন গড়ে ওঠা উচিত এমন সিদ্ধান্ত দেন তিনি। একটা যুক্তিবাদী, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্ধকার থেকে আলোয় নারীর সংগ্রামী যাত্রায় তাই একটি উল্লেখযোগ্য নাম মেরি উলস্টোনক্রাফট।

অন্যদিকে ইংরেজি ভাষার অন্যতম প্রধান লেখক ভার্জিনিয়া উল্ফ (১৮৮২-১৯৪১) তাঁর A Room of Ones Own (1929)গ্রন্থে নারীর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অন্তরায়ের দিকে আলো ফেলেন। ‘উপন্যাস ও নারী’ বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন ‘নারীরা শেক্সপিয়র লিখতে পারে না।’(উল্ফ, ২০১৯ : পৃ. ৪৬) কারণ নারীদের নেই নিজস্ব কামরা এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। মূলত এ দ্বারা তিনি নারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে বুঝিয়েছেন। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখতে গেলে প্রয়োজন অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত পূর্ণ স্বাধীনতা। অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতা ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করে। দৃষ্টির সীমানার বাইরে দেখার জন্য মনের যে চোখ প্রয়োজন এবং তা দেখে ভাবা ও প্রকাশের জন্য যে বুদ্ধিদীপ্ত মননের প্রয়োজন, পুরুষতন্ত্র সেটা নারীকে দেয় না। এবং না দিয়েই বলে নারীর দ্বারা কোনো বড়ো কাজ সম্ভব নয়। রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২) তাঁর প্রায় সব লেখাতে কমবেশি নারীর অবহেলিত হওয়ার প্রসঙ্গ এনেছেন এবং এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেছেন। তিনিও মনে করেন নারীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটলে তার প্রতি অবমাননা কমে যাবে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। তিনি ‘সুবেহ সাদেক’ প্রবন্ধে বলেন:

আমরা ভূমিষ্ঠ হইয়াই শুনিয়াছি যে, আমরা জন্মিয়াছি দাসী, চিরকাল দাসী, থাকিব দাসী।

. . .

আমাদিগকে “নাকেসুল আকেল” বলিয়া দুনিয়ার সমস্ত দোষ আমাদের স্কন্ধে চাপানো হয়। আমরা মূক বলিয়া কোন কালে এইসব অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করি নাই। আমাদের প্রতি পশুর ন্যায় ব্যবহার করা হয়, আমরা তাহাতেই গৌরব বোধ করি। (রোকেয়া, ১৯৯৯ : পৃ. ২৩৯)

এবং এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেন এভাবে:

শিক্ষা বিস্তারই এইসব অত্যাচার নিবারণের একমাত্র মহৌষধ।…  শিক্ষা অর্থে আমি প্রকৃত সুশিক্ষার কথাই বলি; গোটা কতক পুস্তক পাঠ করিতে বা দু’ছত্র কবিতা লিখিতে পারা শিক্ষা নয়। আমি চাই সেই শিক্ষা—যাহা তাহাদিগকে নাগরিক অধিকার লাভে সক্ষম করিবে, তাহাদিগকে আদর্শ কন্যা, আদর্শ ভগিনী, আদর্শ গৃহিণী এবং আদর্শ মাতারূপে গঠিত করিবে! (রোকেয়া, ১৯৯৯ : পৃ. ২৪০)

এখানে একটা বিষয়ে আমাদের খটকা লাগে। শিক্ষার বিষয়টা তো বুঝলাম কিন্তু ‘আদর্শ কন্যা, আদর্শ ভগিনী, আদর্শ গৃহিণী এবং আদর্শ মাতা’ বলতে রোকেয়া আদতে কী বুঝিয়েছেন? রোকেয়া যে সময়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সে সময়ের পরিবেশ বিবেচনায় এনে বিষয়টা দেখা যেতে পারে। আজ থেকে সোয়া’শ বছর আগে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভারতীয় সমাজে মুসলিম পরিবারে শিক্ষার আলো সে অর্থে প্রবেশ করেনি। সেখান থেকে বের হয়ে এসে রোকেয়া তাঁর চেনা সমাজের প্রতিবন্ধকতার দিকে আঙুল তুলেছেন। এটাকে গুরুত্ব দিতেই হবে। তবে তাঁর দেখার মধ্যে পুরুষতান্ত্রিক একটা কাঠামোর প্রতিচ্ছায়া বিদ্যমান ছিল, যেটা হয়তো তাঁর নিজস্ব টাইমফ্রেমের জন্য। আর এ কারণেই আদর্শ নারী হয়ে ওঠার ব্যাপারটা তাঁকে মোহগ্রস্ত করে রাখতে পারে। যদিও আজকের দিনেও রোকেয়াকে বেশ আধুনিকই মনে হয়। তিনি কূপমণ্ডূক এক সমাজের মধ্যে বসবাস করে সেখান থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এটা তাঁর গভীরতলসঞ্চারী চিন্তা ও সাহসিকতার প্রকাশ নিঃসন্দেহে।

সমাজে নারীদের অল্পজ্ঞানী বা অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন বলে যে হেয় করা হয় এ বিষয়ে উনিশ শতকের এই জনপদের নবজাগরণের প্রাণপুরুষ রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) তাঁর ‘সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বাদ’ প্রবন্ধে বলেন:

স্ত্রীলোকের বুদ্ধির পরীক্ষা কোন্ কালে লইয়াছেন, যে অনায়াসেই তাহাদিগকে অল্পবুদ্ধি কহেন? কারণ বিদ্যা শিক্ষা এবং  জ্ঞান শিক্ষা দিলে পরে ব্যক্তি যদি অনুভব ও গ্রহণ করিতে না পারে, তখন তাহাকে অল্পবুদ্ধি কহা সম্ভব হয়; আপনারা বিদ্যা শিক্ষা জ্ঞানোপদেশ স্ত্রীলোককে প্রায় দেন নাই, তবে তাহারা বুদ্ধিহীন ইহা কিরূপে নিশ্চয় করেন? (রায়, ১৯৭৩ : পৃ. ২০২)

এমন করে কেউ কেউ বলেন বলেই অতি অন্ধকারেও দু-একটা আলোর রশ্মি আশা জাগিয়ে রাখে। জীবনকে, জীবনের পাঠকে আরও একবার গড়ে নেওয়ার ইচ্ছে জাগে। আমাদের বিশ্বাস সকল কোমলতা বুকে ধারণ করে নারী কেবল এই ভেবে এসেছে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সবকিছু ভেঙে পড়লেও আবার তা গড়তে উঠেপড়ে লাগে। জীবনকে শতধারায় ফুটিয়ে তুলতে চলে তার নিদারুণ তপস্যা। গৃহকে আর গৃহের বাসিন্দাদের জীবনের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে হয়ে যায় নিঃস্ব, রিক্ত। অথচ একটা ঝরাপাতার যতটুকু মূল্য আছে নারীর ততটুকুও নেই। সে সবখানে আছে কিন্তু আসলে কোথাও নেই। এই প্রসঙ্গে নারীচিন্তকদের দৃষ্টিভঙ্গি এই আলাপে আনব। তার আগে বলে নিই সুযোগ আর অনুকূল পরিবেশ পেলে নারী কত কিছুই না করতে পারে। এ কথা অবশ্য পুরুষতন্ত্র ভাবে না বা ভাবতে চায় না।

 

আমরা তরু দত্ত আর অরু দত্ত এই দুই বোনের গল্পটা জানি। তারা ভারতীয় বাঙালি সমাজেরই নারী। অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ তাঁদের মানসগঠন ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে করেছিল প্রাণবন্ত। ফরাসি দেশে গিয়ে খুব অল্প সময়ের সে দেশের ভাষা আয়ত্ত করেন। ইংল্যান্ডেও যান। তরু দত্ত (১৮৫৬-১৮৭৭) মৌলিক কবিতা লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন, উপন্যাস লিখেছেন। ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে এসব ভাষার লেখা শুরু করেন। আশ্চর্যভাবে তাঁর লেখায় ভারতীয় বাঙালি জীবন বাক্সময় হয়ে উঠেছে। এবং তাঁর লেখায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নয় বরং গভীর জীবনবোধ প্রকট হয়েছে। মাত্র একুশ বছরের জীবন ছিল তাঁর। বলা হয়ে থাকে তাঁর মধ্যে ছিল প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য তথা সংস্কৃতিচেতনা, ফরাসিদের শিল্পবোধসম্পন্ন জীবনাভিজ্ঞতা আর ইংরেজদের অভিজাত অনুভব। চিন্ময় গুহ তাঁর ঘুমের দরজা ঠেলে গ্রন্থে বলেন:

 

তরুর ফরাসি উপন্যাসটির মুখবন্ধে ক্লারিস বাদেব (যাঁর ফরাসি গ্রন্থ ‘প্রাচীন ভারতের নারী’ অনুবাদ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখে তরু পরে তাঁর বন্ধু হয়ে যায়) লিখেছেন, সাহিত্যের ইতিহাসে এমন আরেকটিও উদাহরণ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ যেখানে এত স্বল্প সময়ে কেউ একটি বিদেশি ভাষাকে সম্পূর্ণ আত্মস্থ’ করে নিখুঁত শৈলীতে সম্পূর্ণ একটি বই লিখেছেন। (গুহ, ২০১৯ : পৃ. ৯৯)

ভারতের মাটিতে জন্মানো বাংলার কিট্সখ্যাত তরু নামের এক স্বল্পায়ু বৃক্ষ পর্যাপ্ত আলো আর বাতাস পেয়ে তরতর করে বেড়ে উঠেছিল এবং ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে সাহিত্যের আলয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছিল। রামমোহন রায় যে কথাটা বলেছিলেন তরু দত্ত সেটা প্রমাণ করেছেন। সুযোগ পেলে নারীও পারে নিজের সক্ষমতাকে প্রমাণ করতে। তরু দত্ত রূপকথার গল্পের মানুষের মতো হয়ে আছেন আমাদের কাছে। কেউ তাঁকে মনে রেখেছে, কেউবা জানেই না তার কথা। কেননা মানুষের অর্জনকে মহাকাল মনে রাখে, মানুষকে নয়। আর সে যদি নারী হয় তাহলে তো মনে রাখার কোনো কারণই নেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামোয়। না, এটা কেবল পিছিয়ে পড়া ভারতীয় সমাজের সত্য নয়—এটা প্রথম বিশ্বের দেশ ইউরোপের সমাজেও সমানভাবে সত্য। মারকুইজ অফ শ্যাতেলের কথা অনেকেই মনে রাখেনি। জাহিদুর রহিম তাঁর যখন ফুটিল কমলগ্রন্থে এই স্বল্পায়ু মহান গণিতবিদ সম্পর্কে বলেন:

 

যার নাম গণিতের জগতে খুব রোমাঞ্চকর, এমন রকস্টার গণিতবিদ গণিত কোনো দিন দেখেনি। রেনে দেকার্তের খ্যাতির মধ্যগগনে মাধ্যাকর্ষণ এবং মহাবিশ্ব বিষয়ে দেকার্তের সম্পর্কে ধারণা চুমু দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, সংশোধন করেছেন নিউটনের অনেক মৌলিক তথ্য। তার ঈর্ষান্বিত প্রেমিক ইউরোপ নবজাগরণের মহান পুরুষ ভলতেয়ারও এটা জানতেন, ‘এই গাণিতিক প্রতিভার তুলনা নেই।’ সাথে সাথে গোঁড়া ক্যাথলিক বিশ্বাসে বলেছেন, ‘শ্যাতেলের একমাত্র ভুল ছিল তিনি নারী।’

. . . ইউরোপের মধ্যযুগে বাইরের ভদ্র কোনো রেস্তোরাঁয় প্রবেশ ছিল মেয়েদের জন্য নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ সময়ে শ্যাতলে [শ্যাতেলে] মাত্র বিয়াল্লিশ বছর বয়সে মারা যাবার আগে আবিষ্কার করলেন এক অদ্ভুত ধারণা। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি একা নিঃসঙ্গ নিস্তরঙ্গ সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফায়ারপ্লেসের আগুনের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কী জানি,

 

আগুনের সম্মোহনী রং পরিবর্তন তাকে জাদু করেছিল কি না। চরম ডিপ্রেশনের মধ্যেই শুধু দেখে দেখেই আগুনের রং পরিবর্তনের সাথে তাপমাত্রা পরিবর্তন কীভাবে হয়, সেটা তিনি বুঝলেন। তাপের বিকিরণ বিষয়ে তার এই ধারণা তৎকালীন বিজ্ঞানের সব পণ্ডিতের মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছিল। (রহিম, ২০২৩ : পৃ. ২৪১)

ফরাসি আলোকিত যুগের মানুষ ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) তাঁর ব্যক্তিগত পত্রালাপে শ্যাতেলের ভূয়সী প্রশংসা করেন। যদিও তিনি ঐ সময়ের অন্যদের মতোই শ্যাতেলের নারীসত্তার বিষয়টিকে সামনে আনেন যা উদ্ধৃতির চিহ্নিত অংশে দেখানো হয়েছে। আজ শ্যাতেলে সুপ্তির অতলে হারিয়ে গেছেন। কেবল নারী বলেই হয়তো গণিতের জগতে তাঁর নাম সেভাবে উচ্চারিত হয় না।

 

সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারী ভূমিকা রেখে চলেছে। যখন তার প্রতিভা আর কাজের ঔজ্জ্বল্যে চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠেছে তখন তাকে কোণঠাসা করে রাখার সকল আয়োজন করেছে সমাজ। আমরা ফ্রান্সের সেই বিপ্লবী নারীর গল্পটি জানি। যিনি ফ্রান্সের স্বাধীনতার জন্য সম্মুখসমরে অংশ নেন এবং যথেষ্ট বীরত্বও দেখান। ইংরেজদের সঙ্গে চলা শতবর্ষী যুদ্ধে (১৩৩৭-১৪৫৩) ফ্রান্সের সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেন পুরুষবেশে এক সাধারণ কৃষক পরিবারের মেয়ে জোয়ান অব আর্ক (Joan of Arc)মাত্র ১৯ বছর বয়সে (১৪১২-১৪৩১) পরাধীন ফ্রান্সের এক অর্থে মুক্তিদাত্রী কিশোরী জোয়ান অব আর্ককে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। একবার নয়, তিন তিন বার। তারপর তাঁর দেহাবশেষ সিন নদীতে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ইংলিশ চার্চ এ শাস্তি দিলে ফ্রান্সের রাজা চার্লস তাঁকে উদ্ধার করতে আসেন না। এটাই নিয়তি। ইংরেজরা যখন জানতে পেরেছিল তাদের পরাজয়ের কারণ এই কিশোরী, তখন তারা মরিয়া হয়ে যায় তাঁকে ডাইনি প্রমাণ করতে। করেও ছাড়ে। কিন্তু পঁচিশ বছর পর পোপ তৃতীয় ক্যালিক্সটাস জোয়ানকে নিষ্পাপ ঘোষণা দেন আর পাঁচশ বছর পর ১৯২০ সালে ক্যাথলিক চার্চ জোয়ানকে একজন সেইন্ট ঘোষণা করে। এখন তাঁর মৃত্যুদিন ৩০ মে ক্যাথলিকরা উদযাপন করে এই ভেবে যে জোয়ান ফ্রান্সের জাতীয় বীর। কিন্তু তাতে কী? ইউরোপের এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধ সমাজের ছবি আমাদের শিহরিত করে। নারীকে তার বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে ডাইনির অপবাদ দেওয়ার সেই দৃশ্য এই পৃথিবীতেই অভিনীত হয়েছে।

 

এমন গল্প হয়তো আরও লুকিয়ে আছে ইতিহাসের অন্ধকার কোঠরে। এত সব কালো, অনভিপ্রেত বাস্তবতার মধ্য দিয়ে জীবন কাটায় অনেক নারী। আর এটা একজন জোয়ানের গল্প না। আসলে ঘরে ঘরে এমন জোয়ানদের দেখা যায় যারা প্রতিনিয়ত পুড়ে মরে কখনো দৃশ্যমান আগুনে কখনো অদৃশ্য আগুনে।

 

প্রাচ্যদেশেও বারবার নারীকে বহুবিধ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং হচ্ছে। সমাজ আজ অবধি ইচ্ছেমতো নারীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে, তার আত্মমর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। সেই পৌরাণিক কালে সতীত্বের পরীক্ষা কেবল একা সীতা দেয়নি—এই মানসিকতা এখনো অক্ষুণ্ন আছে সমাজের ভেতরে। কিছুটা রকমফের হয়েছে হয়তো। মহাভারত-এ দেখা যায়, ‘দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্র ধ’রে সবলে টেনে নেবার উপক্রম করলেন। লজ্জা থেকে ত্রাণ পাবার জন্য দ্রৌপদী কৃষ্ণ বিষ্ণু হরিকে ডাকতে লাগলেন। তখন স্বয়ং ধর্ম বস্ত্রের রূপ ধ’রে তাঁকে আবৃত করলেন।’(ব্যাস, ২০১১ : পৃ. ১৪৩) পুরাণের দ্রৌপদীর এই বস্ত্রহরণ পালা হস্তিনাপুরেই শেষ হয়নি। আজও চলছে সে পালা। পার্থক্য কেবল এটুকু কোনো কৃষ্ণ এসে এখন আর দ্রৌপদীদের সম্মান রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করেন না।

 

পুরাণের এসব গল্পকে হার মানায় অন্ধকারাচ্ছন্ন ভারতীয় সমাজের এক সাহসী নারী নাঙ্গেলি। মাত্র দুশো বছর আগে ভারতের কোনো কোনো অংশে নিম্নবর্ণের হিন্দু নারীদের স্তন ঢেকে রাখার অনুমতি ছিল না। ব্রাহ্মণ তথা উচ্চবর্ণের নারীরা তাদের স্তন ঢাকার অনুমতি পেত। আর নিম্নবর্ণের কোনো নারী তার শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ঢাকতে চাইলে তাকে কর দিতে হবে, যা Breast Tax বা Mulakkaram নামে পরিচিত ছিল। ১৮০৩ সালে নাঙ্গেলি নামে নিম্নবর্ণের এক হিন্দু নারী তাঁর স্তন আবৃত রাখেন এবং কর দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু কর সংগ্রহকারী তাঁকে বাধ্য করলে নাঙ্গেলি আত্মঘাতী হবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাঁর স্তন দুটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে কলাপাতায় মুড়ে কর সংগ্রহকারীর হাতে দেন। এর কিছুক্ষণ পর অধিক রক্তক্ষরণে নাঙ্গেলি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আসলে তাঁর রক্তক্ষরণ স্তন কাটার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। সমাজের এই অন্যায়ের প্রতিবিধান করার ক্ষমতা তাঁর মতো সামান্য নারীর জন্য সহজ ছিল না। ফলে জীবনই তাঁকে দিয়ে দিতে হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত স্বামীও আত্মঘাতী হন। এই ঘটনার পর স্তন কর বন্ধ হয়ে যায়। যদিও দক্ষিণ ভারতে ১৮৫৯ সালে এটা নিয়ে অর্থাৎ স্তন আবৃত করা নিয়ে এক রক্তক্ষয়ী দাঙ্গাও হয়। নাঙ্গেলিরা নিম্নবর্ণের নারী বলে তাদের সম্মানের কোনো দাম

 

নেই। এই নাঙ্গেলির আত্মাহুতি কিন্তু একটা অসভ্য প্রথাকে বিরোধিতা করার জন্য নয় কেবল বরং একভাবে এটা নিজের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যও। তাও সমাজ বলবে নারীরা তেমন বড়ো কোনো কাজই করে না। অথচ কী আশ্চর্য! ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রজীবন সর্বত্র নারী ভূমিকা রেখে চলেছে সমানভাবে।

 

ভারত উপমহাদেশে নিকট অতীতে ঘটে যাওয়া তেভাগা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা সমাজ দেখেছে। ইলা মিত্র, কল্যাণী দাশগুপ্ত, লীলা মজুমদার, রাণী দাশগুপ্ত, মহাশ্বেতা দেবী, বেলা দত্ত, বিমলা মাজি, লতিকা সেন, মণিকুন্তলা সেন, কনক মুখার্জী প্রমুখ কীভাবে জমিদার, মহাজন ও জোতদার শ্রেণির স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। মালেকা বেগম তাঁর ‘তেভাগা আন্দোলন ও গ্রামীণ নারীসমাজ’ শীর্ষক লেখায় বলেন:

 

বর্তমান শতাব্দীর তিরিশের দশক থেকে চল্লিশের দশকের মধ্যে ভারত উপমহাদেশের পশ্চিম ও পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় টংক, নানকার ও তেভাগা আন্দোলন হয়েছে। এসব কৃষক আন্দোলনে গ্রামীণ মেয়েদের ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। শুধু অংশগ্রহণ নয়, আন্দোলন পরিচালনায়, সশস্ত্র সংগ্রামে এগিয়ে আসায়, ত্যাগ স্বীকারে, শত্রুর মোকাবিলায়, সংগঠন গড়ে তোলায় কৃষক মেয়েরা যেমন শৃঙ্খলার, তেমনি সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কৃষক মহিলারা তাদের সামাজিক-পারিবারিক নিপীড়ণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়ে একই নারী সংগঠন-আন্দোলনও গড়ে তুলেছেন।

. . .

১৯৩৯ সালের দিকে রংপুর, যশোহর, মালদহ, খুলনা, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, চব্বিশ পরগনা প্রভৃতি জেলায় ‘তোলা’ ও লেখাই’-বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। সে আন্দোলনে কৃষক মহিলারা সর্বপ্রথম যোগ দিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই আন্দোলনই সূচনা ঘটায় তেভাগা আন্দোলনের।

. . .

অবিভক্ত বাংলার ১৯টি জেলার লক্ষ লক্ষ কৃষকের রক্তস্নাত তেভাগা আন্দোলনের প্রথম পর্যায় থেকেই কৃষক রমণীরা বীরত্বের সাথে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে জোতদার-জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনী ও পুলিশের সাথে। (বেগম, ২০১৬ : পৃ. ৪৯-৫২)

 

আসলে ফসল উৎপাদন থেকে তাকে খাদ্যে পরিণত করা, সন্তান গর্ভে ধারণ করা থেকে লালনপালন করা, অধিকার রক্ষার লড়াই—কোথায় নেই নারীর অকাতর, অবিরাম শ্রমের প্রকাশ? অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আফসান চৌধুরী সম্পাদিত নারীদের একাত্তর গ্রন্থে বলা হয়:

 

যে-কোনো যুদ্ধই যুদ্ধাক্রান্ত জনপদের নারীদের জন্য দুঃসহ সময় নিয়ে আসে। উনিশশ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও নিরাপত্তহীনতা ছিল নারীর জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ বাস্তবতা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস জুড়ে নিপীড়িত হওয়াই নারীর একমাত্র অভিজ্ঞতা নয়। নারী নিজে হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, আহত যোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন, নিজের সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন এবং এমন সব ঝুঁকি নিয়েছেন, যা স্বাভাবিক সময়ে কল্পনারও অতীত। (চৌধুরী, ২০২২ : কাভার পৃষ্ঠা)

 

আজকের নারীরা আত্মসচেতন হয়ে উঠছে। বলা হয়ে থাকে গত একশ বছরে মার্কসবাদকে বাদ দিলে নারীবাদ ছিল সবচেয়ে চর্চিত বিষয়। যে যাত্রাটা শুরু করেছিলেন আনুষ্ঠানিকভাবে মেরি উলস্টোনক্রাফট। লিবারেল ফেমিনিজম ধারণাটা এমন ছিল যে পুরুষতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যে থেকেই নারী তার স্বাধীনতা উপভোগ করবে। কিন্তু বিশ শতকের ষাটের দশকে এসে নারীরা আবিষ্কার করে তারা কোথাও নেই। আর থাকলেও ভুলভাবে আছে। অনেকটা ক্ষমতার সঙ্গে ব্যাপারটি জড়িয়ে যায়। তার আগে অবশ্য যুগান্তকারী বক্তব্যটা দেন সিমোন দ্য বোভেয়ার (১৯০৮-১৯৮৬) তাঁর The second Sex (১৯৪৯) গ্রন্থে। তিনি বলেন- One is not born, but rather becomes, a woman. এই যে সমাজের নারীদের নারী বানিয়ে তোলার প্রক্রিয়া এটা আজ সর্বজনীন ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এখন ভাবনাটা আরও বিস্তৃত হয়েছে। যা নারীচিন্তকদের এভাবে ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছে যে নারী-পুরুষের সম্পর্কটা Socio-Political একটা ব্যাপার এবং অবশ্যই Power বা ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত।  মার্কিন নারীবাদী লেখক কেইট মিলেট (১৯৩৪-২০১৭) তাঁর Sexual Politics (১৯৭০) গ্রন্থে দেখান নারীর যৌনতাও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানেও তার কোনো স্বাধীনতা নেই। এ ব্যাপারে সমাজ কাঠামোর বাইরে যাওয়ার তার সুযোগ নেই। তিনি সেই জায়গা থেকে নারীদের বের হয়ে আসার কথা বলেন।

 

সময়ের পালাবদলে নারীবাদী আন্দোলন চার-পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করেছে। সেসব বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমাদের এই আলাপে সেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে না। তবে এই আন্দোলনের সর্বশেষ ধাপ ইকো-ফেমিনিজমের (১৯৭০-১৯৮০) প্রসঙ্গটি আনতে চাই। এখানে বলা হয় নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে প্রকৃতির ধ্বংসের একটা সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য, প্রাণের প্রবাহকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য নারীত্বকে সম্মান করা জরুরি। প্রকৃতি ও নারীকে পরিপূরক করে বিবেচনা করা হয়। উভয়ের ওপর আধিপত্য বিস্তার জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ফরাসি নারীচিন্তক ফ্রাসোয়াঁ দ্যুবন। পরে  Karen J. Warren ইকো-ফেমিনিজমের মূল সূত্রগুলো উপস্থাপন করেন। তাঁর মতে- পিতৃতন্ত্র নারী ও প্রকৃতি উভয়ের দূরবস্থার [দুরবস্থার] জন্য দায়ী।’(ইসলাম, ২০১৯ : পৃ. ১০৪) এসব হয়তো এখন আধুনিক চিন্তকগণ ভাবছেন কিন্তু এটা তো সেই সৃষ্টির আদিকাল থেকেই চলে আসছে। তখন আমাদের নারীর এই ভূমিকাকে দেখার চোখ তৈরি হয়নি। যা স্বাভাবিক, সাবলীল তাই সুন্দর তাই কাম্য—একে উপেক্ষা করে জীবন অতিবাহিত করা যায় না। আরেকটি প্রসঙ্গের অবতারণা করা যেতে পারে এই সূত্র ধরে। আমেরিকান দার্শনিক ও লিঙ্গবিষয়ক চিন্তক জুডিথ পামেলা বাটলার (জ. ১৯৫৬)-এর লেখা জেন্ডার বিষয়ক বইগুলো বিশ্বব্যাপী জেন্ডার স্টাডিজের পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়। জুডিথ বাটলার তাঁর Gender Trouble (1990), Undoing Gender (2004) এমন সব বইয়ে বলতে চেয়েছেন নারীর লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্য আসলে তার নিজস্ব কোনো ব্যাপার না বা সর্বজনগ্রাহ্য কোনো ব্যাপার না। এটা সামাজিকভাবে নির্মিত একটা ধারণা যেটা পুরুষতন্ত্র তৈরি করেছে। নারীর ভূমিকা এবং জেন্ডারসংক্রান্ত বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, সংস্কৃতি এসবে ঢুকে গেছে। রাজশ্রী বসু তাঁর নারীবাদ গ্রন্থে নারীবাদের চতুর্থ তরঙ্গ (Fourth Wave Feminism)নিয়ে বলেন:

এই তরঙ্গের মূল বৈশিষ্ট্য হল যে বিভিন্ন অধিবেশনের মাধ্যমে বা Website-এর মাধ্যমে এই নারীরা নিজেদের মধ্যে অত্যন্ত সক্রিয় যোগাযোগ বজায় রাখে। এরা আগের তরঙ্গগুলির চেয়ে নিজেদের পৃথক বলে মনে করে এবং বলে যে তাদের সক্রিয়তায় ক্রোধের চেয়ে আনন্দ বেশি থাকে। ব্যক্তি নারীর স্বার্থের চেয়ে সমষ্টি নারীর স্বার্থ এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বস্তুবাদের চেয়ে আধ্যাত্মিকতাবাদ বেশি শক্তিশালী। এই তরঙ্গের অন্যতম প্রবক্তা সাহিত্যিক Carol Lee Flenders বলেন যে, When you get Jewish, Catholic, Buddist, Hindu and Sufi women all practising their faith in the same room, another religion emerges, which is feminine spirtituality.(emy, 2022 : c„. 40

 

এখানে নারীর সমষ্টিগত স্বার্থের বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আসলে আমাদের অভিব্যক্তি বা আচরণ সামাজিক নিয়মের অধীন যা পুরুষতন্ত্র দ্বারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।

 

এবারে একটা ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করা যাক। বব লুইস-এর ফেমিনিস্ট প্রোপাগান্ডা বইটিতে কথিত নারীবাদের ইতিহাস, বিভ্রান্তি ও মিথ্যাচার নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তাঁর মতে, নারীবাদ, পুরুষবিদ্বেষ, পশ্চিমাসংস্কৃতির কূটকৌশল—পরস্পর সম্পৃক্ত এবং এসব আদতে নারীদের কল্যাণে কাজ করে না। আমাদের বিবেচনায় নারীবাদের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পুরুষবিদ্বেষ ছড়ানো কোনো ঠিক কাজ নয়। নারী ব্যক্তিমানুষ হিসেবে সমাজে কতটা প্রতিষ্ঠিত—এমন বিষয় নিয়েই এই আলাপ। আমাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভব বলে, কোথাও একটা শূন্যতা রয়ে গেছে। একটা বিশাল ফারাক। যেটা পূরণের জন্য নারী ও পুরুষের সমান মনোযোগ দরকার।

 

শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, চিন্তনের মাত্রাগত পরিবর্তন, সচেতনতা এমন সব আধেয় আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কতটা প্রভাব বিস্তার করে? আদৌ করে? হয়তো করে কিংবা না। কিন্তু সময়ের চাকায় ভর করে জীবন তো কেটে যায়। আর প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যায় স্বপ্নেরা। একই সমতলে দাঁড়িয়ে নারী ও পুরুষ। মাথার ওপর নক্ষত্রখচিত আকাশ—যেখানে উড়বার স্বাধীনতা কেবল পুরুষের। নারী যদিওবা সেই আকাশটা দেখে ফেলে তাতেই দোষ হয়ে যায় আর ওড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে মাথার ওপর অনেক আকাশ ভেঙে পড়ে। চিন্তার দৈন্যভাব আমাদের এতটা পিছিয়ে রেখেছে যে একসঙ্গে এত এত বছর থাকার পরও নারী ও পুরুষে সে অর্থে সখ্য গড়ে ওঠেনি। খুব গভীরভাবে লক্ষ করলে স্পষ্ট দেখা যাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবে উভয়ের জীবন হয়ে চলেছে বিষাদময়। পুরুষ হয়তো ভেবেও দেখে না তার পৌরুষত্বের মূল জায়গাটা কোথায়, তার অহংকারের উৎস কোথায়। নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা কোনোদিক থেকেই তার দুর্বলতার প্রকাশ হতে পারে না। অথচ আমাদের সামাজিক কাঠামো পুরুষকে কঠোর হওয়ার শিক্ষা দিতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে অমানবিক করে তোলে। আর নারীকে কোমলতার শিক্ষা দিতে গিয়ে মেরুদণ্ডহীন করে তোলে। উভয়ের গঠনে তাই শুরু থেকেই রয়ে যায় বিশাল ফাঁক। এই শূন্যতা ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন যখন তারা নিজেরা পরিবার গঠন করে। আর এসব যুগের পর যুগ ধরে হয়ে আসছে। পারিবারিক কাঠামোয় এসে পুরুষটি হয়তো কোনোভাবে জোরজবরদস্তিমূলক একটা জীবন পার করে দেয়। অধিকার বোধের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকে। নারীকে পেছনে ফেলে একবুক অতৃপ্তি নিয়ে জয়ী হওয়ার নিরানন্দময়তায় ভরা এক পোশাকি আনন্দ উপভোগ করে। অনেকে আবার এ থেকে এক ধরনের পৈশাচিক উচ্ছ্বাসও অনুভব করে। কী পেল সেটাকেই বড়ো করে দেখে। কী হারালো সেটার কথা ভাবেই না। অদ্ভুত পুরুষের জীবন! জয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার ফলে সে বুঝতে পারে না যে এক বিশাল পরাজয় তাকে পাহাড়ের চূড়ার মতো নিঃসঙ্গ করে চলেছে ক্রমাগত।

 

আর নারী আপাতভাবে সমাজবাস্তবতার বলি হয়। তার বিত্ত, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, স্বপ্ন সব পুরুষতন্ত্রের কাছে জিম্মি। তাই হারতে হারতে একটা সময় ভুলতে বসে তার নিজস্ব সত্তা। কেউ কেউ ভোলে না। কারাগারসদৃশ জীবনেও দু-একটা ঝরোকা খুঁজে পায়। সেখান থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এসে তাকে কানে কানে বলে যায় ‘তুমি মানুষ’। সকল কোমলতার  আধার এক একজন নারী। তাই হাওয়াদের কানাকানি থেকে একটুকু সান্ত্বনা নিয়ে নিজেকে ঢেলে দিতে পারে সকলের জন্য। বারবার নিঃস্ব হয়, রিক্ত হয়। বুকের মাঝে অনবরত ক্ষরণ হতে থাকে। অনুভবগুলো নদী হয়ে যায়। যাদের জন্য নিজেকে আর নিজের স্বপ্নকে অল্প অল্প করে মেরে ফেলে নারী আর তারা যখন বিরূপতা দেখায় তখন কেবল বুক ফেটে বেরিয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। যে দীর্ঘশ্বাসে তার সব কথা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, খসে পড়ে প্রজাপতিদের পাখনা, ঝরে যায় অস্ফুট কলিরা, পাখিরাও ডাকতে ভুলে যায় ক্ষণিকের জন্য। কেবল একরাশ বাউল বাতাস আচমকা মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যায়। অসময়ে ঝরে যাওয়া পাতাদের কান্নার রেশ ইথারে ইথারে ভেসে বেড়ায়…

 

 

ঋণস্বীকার

উলস্টোনক্রাফ্ট, মেরি(২০২১)। নারীর ভাগ্যজয়ের অধিকার। মোবাশ্বেরা খানম অনূ.। ঢাকা : সুবর্ণ।

উল্ফ, ভার্জিনিয়া(২০১৯)। নিজের একটি কামরা। আলম খোরশেদ অনূ.। ২য় পরিমার্জিত মু.। ঢাকা: সংহতি।

রোকেয়া, বেগম(১৯৯৯)। রোকেয়া রচনাবলী। আবদুল মান্নান সৈয়দ, সেলিনা হোসেন ও অন্যান্য সম্পা.। নতুন সং.। ঢাকা : বাংলা একাডেমী।

রায়, রামমোহন(১৯৭৩)। রামমোহন রচনাবলী। ডক্টর অজিত ঘোষ সম্পা.। কলকাতা : হরফ প্রকাশনী।

গুহ, চিন্ময়(১০১৯)। ঘুমের দরজা ঠেলে। ৪র্থ মু.। কলকাতা : আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

রহিম, জাহিদুর(২০২৩)। যখন ফুটিল কমল। ঢাকা : আদর্শ।

ব্যাস, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন(২০১১)। ‘সভাপর্ব’, মহাভারত। রাজশেখর বসু অনূ.। ৩য় মু.। ঢাকা : নবযুগ প্রকাশনী।

বেগম, মালেকা(২০১৬)। ‘তেভাগার আন্দোলন ও গ্রামীণ নারী জাগরণ’, তেভাগার নারী। চিররঞ্জন পাল সম্পা.। ২য় প্র.। কলকাতা : র‌্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন।

চৌধুরী,আফসান  সম্পা.(২০২২)। নারীদের এশাত্তর। ঢাকা : দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।

ইসলাম, মাহমুদা(২০১৯)। নারীবাদী চিন্তা ও নারী জীবন। পু. মু.। ঢাকা : নিউ এজ পাবলিকেশনস।

বসু, রাজশ্রী(২০২২)। নারীবাদ। ৪র্থ মু.। কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ।

 

এছাড়াও…

লুইস, বব(২০২২)। ফেমিনিস্ট প্রোপাগান্ডা। ফারিহা মায়মুনা অনূ.। ঢাকা : গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস।

বাল্মীকি(২০১৩)। রামায়ণ। রাজশেখর বসু অনূ.। ৪র্থ মু.। ঢাকা : নবযুগ প্রকাশনী।

আজাদ, হুমায়ুন(২০১১)। নারী। ৩য় স.। ঢাকা : আগানী প্রকাশনী।

বোভেয়ার, সিমোন দ্যা(২০১৯)। দ্বিতীয় লিঙ্গ। হুমায়ুন আজাদ অনূ.। ৭ম মু.। ঢাকা : আগামী প্রকাশনী।

ভ’ঁইয়া, আনোয়ারুল্লাহ(২০১৯)। প্রতিবেশ—নারীবাদ তত্ত্ব ও অভিজ্ঞতা। ঢাকা : গ্রš’কুটির।

 

Joshua J. Mark, `Joan of Arc by John Everett Millais’, World History Encyclopedia, https://www. worldhistoryencyclopedia.org> Joan of Arc, 28 Mar, 2019

কে এম হাসান, ‘নাঙ্গেলি: প্রোক্রাস্টিজের বিছানায় প্রজ্জ্বলিত পুরাণ’, জীবনের বিজ্ঞান,

https://kmbd.wordpress.com.bd>article, 12 Dec, 2022

নাহিদা নিশি, ‘কেট মিলেট-এর লৈঙ্গিক রাজনীতি : শিক্ষিত এবং কর্মজীবী নারীরা যেভাবে পিতৃতান্ত্রিক হয়ে ওঠে’,  Bangladesh Nari Progoti Sangha, https://bnps.org>journal, Visited on 03 Jan, 2024

Julie Bindel, `Kate Millett Obituary’, The Guardian, https://www.theguardian.com>, 07 Sep, 2017

Kevin Harrison, Tony Boyd, `Feminism’, ResearchGate, https://www.rasearchgate.net>, 15 Mar, 2020

Haradhan Kumar Mohajan, `An Overview on the Feminism and Its Categories’, https://www.rasearchgate.net>, 30 Jul, 2018

নাজিফা তাবাসসুম, Feminism (bvixev`)Õ, Dbœqb Abya¨vb, unnayanonudhyan.home.blog, 12 Feb, 2021

bvixev`, evsjvwcwWqv, bn.banglapedia.org, 02 Feb, 2015

FEMINISM

নারীবাদ, বাংলাপিডিয়া, bn.banglapedia.org, 02 Feb, 2015

FEMINISM : নারীবাদ।

http://www.mkc.ac.in>pdf, visited on 02 Jan, 2024

ড. রাজিয়া খানম লাকি, পরিবেশ নারীবাদ : একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ’, Bangladesh Nari Progoti Sangha, https://www.bnps.org>journal, visited on 03 Jan, 2024

পরিবেশ নারীবাদ’, medbox.iiab.me, https:// medbox.iiab.me>kiwix> পরিবেশ নারীবাদ, visited on 01 Jan, 2024

ইকোফেমিনিজম বা পরিবেশ নারীবাদ’, MONDRO, https://mondro.org> 23 Dec, 2020

 

Jules Gleeson, `Judith Butler : we need to rethink the category of woman’. Interview taken by Jules Gleeson. The Guardian, www.theguardian.com, 07 Sep, 2021

Anna Szorenyi, `Judith Butler : their philosophy of gender explained’, The Conversation, https://theconversation.com>judith, 19 Oct, 2022

মাহজুবা তাজরি, প্রসঙ্গ : জুডিথ বাটলার’, অনন্যা,  https://anannya.com.bd>article, 12 Jun, 2022

 

ড. নূর সালমা জুলি, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী

অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না

শোয়েব নাঈম শব্দের মধ্যেই থাকে জীবনের আসল দর্শন। শব্দের কারণেই মানুষ হয় নির্বাসিত। এখন মঙ্গলের অমরতায় ঘামছে গ্রীষ্মের বৈশাখ মাস। মঙ্গল এই শব্দবোধে যতটা কল্যাণ

চীনের মতো আমাদেরও ভাবা উচিত

আমির হোসেন চীনে ফেসবুক, ই’নস্টাগ্রা’ম, ইউটিউব, গুগল, গুগল ম্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ, এমনকি ক্রোম ব্রাউজারও ব্যান! শুরুতে শুনে বিরক্ত লাগলেও এখন বুঝতে পারছি- ওরা আসলে অনেক আগেই

গল্পশূন্য জীবনের ইতিকথা

আন্দরকিল্লা ডেক্স : আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন। থাকতেন মাটির কাঁচা ঘরে। অর্থাভাবে-অন্নাভাবে কখনও-সখনও উপোসও করতেন। পরতেন মলিন পোশাকপরিচ্ছদ। আমাদের বাবারা চাইলেন আমরাও যেন

সংস্কার চাই : চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন

নিখিল রঞ্জন দাশ সম্প্রতি চট্টগ্রাম এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামকে আগামী ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনকে দেয়া হবে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজনে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের ৬০

চল্লিশ বছর পর জীবনের প্রথম প্রেম আবার ঝড় তুলল মৈত্রেয়ীর জীবনে “মির্চা, মির্চা আই হ্যাভ টোল্ড মাই মাদার দ্যাট ইউ হ্যাভ কিসড মাই ফোরহেড'”

নহন্যতে উপন্যাসে মৈত্রেয়ী দেবীর এই উক্তি টি অবশ্যই পাঠকদের মনে আছে? মির্চা এলিয়াদ আর মৈত্রেয়ী দেবীর প্রেম কি শুধুই প্রেম ছিল নাকি সেই সাথে কিছু