এখন সময়:রাত ৯:০৫- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৯:০৫- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

পদাবলি অক্টোবর ২০২৩

উভয়সঙ্কট

আমিনুল ইসলাম

 

ভয় ছিলÑ

স্বপ্নের ভূগোল থেকে হারিয়ে যাবে শ্রাবণের নদী

পোয়াতিধানের মাঠ

চাঁদনীরাতের মেঘ-ছায়া আড়াল;

 

ভয় ছিলÑ

মনের ভুলে খুইয়ে ফেলবো দুঃখহীনতার সূত্র

পথের মাঝে-পথ-না-হারানোর চোখ

ঘুমের মধ্যে-ঘুম-না-ভাঙার মন্ত্র;

 

ভয় ছিলÑ

হাত ফস্কে হারিয়ে যাবে লাল বিকেলের চাবি

তোমার আঁচলে ঘুড়ি উড়ানোর হাওয়া

আমার দুর্বলতার গা-জড়ানো নাক্ষত্রিক চাঁদর।

 

আমাকে ঘিরে ছিল সতর্কতার চোখ

আমাকে ঘিরে ছিল আহ্নিকগতিক পা

আমাকে ঘিরে ছিল চলিতনিয়মের চাল।

 

আমাকে ছেড়ে গেছে ভয়

আমাকে ছেড়ে গেছে দোটানা

আমাকে ছেড়ে গেছে সন্দেহ।

 

এখন আমার হিসাবের খাতা ধরে টানে প্রবাদ বাক্যের কুলো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ঊর্ধশির মানুষেরা এখন ক্লান্তশ্রান্ত

সাথী দাশ

 

ঊর্ধশির মানুষ ইদানিংকালে বিরল প্রজাতির মতো;

হয়তো বা আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আনাচে-কানাচে।

হয়তো বা কোথাও পারিতোষিকতার ছায়া-অন্ধকারে

লেপ্টে-চাপ্টে নিজের মধ্যে নিজেই যেন সময় কাটায়।

না-না ওরা কেউ কিন্তু দলদাস নয়,লক্ষ্যভ্রষ্ট অসহায়।

ওদেরও বিবেক আছে,বুদ্ধি আছে,আছে মন। আছে

শুদ্ধচিন্তক হিসেবে মনের গভীরতা। এখন কিছুই নেই।

কারো সাথে কারো ঐকতান নেই। নাম জানলেও কেউই

পরিচয় সূত্রে পরিচিত নয়। ওরা চোখে দেখে কানে শোনে

ওটাই ওদের শ্রেণিস্বার্থগত সুবিধাবাদের প্রাকস্তর।

দেশ ও রাষ্ট্রের উৎসমূলে যাঁরা অংশীদারিজন, প্রকৃত

রাষ্ট্র ক্ষমতায়নে ঘটক-অনুঘটক,তারাই তো মানুষ।

ওরাইতো ঊর্ধশির; যারা এখন ক্লান্ত-শ্রান্ত অবহেলিত।

 

 

==================

 

পাখিরা যাবে কোথায়

হোসাইন কবির

 

গ্রামগুলো শহর হলে

পাখিরা যাবে কোথায়!

কিছু চড়ুই না হয়

আলোকোজ্জ্বল শহরের অলিতে গলিতে

বাগানবিলাসের লতায় পাতায় ঝুলে

নিদ্রায় অনিদ্রায় পার করবে রাতের প্রহর।

 

গ্রামগুলো শহর হলে

যে মানুষ গ্রামের আলপথে

শিস দিয়ে বাজাতো পাতার সানাই,

সে মানুষ তাহলে কী পাখি হবে

পরিযায়ী পাখি, নিরুদ্দেশ যাত্রার।

 

একদিন গ্রামগুলো শহর হবে,

মানুষের শেকড়-বাকড়

শোভা পাবে প্রতœশালায়।

কেউ কী যাবে কুড়োতে আর

মানুষের প্রাকৃত জীবন

শোকার্ত পাখির পালক!

 

গ্রামগুলো শহর হলে

একই দারিদ্র্য রেখায়

নগর-ভাগাড়ে

ঠাঁই পাবেÑ

বেওয়ারিশ কুকুর

নাগরিক পাতিকাক

রূপান্তরিত মানবপ্রাণ

ভাঙ্গারির টোকাই।

 

গ্রামগুলো শহর হলে

আউল বাউল মাটির মানুষ আর পাখিরা

যাবে কোথায়!

কিছু চড়ুই না হয়

আলোকোজ্জ্বল শহরের অলিতে গলিতে

বাগানবিলাসের লতায় পাতায় ঝুলে

নিদ্রায় অনিদ্রায় পার করবে রাতের প্রহর।

 

 

 

 

 

 

 

========================

 

 

জিরাফ, গলা বাড়িয়ে দাও

সাজিদুল হক

 

জিরাফ, গলা বাড়িয়ে দেখো একবার

উলঙ্গ সব মানুষের অরক্ষিত মানচিত্র।

শৈশবে খেলনার বন্দুক দেখিয়ে

আদিবাসীদের করেছে সম্ভ্রমহীন

পেছনে ফেলে খাঁ খাঁ ইগবো গ্রাম

কুমারী মাতারা ছুটে পর্বতচূড়ায়

সূর্যদেবীর উপাসনায় শস্যের খোঁজে;

কল্পকাহিনিতে যা পাবে,

বর্ণমালাহীন ভেঙেপড়া পতিতের গল্প

উপবাসীরা বর্ণবিবাদে বিবরবাসী

মুক্ত হাওয়ার ফরাসি উপনিবেশে;

আব্রাহাম নিহতের বহু বছর অতিক্রান্ত

শীত ছুঁলে ভাষা পাবে বসন্তের কোকিল

ক্রীতদাসকে শেখানো হয়েছে

বসন্ত শুধু একটি রোগের নাম

হাসি মিলায় পাতা ঝরার শব্দে

এরা আজও জানে না কী অপরাধ

বিপ্লবীদের একাংশ গলা কাটে

প্রতিবিপ্লবীরা দেয় নতুন ব্যাখ্যা

সেলাই করা মুখের নির্বাক ভাষা

কখনো কী বুঝে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা?

 

 

 

 

 

কবজ

রওশন রুবী

 

বিগত দিনের মতো পাপ আছে আমার গায়ে,

তুমি তার সবটা ধুয়ে একটা শিশু হবার কবজ দাও ঈশ্বর!

সমগ্র তল্লাটে ধোঁয়া আর কমলা জিহ্বার তাপ।

ক্রন্দনশীল বাতাস মানুষ পোড়া গন্ধ চটকে-জীবন,

কৈবর্তের জনবিদ্রোহের মতো হ্যাংগারে ঝুলছে জামা-

ফি জানুয়ারি টু জুন তারপর তারপর-

শকুনের গলা দিয়ে নামছে না আর;

একটা কবজ পেলেÑ

এই গুমোট শ্মশান, কবরের পাঁজরে পুষ্প জন্মাবো।

 

 

 

 

===========================

 

আত্মনিপীড়ন

সেলিনা শেলী

 

যে অসুখ রেখেছি পুষে

সুখের চেয়েও দাপুটে তার শ্বাসকণা!

পথে যেতে যেতে পায়ের গীতল গর্তে

নকশামহিমার নিচে

অযুত আয়ুর বয়ান –

ইচ্ছামৃত্যুর মতো আমাকে পোড়ায়!

শামুকের জামা গায়ে –

নিঃসঙ্গ চলি

বিন্দুর বৃত্তরেখা মুদ্রায়

ক্রমাগত নিজের দিকেই চলি।

অসম্পূর্ণ উপাখ্যান

নুসরাত সুলতানা

 

খেয়াল করুন,

খেয়াল করুন কমরেড

দয়া করে খেয়াল করুন।

কত কত ভীড়ে- বাসে, লঞ্চে, রাস্তায় আমরা হুড়মুড় করে চলেছি;

কত  কত অযুত প্রহর।

কতজন পুরুষ এসে ভীড় ভাট্টায়ও চেপে

ধরেছে স্তন?

কিংবা হাত পুরে দিয়েছে নিতম্বে।

নেহাৎই অল্প কজন কীটপতঙ্গ

তাদের পুরুষ না বলে বরং কাপুরুষ বলুন।

কত কত দিন কত পুরুষ

নিজে উঠে গিয়ে বসতে দিয়েছে একজন প্রৌঢ়াকে।

পুরুষবিদ্বেষী বোনসকল-

একবার ভাবুন – প্রতিবেশীর বাড়ির আগুন

কে ছুটে গিয়ে নেভায়?

কে গোপাল চন্দ্রকে শ্মশানে নিয়ে যায়?

কিংবা আক্কাস আলীর জানাযা পড়ে

কে কবরে দাফন করে?

পুরুষ, পুরুষ এবং পুরুষ।

অবলীলায় যে কাঁধে তুলে নিয়েছে সমাজ -সভ্যতার সকল ভার।

তাঁকেও কাঁদতে দিন বোন, মা।

তাঁকেও কাঁদতে দিন -প্রেয়সী কিংবা স্ত্রী।

মুছে দিন চোখের জল।

বলুন- প্রিয় তোমার হাসি হাসনুহেনার মতো সুরভী ছড়ায়।

বলুন- তুমি ছাড়া আমি কেবল এক অসম্পূর্ণ উপাখ্যান।

 

 

 

 

==========================

 

 

গুপ্তখিল

নিলয় রফিক

 

রোমশহরে চোখের কলরব প্রেমের বাগান

ফুলের শরীরে দৃষ্টি, চোখাচোখি দৃশ্যের পলক

অচেনা পাঁজরে ঘুরি, ক্লান্তদেহ সুগন্ধি বাতাস

আকাশ পথে সাঁকোর পারাপারে ভাবের দোলক।

 

সবুজের লালবৃত্তে ইতিহাস, আমার শেকড়

শব্দ বড়শিতে গেঁথে পো নদীতে জলের মগ্নতা

টানমেরে মৎস্যকন্যা অন্দরমহলে বৃক্ষ শোভা

কাব্যিক সংলাপে রথে সৃজনতলায় স্বপ্ন লতা।

 

অসময়ে পাখি ডাকে প্রমত্ত ডেরায় নৃত্য ডুবি

চাঁদ-সূর্য, দূরত্বের কথাবলে, অতলে গভীরে

খুলে দাও গুপ্তখিল স্বর্গের উঠোন, চোখে দেখি

সীমানা পারে নজর, কৌশলে আড়ালে ভিন্ন তীরে।

আমিও প্রাক্তন হব

আ ন ম ইলিয়াছ

 

তার অপেক্ষা করিনা কেউ,তবু

তার কাছে যাব বলে হাঁটি,

আয়ুর ক্ষয়ে ঝরা পালকের মত ঝরছে

দিন, মাস,ফি-বছর।

রক্তাভ ভ্রুণ থেকে নিয়ত যাচ্ছি তার কাছাকাছি।

 

অদৃশ্য থেকে যায় অনেক কিছু

স্মরণে বিস্মরণ ঘটায় আলগোছে,তবু

অস্তিত্বের চৌকাঠে টোকা দেয় নিয়ত।

 

দিনের চক্রে চেনা পথে হাঁটি-

অচেনা উত্তরপুরুষের পদচ্ছাপে

যারা আজ প্রাক্তন।

বর্তমান আমি, বেদনায় জমেছে

স্বঘন টুটা স্বপন জীবনের হালখাতায়

অপ্রকাশে যন্ত্রণার আকর হয়ে।

 

অতঃপর নতুনের কোলাহলে চেনা পথে

আমিও অচেনা হব একদিন

তার স্বাদে হব প্রাক্তন।

 

 

 

 

 

 

==========================

 

 

শুভ মহরত

শঙ্খশুভ্র পাত্র

 

আমাকে মোহর দেবে চন্দ্রাবলী? কবিতার মোহ

মোহনাকে ছোঁয় যদি আপত্তি তোমার কোনও আছে?

সমুদ্র মূদ্রিত চোখে শোণিতে জাগিয়ে তুলি দ্রোহ,

আমাকে জানো না তুমি, স্বপ্নে তবু প্রেম আজও বাঁচে।

 

চন্দ্রাবলী কবিতার, বৃষ্টিমাখা ছবিটার মন

আমাকে  উতলা করে। আমি তাই ভ্রমণের সার।

ভ্রম বশে উদাসীন! ক্ষুধা-তৃষ্ণা জীবন ধারণ

অন্ধকারে ছন্দ পায় অভাবিত মধু-জ্যোৎস্নার…

 

চন্দ্রাবলী, জানি সে মোহর, মায়া… প্রকাশের টান।

একান্ত দুর্লভ বটে! বটচ্ছায়া, স্নেহের অধিক

নিবীতে বিনীত হলে কোথা লাগে অভিনীত-গান!

তোমার কিরণে যেন রিনিঝিনি সুর পায় দিক।

 

চন্দ্রাবলী, সাধে বলি, শ্রীরাধায় অমেয় শপথ

প্রেমে তো থাকবে বাধা, তার পর শুভ মহরত…

 

 

 

 

 

========================

 

বেখেয়ালি আলাপন

রুহু রুহেল

 

মূল্যায়নের ঘুড়িতে জমছে বেশ জং

করুণ রাগিনী বাজে মৌনতাত ঢঙ

অযোগ্যদের মর্দনে চাপা পড়ে যোগ্য সব

পূঁজিবাদী বিশ্ব উড়ায় স্বৈরচারী ঝা-া

মূল্যবোধের পি-িতে তঁ’শার  উনুন

ক্ষয়রোগ ধরেছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষয়টি অর্বাচীন নয়!

নিকটজনের ভেতরে চেতনার চাষবাস

সৌম্য চেতনার কলকব্জায় জমেছে কড়িকাঠ ঘুন!

সৃষ্টির দুয়ারে কড়া নেড়ে চলছে  কর্ষিতের বীজ

ভাবনার  রাশি জমতে জমতে ঘিরে আছে কুয়াশা ঘোর

যত অন্ধকার হোক খুঁজে বেড়ায় আলোর  প্রদীপ্ত ফোয়ারা

আঁধার ও আধেয়ের ঘরে  চলছে বেখেয়ালি আলাপন।

শ্যামল চত্বরে কাম্য আজ

উদ্দীপিত হোক; উদ্দীপনার নব উজ্জ্বীবন!

 

 

 

 

 

===============================

 

 

অন্যরকম ভালোবাসা

শারমীন আফরোজ

 

একদিন আমি তোমার শহরে বেড়াতে যাবো।

সারাদিন রিক্সায় হুট ফেলে টইটই করে ঘুরে বেড়াবো-

বিকেল বেলায় নদীর ঘাটে বসে সূর্যাস্ত দেখবো,

নদীর জলে পা ভেজাবো,

হাত ভিজিয়ে ঠোঁট ছোঁয়াবো।

ইচ্ছে ছিলো-

তোমার হাত ধরে তোমার শহর দেখবো।

 

ইচ্ছে ছিলো–আমার নরম হাতে একটু ছুঁয়ে দেবো তোমার শহরটাকে।

একটু ছুঁয়ে দিবো তোমার এলোমেলো চুলগুলোও,

একটু ছুঁয়ে দেবো তোমার ঘর-

ঘরের দরজা-জানালা-পর্দা-বিছানা-বালিশ গুলোও।

তোমার সবখানে আমি থাকবো খুব গোপনে।

ভুল করে ফেলে রেখে আসবো তোমার বিছানায়,

আমার চুলের ক্লিপ-কপালের টিপ-কানের দুল অথবা হাতের চুড়ি।

আর তুমি সেগুলো অনেক যতœ করে তুলে রাখবে,

সে আমি ঠিক জানি।

রোজ ওগুলো হাতে নিয়ে ছুঁয়ে দেখবে,

আমার ইচ্ছাকৃত ভুল গুলো ঠিক বুঝবে তুমি,

মিটি-মিটি হেসে বলবে, পাগলী একটা।

কিন্তু তা আর হলো কই ?

 

তাই আমি একাই একদিন গিয়ে

একটু ছুঁয়ে দিয়ে আসবো তোমার শহরটিকে।

আমার স্পর্শ থাকবে শহরের অলিতে গলিতে আনাচে কানাচে,

যেখানে যেখানে তুমি যাবে,

তোমার মনে হতে থাকবে- আমি হয়তো এখানেও এসেছিলাম।

সারাদিন তোমার শহরটা ছুঁয়ে দেবার পর

রাতের বেলা আবার আমি ফিরে আসবো আমার শহরটাতে।

তারপর থেকে,

তুমি আর ঐ শহরে একা থাকবেনা কখনও-

তোমার সাথে আমিও থাকবো সারাক্ষণ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

==========================

 

 

 

টাকা জীবন টাকা মরণ

উৎপলকান্তি বড়ুয়া

 

টাকা টাকা হায়রে টাকা টাকার বড় দাম

টাকার জন্য ঢের কিসিমে ফেলে মাথার ঘাম।

এই না টাকা বাবা চাচা এই না টাকা খালু

এই না টাকা দিয়ে তো হয় অচলরাও চালু।

টাকা হাসায় টাকা ভাসায় টাকা ফাঁসায় কলে

এই টাকাতেই পার পেয়ে যায় ছলে বলে কৌশলে।

এই টাকাতেই চেয়ার-গদি এই টাকাতেই মান

এই না কথা শুনে বুঝি হলেন পেরেশান?

পেরেশানের নেইরে কিছু আসল কথা হলো

এই টাকাতে কালোও হয় রূপ-রঙে ঝলমলো।

টাকার জোরে সব কিছু হয় অর্ধেকও হয় গোটা

টাকার পিছে তাই সারাদিন উর্দ্ধশ্বাসে ছোটা।

টাকার কাছে মাথা নত টাকাওয়ালার দাম

টাকা ছাড়া শূন্য সকল বৃথাই তো সুনাম!

টাকার কাছেই নমঃ নমঃ বিশিষ্ট সে জন

টাকার গুণেই অপাঠ্যের হয় সৃষ্টি আলোড়ন।

টাকার নেশায় আসক্তজন পতিত হয় পাপে

টাকায় পেশীর শক্তিখানাও বাড়ে ধাপে ধাপে।

টাকার অহং-অনলে ছাই প্রতিপক্ষের খাঁচা

টাকার কাছেই ইচ্ছে-হাতের পুতুল হয়ে নাচা।

টাকার জন্য সকাল দুপুর সন্ধ্যা পুরো রাত

কন্যা দায়গ্রস্থ পিতার হায়রে মাথায় হাত।

এই টাকাতে সর্বজন গণ্য হয়ে ওঠা

টাকার জন্য পণ্য হয়ে হন্য হয়ে ছোটা।

 

টাকার জন্য খুন-খারাবি টাকার জন্য গুম

এই না টাকাই কাড়ে চোখের স্বপ্ন সুখের ঘুম।

টাকাই সহজ নেতাগিরি বাবু গিরিও বটে

এই টাকা বুমেরাং হয়ে নেয় টেনে সংকটে।

কালো টাকার হাত ধরে হয় আলোর পথে চলা

টাকার জোরে মিথ্যেটাকেও বাড়িয়ে বলে গলা।

টাকায় আপন ইচ্ছে যাপন টাকায় জমে খেলা

টাকায় রাখে ঠিক বসিয়ে দিব্যি সারাবেলা।

টাকাতে রমরমা কাজের পত্রিকাতে ছবি

টাকার জোরে অযোগ্যরাও শিল্পী গায়ক কবি!

টাকাতে রাত দিন হয়ে, যায় পশ্চিম হয় পুব

টাকা-ই হাসি খুশি সকল টাকা-ই আপন খুব।

টাকায় হাসা ভালোবাসা টাকায় কেনা খ্যাতি

টাকায় গড়া সম্পর্ক টাকায় মহান জ্ঞাতি।

টাকায় ওড়া টাকায় ঘোরা টাকায় চলার পথ

টাকা কালো, হোক না সাদা টাকাই ভবিষ্যৎ!

টাকার জোরে রাঙিয়ে গলা গায় বেসুরো গান

টাকার গরম হাওয়ার জোরে অপাত্রে হয় দান।

টাকার জোরে দূরত্বটাও হয় নিমিষে কাছে

টাকার জোরেই অথর্ব সে মঞ্চে উঠে নাচে।

টাকায় রীতি টাকায় নীতি টাকায় ভীতি জাগা

টাকার প্রেমে অন্ধ প্রেমিক দিলেতে পায় দাগা।

টাকার জন্য বরখেলাপি ভুল-ওয়াদা-পণ

টাকার জন্য নিখাদ খাঁটি প্রেমের বিসর্জন।

 

টাকার জন্যেই জেনে শুনে ভুল মন্ত্র পড়া

এই টাকারই জন্যে কেবল বসকে মালিশ করা।

টাকায় কেনা মিথ্যে-সঠিক টাকাতে জিত-হার

টাকাতে চার পাশে ঘেরা চামচা চাটুকার।

টাকার জন্য কাজ-চাকরি বেতন মাসের শেষে

এমনিতে কেউ কাউকে টাকা দেয় নারে তো এসে।

টাকার জন্য বেহায়াপনা ভয়ও বুকে কম

টাকার জন্য নিলজ্জতার সীমা অতিক্রম।

টাকায় পাওয়া যায় আসমান চাঁদ ধরা দেয় হাতে

টাকার গুণে সূর্য ওঠে নিশিথ কালো রাতে।

টাকার জন্য নিষিদ্ধ সব উপড়ে ফেলা কাঁটা

টাকার জন্য বন্ধ পথের অন্ধ গলি হাঁটা।

টাকার গুণে চাকার গতি বাড়ে এবং কমে

টাকার গুণেই স্বচ্চ মনে লোভের মধু জমে।

টাকার গুণেই মজবুত হয় সম্পর্কের ভীত

টাকার গুণেই গনেশ উল্টে হীতে বিপরীত।

 

টাকার গুণেই ফাঁকা বুলির কদর দেখি বেশ

টাকার গুণেই সৃষ্টি সুযোগ শুরু এবং শেষ।

টাকার গুণে চেয়ার-আসন মান সম্মান কৃতি

টাকায় তবে যায় না কেনা বিবেক ও সম্প্রীতি।

টাকার হাতেই লেনা দেনা টাকার হাতেই বল

টাকার গুণেই ঝরে সুখের ঝরনা অনর্গল।

টাকার হাতেই ফুলের তোড়া সম্মাননা প্রীতি

টাকার গুণেই সাহস,কাটে দুর্ভাবনা-ভীতি!

টাকায় আসে খুশির খবর সুখ-বৃষ্টি ঝড়

টাকায় চেনা যায় বিপদে আপন এবং পর।

টাকার জোরে রূপের চমক ঝলক ঝলোমল

টাকার জোরেই সত্যটা হয় মিথ্যা অনর্গল!

টাকার জোরে চামচিকা ও অমনি মারে ল্যাঙ

টাকার জোরে বিষাক্ত সাপ তার দেখা যায় ঠ্যাঙ

টাকার জোরেই দুর্গন্ধ নিমিষে হয় সাফ

টাকার গুণেই পাঁচ ছয় সাত খুন হয়ে যায় মাফ!

 

টাকার জোরে বাচ ও বিচার দুঃখ সুখের বেলা

টাকার জোরেই গুণ-বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলা।

টাকার জোরে প্রেম-পিরিতি ভরসা মনের জোর

টাকার জোরেই যায়রে খুলে নিষিদ্ধ সেই দোর।

টাকায় পাওয়া যায়রে আসন ভাষণ চেয়ার গদি

টাকাতে যায় উল্টে গনেশ বশ করা যায় যদি!

টাকার জোরেই ঘুমায় সকাল দুপুর বিকেল রাত

টাকার জন্য লকলকে হয় সর্বনাশের হাত।

টাকায় চলন বলন-কথন সকাল থেকে রাত

টাকার জন্য ঝগড়া-বিবাদ মিথ্যে অজুহাত!

টাকার জন্য ফুরসৎ নেই ফেলতে খানিক দম

টাকার মোহেই বাঁকা সড়ক হচ্ছে অতিক্রম!

টাকার নানান রূপ তো, এখন টাকার উৎস তেল

টাকার গতি চপলমতি ভানুমতির খেল।

টাকা-ই জীবন টাকা-ই মরণ টাকা-ই আপন সব

টাকার-ই হাত ধরে ঘটে চলে সকল আনন্দ উৎসব।

টাকার পাগল, তার তো সদা টাকার প্রতি ঝোঁক

টাকার ঘ্রাণে অমনি দেখি মরাও খোলে চোখ।

টাকা-ই সকল টাকা ছাড়া সবই অচল ফাঁকা

টাকার জোরেই ঘোরে বুঝি এই দুনিয়ার চাকা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

=======================

 

 

ধীরে বয়ে যাক

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্

 

চোরায়নের গতিপথ যখন অধরা,

বাণিজ্যের খাঁচাতলে

শংকার ছানাগুলো ম্রিয়মাণ,

 

বাঁকা চোখের নিমীলিত দৃষ্টি,

ছায়াগুলো জাপটে  ধরে প্রায়শই।

গতিশীল পরমাণুর অন্তর্নিহিত

উপমাটা ধরতে গিয়ে হয়রানির শিকার কলমে

আস্থাটা অবিচল।

মূল্যবান লেখার সারণীতে

উদ্বাস্তু হওয়া হিসেব-নিকেশ

একদিন ঝড়ের তা-ব চালিয়ে গেছে।

 

 

 

 

=======================

 

 

 

 

 

চরের কাব্য

বিদ্যুৎ কুমার দাশ

 

কালো পাখি শাদা জল নিশি চরে,

আঁধারের ছায়ারঙ নড়ে চড়ে।

 

এই- জলে রাত হলে মাছ নাচে

দিবাভাগে চরটা তো কতো কাছে;

 

রাত্তিরে তালে তালে ছায়া কাঁপে

কালো মাছ শাদা জলে ধাপে- ধাপে।

 

জল খাই দোল খাই ডুবে যাই-

শত শত মৎস্যের জলে ঘাই।

 

কালো পাখি শাদা পাখি নিশি – চরে

উড়ে যায়, ঘুরে যায় চরাচরে।

 

 

 

 

 

 

 

=====================

 

প্রিজম পিচ্ছিল দিন

নুরুন্নাহার মুন্নি

 

অভিমানের কারখানায় কাজ চলছে হরদম

প্রিজমে পেরিয়ে গেছে পিচ্ছিল দিন

ইন্দ্রিয়গুলো নিউরণ বিচ্ছিন্ন ভূমিতে গড়াগড়ি খায়

আতুঁড়ে স্বভাব প্রেমের নির্লজ্জতা প্রগাঢ় হয়

তালরসের মাতাল জৈষ্ঠ্য রোদ ঠোঁট চিনায়

চোখের নেশা চিনায় ভুলভাল পথ চিনায়

প্রশস্ত বুক মখমলি চাদর চিনায়

অতঃপর

রাতঘুম শেষে ক্যাফেইনে ক্যাফেইনে দাঙ্গা বাধে।

 

====================

 

 

রাইসুল হকএর

এক পশলা হাইকু

 

খুঁটে ও বেছে

নিলো ঠোঁটে পাখিটা

পালক ঝেড়ে

 

জোটে না ঘাস

জোট ভাঙা বলদ

সর্বত্র ত্রাস

 

কানা কড়িটি

তবুও চক্ষু শোকে

সাগর পাড়ি

 

গাধার ঘোরে

ঘোলা জলে শিকার

পিপাসা পানে

 

প্যাঁচালি প্যাঁচা

ঘুঘুর চালাকিতে

ফিঙেই রাজা

 

ঘ্রাণে সুদূর

অদূরে ফোটে শত

পাহাড়ি ফুল

 

ভোঁতড় ষাঁড়

কাদা মাটি জড়ানো

শিঙে বাহার

 

ছানা পোষ্য মা

ষোলো কলা হরিণী

দুধে পূর্ণতা

 

শিউলি রাতে

কি সাধে ফোটে ফুল

ঝরে প্রভাতে

 

আলোর মুখে

হুনো কালো বিড়াল

গেল ভড়কে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

==========================================

 

 

ঝিনুকমন নীল জলে ভাসে

রুদ্র সাহাদাৎ

 

ঝিনুকমন নীল জলে ভাসে হাসে না কোনো জলেমন

নৈঃশব্দ্যে সমুদ্রপাঠ প্রকৃতি কাঁদে ঝাউবনে বিরহী সুর শুনছি তাই

আমি জাইল্ল্যার পুত পেয়ে হারানোর যন্ত্রণায় গান গাই

বৃষ্টি পড়ে ভূম-লজুড়ে নদীজল স্থলে, বৃষ্টি পড়ে বাড়ির ছাদে আঙিনায়

বৃষ্টি পড়ে চোখের পাতায়,বৃষ্টি পড়ে গালে

বৃষ্টি পড়ে রাজপথ মেঠোপথ পাড়া-মহল্লা অলিগলি-

পানিবন্দি বত্রিশ কোটি পা

আচমকায় ম্যানহোলে ভেসে ওঠে অজ্ঞাত ভাইয়ের লাশ

কে যেনো বলে ওঠেন টেলিভিশনের টকশোর পর্দায় আমাগো সচেতনতার বড্ড অভাব….

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

=======================

 

বিক্রি করো দুঃখ বিলাস

মোহাম্মদ আবদুস সালাম

 

সব দায়িত্ব নিলে পরে

বলবে একদিন ‘কি করেছ?

আমার যত দুঃখ ছিল

সবতো তুমি বাড়িয়েছো!’

 

নিজের পালক উজাড় করে

রেখেছিলে যতœ করে

উড়তে শেখার পরে বললো

‘ভরসা ছিল নিজের ‘পরে।’

 

উপর ওঠার সিঁড়িটাতো

সামনে তাহার দিয়েছিলে

বলতে গিয়ে কী অপমান

একদিন তুমি হয়েছিলে!

 

থাকার একটি ঘর করেছো

তোমার জায়গা অবরুদ্ধ

মুক্ত বাতাস পাওয়ার আশায়

চলছে  এখন জীবনযুদ্ধ।

 

মানুষ করছো আপন ভেবে

থাকবে তোমার সুখে দুখে

সেই মানুষটি কথা শোনায়

ভয়ংকর রূপ চোখে মুখে।

 

কী আর করবে এখন তুমি

সুন্দর নীড়ে দুখের আবাস

আপন জনের বেসাতিতে

বিক্রি করো দুঃখ বিলাস।

 

 

 

 

 

======================

 

ফুল

রাইহান নাসরিন

 

সকল ফুল কি,

যায় দেবতার অর্ঘ্যে

বাসর ঘরের ফুলশয্যা,

নববধূ পায় লজ্জা

ভালোবেসে প্রিয়ার খোঁপায়,

পরিয়ে দেওয়া ফুলটি

অমূল্য তার দামটি

 

ভালোবাসার অর্ঘ্য নিয়ে,

একুশ সাজে ফুলের সাজে

বসন্ত সাজ মিলায় সবাই,

বাসন্তী রঙ ফুলের সাথে

 

ভালোবাসার দিবসটিতে,

ফুলের কদর যায় যে বেড়ে

এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে,

দুরু দুরু বুকে

মনের কথা জানায় প্রিয়াকে।

 

গুনীজনের সংবর্ধনা,

ফুল ছাড়া যায় না ভাবা

সেমিনার বা আলোচনায়,

টেবিলেতে ফুল থাকা চাই

নেতা নেত্রীর আগমন

ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা স্বাগতম।

 

স্বাধীনতা বিজয় দিবস

শহীদ স্মৃতি স্মরণ করি

ফুলের সাথে শ্রদ্ধা মাখি

গুনীজনের শেষ বিদায়ে,

শ্রদ্ধা জানাই ফুল দিয়ে।

 

পীর ফকিরের মাজার গুলো,

ভক্তের ফুলে  ভরা

পূজার আসন হয় না ভরা,

ফুলের সাজি ছাড়া

জন্ম মৃত্যু শোকে,

ফুল আছে সকল কাজে।

 

তবুও  বলি,

জগত জোড়া ফুলের এতো বন্দনা

বারবনিতার খোঁপার ফুলের ,

হয় কি তুলনা?

 

 

 

 

 

===================

 

শুকনো পাতা

টিপলু বড়ুয়া

 

জীবনটা…

ঠিক শুকনো পাতার মতো

ঝরে পড়ে সময়ে অসময়ে

শিশুকালে সবুজ আবরণে

স্নিগ্ধ পাতারা হাওয়ায় দোলে

যৌবণের ছোঁয়ায় সবুজ পাতারা

একে অপরের সাথে প্রেমের গল্প বলে।

 

কিন্তু একদিন…

ভবলীলা সাঙ্গ করে

সবুজ পাতারাও ঝরে পড়ে,

শাখা-প্রশাখার সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে

মাটিতেই লুটায়ে পড়ে।

 

জীবনটা…

ঠিক শুকনো পাতার মতো

ঝরে পড়ে সময়ে অসময়ে।

সবুজ রঙে রঞ্জিত দেহ ছেড়ে

ছুটে চলে আপন ঘরে।

 

=====================

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে