হাতছানি
শঙ্খশুভ্র পাত্র
উৎসাহ হারিয়ে গেছে তেমন সাহসী নই, ভীতু
সেই এক ঢঙে লিখি বাস করি পুরাতন গৃহে
ভাঙা টঙে হুড়মুড় করে ঢোকে পাজি হিমঋতু
ভীষণ মিথ্যুক আমি, তোমাকে বলি না কেন ‘প্রিয়ে’,
এই অভিমানে তুমি ভুলে গেলে সম্পর্কের মানে
এমন মানিনী তুমি, ভিজে চোখে আড়ালেই থাকো
কী যে করি! নিজেকে বুঝি না ছাই, কবিতার টানে
এখনও পাগল হই- তোমার ছায়ায় গড়ি সাঁকো
একবার ডাকো কাছে আদরে ভরুক নিরিবিলি
বিলি কেটে দেবে চুলে- মনে-মনে কত যে আহ্লাদ
পেয়ে বসে, তুমি তার জানবে কি! তারা-ঝিলিমিলি
অন্ধকারে ছন্দ নিয়ে বসে আছে সোহাগিনী-চাঁদ
এসব ভাবনা নিয়ে তোমাকেই লিখে ফেলি, রানি
পারানি কোথায়? নাও স্রোতে ভেসে যায় হাতছানি…
———————-
চাষার ছেলে আবির
ওলি মুন্সী
সবজি ক্ষেতে শাইল জমিনে বাবার সাথে কেটে
শুকনো কাদা দুর্বা ঘাসে যাচ্ছে আবির হেঁটে
করতে পারে চারা রোপণ বাইতে পারে হালও
ধরতে পারে টেংরা পুঁটি ফেলে ঝাঁকি জালও।
কাটতে পারে নদীই সাঁতার অথৈজলে ডুবও
ঘাসের মাঠে পাল ছড়িয়ে গাইতে পারে খুবও
ঘুরতে পারে সকল পাড়ায় করতে পারে বাজার
সেই ছেলেটা মাটির মানুষ গ্রামীণ কোন রাজার।
শ্যামল বরুণ সেই ছেলেটায় মুগ্ধ গ্রামের সবি
লিখতে জানে ছন্দ-ছড়া আঁকতে পারে ছবি
কুস্তি লড়তে সেই বাজিমাত গায়ের পেশির বলে
দুধ কলা মাছ খেয়ে ঘুমায় মায়ের আঁচল তলে।
এই ছেলাটার কারগুজারে ভাববেন নাকো চাষি
বাবার সাথে শিখছে এসব পড়ার পাশাপাশি।
——————
মানুষ
নেহাল হাফিজ
(আমার ভাই, আমার পাসওয়ার্ড, কবি হেলাল হাফিজের দু’চরণে)
ইচ্ছে করলে কতকিছুই হতে পারতে
“ইচ্ছে” শব্দটিরও ইচ্ছে ছিল তুমি কিছু হও।
স্রোত ছিল অনুকূলে, সময়ও ছিল
অনেক কিছু হওয়ার পক্ষে। কিন্তু
ওসব কিছুই না হয়ে, সবাই কে তাক লাগিয়ে
হয়েছো কপাল পোড়া আভাগ্যা কবি।
সেই যে একটি ঝোলা ব্যাগ কাঁধে ঘর ছাড়লে
আর ফেরা হলো না। সংসারী না হয়ে
শ্মশানের সন্ন্যাসী হলে।
তুমিই তো বলেছিলে,” মানুষ জমায় টাকা
আমি জমিয়েছি মানুষ ”
কবিতা তোমাকে অনেক দিয়েছে মানছি, কিন্তু
কম কিছু কেড়ে নেয়নি।
আজ তুমি জীর্ণ শীর্ণ ক্রুশবিদ্ধ যীশু!
কে বলবে,তোমারও পরিবার ছিল
পাশে মগড়া নদী ছিল, ঘাট ছিল
দত্ত বিদ্যালয় ছিল, বাবা ছিল, মা ছিল
সুজন স্বজন ছিল!
এখন দেখি জমানো মানুষগুলো
তোমাকে ছেড়ে যেতে তীব্র ব্যাকুল।
মানুষ তো চতুর, সুযোগ বুঝে আসে
প্রয়োজন ফুরালে যায়।
আক্ষেপ করো না কবি, যারা গেছে
তারা যাবার জন্যই এসেছিল ;
যারা আছে, তারা কবিতার প্রলোভনে নয়
কবিকে ভালবেসেছে।
যদি কোনদিন কবি হই
টাকা ও মানুষ কোনোটাই জমাবো না
আমি জমাবো” অমানুষ ”
চলে গেলে কষ্ট হয় না
মানুষ ছেড়ে গেলে কষ্ট হয়
খুব কষ্ট হয়
কষ্ট হয় খুব!
===============================
এপিঠ-ওপিঠ
নূরজাহান শিল্পী
মানুষ
বেঁচে থাকলে নাম খ্যাতি অতিরঞ্জিত প্রকাশ,
মরে গেলে এক পলকে হয়ে যায় যে লাশ।
বেঁচে থাকলে রঙিন কাপড়ে সদা থাকে সজ্জিত
মরে গেলে সাদা কাফনে হয় যে আবৃত।
বেঁচে থাকলে দামী পারফিউমে সুগন্ধ ছড়ানো,
মরে গেলে গোসল শেষে আতর অঙ্গে মাখানো।
বেঁচে থাকলে গাড়ী বাড়ি অর্থ বিত্তের বেসাতি,
মরে গেলে কেবলই সাড়ে তিন হাতের বসতি।
বেঁচে থাকলে হানাহানি অতিলোভ আর লালসা ,
মরে গেলে আফসোস হায়! বুঝে না ভালোবাসা।
বেঁচে থাকলে সমাজ সংসার তুমি- আমি প্রেমী
মরে গেলে সকলের পাপ পূণ্য আসলেই দামী।
বেঁচে থাকলে আমিত্বের লড়াইয়ে হই মুখোমুখি,
মরে গেলে প্রত্যাশার ঘর যেনো ফাঁকা না রাখি।
বেঁচে থাকলে খুঁজে বেড়াই জীবনের সকল রসায়ন,
মরে গেলে নিমিষেই রুদ্ধ করে আপনার বাতায়ন।
মান -হুশ বেচেঁ থাকতেই হারাতে যেন না হয় হুশ,
মরে গেলে না থাকে যেনো কেবলই আফসোস।
========================
শীতের দুপুর
রেজা তানভীর
শীতকাল
দুপুরবেলা
গোসলের পর
এক প্লেট গরম ভাত
সাথে টমেটো, ফুলকপি, সামান্য ঝোল
এবং একটুখানি আচার মেখে প্লেটশুদ্ধ কেঁচে খেয়ে
জানালার পাশের খাটটাতে
গায়ে কম্বল দিয়ে
শুয়ে অথবা আধশুয়ে
ঘুমানো অথবা বই পড়া
কয়জনে উপভোগ করতে পারে?
======================
জ্বলন্ত আচ্ছাদন
সুফিয়া শীলা
সময়ের পাটাতন ভেদ করে
জেগে উঠা শরীর–
বড়ই অবষণ্ন,পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত।
হেঁটে চলা নক্ষত্রের দিকে চেয়ে চেয়ে
পুড়িয়েছি উনুনের উত্তাপ,
বিষণ্ন বিবর্ণ ঠোঁট শুকিয়েছে
তৃষ্ণার্ত আবেগের তরে।
অতীতের গহ্বরে ঘুমিয়ে আছে
রঙিন কাকাতুয়া,
যার পেছনে ছুটে বয়ে গেছে
বিলাসী জীবন;
শতবর্ষী দেয়ালের সবুজ কার্পেট–
হয়ে গেছে ধূসর আকাশ,
সে আকাশে সূর্য কিংবা চাঁদ অদৃশ্য হয়ে গেছে অবহেলায়।
রক্ত জবার নরম দেহ
এখন লৌহ ইস্পাত কঠিন মমি,
মনের জ্বলন্ত আচ্ছাদনে
মিশে আছে অহর্নিশের খেলা;
ক্ষতবিক্ষত আবেগ জোছনার আলোয় হাত পাতে–
এক অজানার হৃৎপিণ্ডের আশায়,
মনখারাপ করা প্রজাপতির দল
দূর থেকে দেখে যায় সব।
=======================
হষ্টত আছি
আ ন ম ইলিয়াছ
হোয়ালর দুখ নজার আঁরার
হু- হাচ্ছুত অইয়্যি নষ্ট,
হওস গরি গাবিন হই
বিয়াতে ফাইদ্দি হষ্ট।
গোতাইল ঘরত গরু রাখি
আল ছইদ্দি ছ’লদি,
ধান ন অয়, এরছি অইয়্যি
ক্যানে গইজ্জুম ফদি!
হইয়্যুম হারে হষ্টর হথা
নিজে নিজে হইদ্দি,
দই বুলি ফইত্য বারত
হাই ফেলাইদ্দি সদি।
=========================
আমার প্রিয় জন্মভূমি
রবি বাঙালি
কোন দেশেতে ঊষার রবি
সোনার উদয় আকাশ পানে ,
কোন দেশেতে ভোর বিহানে
ঘুম কেড়ে নেয় পাখির গানে।
কোন দেশেতে নদী ছুটে
দূর সাগরের মায়ার টানে,
কোন দেশেতে ঝর্ণা ঝরে
গিরি হতে মধুর তানে।
কোন দেশেতে নদীর চরে
কাশফুলেরা হাওয়ায় দোলে,
কোন দেশেতে শাপলা শালুক
নয়ন ভরে বিলের জলে।
কোন দেশেতে বারোমাসে
ছয়টি ঋতুর ছয়টি খেলা,
কোন দেশেতে ঋতু ভেদে
রঙ বাহারী ফুলের মেলা।
কোন দেশেতে চন্দ্র তারা
ছড়ায় আলো ভুবন ভরে
কোন দেশেতে শিশু ঘুমায়
গল্প শুনে মায়ের ক্রোড়ে।
কোন দেশেতে উদাস দুপুর
মাতায় রাখাল বাঁশির সুরে,
কোন দেশেতে গোধূলিতে
আবির রাঙায় আকাশ জুড়ে।
কোন দেশেতে নদীর বুকে
নৌকা চলে রঙিন পালে,
কোন দেশেতে দিবারাতি
মাছ ধরে যায় ধীবর জালে।
কোন দেশেতে চিরহরিৎ
তরুরাজী দানে ছায়া,
কোন দেশেতে মানব মনে
সম্প্রীতি আর সাম্য মায়া।
কোন দেশেতে নীলাকাশে
মেঘ আড়ালে সূর্য্য হাসে,
কোন দেশেতে শীত সকালে
শিশির হাসে দূর্বা ঘাসে।
কোন দেশেত কালবৈশাখী
তাণ্ডব চালায় ক্ষিপ্র বেগে,
কোন দেশেতে ঘূর্ণিঝড়ে
সাগর বাতাস ওঠে রেগে।
কোন দেশেতে বছর জুড়ে
নানান ফলে নানা ঘ্রাণে,
কোন দেশেতে ভর দুপুরে
পরান ভরে কুহু গানে।
রূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি
মায়ের মতো পুণ্য তুমি,
সেই তো সেরা সকল দেশের
আমার প্রিয় জন্মভূমি।
=============================
গর্ভবতী দাসপ্রথা
এম. এ. ওয়াজেদ
পাপাচারের লজ্জিত বহ্নিমান নষ্ট গর্ভপাতে
শপথের বুদ্ধিবৃত্তিক জুগুপ্সা উৎফুল্ল গর্বিত
বিভীষিকার চিরন্তন সাম্প্রদায়িক তুষারমানব
দখল করেছে নাগরিক সভ্যতার অভিযুক্ত প্যাডেল
হিসাববিজ্ঞানের ব্যাংকনোট মেধাস্বত্বের মুনাফা
পুঁজিবাদের গাণিতিক বেশভূষা
রণসজ্জার জৈবিক পরিচ্ছদ
বিপথগামী কর্তৃত্ববাদের অবৈধ পিতৃত্ব
প্রচার করে যন্ত্রণার সুপারলেটিভ কৃতিত্ব।
বিড়ম্বনার রাসায়নিক আসক্তির পুঞ্জীভূত ব্যর্থতা
আলিঙ্গন করে শঙ্কাবাদী অস্তিত্বের উপাসনাগৃহ
বিপদসংকুল আতঙ্কিত মহাসাগরে বিচরণ করে
পঙক্তিচ্যুতির বিরহী নিঃসঙ্গ অ্যালবাট্রস
দেবনির্ভর নিঃস্ব মুসাফিরখানার পরিত্যক্তরা
অনায়াসে পান করে ঘৃতকুমারী পাতার রস
ভয়ংকর ক্ষুধার্ত পেটগুলো বিশৃঙ্খল বায়ুশূন্য প্রতিবন্ধী
মিষ্টিবচনের প্লাস্টিক বুলেটে দগ্ধ হয়
নষ্ট সভ্যতার অলংকারশোভিত নিয়ন্ত্রণের দেওয়াল।
যুদ্ধবাজের অশুদ্ধ বানান দখল করে
মৌমাছির বাসা নির্বাচিত জমির সবুজাভ দস্তানা
সৌন্দর্যের সজ্জিত বিছানার চাদর
শোভাবর্ধনকারী মধ্যরাতের আকাঙ্ক্ষিত নিদ্রা
বেড়ে চলে শোষণের গর্ভবতী দাসপ্রথা
আত্মসমর্পণের লেজবিহীন বাউন্ডুলে আওয়াজেরা
অশ্রুভারে জাবর কাটে অরক্ষিত শিবিরে
গোলকধাঁধার বিস্ময়কর ব্যারনিক উদ্ধত ডলার
সাম্রাজ্যবাদের পোশাকে চুষে চুষে খায়
ভুখা শৈবালের লিকলিকে নরম শরীর।
==================================
শীত কুমারী
কাজল নিশি
উষ্ণ রাজাকে আমার ঘরে বন্দী করে রেখেছি
দীর্ঘ নয় মাস সময় ধরে।
একদিনও স্পর্শ করিনি, দিইনি কোনো চুমু
তবু রাগ করেনি।
আজ আমি প্রচণ্ড শীতে কাঁপছিলাম
উষ্ণ রাজা ভালোবেসে বললো,
আমাকে গরম জলে ভিজিয়ে চুমু দাও
উষ্ণতার প্রশান্তিতে শরীর মন দুটোই সতেজ হবে!
অতঃপর সকাল,সন্ধ্যা এমনকি রাত নিশীতেও আমাকেই খুঁজবে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে যতোই রাত হচ্ছে
বৈরী হাওয়া ততোই বাড়ছে!
হঠাৎ চা হাতে ভাবির আগমন, ধোঁয়া ওঠা চা!
চায়ে চুমুক দিতেই শরীর সতেজ আর ফুরফুরে মন!
যেনো কুমারী ফুলে ভ্রমরের আলিঙ্গন…
===================================
কুতরুবের ভয়
শাহীন মাহমুদ
কুতরুব গিলেছে পতাকা
আলাদিনের বিস্ময়কর প্রদীপ
ছড়াচ্ছে পরিবর্তনের ধোঁয়া
বিজয়ের পেট থেকে টেনে হেঁচড়ে
আরেক বিজয়
লাল নীল পদাবলি উড়লে উড়ুক
আমার ঠিকানা লাল সবুজে আঁকা
আমার ললাটে লাল টিপ
বসনে সবুজ আলপথ
বাহামুতের হাতে লাল সবুজের তলোয়ার
উড়িয়ে পতপত ষোল কোটি নিশ্বাস
সে খানে আমার কিসের ভয়!
যতোই হোক নির্মাণ হোক বিনির্মাণ
আমার একাত্তরের বিজয়
আমার অস্তিত্ব
ধ্রুব সত্য এক
বিজয়ের মহাকাব্য।
==============================
উঠিল দীপ্ত হেলাল
সৌপর্ণ মাছুম
অমানিশা নাশ করে গগনে উঠিল দীপ্ত হেলাল
আয় ছুটে আয় মুক্তিকামী নবদূত তোলে পাল।।
হেলালদ্যুতি দিয়ে যায় ডাক
জাগে বাঁধাহীন তরি মুক্তবাক
সাগরবক্ষে বাতিঘর সে আলোক-ইন্দ্রজাল ।।
একা একা আর জোনাকসম পথ খুঁজবি কতো
কূপমণ্ডূকে সোনার জীবন হতাশায় হয় গত
কারা যাবি আয় নবদীপ দ্বীপে
নির্ভয়ে চল নিরাপদ শিপে
নিশাকর বানে আসবে সুদিন কল্লোল-মহাকাল ।।
==========================
তোমার জন্য জেগে আছি স্বাধীনতা
রওশন মতিন
এ্যাখনত জ্যোৎস্নার গ্রীবায় গাঢ় রক্তের প্লাবন,
অথচ দুঃসময়ের জানালায় খেলা করে ভালবাসার কফিন,
পতিতা সভ্যতার চোখ থেকে ঝরে যায় বেদনার গলিত দ্রবণ-
আর কতকাল চোখের জলের নিবেদনে ভেসে চলা:
আর কতকাল বুকের ভেতরে কষ্টের শেকড় ছড়াবে
আতঙ্কের ভয়াল অক্টোপাসের ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা,
মৃত্যু মুখর আগুনের কাছে পতঙ্গের কি প্রত্যাশা আছে;
আমাদের দিনগুলো ক্ষয়ে যায় ম্রিয়মান বিবর্ণ লজ্জায়,
প্রতিদিন উত্তাল জোয়ারের মতো বেপরোয়া ইচ্ছার আত্মহনন
মুহূর্তের পৃথিবীর মৃত্যু হতাশার অন্ধকূপে ডুবে যায়;
মনে হয় আমরা সবাই আস্তাবলের ভারবাহী গাধার মত
নিয়তি নির্ধারিত সীমাবদ্ধতায় ইচ্ছা মৃত্যু নিয়ে বেঁচে আছি।
আঁস্তাকুড়ের পাশের ক্ষুধার কাঙ্গাল অনাথ শিশুটির মত
অসুস্থ সমকাল স্ব-কালের ক্ষত-বিক্ষত বিধ্বস্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে
বাতাসের বিষাক্ত সীসায় ফুসফুসের অসুখ,
রাজনীতির ভাড়, বেশ্যার দালাল,
এইডস ও সস্তা দারিদ্রতার রঙ্গিন মোড়কে
অপূর্ণ শিশুর বিকলাঙ্গ হাসির মত ঝুলে আছে সারাক্ষণ,
চাপচাপ বরফ বাক্সবন্দী মুত রক্ত-শীতল রুপালী মাছেদে মত।
একদিন হারাবার নিজস্ব তাড়নায় হারিয়ে যাবে সবাই,
আমরা কি স্বপ্ন রেখে যাব আমাদের সন্তারে জন্য,
গুহাবাসী,গৃহবাসী হয়ে কার আশ্রয় ফিরে যাবো শেষ পর্যন্ত;
শুধুই কি শুনাবো রক্ত ঝরার গান, অস্ত্রের ঝংকার,
অসহায় মৃত্যুর বিলাপ আর মানবতার পরাজিত চিৎকার;
ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় প্রাত্যহিক জাগরণে পাখির ডাকে,
আমরা কি জেগে উঠবনা শুভ দিনের শুভক্ষণে,
আমরা কি খুলে দেবনা সব দরজা-জনালা বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য,
আমরা কি বুকের ভিতরে পুষে রাখবোনা শান্তির পাখিটাকে
আমরা কি ফিরেয়ে দেবনা সেই শিশুটি পরম নিরাপত্তার ঘুম-
যে আজ জেগে অসুস্থ ও উৎকন্ঠা-ব্যাকুল।
==========================
গড়মিল
সারমিন চৌধুরী
বুঝিনি জীবনের সরল পংক্তি
নিয়মের বেড়াজালে আটকে জটিল হবে
ভরসার দ্বার রুদ্ধ করতে মরিয়া হবে পরিজন,
সময়ের পরিক্রমায় বিষাদের ক্ষতে লেখাবো নাম।
হঠাৎ আস্থার বাঁধ ভেঙে গিয়ে অবিশ্বাসের ঝড়ে,
নামমাত্র সম্পর্কের জটিল উপাখ্যান ছিন্ন হয়
রয়ে যায় শুধু আনুপাতিক হিসেবে গড়মিল।
চরিত্রের বিপরীতে বলা ভুল জ্যামিতিক ব্যাখ্যা
রোজরোজই বালিশে লুকানো অগণিত দুঃখ,
মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ার সেই করুণ কাহিনী
কারো মনে উড়বার একান্তই বৃথা অভিপ্রায়,
আজীবন কারাবন্দী হতে যায় নিজের ভেতরেই।
মূল্যহীন হয় সবকিছুই ভুল মানুষের চেতনায়
রঙিন স্বপ্নগুলো পিষ্ট হয় দুঃস্বপ্নের যাঁতাকলে
সেই পশ্চাৎপদ ভুলের মাশুল দিতে দিতেই
আমি পৌঁছে যায় একদিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে;
কিন্তু আর না, আমি সফল হয় কিংবা বিফল
থাকুক অতীতের ভুলভ্রান্তি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে
তবুও আমি জন্মের প্রতিশোধে উঠে দাঁড়াবো।
=============================
নীলগিরি নীল দুপুর
বিবিকা দেব
প্রকৃতির নিমন্ত্রণে পাহাড়ের খাঁজে বসে পাতে গল্প। মুখোমুখি পাহাড়পুত্র। গায়ের গন্ধে মাতাল। ঝরাপাতা কুড়িয়ে ক্লান্ত দেহে শিলাখণ্ডে অবস্থান। আলাপ চলে রকমারি কথা দীর্ঘক্ষণ। আদিম আয়োজন থেকে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটের পথ। ঠোঁটের শুষ্কতার অনুভবে নীল জলের গভীরে আত্মার ডুব সাঁতার। পাতাদের কানাকানিতে মৌনতার নিদ্রাভঙ্গ। পাহাড়ের দ্বিখণ্ডীত প্রবাহে মাচার ফাঁকে রোদের আসা যাওয়া। অনাগত কলা মোচা উচ্ছ্বসিত উপভোগ্য জীবন। কিশোরী গায়ে খাদির ভাজে লুকানো বুনো ফুলের গন্ধ। গলায় ঝুলছে যে রূপের গহনা, তার মধ্যে নিগূঢ় প্রেমের গীত। মর্মর শব্দের গহীনে কথোপকথনের মিতালী। দুপুর গড়িয়ে বিকেল চড়ে সাইকেলে। সম্বিত ফিরে দেখি চায়ের জল ফুটছে। রেশ কাটে না, ঘুরে ফিরে পাহাড় পুত্রের সান্নিধ্যে নীলগিরির নীল দুপুর।
============================
উন্নয়ন
আবদুল্লাহ মজুমদার
রোজ ঘুম ভেঙে
সেলফোনে দেখি উন্নয়নের ম্যাসেজ।
ম্যাসেজ পড়তে পড়তে রান্নাঘর থেকে
গিন্নির উচ্চস্বরে আওয়াজ। কানে আসে—
কানে আসে– “ঘরে এটা নাই, ওটা নাই
আর, আমার নবাবজাদা আছে মোবাইল নিয়ে….”
“পেটে ভাত না থাকলে, উন্নয়ন দিয়ে কী হবে?
চাল-ডাল-তেলের বাজারে আগুন
সব্জি কেনারও মুরোদ নেই। ”
যাও- বাজারে গিয়ে এসব নিয়ে আসো।
মোবাইল দেখলে কী আর পেট ভরবে??
সম্বিৎ ফিরে এলে-
বাজারের ব্যাগ হাতে মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে গিন্নিকে আস্তে করে বলি,
আজ একটু তাড়া আছে গো। ঘরে যা আছে,
তা নিয়ে কী
আজকের দিনটা চালিয়ে দেওয়া যায় না?
===============================
মেঘবালিকা আনন্দে থেকো
আসিফ ইকবাল
মেঘবালিকার মত
বৃষ্টি হয়ে সৃষ্টি করো
জীবন জুড়ো আপন
মহিমায় নিজেকে ধরো।
আপন আলোয় এগিয়ে
যাও অজানা ঠিকানায়
সৃষ্টি রহস্যের গল্পে
নিজেকে সাজাও মায়ায়।
স্বপ্নকে রাঙ্গিয়ে নাও
আপন নিড়ের ভিড়ে
সত্যকে আগলে নাও
জীবন নদীর তীরে ।
আলোয় আলোয় সুখের
ছন্দে হোক পথচলা
জীবনজুড়ে ভালোবাসা
থাকুক ষোলকলা।
দাম্পত্য জীবনের
ফুল ফুটুক অতি সহসা
তোমাদের দুটি মন
জোড়া বাঁধুক সেই আশা।
======================
কুয়াশা ভেজা মন
টিপলু বড়ুয়া
বৃষ্টিঝরা কুয়াশা অঝোরে ঝরছে
হাঁড়কাঁপা শীতে, ভোর প্রভাতে
ভেজা পাতারাও কাঁপছে।
ঘাসে জমা শিশির কণা
ঝলমলিয়ে নাচছে।
কুয়াশা ভেজা এ মন শুধু
তোমার কথা ভাবছে।
খোলা চুলে ষোড়শীর মতো
খেজুর গাছের যৌবন-রস
বাড়ছে অনবরত।
শুকনো পাতার মিছিল দেখে
কাঁদছে বৃক্ষগুলো,
ধূসর আকাশে হঠাৎ যেন-
বইছে প্রেমের ধূলো।
কনকনে শীতে
তোমার উষ্ণতা বাড়াতে,
দু-জনে মিলে আগুন পোহাতে
সূর্য উঠার আগে
এই প্রভাতে-
আজও আমি বসে আছি
তোমার অপেক্ষায়।
কুয়াশা ভেজা মন তোমায় খুঁজে
বেলা-অবেলায়।