এখন সময়:বিকাল ৩:০২- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:বিকাল ৩:০২- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

পদাবলি (জুলাই ২০২৩ সংখ্যা)

আমার কবিতা যেন থাকে দুধেভাতে

জোর্তিময় নন্দী

 

কঠিন কবিতা লেখে সুকবি বন্ধুরা।

বেশুমার শব্দ নিয়ে জাগলিং করে

প্রতœ আর সান্ধ্য ভাষা, গিটার তম্বুরা

গলাগলি একসাথে প্রভু ও কিঙ্করে।

 

উত্তর-আধুনিক থেকে উত্তরোত্তর

শব্দভা-ার তাদের অফুরান। কত

অবলীলাক্রমে তারা এগোয় সত্বর

ভাবের উজানে কিংবা সতত সংযত

 

অনুপ্রাস, উপমালংকারে! খুব দক্ষ

ভাস্করের মত কাব্যদেহ বিনির্মাণ

করে তারা। প্রশস্ত তাদের বক্ষ

থেকে পায় কাব্যভাষা কত অভিজ্ঞান!

 

আমি কী যে লিখি ছাইপাঁশ, সে কেবল

ভগা জানে, আর জানে পালিত মার্জার।

আমার কবিতা শুধু অশ্রু ছলছল

মেলোড্রামা– তবু ভাবি ভাষা যার যার

 

স্বকীয় সম্পদ, তাই লিখে যাই তাতে।

আমার কবিতা যেন থাকে দুধেভাতে।

========================

 

প্রাকৃতিক

মহীবুল আজিজ

 

কর্ণফুলীর বুক থেকে

বুড়িগঙ্গা পদ্মা মেঘনা যমুনা তিস্তা করতোয়া

ডাকাতিয়া ব্রহ্মপুত্র সোমেশ্বরীর বুক থেকে

উত্থিত কান্নাবাষ্প গিয়ে জমা হচ্ছে

একটাই তো আকাশ

একার পক্ষে ধরে রাখা মুশকিল

দেখো আমি নিশ্চিত

এই প্রাক-স্তব্ধতা দমবদ্ধতার ট্রমা কেটে গেলে

বিস্ফারিত হবে অশ্রুর বৃষ্টিতে

নিরীহ নদীও কী পারে একা ধরে রাখতে শোকের প্লাবন

সংক্রমণে ভাসিয়ে নেবে তোমাকে আমাকে

আমাদের স্থিতি ও প্রবহমানতাকে

আমাদের সমস্ত অশ্রু হবে বৃষ্টিকবলিত

আমরা যতই কাঁদি না কেন আমাদের খুঁজতে হবে

বৃষ্টিপ্রকাশ্য নয়, খটখটে শুকনো আড়াল

যেখানে দাঁড়িয়ে আসমুদ্রহিমাচল বৃষ্টিপ্রলম্বিত শোকের বাইরে

সমস্ত আর্দ্রতা ভেজা স্যাঁতসেঁতে আবেগকে পায়ে দলে দিয়ে

ঠাঠা হাসির ছররা ফাটিয়ে বলবো

ঐ দেখো কর্ণফুলীর বুকে

বুড়িগঙ্গা পদ্মা মেঘনা যমুনা তিস্তা করতোয়া

ডাকাতিয়া ব্রহ্মপুত্র সোমেশ্বরীর বুকে

এক কণা কান্নাবাষ্প নেই

সব আজ কানায় কানায় পরিপূর্ণ।

===================================

 

নৈঃশব্দের নিঃসঙ্গতা

সাথী দাশ

 

আধাঁরের রেণুর সাথে সংগীতের আছে এমন এক

গভীর ছোঁয়াছুঁয়ি,যা একে অপরের আলিঙ্গনে

হাওয়ায় উড়ে সির-তাল-লয়ে। এক আশ্চর্য অনুভূতি,

শুধু আমাদের নয়;তার পরে বা আগে দেখা যায়

চাঁদ হাসচ্ছে। শুধু কী তাই? নরম আলোর ফুলঝুরি ছিটিয়ে দিচ্ছে। অদ্ভুত সময়ক্ষণ, চারিদিকে নৈঃশব্দ।

অনুভবে-তৃপ্তিতে প্রহর কেটে যায়,সঙ্গে নিঃশব্দ সময়।

 

জঙ্গলের ছায়ায় থাকে এক অদ্ভুত রহস্যময়তা,

থাকে অন্যরকম নিঃসঙ্গতার ছোঁয়া। প্রকৃতির ঘের টোপে

দেখছি যেমন সেটাই দেখি মনুষ্যজঙ্গলের সারি সারি

চলমান পায়দলে ঘোরাফেরা করা মনুষ্য-স্বজ্জন।

চলতে চলতে উপলব্ধি হয় মনুষ্যজঙ্গলের অনন্ত নির্জনতা।

 

 

 

দেয়াল চিত্র 

আনন্দ মোহন রক্ষিত

 

দেয়ালচিত্র ভেঙে ভেবোনা হৃদয়ের

আগুন নিভে গেছে। এখনও বোকার

স্বর্গে  বাস? যে চিত্র  আগুন হয়ে জ্বলছে

বিশ্বের  স্বাধীনতাকামী শতকোটি  মানুষের

অন্তরে, তার তীব্রতা  বাড়ছে ক্রমাগত।

 

প্রলয়ক্ষুব্ধ ঝড় শ্মশানের  চাপা আগুনের

চেয়েও ভয়ঙ্কর। পঁচাত্তরের  দাবানল

ধিকিধিকি জ্বলছে এখনও মানুষের হৃদয়ে।

আকাশে-বাতাসে, বিস্তৃত  চরাচরে।

 

দেয়ালচিত্র  ভেঙে  কিংবা ভাস্কর্য  চুরমার

করে ভেবোনা মুজিবকে বিনাশ করতে পারবে।

এদেশের আঠারো কোটি মানুষের  হৃদয়ে সদা জাগ্রত

মুজিব। যে কোন সময়  নীরবতা ভেঙে

প্রলয়  ঘটাতে পারে।

 

 

—————————–

 

 

অপভ্রংশ

জাহাঙ্গীর আজাদ

 

দাঁড়িয়ে যেখানে, যতোক্ষণ ধরে একা

ওপারে নদীর বালিতে মেঘের ছায়া

শালিকজোড়টি আর দেখা যায়নাকো

শীতার্ত নদী ভাঙে  ক্ষীণ পথরেখা

 

যে মাস্তুলের অর্ধেক দেখা যেতো

গত বর্ষার জল শুকোনোর পরে

নদীচারী পাখি অর্ধেক বাসা বুনে

মাস্তুলটিকে ছেড়ে গেছে কার টানে

 

দাঁড়িয়ে যেখানে, তার প্রতিবিম্ব

ঢেকে গেছে শেষ-বিকেলে শিশির স্বেদে

বালিয়াড়ি জুড়ে ঘাসের আস্তরণে

লাল কাঁকড়ার সতর্ক শিরদাঁড়া

 

দিগন্ত ঘেঁষে কিষাণীর আটচালা

উথলে উঠছে মাষকলাইয়ের ঘ্রাণ

বাঁশঝাড় ফুঁড়ে ওড়ায় মেদুর ধোঁয়া

উত্তুরে হাওয়া স্মৃতির বাড়ির পানে

 

যার আসার ছিলো সব সম্ভাবনায়

সময়ের সাথে ক্ষীণ হয়ে আসে আলো

কুয়াশায় ভিজে উঠছে বিজন পথ

এবারও তাহলে ফিরতেই হবে একা

—————————-

 

নাভিমূল

শফিউল আজম মাহফুজ

 

যত-ই দূরে যাই

ফিরে আসি বারবার,

ফিরে আসি বৃত্ত আঁকা পথে।

কোথাও শান্তি নাই।

তাই-

ফিরে আসি নিজ নাভিমূলে-

ফিরি নিজকুলে।

 

তোমরাও কি এমন-ই

বারবার যাও ফিরে,

নিজ নিজ নাভিমূলে?

 

সব দেখা শেষে, সব হাঁটা শেষে

যখন খুলি নিজ নাভিমূল

বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি

এ-তো নই আমি,

নও তুমি, নয় কোন বিচ্ছিন্ন

নাভিমূল।

 

এ-তো যেন ভেদাভেদহীন-

এক অবিকল স্বপ্নলোক,

এক অবিচ্ছিন্ন মানবকুল।

======================

 

জীবনানন্দ

আকতার হোসাইন

 

তাকে দেখি, ভোরে ঘুম থেকে জেগে

যখন বুঝতে পারি, আরও একটি রাত

কাফন ও কাপুরের গন্ধবিহীন কাটাতে পেরেছি

মসজিদের মাইক থেকে আসছে না ভেসে আজ,

‘একটি শোক সংবাদ, একটি শোক সংবাদ ‘

বারান্দায় বেলীগন্ধ, ইসকন মন্দিরের স্বর্ণাভ চূড়ায় সূর্যের প্রগাঢ়  চুম্বন

সকালের খবরকাগজে  মৃত্যুসংখ্যার ওঠানামা পড়ে

তাকাই দেয়ালে, উদ্ভাসিত রক্তের উত্তরাধিকার

দিগবিজয়ী হাসিতে চোখ নাড়ে আর বলে,

জীবন আনন্দের,   দিনে তিনটা ডিম খাও

বাড়বে না কোলেস্টরল,

হাঁটো, দৌড়াও,ব্যায়াম করো শ্বাসের প্রত্যহ,

চোখে চোখ রেখে এতো আদেশ মারে

প্রতিভা সিং এর গজলে ডুব মেরে  শ্বাস নিই জোরে।

 

জীবন সৌরভের,  যতো কটুগন্ধ জীবানু ও শঙ্কার

তুড়ি মেরে ওদের উড়িয়ে ভাবি, কার্তিকের শেষে

পৌষের কুয়াশায়

টনসিলের প্রদাহ ও কফজমা ফুসফুস  নিয়ে

একবার উড়ে যাবো মানচিত্রের অন্যপ্রান্তে

হিমাংকের তাপমাত্রায়,  যেখানে আমার রক্ত

কেবল উষ্ণতা,  অবিচ্ছেদ ও সম্ভাবনা নিয়ে বলে

জীবন আনন্দের।

 

=========================

পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ

তোফায়েল তফাজ্জল

 

পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ

সঙ্গে থাকা চাই সওদা, দরকারি সম্বল।

শোণিতে বাড়াও তেজ ও চলতে জ্বালানি,

সামনে যতোই বন্ধুর, কাঁটার আক্রোশ

পড়বে না গতিতে ভাটা;

‘থাম’ বলতে চাইলে শতোবার ভাবে।

 

আরো তৈরি হও,  বেল্ট কষো,

লক্ষ্যে পৌঁছতে পায়ে যাতে থাকে শিকারী-চিতার গতি

এবং শরীর অছোঁয়া-অক্ষত থাকে

ঝড়ে পাওয়া বাঁশপাতার কাঁপুনি থেকে।

সকল প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব নাই হয়

বন্য কুকুরের পাল দেখা সমূহ খরগোশ হয়ে।

 

হ্যাঁ,  কাজে সফল হতে

ক্যাচি কাটা করে ছুঁড়ে ফেলো

বস্তাপঁচা উপস্থাপনা বা কথাশৈলী,

জাবর কাটার স্থূলরীতি ।

দেখবে লাইনে লাইনে জ্বলছে মুক্তো ।

ভেতরে-বাইরেও শোভা পাচ্ছে

নিয়নের অনির্বাণ আলো।

=====================

 

বড়ুয়াপাড়ার গল্প

আসিফ নূর

 

উত্তরচূড়ায় সিংহশয্যায় মহামতি বুদ্ধ,

দক্ষিণে দাঙ্গাবাজ লালু দাদার দখলি পাহাড়;

মাঝের দোফসলি জমির বুকে শবাসনে শুয়ে আছে

চঞ্চল সবুজে ঠাসা বড়ুয়াপাড়ার প্রবীণ মেটেপথ।

 

এই রাস্তায় দু’টি গাছ পাশাপাশি নিশ্চুপ দাঁড়িয়েÑ

একটি জাম, আরেকটির নাম চিকন পাতা।

একটির ছায়া শীতলপরান, অন্যটির ছায়া তেজি,

একটির পাতা গোলাকার আর অপরটির পাতা সরু,

একটি জীবন উজাড় করে বিলায় সুমিষ্ট ফল;

আরেকটি মৃত্যুর পর পুনর্জন্মে ফিরে আসে আসবাবরূপে।

 

ছায়া-কায়া সমান সমান, তবু পরস্পর ভিন চরিত্রের

গাছ দু’টি নিবিড় সহাবস্থানে বাঁচে ঋতুবদলের নানা রঙে।

দু’জনেই বোঝে দু’জনকে, তাই মুখ ফুটে কিছুই বলে না;

বাতাসের তালে তালে শুধু মাথা দুলিয়ে জানায়Ñ‘সুখে আছি।’

 

======================================

 

 

কাঁচের মতো মৃত্যু

তাপস চক্রবর্তী

 

আয়নায় দেখি আমায় আমিও শূন্য।

অজস্র শূন্যতার ভিড়ে কাঁচের মতো মৃত্যু।

 

রাজপথ পেরিয়ে মানুষের কান্না

সমুদ্রে ডুবে যায়

পঞ্চমীর আঁধারে মিশে গেছে ধোঁয়ার কুন্ডলি ।

 

শবের মিছিলে আমিও ছিলাম

পিঁপড়েরা যেমন ছিল

পাহাড়ের ঢালে হলুদ সটি পাতার ভাঁজে…

 

মহাকাল মনে রাখে পোড়া উঠোনের স্মৃতি

আর ইলিশের আর্তনাদ।

 

=======================

 

 

 

 

রাইসুল হকএর এক পশলা হাইকু

 

ফুলেও পোকা

ভেড়া সিংহ সেজে

মারছে ধোঁকা।

 

বুড়ো বাঁদর

চিরোকাল বিমূঢ়

এখনো ওর।

 

অলস গাধা

ধোঁকার বোঝা বয়ে

অনার্থ বেলা।

 

তালের গূঢ়

রহস্য ভাড়ে তিতা

বাঘা তেতুল।

 

বুনো শুয়োর

দাঁতালে করে চাষ

ঘোঁতর ঘোঁত।

 

রাগে তুখোড়

তুললে ফনা সর্প

বেঁজী নাছোড়।

 

আর্টের কলা

তেউড় ছাড়ে গাছে

যৌবন ভরা।

 

বিষে আঁচড়

থাবা চাটা পশুর

হারে হাঙর।

 

দিনের ভুল

ভোরেই যায় ঝরে

শিউলি ফুল।

 

কালের কলি

ফুল ছিঁড়ে দেখায়

পাঠার বলি।

 

===================================

 

 

 

 

 

ময়ূরপঙ্খী বজরায়

মুস্তফা হাবীব

 

মনিকা, তুমিহীন সমুদ্রের নোনাজলে

ভাসে আমার প্রণয় আকাশ, কবিতার কুসুমশয্যা।

নজরুল নার্গিস আর প্রমিলাকে নিয়ে

চাঁদের দেশে ভাসিয়েছিল প্রেম বিরহের সাম্পান,

অগ্নিবীণায় সুর তুলেছিল একাকী ঝঞ্ঝার মতো উদ্যামে।

 

আমিই তাই চেয়েছিলাম

তোমাকে নিয়ে গড়ে তুলব স্বপ্নের মাল্টিকালার প্রকল্প।

তুমি দৃশ্য – অদৃশ্য পাঁচিল উপড়ে ফেলে

ছুটে আসবে পদ্মাসেতু ডেঙিয়ে বাংলার ভেনিসে

হাতে রাখবে হাত, শ্যামল ঠোঁটে রাখবে কুসুমিত ঠোঁট।

 

তুমি এলে না

খাঁচার পাখি হয়ে সনাতন আদলে রয়ে গেলে খাঁচায়

সাঁতার জানা নেই বলে আঁকড়ে আছো ডাঙার বসতি

তাই আমার দিগন্তে আর ফুল ফুটলো না নিসর্গ নিয়মে

মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আশালতা – নতুন স্বপ্ন দর্শন।

 

রোদ ঢেকে গেলো শিশিরে

পারভাঙ্গা ঢেউয়ের দোলায় দুললো না পুরাতন নীড়,

আজো কবিতারা আছাড় খায়, ভাসায় বুক কান্নার জলে

অপেক্ষার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ভাবছি, কবে শুরু হবে বিজনে

ময়ূরপঙ্খী বজরায় চড়ে নিঃসীম অভিযাত্রা!

================================

 

অবচেতন তত্ত্ব

রুহু রুহেল

 

ইচ্ছেরা সুন্দর ডানা মেলেছিল বহু রূপ

ইচ্ছেরা পরিব্রাজক ঘুরে বিশ্ব চুর চুর!

ইচ্ছেরা ইচ্ছেতে নেই হারিয়েছে স্বত্ব

চেতনার আড়ালেতে বিমর্ষ অবচেতন তত্ত্ব!

 

কিছু কিছু ইচ্ছে আছে একান্ত আপন

কিছু কিছু ইচ্ছে আছে বড় সঙ্গোপন

এমন কিছু ইচ্ছেরা সুর তোলে দহন স্বরের

পাইনা নাগাল পাবো না তাকে কষ্ট শুধু বাড়ে!

 

ইচ্ছেরা কত কোমল আর কত মধুরিমা ছিল

মোটা সোটায় ইচ্ছেগুলোও ডানা খুলে চলতো

সহজ সরলে অতি আদিমতার প্লুত প্রলেপে

ইচ্ছেরা সঙ্গ দিচ্ছিল সামাজিক সূত্র বন্ধনেই!

 

এখন ইচ্ছেগুলো চিকন আর নরোম হয়ে আছে

স্বদেশ অথবা বিশ্বতে কোমল কামনার নন্দনে

এখন ইচ্ছেরা হাট-বাজারের মতো বড় বেশরম

সম্মান আর নৈতিতে বেতোয়াক্কা আঘাত হানে হর্দম!

 

================================

কুসুমের যন্ত্রণার গন্ধে

আজিজ কাজল

 

কুসুমের কপাল জলে কল উড়ে, সুতা উড়ে, রাশি-ঘামে

নুয়ে ওঠে কলাপাতার হৃদয়Ñকুসুমের কাদা-গন্ধের ফ্রক

খুলে, শাড়ি খুলে, প্রতিদিন ওড়ায় তারা ধোঁয়া ফোটা

কলের বাজি।

 

জীবনতলীর ঘষা খাওয়া দলা, হয় মাটির ঢেলাÑ

কুসুমের কপালে কোনও দেশ উঠে না; কুসুমের হৃদয়

পোড়ে, দিন পোড়ে, কপালে ওঠে বারুদের রক্তিম টিপ।

 

============================

 

 

দুর্নিবার ব্যথা সৃজনমুখর

রফিক আনম

 

মানুষ খুবই কৃপণ শুধু ব্যথা দানে উদার

আমার বড় অর্জন, ব্যথা সইবার ক্ষমতা

 

ব্যথাহীন অন্তর নিষ্প্রাণ প্রস্তর নির্জলা নদ

ব্যথাতুর জীবন অমৃত মধুর নির্মল সলিলা

 

বসন্ত এলে হৃদয়ে চাপা ব্যথা উথলে ওঠে

ফুলে ফুলে গুঞ্জরে ভ্রমর; বিরহ সুর তুলে

বাতাসের কানে কানে শুধাই এক কুকিলা,

কার ডালে বাসা বাঁধো, কার ডাল ভাঙো!

ভাঙনের নেশায় কারে ব্যথা দিয়ে দোলো!

আমার যতো খেলাপি ব্যথা সুদাসলে দিও

 

শৃঙ্গার ব্যথায় সাত কাহন গোঙানি শেষে

সাত পুরুষের মহানন্দের প্রজনন উৎসব

দুর্নিবার ব্যথা সৃজনমুখর অনিন্দ্য সুন্দর

 

—————————————————-

 

মায়া জালিম

মোহামেদ সাইফুল হাসান রাকিব

 

পৌষের পাকা ধানের ঘ্রাণের মত মৃত্যু কড়া নেড়ে যাবে

একাকিত্বের নবান্ন নিমন্ত্রণে দেহ নতুন সফেদ কাপড়ে,

কলাবউর মলিন মুখ! সঙ্গে যেতে না পারার শোক,

অশ্রু, হাহাকার!

আত্মার ঠোঁটে ফুটন্ত পায়েশের মত উপচে পড়া  কৌমুদি

জালিম মায়ার হাত থেকে হবে স্নায়ুর পূর্ণাঙ্গ মুক্তি!

 

===========================

শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ

বিদ্যুৎ কুমার দাশ

 

তিল খানি চাঁদ-

শুক্লার বাঁধ

একগ্লাস রাত-

অপূর্ব আস্বাদ।

 

হৃদখানি টানে-

মন পোড়া গানে

তিল খানি মেঘ-

অবোধ আবেগ;

 

অফুরান সুখ

পতিপ্রাণ বুক;

শুক্লা রাত-

কখনো প্রভাত?

 

 

===============================

 

 

গোগ্রাসে গিলছি সিরিজকষ্টের অন্ধকার

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

 

প্রজাপতিরা পাখনা মেলে উড়তে ভুলে যাচ্ছে

নিভতে বসেছে অলস মোমবাতির সুতীব্র দহনশিখা

আরক্তিম সূর্যকে অস্পৃশ্য  হাতের ছায়ায়  ঢেকে দিলাম

বন্ধ করে দিলাম অবারিত রোদ,তার নিরবচ্ছিন্ন আনাগোনা

 

নদীগুলোর গতরে পাহাড়ের গান আর নানান শৈলীতে ভরপুর ছিলো

এখন নদীও দেখছি নিরাপদ দুরত্বে চলে গেছে,ঝর্ণাজল জৌলুসহীন

বিস্তীর্ণ দুপাশের জীবনে কারুকাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছি মুখ

পাখিসব করেনা রব,উদার অন্তরীক্ষে ঝরেনা নিঃশব্দে পালক

পাখি হবার সাধ ছিলো বহুকালের উচ্ছ্বসিত সুখের আশায়

 

গিয়েছে থেমে পাথরের মতো। মৃত্তিকার জঠরে নবজন্মের

শোরগোল শুনছি না তো। বর্ণিল শস্য ভরা ছবিগুলো কেউ

কালো পর্দায় দিচ্ছে ঢেকে। জেনে শুনেই সবুজ পৃথিবীর নিরব

মার্সিলিয়াকে মেরে ফেলার খেলা হরদম দেখি,জীবনটা পড়ে

থাকতে দেখি। ক্ষেপণাস্ত্রে, মারণাস্ত্রবাহী ড্রোনের গায়ে গায়ে

ঘেঁষাঘেঁষি, ঠাসাঠেসি।

প্রতিদিন উঁকি দিয়ে যায় হারানোর শোক,না পাওয়ার কর্কশ

গলার চর্চা কতিপয় অশুভ শব্দের অনৈতিক  কোলাহল ঘিরে

দীনতার চাষবাসে অভ্যস্ত হতে হতে হয়েই গেলাম কয়েদি

নিয়তির ঘোলাটে সময়ের গরাদে বন্দি গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছি অন্ধকার।

 

===============================

যেভাবে একটি দিন মরে গেল

রজব বকশী

 

আমার সমস্ত দিন

কেটে টুকরো টুকরো করে

পলিথিনে মুড়িয়ে ছালায় ভরে ফেলে দিয়ে এলো

শহর থেকে একটু  দূরে

ব্যস্ত সড়কের একপাশের ডোবায়

 

বৃষ্টিমুখর রাতের পথিকেরা বোঝার আগেই

তড়িৎ গতিতে গাড়ি করে ফিরে গেল

যেন কিছুই হয়নি

মদেমত্ত ঘুম

 

ফ্রেশ একটা সকাল অন্ধকার গ্রেফতার করে

চৌদ্দ শিকের খাঁচায় সময়ের ঢেউ

বিদগ্ধ বিবেক ফাঁসি দিয়ে জেগে ওঠে

 

আর আমাকে জানিয়ে গেল সবিনয়ে

সাধু, সাবধান হও।

 

=============================

 

 

মলয়া খাতা

ওসমান গণি

 

মলয়া গীতিকারের তিন সতীর্থ

একজন মহর্ষী কবি

একজন সাধক ভাবুক

একজন সুরের প্রেমিক

লোকটা যখন মলয়া গায় মহর্ষী কবি গানের ছবি আঁকে

তখন ফেটে যায় মৃত্তিকা

লোকটা যখন মলয়া গায় সাধক ভাবুক গানের স্বরলিপি আঁকে

তখন ফেটে যায় নদী

লোকটা যখন মলয়া গায় সুরের প্রেমিক বাদ্যযন্ত্রে ঝংকার আঁকে

তখন ফেটে যায় আকাশ

 

লোকটা কবিতা গানে সাজিয়ে তুলছে সপ্তর্ষীম-ল

সপ্তর্ষীম-ল ভেতর থেকে উঠে আসছে মহর্ষী কবি মনমোহন দত্ত

সপ্তর্ষীম-ল ভেতর থেকে উঠে আসছে সাধক ভাবুক লব-বাবু

সপ্তর্ষীম-ল ভেতর থেকে উঠে আসছে বাঁশিসম্রাট আফতাবউদ্দিন খাঁ

 

 

এমন লীলাপদ্ম হাতে নক্ষত্র ল্যামúোস্টের মতোন

মলয়া সঙ্গীত সুবাস ছড়ায় আমাদের শিল্পে কলঘরে ।

==============================

 

 

মোহাম্মদ আবদুস সালামএর রুবাই

 

রুবাই

বর্ষাকালে পড়ছে গরম বৃষ্টি হলেও কমছে কৈ

বিলেঝিলে দেখতে পাচ্ছি আকাশ ছায়ার জল অথৈ

পুকুর ভেবে লাফ দিয়েছি, গভীরতা মাপছি না

গাভী বিহীন গোয়ালিনী বিক্রি করছে খাঁটি দই।

 

রুবাই

বর্ষাকালে কদম ফোটে এইটা ভেবে খুশি হই

কদম ছাঁটা চুল দেখিয়া সৈনিক ভেবে শান্ত রই

ঋতু এখন বদলে গেছে, বদলে গেছে মানুষ সব

উপর তলায় উঠতে গেলে লাগবে একটা শক্ত মই।

==========================================

 

শ্রাবণের সমাদর

জেসমিন সুলতানা চৌধুরী

 

গরমের পলায়ন আষাঢ়ের আগমন,

নীলিমায় ভাসমান কালোমেঘ প্রতিক্ষণ

দিবাকর ঢাকা রয় সারাদিন বারিপাত,

ঘনঘোর চারিধার আঁধারের আঁখিপাত

বনে দেয় দোলা ঢের ঝরে জল ঝরোঝর

কদমের সমাগম অপরূপ মনোহর

খেলে ব্যঙ কী মজায় পুকুরের চারিধার !

নবজল পেয়ে মাছ ছুটে জোর নিয়ে সার

জেলেদের সুসময় ধরে মাছ উজানের

সবুজের আলাপন সমাদর শ্রাবণের

সারারাত বরিষণ ডুবে যায় ধরাতল,

মেঠোপথ কাদাময় জলাশয় টলোমল

কৃষকের ভাঙ্গে বুক ফসলের ক্ষতি ঢের,

মজুদের পরিমাণ কমে সব পেলো টের

পাহাড়ের নামে ঢল বাড়িঘর ভেসে যায়,

কাঁদে লোক ক্ষুধা আর অভাবের তাড়নায়

=============================

 

জলে ভেজা কিশোরী কদম

এস ডি সুব্রত

 

এই বর্ষায় ভরা যৌবনে

তুমি জলে ভেজা কিশোরী কদম

অপরূপ তোমার সবুজ ঘাসে

প্রজাপতি পাখা মেলে ,

নাগরিক যাতনা ভুলে

উড়ে যাই আচমকা তোমার নীলে

বৃষ্টিভেজা  গোলাপ ঠোঁটের

অনন্য অনুভুতি মননে মগজে।

==================================

আত্মশুদ্ধি

পারভীন  আকতার

 

ব্যবহারে বংশের পরিচয় জানি,

ধবধবে যেন পরিশুদ্ধ হৃদয়খানি।

 

ব্যবহারে হৃদয় বাতি জ্বলে উঠে,

প্রশান্তির ধূপগন্ধীর সুভাষ ছুটে।

 

হৃদয় ভাঙ্গা মন্দির ভাঙ্গার সমান,

অথচ সে হৃদয় নিয়ে কত টানাটান!

 

মিথ্যা বলা মহা পাপ জেনেও বলি,

স্বার্থ ধান্ধা লোভের বশে সাজাই বুলি।

 

প্রতারণা করে মানুষকে ঠকিয়ে যাই,

যার জন্য ফাঁদ পাতে সেই পড়ে সাঁই!

 

সময়কে দিই না মূল্য নষ্ট করি ক্ষণ,

প্রয়োজনে পাশে থাকে না স্বজন ।

 

এতো কষ্ট করেও যেন বৃথা জীবন,

আপন কেবল পর হয় বিনা কারণ!

 

ধীরে ধীরে চলছি মোরা মরণের দিক

আত্মশুদ্ধির পথে চলতেই হবে ঠিক।

=======================================

 

ছাড়ো হিংসা

জহির সিদ্দিকী

 

আশ্রয় দিয়ে প্রশ্রয় দিয়ে

হওয়া যায়না বাহাদুর,

মজা দিয়ে মজা নিয়ে

পাগল হবে অতিজোর।

 

ভিন্ন মতি ভিন্ন গতি

তাতো জীবনের ধর্ম,

স্বদেশ ভেবে স্বজন ভেবে

ছাড়ো হিংসা অপকর্ম।

 

চাওয়া থাকলে পাওয়া থাকলে

বলো বিনয় করে,

সাধের মাঝে সাধ্যের মাঝে

দেবো মন ভরে ।

 

ভয় দেখিয়ে লোভ দেখিয়ে

করোনা দেন দরবার,

নিজের পায়ে নিজের গায়ে

প্রয়োজন কি রক্তঝরাবার!

 

====================================

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে