চিঠি
সন্তোষ কুমার শীল
বৃষ্টি ভেজা আঁধার রাতে লিখছি তোমায় চিঠি
আলোর পাখি জোনাকিরা তাকায় মিটিমিটি
চিঠি পেয়ে ভালোবাসায় সিক্ত হবে তুমি
অঝোর ধারায় মনের মাঝে বাজবেরে ঝুমঝুমি।
আছো তুমি অনেক দূরে অচিনপুরের গাঁয়ে
নতুন করে ঘর সাজাতে হাঁটছো ডানে বাঁয়ে
জেনে শুনে তবু তোমায় লিখছি এমন সাঁঝে
ভালোবাসার অযুত স্মৃতি জাগছে আমার মাঝে।
রিম ঝিমা ঝিম বৃষ্টি ঝরে সবুজ আঙিনাতে
বেলকনিতে স্থির দাঁড়িয়ে আমি তোমার সাথে
সে-সব স্মৃতি নতুন করে হৃদয় পটে ভাসে
চিঠি লেখার শব্দগুলো কলকলিয়ে আসে।
কোথায় আছি কেমন আছি রাখলে নাতো খোঁজই
ফুল বাগানের ফুলের মেলায় দেখা পেতাম রোজই
ফুলগুলো আজ ঝরে পড়ে সূর্য যখন পাটে
অভিমানের বাক্যগুলো এখন কি আর খাটে?
মাঝে মাঝে পত্র দিও খবর নিও ফাঁকে
রঙিন দিনের অতীতগুলো আজও আমায় ডাকে
চাইলে তো আর যায় না ফেরা ফেলে আসা পথে
স্মৃতির পাহাড় বুকে নিয়ে আছি কোনো-মতে।
==========================
মায়ের ভাষা
অপু বড়ুয়া
মায়ের ভাষা আমার প্রাণের বুলি
কী করে এই মায়ের ভাষা ভুলি!
যত দূরে থাকি না যে দেশে-
মায়ের ভাষা হাওয়ায় আসে ভেসে।
মায়ের ভাষা বুকের ভেতর থাকে
‘খোকন’ বলে মা আমাকে ডাকে।
মায়ের ডাকে আকুল হয়ে উঠি
ব্যাকুল হয়ে মায়ের কাছে ছুটি।
মায়ের ভাষায় স্বপ্ন দেখি আমি
মায়ের ভাষায় পদ্য লেখি আমি।
মায়ের ভাষায় বাকুম বাকুম ছড়া
পাঠশালাতে আমার প্রথম পড়া।
পানি ছাড়া মাছ বাঁচে না যেমন
মাটি ছাড়া গাছ বাঁচে না তেমন।
তেমনি আমি মায়ের ভাষা মুখে
বাঁচতে শিখি দুঃখ এবং সুখে।
===================================
উফ্ শীত
রেজাউল করিম রোমেল
শীত শীত শীত
শীত শীত শীত,
শীতের এই ঠান্ডাতে
আসে না নিদ।
সকাল বেলার কুয়াশাতে
যায় না কিছু দেখা,
সন্ধ্যা হলেও কুয়াশাতে
কিছুই দেখা যায় না।
ভাপা পিঠা পুলি পিঠা
খেতে দারুণ মজা,
শীতের এমন পিঠা খেলে
মনটা থাকে তাজা।
উফ্ কি শীত
বাইরে যাওয়া যায় না,
লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়
বাইরে যেও না।
========================
ফলের কথা
সোমা মুৎসুদ্দী
আম ডেকে কয় শোনরে কলা
আমি ফলের রাজা
আমায় খেতে লাগবে ভালো
পাকা এবং তাজা।
বলছে কলা শোনরে আম
আমিও অনেক দামি
কম খরচে পুষ্টি গুণের
ফলটি হলাম আমি।
কাঁঠাল এবার চেঁচিয়ে বলে
সবাই আমার রসে
মিষ্টি স্বাদের আমায় খেলে
থাকবে সবাই বশে।
জাম জামরুল আপেল আতা
কমলালেবু ডাব
বলছে সবাই নিতেই পারি
আমরাও খুব ভাব।
কামরাঙা বেল আনারস আর
জাম্বুরা তাল লিচু
ওরাও এবার বলছে শোন
থাকব না আর পিছু।
পুষ্টিগুণে সব ফলেরই
আছে অনেক দাম
তারই সাথে যোগ হলো ভাই
আঙ্গুর ফলের নাম।
=========================
সুন্দরবন
মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
সবুজ শ্যামল লতা-পাতায়
নিঝুম পরিবেশে,
জোয়ার ভাটায় রয় সুন্দরবন
যায় না স্রোতে ভেসে।
কেওড়া পশুর খলসে গড়ান
সুন্দরী গাছ বাইন,
বনের হেঁতাল গোলপাতা ঝাউ
দেখতে লাগে ফাইন।
জোয়ার ভাটার সুন্দরবনে
যেথায় দেখি ঘুরে,
গাছের ডালে পাখি ডাকে
কিচিরমিচির সুরে।
বক মদনটাক শঙ্খচিল হাঁস
হাজার পাখির মেলা,
লাল সবুজ নীল প্রজাপতি
যায় দেখে যায় বেলা।
শেয়াল বেজি বানর হরিণ
আছে কোবরা টাইগার,
শূকর ভোদর কাছিম কুমির
ডলফিন সেথায় পাইআর।
মৌমাছি আর বোলতা ভোমর
আছে হাজার কোটি,
মৌচাক কাটে মৌয়াল বনে
ভরে থালা ঘোটি।
নদী খালে যায় পাওয়া যায়
ভেটকি ইলিশ বেলে,
চিংড়ি পোয়া টেংরা আরো
দাতিনা কই মেলে।
চির সবুজ ম্যানগ্রোভ বনে
আমরা ভ্রমণ কালে,
ফেলবো না ভাই বর্জ্য কোনো
ডাঙা নদী খালে।
করবো না এই বনের ক্ষতি
সবাই করি পণ,
আমার দেশের জাতীয় সম্পদ
এই যে সুন্দরবন।
=========================================
মায়ের ভাষা বাংলা
সুচিত্রা ভট্টাচার্য
যখন দেখি সবুজ মাঠে
সোনালি ধানের হাসি,
বটের ছায়ায় মধুর সুরে
রাখাল বাজায় বাঁশি।
মন পবনের নাওটি তখন
বাংলায় ছবি আঁকে,
ভাটিয়ালি গেয়ে মাঝি
চলে নদীর বাঁকে বাঁকে।
এই ভাষাকে ভালোবেসে
রফিক, সালাম দিল প্রাণ,
বাংলাকে যে চিনলো সবাই।
রাখলো মায়ের মান।
মায়ের ভাষা বাংলা শিখি
মুখের বোল ফুটতে,
কেউ কখনো পারেনি যে
বীর বাঙালিকে রুখতে।
যতই শিখি ইংরেজি আর
ফোটাই কথার খই,
বাংলা আমার মায়ের ভাষা
বাংলাতেই মনের কথা কই।