এখন সময়:রাত ৯:৪৪- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৯:৪৪- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

পুথি সাহিত্যের গৌরব গাথা

তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী : পুথি সাহিত্য আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এমন এক সময় ছিল যখন ঘরে ঘরে ছিল পুথি। দিনের আলো নিভে গেলেই কুপী জ্বালিয়ে শুরু হতো পুথিপাঠ। পুথি-পাঠককে ঘিরে সকলেই জড়ো হতেন এবং  মনোযোগ সহকারে শুনতেন। তখন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও উপাসনা গৃহেও পুথিপাঠ চলতো। প্রাচীনকালে মূলত প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষেরাই ছিল পুথি অনুরাগী। তাদের লেখাপড়া বা ভাবনা- চিন্তার পরিধি আটপৌরে হলেও অন্যরা যে একে অবহেলা করতো, তা কিন্তু নয়। সেকালে পুথি ছিল সার্বজনীন। শিশু- কিশোর- বয়স্ক নির্বিশেষে সকরের কাছেই পুথি- সাহিত্যের অনুপম কাহিনি – আখ্যানগুলো ছিল অমৃততুল্য। আধুনিক যন্ত্র- সভ্যতার দাপুটে বাস্তবতায় প্রাচীন পুথিকাব্য, পুথি- কাহিনি বিস্মৃত ও বিলুপ্ত প্রায় হলেও আজও মানুষ ফিরে যেতে চায় স্বপ্ন, কল্পনা ও বাস্তবতার মিশেলের সেই আনন্দ ভুবনে, যেখানে পুঁথি সাহিত্যের মিথ, কল্পকথা, লোককাহিনি, লোকাচার, ধর্মকথা, পীরগাথা, দেবদেবীর বন্দনা, রাজবন্দনা, হাসিকান্না, যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ তাদের মাতিয়ে রাখে নিরন্তর। প্রাচীনকালে যখন ছাপাখানা ছিল না তখনো প্রচলন ছিল পুথির। এ উপমহাদেশে ত্রয়োদশ শতকের  পূর্বে কাগজ ব্যবহারের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। (উদ্বৃত্তি – ওহফরধহ চধষবড়মৎধঢ়যু – ইঁযষবৎ, ১৯৯৬২, চধমব- ১৪৫)। আর ১৭৭৮ সালের পূর্বে বাংলা ভাষার কোন ছাপাখানাও এ তল্লাটে ছিল না। ১৭৭৮ সালে হুগলিতে প্রথম বাংলা ছাপাখানা স্থাপিত হয়। তবে এতদঞ্চলে ত্রয়োদশ শতকের পূর্বে কাগজ ব্যবহারের নমুনা বা ১৭৭৮ সালের  পূর্বে ছাপানো পা-ুলিপি আবিস্কৃত না হলেও অন্যান্য উপাদানে যে লিখন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। প্রাচীন হস্তলিখিত পুঁথিগুলো সাধারণত ভূর্জছাল, কাপড়ের পট, চামড়া,পাথর বা পোড়ামাটির ফলক, বৃক্ষপত্র, তালপাতা, তুলট কাগজে লেখা হতো। তালপাতার পুথিগুলোর বেশির ভাগই ছিল পূজোর পুথি। মাদুলির মন্ত্রগুলো লেখা হতো ভূর্জগাছের ছাল- ভূর্জছালে। মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্যভিত্তিক বিভিন্ন পুথিও লিখিত হতো তালপাতায়। তেরেট নামে তাল জাতীয় এক প্রকার বৃক্ষের পাতায়ও তখন পুথি লেখা হতো।তালগাছের এক প্রজাতি ‘শ্রীতাড়’। তা থেকে হতো ‘তেরেট’ পাতা। তা তালপাতা থেকে চওড়া ও অনেকটা নরম। ‘কবি মুকুন্দ রামের বাসভূমি দামুন্যায় তেরেট পাতায় লেখা ‘চ-ীমঙ্গলের’ একটি পুথি সংরক্ষিত আছে। (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস – প্রথম খ– সুকুমার সেন, চতুর্থ সংস্করণ -১৯৬৩,  কোলকাতা, পৃঃ-৫১৪)। তবে ‘ হরিতালী কাগজ ‘ নামে পরিচিত তুলট কাগজে লেখা পুথি তখন ব্যাপক সমাদৃত ছিল। এ কাগজ যত মজবুত হতো, লেখাও তত সুন্দর দেখাত। কাব্য- সাহিত্যধর্মী পুথি এ ধরণের তুলট কাগজে লেখা হতো।

প্রাচীন পুথির লিপিশিল্প নির্ভর করতো প্রধানত কাগজ, কালি ও কলমের উপর। শিল্পী যতই দক্ষ হোক না কেন এ তিনটির একটির কমতি বা খারাপ হলেই  পুথির সৌন্দর্য নষ্ট হতো। লিপিকররা সাধারণত কোন পুথি দেখে নকল করতেন। তাতে ভুলভ্রান্তি থাকলে তাও হুবহু লিপিবদ্ধ হত। তাই পুথি শেষে লিখা হতো – ‘যৎ দৃষ্টং তৎ লিখিতং। লিখ্যং দোষঃ নাস্তিক ‘।অর্থাৎ যা দেখেছি, তাই লিখেছি,লেখকের কোনো দোষ নেই। আবার অনেক পুথি- লেখক পুথির পুরানো শব্দ ও বাক্য কাল উপযোগী করে পাল্টে দিতেন। পড়তে না পারলে ইচ্ছে মতো শব্দ বসিয়ে দিতেন। এতে অনেক পুথির অর্থোদ্ধার করা কষ্টকর হত। অনেক লিপিকর আবার পুথির কোনো অংশে বানান ভুল হয়েছে দেখলে, সেই অংশ শুধু কেটেই ক্লান্ত হতেন না; এতে নানা ফুল- পাখি- গাছ- লতাপাতা- জীবজন্তুর ছবি এঁকে দিতেন। কোনো কোনো  পুথিতে লিপিকররা বোর্ডার চতুঃসীমা নির্দেশক ছবি দিতেন।

প্রাচীনকালে  পুথিকররা নিজেরাই নিজেদের কালি তৈরি করে নিতেন। ‘ হানিফার লড়াই ‘ এ পুথিকার লেখেন,—

‘ হীন ছদর আলী লেখে দিয়া নিজ কালি/

আছল অশুদ্ধ মোরে না দিবেন্ত গালি।।’

– (পুথি নং ৩৬৫/৩৮৬, ঢা.বি. গ্রন্থাগার)।তখন কুঠির শিল্পের ন্যায় ঘরে ঘরে কালি তৈরি করা হতো। কাজল বা কাঠ কয়লার গুঁড়ো, তিল- ত্রিফলার রস, গাবফল, লৌহচূর্ণ,ভৃঙ্গ  ও কলাগাছের ছাল, চন্দন কাষ্ঠ, জবাফুলের কুঁড়ি, গোমূত্র ইত্যাদি নানাধরণের বস্তু জারিত করে কালি তৈরি করা হতো। তখন কাল কালি,লাল কালি, কষ কালি, ভূষা কালি ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ ও ধরণের কালি ব্যবহৃত হতো। চোষ কাগজ বা ব্লটিং পেপার তখন  ছিল না। কোথাও কালি বেশি পড়ে গেলে ‘বালির পুঁটলি’ দিয়ে তা শুষে নেয়া হতো। এদেশের লোকগুলো যে সেই প্রাচীনকাল থেকে কালি তৈরি করতে জানতো, তার প্রতিধ্বণি শুনতে পাই বিশিষ্ট লিপিবিজ্ঞানী বুলার এর কণ্ঠে, “খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকেও ভারতীয়রা কালি তৈরি করতে জানতো”। (উদ্বৃতি- লোকশিল্পের বৃত্তে– ত্রিপুরা বসু। সূচনা কালচারাল সেন্টার, ৩ অরনেট ফাস্ট লেন, কলকাতা, এপ্রিল ২০০৭, পৃষ্ঠা-৫)। তখন কলম হিসেবে ব্যবহৃত হতো বাঁশের কঞ্চি, শর বা পাখির পালক। ঊনবিংশ শতকের প্রারম্ভে পুথির অনুলিপি তৈরির দক্ষিণা ( পারিশ্রমিক)  ছিল ৩২০০০ অক্ষরের জন্য ১২ আনা থেকে ১( এক) টাকা মাত্র। (পুথির দিনকাল — শ্যামল বেরা, বারণরেখা – সম্পাদনা -অপ্রপ বসু। দ্বিতীয় প্রকাশ-২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩, ১২/২ সরশুনা মেইন রোড,কলকাতা, পৃষ্ঠা -১৯৭)। তবে ছাপাখানার ব্যাপক প্রসারের ফলে ঊনবিংশ শতকে পুথি- সাহিত্যের নব উন্মেষ ঘটে। এ সময় থেকে হস্তলিখিত পান্ডুলিপি বা পুথির ব্যবহার ক্রমে লোপ পেতে থাকে এবং এর জায়গা দখল করে নেয় মুদ্রিত পুথি। এসময় কোলকাতার শোভাবাজার কেন্দ্রিক বিশেষ ধরনের পুথি বা বটতলার পুথির প্রচলনের ফলে ‘পুথি’ শব্দটি বিভ্রান্তির শিকার হয়।

পুথি সাধারণত দু’ধরনের-(০১) কবির হস্তলিখিত মূল রচনা (ঙৎরমরহধষ গধহঁংপৎরঢ়ঃ ও (০২) লিপিকারের অনুলিপি (ঈড়ঢ়রবফ গধহঁংপৎরঢ়ঃ)। প্রথম ধরনের পুথি এখন আর পাওয়া যায় না। লিপিকারের অনুলিপি নিয়েই আমাদের পুথির জগৎ- যা থেকে বটতলার পুঁথি বা ছাপানো পুথির উদ্ভব। পুথির বিষয়বস্তু নানা ধরনের হতে পারে — যেমন কাব্যসাহিত্য, চরিতকাব্য, মহাকাব্য, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য,  ধর্মকথা, জঙ্গনামা, নবী কাহিনি, দেব- দেবী- পীর-আউলিয়া বন্দনা, তন্ত্রমন্ত্র, পূজাবিধি, রাজবন্দনা, পাচালি, পদাবলী ইত্যাদি।

বলা হয়ে থাকে, ‘পুথি’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পুস্তক’ থেকে। তবে প্রাকৃত ‘পুত্থিয়া’, হিন্দি ‘পোথী’, অসমীয়া ‘পুথী, ফরাসি ‘পুস্তিন’ও যে বাংলা ‘পুঁথি’ বা ‘পুথি’ শব্দের প্রচলনে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে নি তা বলা যাবে না।প্রাচীন হস্তলিখিত পুথি যদিও লিখিত সাহিত্য, তথাপি এর প্রস্তুতিকর্মের প্রতিটি পর্যায়ে লোকায়ত উদ্যোগ দৃষ্টিগ্রাহ্য হতো। পুথির ভেতরের প্রতিটি পাতা চারদিকে মার্জিন রেখে সাজানো হতো, যাতে পৃষ্ঠা ওল্টানো মাত্রই লেখাগুলো দৃশ্যমান হয় এবং পাতার বাইরের কিছু অংশ ছিঁড়ে গেলেও যাতে মূল লেখা নষ্ট না হয়। সাধারণ পুথির লেখা  বর্তমান বইয়ের মতোই  বামদিক থেকে ডানদিকে  অগ্রসর হতো, তবে ইসলামী পুঁথিগুলো ডানদিক থেকে বামদিকে লিখিত হতো। পাতায় কোন লাইন না টেনে সমান্তরালভাবে প্রতি পাতায় সম- সংখ্যক ছত্র সন্নিবেশ করে নিপুণ পটুয়ার মতো পুথি যেভাবে লিপিবদ্ধ হতো, তা আজও আমাদের বিস্ময়ে হতবাক করে। প্রাচীন পুথিতে আধুনিক কালের মতো সূচিপত্র প্রদানের রীতিও প্রচলিত ছিল। ‘ পদ্মাবতী ‘ পুথিতে বর্ণিত বিষয়ের পূর্ণ সূচী পাওয়া যায়। ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুথি নং-২৯৫/৬৩৩)।

প্রাচীন পুথিতে উভয় পৃষ্ঠায় লেখার রেওয়াজ ছিল। তবে কাগজ খুব পাতলা হলে উভয় পৃষ্ঠায় না লিখে কাগজ দু’ভাঁজ করে উভয় পাশে লিখা হতো।পুথির পত্রান্ক প্রতি পৃষ্ঠায় না লিখে সাধারণত পাতার দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লেখা হতো। আবার এমন পুথিও দেখা গেছে,  যেগুলোতে লিপিকর পত্রান্ক নির্দেশ করতো না। পুথির দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, অলন্করণ, ভুল-ক্রটি সংশোধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা চিহ্নের প্রয়োগ হতো। প্রাচীন পুথির পাতাগুলো ধারাবাহিকভাবে একের পর এক সাজানো, আলগা ও সেলাইবিহীন ছিল বিধায়, সেগুলোকে কাঠের পাটা দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হতো। এক্ষেত্রে শাল বা সেগুন কাঠের পাটা ব্যবহৃত হতো। এছাড়া  কোনো কোনো পুথির বহিরাবরণ হিসেবে চামড়ার খোলের ব্যবহারও চোখে পড়তো। এসব কাঠের পাটা বা চামড়ার আবরণে বাইরের দিকে পুথির বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত নানা নকশা বা চিত্র খোদাই বা অঙ্কিত করা হতো। ভেতরের দিকে থাকতো নানা লতা-পাতার চিত্র এবং হলুদ, হালকা লাল ও অগভীর কালো রঙের চিত্র। ধারণা করা হয়,  সতের/ আঠারো শতকের লোক- শিল্পের প্রভাব এসব চিত্রে পরিস্ফুট। (অ এবহবৎধষ এঁরফব ঃড় উবপপধ  গঁংবঁস, উযধশধ, ১৯৬৪,চধমব-৪৮)। পুথি যে সবসময় সাদামাটা হতো তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় কিছু চিত্রিত ও অলংকৃত পুথির সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগৃহীত পথি নং -২৭৯৯, ‘মনসামঙ্গল’, ‘পদ্মপুরাণ ‘ পুথি। জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কয়েকটি পুথির পাতায় রঙিন চিত্র আমি নিজে  প্রত্যক্ষ করেছি। পুথির সাইজ হতো দৈর্ঘ্যে ১০ থেকে ১৮ ইঞ্চি এবং প্রস্হে ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি। বই আকারে সেলাই করা পুথির প্রচলন শুরু হয় আঠারো শতকে।

প্রাচীনকালে লিখিত বাংলা পুথিগুলোর বেশির ভাগই ছিল বাংলা হরফে। তবে কিছু বাংলা পুথি আরবি হরফেও লিখিত পাওয়া গেছে। যতীন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘বাংলা পুথির তালিকা সমন্বয় ‘ গ্রন্থে এ ধরনের আরবি হরফে লিখিত বাংলা পুথির নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়। (বাংলা পুঁথির তালিকা সমন্বয় -১ম খ– যতীন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য, ১৯৭৮, পৃষ্ঠা-৩৮১)। উড়িষ্যা রাজ প্রদর্শনশালা’ ভুবনেশ্বর’ এ ওড়িয়া অক্ষরে অনেক বাংলা পুথি সংরক্ষণ করা আছে। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৩৮১)। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের সংগ্রহে বাংলা অক্ষরে একটি উর্দু পুথির নমুনা পাওয়া গেছে। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুথি নং- ৫৮,পৃষ্ঠা-১৭৯, পত্র- ৯১-১১৫)। কাইথি লিপিতে লেখা ক্ষেমানন্দের ‘ মনসামঙ্গল’এর দুটি কপি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পুথিশালায় সংগৃহীত আছে। আঠারো -উনিশ শতকে সিলেট অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিকশিত ‘নাগরী লিপিতে’ প্রচুর পুথি লিখিত হয়েছে। নাগরী লিপিতে পুথি লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন — শীতালং শাহ্, আরকুম শাহ্, শাহনুর শাহ্, ইরফান আলী, ভেলা শাহ্, মুহাম্মদ খলিল,  আবদুল কাদির শাহ্, ওয়াহেদ আলী শাহ্, আছক আলী, মুন্সি সাদেক আলী, মুন্সি আবদুল করিম, ছৈয়দুর রহমান,শাহ্ আরমান আলী, দীন ভবানন্দ প্রমুখ।

প্রাচীন ও মধ্যযুগের সঙ্গে আধুনিক যুগের সেতুবন্ধন হচ্ছে পুথি। এ কারণে সুদূর অতীত থেকেই পুথি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রচেষ্ঠা দৃষ্ট হয়। এদেশে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রথম পুথি সংগ্রহে হাত দেন কয়েকজন বৃটিশ নাগরিক। তাদের মধ্যে বাংলা ব্যাকরণের আদি রচয়িতা  নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড (১৭৫১-১৮৩০) অন্যতম। তিনি ১৭৭২ থেকে ১৭৮৩ সালে বাংলাদেশে অবস্থানকালে ১২টি বাংলা পুথি সংগ্রহ করেন, যা পরে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে অর্থের বিনিময়ে প্রদান করেন। এর মধ্যে রামায়ণ, মহাভারত, চ-ীমঙ্গল ও কালিকামঙ্গল উল্লেখযোগ্য। হ্যালহেডের ব্যকরণের বাংলা হরফ নির্মাতা চার্লস উইলকিন্স ১৭৮৬ সালের দিকে ‘চ-ীমঙ্গল’ ও ‘বিদ্যাসুন্দর’ নামে দুটি পুথি সংগ্রহ করে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রদান করেন। বৃটিশ গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিচার্ড জনসন ১৮০৭ সালে এদেশ থেকে সংগৃহীত ১৪টি বাংলা পুথি ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রদান করেন। তার পুথিগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশীরাম দাশের ‘ মহাভারত’, লোচন দাশের ‘দুল্লভসার’ ‘চৈতন্যতত্ত্বসার’ ও ‘নামসংকীর্ত্তন’। ১৭৯৩ সালের নভেম্বরে বঙ্গদেশে আসেন উইলিয়াম কেরী (১৭৬১-১৮৩৪)। তার নেতৃত্বে ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্রীরামপুর কলেজ গ্রন্থাগার (কেরী লাইব্রেরি) এ খ্রিষ্টান মিশনারীগণ তিন হাজারেরও বেশি বই ও হস্তলিখিত পুথি দান করেন। সুনীল কুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১৯২১ সালে সংগৃহীত পুস্তক তালিকায় আমরা ৫১টি বাংলা পুথির নাম পাই। (বাংলার নবজাগরণে উইলিয়াম কেরী ও তার পরিজন– সুনীল কুমার চট্টোপাধ্যায়, ১৯৭৪ ইং,পৃষ্ঠা -১৬৭)। সে সংগ্রহে ছিল ‘মনসার ভাসান’, চন্ডী, জৈমুনী ভারত, চৈতন্য মঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত পুথি।

১৯০১ সালে বাংলা পুথির প্রথম তালিকা প্রকাশিত হয় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তত্বাবধানে। কিন্তু বিংশ শতকের আগে বাংলা পুথির কোনো বিবরণ প্রকাশিত হয় নি। ১৩০৪বঙ্গাব্দে (১৮৯৭-৯৮ খ্রিঃ) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকায় প্রথম নগেন্দ্রনাথ বসুর ২৩১টি পুথির সংক্ষিপ্ত বিবরণ মুদ্রণের মাধ্যমে পুথির বিবরণ প্রকাশের পথযাত্রা শুরু হয়। গ্রন্হাকারে বাংলা পুথির প্রথম বিবরণ  প্রকাশিত হয় ১৯১৩ খ্রিঃ আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ সংকলিত ‘ বাংলা পুথির বিবরণ- প্রথম খ-, দ্বিতীয় সংখ্যা  প্রকাশের মাধ্যমে। এতে ১৬৭টি পুথির বিবরণ সংকলিত হয়।

এদেশে সরকারি প্রচেষ্ঠায় ১৮৬৮ সালে প্রথম পুথি সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় এশিয়াটিক সোসাইটি। বৃটিশ গভর্ণর জেনারেল লর্ড লরেন্সের অনুদানকৃত ৩২০০/ টাকা দিয়ে শুরু করা এ কাজে প্রথম দায়িত্ব দেয়া হয় পুরাতত্ত্ববিদ রাজেন্দ্র লাল মিত্র ও পরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে। রাজেন্দ্র এ কাজে ততটা সফল না হলেও হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় অনেক দুস্প্রাপ্য বাংলা পুথি সংগৃহীত হয়। ১৯৪১ সালে প্রকাশিত এশিয়াটিক সোসাইটির ‘পুথি বিবরণী’তে এ ধরনের ৩৬৭টি পুথির বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। নগেন্দ্র নাথ বসু প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার), সনৎকুমার রায় ২০০০ (দুই হাজার) এবং হরিদাস পালিত অনেক পুথি সংগ্রহ করে ‘কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পুথিশালা’য় দান করলেও এসবের মধ্যে বাংলা পুথির সংখ্যা  ছিল নিতান্ত নগন্য। তবে মনীন্দ্র মোহন বসু সম্পাদিত ‘ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংগৃহীত পুথি তালিকায় ‘(১ম ও ২য় খ-, ১৯৪১ ও ১৯৬৩)মোট ৫৯২৭টি বাংলা পুথির বিবরণ আছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিশ্বভারতী’ বিভিন্ন ভাষায় পুথি সংগ্রহের কাজ করে। কবিগুরু পেশাদার পুথি সংগ্রাহক না হওয়া সত্বেও কাশী থেকে সংগৃহীত বেশ কিছু সংস্কৃত পুথি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে দান করেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথের কাছ থেকে পাওয়া রবীন্দ্রনাথের সংগৃহীত ৫১টি ছাপা মুসলমানী পুথি বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আজও সংরক্ষিত রয়েছে। এতে অষ্টাদশ- উনবিংশ শতকে মুসলমান লেখকদের রচিত প্রেমকাহিনি, ধর্মকথা, পীরগাথা স্থান পেয়েছে। ১৯৪৭ সালের জুলাইয়ের এক হিসেবে দেখা যায়, এ সময় পর্যন্ত বিশ্বভারতীতে ১৪৩৯টি বাংলা পুথি ছিল। ওপার বাংলার বীরভূমের সিউড়ীর শিব রতন মিত্রের নেশা ছিল পুথি সংগ্রহ। তিনি তার পারিবারিক লাইব্রেরী রতন লাইব্রেরিতে ৪৬৬৭টি পুথির সমাবেশ ঘটান। তবে তার এবং তৎপুত্র গৌরিহর মিত্রের মৃত্যুর পর এই সংগ্রহশালা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এই সময় এ পুথিশালার ৩৫৫০টি পুথি বিশ্বভারতী কিনে নেয়।

চট্টগ্রামের আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ আজীবন পুথি সংগ্রহ করেন। পুথি সাহিত্যের এ অপ্রতিদ্বন্দ্বী সংগ্রাহক, পাঠোদ্ধারকারক এবং গবেষক- বিশ্লেষক প-িত প্রায় সহস্রাধিক পুথি আবিষ্কার করেছেন এবং এসব পুথি অসাধারণ দক্ষতার সাথে সম্পাদনা করেছেন। তার আবিস্কৃত পুথি নিয়ে তিনি প্রায় ৬ (ছয়) শতাধিক প্রবন্ধ লিখে প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্য বিষয়ে পাঠকদের অবহিত করেন। তার সংগৃহীত পুথির মধ্যে আছে আবদুন নবীর ‘আমীর হামজা’ (রচনা – ১৮৫৯), শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ জোলেখা’ (রচনা -১৭৩২), সৈয়দ সুলতানের ‘ওফাত-ই-রসুল’ (লিপিকাল-১৮৩৯), মোহাম্মদ খানের ‘কেয়ামত নামা’, শেখ ফয়জুল্লাহর ‘গোরক্ষবিজয়’ (১৭৭৭), আলী রেজা ওরফে কানু ফকিরের ‘জ্ঞান সাগর’, আলাওলের’পদ্মাবতী’  (লিপিকাল-১৮৭৮), মোহাম্মদ খানের ‘মক্তুল হোসেন’ (লিপিকাল-১৭৭৪), মোহাম্মদ ছদর আলীর ‘হানিফার লড়াই ‘(১৭২৪), দৌলত উজির বাহরাম খানের ‘লাইলী মজনু’ (১৮২৯), দৌলত কাজীর ‘সতীময়না – লোর চন্দ্রানী’, ( লিপিকাল-১৭৫৪), ফকির গরীবুল্লাহর ‘সোনাভান’ ইত্যাদি।  তার সংগৃহীত ৫৮৫টি মুসলিম বাংলা পুথি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেছেন। তার সংগৃহীত ৩৩৮টি পুথি রাজশাহী বরেন্দ্র মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। মধ্য যুগের সাহিত্য গবেষক ড. এনামুল হক গবেষণার প্রয়োজনে কিছু পুথি সংগ্রহ করেন। তার  সংগৃহীত ২৩টি বাংলা পুথি বরেন্দ্র রিসার্চ যাদুঘরে আছে। বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির প্রতিষ্ঠাতা শরৎ কুমার রায় সংগৃহীত ১১১০টি পুথিও এ মিউজিয়াম গ্রন্থাগারে রয়েছে। অধ্যাপক মনসুর উদ্দিনের সংগ্রহে কিছু পুথি ছিল। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদেও অনেক পুথির সংগ্রহ আছে। ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ‘পরিষৎ পরিচয়’ গ্রন্হ থেকে জানা যায়, এ সময় পরিষদ পুথিশালায় সংরক্ষিত বাংলা পুথির সংখ্যা ছিল ৩২৪৬টি (পরিষৎ পরিচয়Ñ ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, ১৩৫৬, পৃষ্ঠা -৩০)। শ্রীহট্ট সাহিত্য পরিষদে ৪৭৯টি বাংলা পুথি সংগৃহীত ছিল বলে যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য প্রকাশিত একটি তালিকা থেকে জানা যায়। (বাংলা পুঁথির তালিকা সমন্বয় -১ম খ- — অধ্যাপক যতীন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য, এশিয়াটিক সোসাইটি, কোলকাতা, ১৯৭৮)। ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পুথি সংগ্রহ সমিতি’ গঠিত হলে ঢাকা যাদুঘরের কিউরেটর নলিনীকান্ত ভট্টাশালীকে এর সম্পাদক নিয়োগ করা হয়। তার নেতৃত্বে ১৭০০০ (সতের হাজার) বাংলা ও সংস্কৃত পুথি সংগৃহীত হয়। বাছাইয়ের পর এর কিছু পুথি বাংলাদেশের জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক পুথি সংরক্ষিত আছে। বাংলা একাডেমীও কিছু পুথি সংগ্রহ করেছে। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী এ সংখ্যা ৩৪৪১টি।

প্রাচীন পুথি ভূর্জপত্র, তালপাতা, তেরেট পাতা, হরিতালী কাগজ  ইত্যাদি ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী উপাদানে লেখা হতো বলে স্যাঁতসেঁতে বিরূপ আবহাওয়ায় তা নষ্ট হয়ে যেত। তা সত্ত্বেও প্রতিকূলতার বিপ্রদ্ধে লড়াই করে যে সব পুথি আজও টিকে আছে, তা আমাদের বাংলা সাহিত্যের মহামূল্যবান সম্পদ। প্রাচীন পুথি তা খ-িত, পূর্ণাঙ্গ কিংবা একটি মাত্র পাতা- যাই হোক না কেন এর ঐতিহাসিক মূল্য কম নয়। এর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে আমাদের বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় ঐতিহ্য। ‘চর্যাপদ’ ও ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ এর কথা আমরা কে না জানি! অথচ এ দুটি পুথিও খ-িত ও বিচ্ছিন্ন। আর এগুলো আবিষ্কারের পরই আমাদের  নজরে আসে, প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের অনেক অনাহরিত অধ্যায়। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৯ সালে নেপালের রাজদরবার থেকে ৪৬টি চর্যাপদ তথা বৌদ্ধ গান ও দোহা উদ্ধার করেন, যা বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। চর্যাপদের ভাষা দুর্বোধ্য হলেও এগুলো যে বাংলা গীতিকাব্য তথা বাংলা পুথির আদিপ্রপ– তাতে সন্দেহ নেই। শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের পুথি উদ্ধারের ফলে মধ্য যুগের কীর্তনধারার সুস্পষ্ট প্রুপ আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ এর একমাত্র পুথিটি কোলকাতার ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুথিশালা’য় সংরক্ষিত আছে। অনুমানিক চর্তুদশ শতকে লিখিত এই পুথিটি বাংলা লিপির প্রাচীনতম নির্দশন। দৌলত কাজীর ‘সতী ময়না ও লোর চন্দ্রানী’, আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ মধ্য যুগের কাব্য সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বস্থানীয় ‘পুথি’। মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন,” নর-নারীর প্রণয়কে উপলক্ষ করে মধ্যযুগে যে আখ্যায়িকা- কাব্য গড়ে উঠেছিল, তাকে ‘রোমাঞ্চ কাহিনি কাব্য’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ‘সতী ময়না ও লোর চন্দ্রানী’ এই ধারারই শ্রেষ্ঠ কাব্য ” (সতী ময়না ও লোর চন্দ্রানী– সম্পাদনায়- মযহাপ্রল ইসলাম ও মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, নওরোজ কিতাবিস্হান, ঢাকা -১৯৭৩, পৃষ্ঠা -৩৬)। আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ সম্পর্কে ক্ষেত্রপাল বলেন,”পদ্মাবতী কাব্যকে মাঝে মাঝে মধ্যযুগের বাংলা কাব্যের বাতায়ন নামে চিহ্নিত করার বাসনা জাগে। “(প্রাচীন কাব্য সৌন্দর্য জিজ্ঞাসা ও নব মূল্যায়ন– ক্ষেত্র গুপ্ত। পুস্তক বিপণী, কোলকাতা, পৃষ্ঠা -১৭৮)। এধরণের অসংখ্য পুথি আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদেশের পথে- প্রান্তরে। অতীত বর্তমানের সেতু- বন্ধনের প্রয়োজনে আমাদের  সাহিত্য – সংস্কৃতির উৎস – মুখের খোঁজে, প্রাচীন পুথির শেকড়ের সন্ধানে ধূলিমলিন আস্তরণ থেকে এসব খুঁজে বের করতে হবে।

 

তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে