এখন সময়:দুপুর ২:৫৯- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ২:৫৯- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

বাঁশি: চিরন্তন বাংলার গৌরব ও  ঐতিহ্যের নিজস্ব সুর-অষ্টম পর্ব

নাজমুল টিটো

 

‘বীথিকা’ (১৯৩৫) কাব্যে কবি ব্যক্তি জীবনের স্মৃতিকথা, গভীর জীবন জিজ্ঞাসা, সর্বোপরি মৃত্যু দর্শনের সুরের আবেশ বিশ্বলোকে ছড়িয়ে দিতে অন্যতম প্রতীকী উপাদান বাঁশিকে ব্যবহার করেছেন প্রাসঙ্গিকভাবে।

(২২১)

“সে-মুহূর্ত পরিপূর্ণ; নাহি তাহে বাধা,

দ্বন্দ্ব নাই, নাই ভয়,

নাইকো সংশয়।

সে-মুহূর্ত বাঁশির গানের মতো;

অসীমতা তার কেন্দ্রে রয়েছে সংহত।”

[দুজন, বীথিকা]

(২২২)

“দিগন্তরে পথিকের বাঁশি যায় শোনা।

উভয়ের আনাগোনা

আভাসেতে দেখা যায় ক্ষণে ক্ষণে

চকিত নয়নে।

পদধ্বনি শোনা যায়

শুষ্কপত্রপরিকীর্ণ বনবীথিকায়।”

[বিচ্ছেদ, বীথিকা]

(২২৩)

“উৎসবহীন কৃষ্ণপক্ষে

আমার বক্ষোমাঝে

শুনিতেছে কে সে কার উদ্দেশে

 

সাহানায় বাঁশি বাজে।”

[আসন্ন রাতি, বীথিকা]

(২২৪)

“বনের পথে কে যায় চলি দূরে,

বাঁশির ব্যথা পিছন-ফেরা সুরে

তোমায় ঘিরে হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে

ফিরিছে ক্রন্দিয়া।”

[ছবি, বীথিকা]

(২২৫)

“মাঝে মাঝে

সুদূরে রেলের বাঁশি বাজে;

প্রহর চলিয়া যায়, বেলা পড়ে আসে,

ঢং ঢং ঘণ্টাধ্বনি জেগে ওঠে

দিগন্ত-আকাশে।”

[সাঁওতাল মেয়ে, বীথিকা]

(২২৬)

“খ্যাতিস্মৃতির পাষাণপটে রাখে না যাহা রেখা,

ফাল্গুনের সাঁঝতারায় কাহিনী যার লেখা,

সে ভাষা মোর বাঁশিই শুধু জানে-

এই যা দান গিয়েছে মিলে গভীরতর প্রাণে,”

[অন্তরতম, বীথিকা]

 

 

(২২৭)

“আরবার কোলে এল শরতের

শুভ্র দেবশিশু, মরতের

সবুজ কুটীরে। আরবার বুঝিতেছি মনে- বৈকুণ্ঠের সুর যবে বেজে ওঠে মর্তের গগনে

মাটির বাঁশিতে, চিরন্তন রচে খেলাঘর

অনিত্যের প্রাঙ্গণের ‘পর,”

[মাটিতে-আলোতে, বীথিকা]

 

# ‘পত্রপুট’ (১৯৩৬) কাব্যগ্রন্থ যে কবিতা দিয়ে শুরু তাতে ‘অপূর্ব সুর’ বেজে ওঠার কথা শোনা যায়। সেই সুর কবি তাঁর প্রিয় বাঁশি দিয়ে তাঁর জীবনের সৌন্দর্য চেতনা, দেহ থেকে দেহাতীত প্রেমচেতনা এবং জীবনদেবতাচেতনা স্বরূপে ছড়িয়ে দিয়েছেন সমগ্র কাব্যে।

(২২৮)

“বাঁশি বাজল।

আমার দুই চক্ষু যোগ দিল

কয়খানা হালকা মেঘের দলে।”

[দুই, পত্রপুট]

(২২৯)

“প্রান্তরে আপন ছায়ায় মগ্ন

একলা অশথ গাছ,

সূর্য-মন্ত্র-জপ-করা ঋষির মতো।

তারই তলায় দুপুরবেলায়

ছেলেটা বাজায় বাঁশি

আদিকালের গ্রামের সুরে।

সেই সুরে তাম্রবরন তপ্ত আকাশে

বাতাস হুহু করে ওঠে,”

[চার, পত্রপুট]

(২৩০)

“আকাশের আলোয় আজ যেন

মেঠো বাঁশির সুর মেলে দেওয়া।

সব জড়িয়ে মন ভুলেছে।

বেদমন্ত্রের ছন্দে আবার মন বললে-

মধুময় এই পার্থিব ধূলি।”

[পাঁচ, পত্রপুট]

(২৩১)

“সেদিনকার বসন্তের বাঁশিতে

লেগেছিল যে প্রিয়বন্দনার তান

আজ সঙ্গে এনেছি তাই,

সে নিয়ো তোমার অর্ধনিমীলিত

চোখের পাতায়,

তোমার দীর্ঘনিশ্বাসে।

————————————–

ওগো চিরন্তনী,

আজ আমার বাঁশি তোমাকে বলতে এল- যখন তুমি থাকবে না তখনো তুমি থাকবে

আমার গানে।”

[চৌদ্দ, পত্রপুট]

 

# গদ্য ছন্দে লেখা রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে ‘শ্যামলী’ (১৯৩৬)। এরপর দু’একটি বিচ্ছিন্ন কবিতা ছাড়া কবি আর গদ্যছন্দের চর্চা করেন নি। ১৯৩৫ সালের ৭ই এপ্রিল উত্তরায়ণ, শান্তিনিকেতন থেকে ইন্দিরা দেবীকে লেখা এক পত্রের উপসংহারে কবি জানিয়েছেন-

“একটি মাটির ঘর বানাতে লেগেছি। জন্মদিনের মধ্যে সেটা শেষ হবে বলে কথা আছে। সেই সময়ে ঐ ঘরে প্রবেশ করব, তারপরে শেষ পর্যন্ত আর বাসা বদল করব না এই আমার অভিপ্রায়।”

এই মাটির ঘর সম্পর্কে ‘শেষসপ্তকে’র চুয়াল্লিশ সংখ্যক কবিতায় কবি লিখেছেন-

“আমার শেষ বেলাকার ঘরখানি বানিয়ে রেখে যাব মাটিতে তার নাম দেব শ্যামলী।”

‘শ্যামলী’র অধিকাংশ কবিতা এই মাটির বাসা, কবির শেষ বেলাকার ঘরখানিতে বসে লেখা।

 

এই কাব্যে কবি প্রেম, সৌন্দর্য চেতনা ও তাঁর দর্শনকে ফুটিয়ে তুলতে ভাষা ও চিন্তায় আধুনিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং তাঁর কবিসত্তার অন্তরালে বিশ্বকবির সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে ‘বাঁশিওয়ালা’ বাংলাদেশের অতি সাধারণ এক মেয়ের প্রশ্নে তা আর আড়ালে থাকে নি।

(২৩২)

“ওগো বাঁশিওআলা,

বাজাও তোমার বাঁশি,

শুনি আমার নূতন নাম”

-এই বলে তোমাকে প্রথম চিঠি লিখেছি,

মনে আছে তো?

 

আমি তোমার বাংলাদেশের মেয়ে।

সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দেন নি

আমাকে মানুষ করে গড়তে-

রেখেছেন আধা আধি করে।

——————————————

বেলা তো কাটে না,

বসে থাকি জোয়ার-জলের দিকে চেয়ে-

ভেসে যায় মুক্তি-পারের খেয়া,

ভেসে যায় ধনপতির ডিঙা,

ভেসে যায় চল্লি বেলার আলোছায়া।

এমন সময় বাজে তোমার বাঁশি

ভরা জীবনের সুরে।

মরা দিনের নাড়ীর মধ্যে

দব্দবিয়ে ফিরে আসে প্রাণের বেগ।

——————————————–

বাঁশিওআলা,

বেজে ওঠে তোমার বাঁশি-

ডাক পড়ে অমর্তলোকে;

সেখানে আপন গরিমায়

উপরে উঠেছে আমার মাথা।

———————————————-

বাঁশিওআলা,

হয়তো আমাকে দেখতে চেয়েছ তুমি।

জানি নে ঠিক জায়গাটি কোথায়,

ঠিক সময় কখন,

চিনবে কেমন করে।

———————————————

ওগো বাঁশিওআলা,

সে থাক তোমার বাঁশির সুরের দূরত্বে।”

[বাঁশিওয়ালা, শ্যামলী]

(২৩৩)

“গাড়ি চলেছে ঘটর ঘটর, বেজে উঠছে বাঁশি, উড়ে আসছে কয়লার গুঁড়ো,

কেবলই মুখ মুছছি রুমালে।

——————————————-

আবার বাঁশি বাজল,

আবার চলল গাড়ি ঘটর ঘটর।

শেষে দেখা দিল হাবড়া স্টেশন।

চাইলেম না জানালার বাইরে,

মনে স্থির করে আছি-

খুঁজতে খুঁজতে

আমাকে আবিষ্কার করবে একজন এসে,

তার পরে দুজনের হাসি।”

[বঞ্চিত, শ্যামলী]

(২৩৪)

“যাব আমি।

তোমার ব্যথাবিহীন বিদায়দিনে

আমার ভাঙা ভিটের ‘পরে গাইবে দোয়েল লেজ দুলিয়ে

এক শাহানাই বাজে তোমার বাঁশিতে,

ওগো শ্যামলী, যেদিন আসি,

আবার যেদিন যাই চলে।”

[শ্যামলী, শ্যামলী]

 

# খাপছাড়া (১৯৩৭) একটি শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ। ৭৬ বছরে এসে কবি তাঁর কাব্য প্রবাহের পূর্বাপর রচনারীতি ও গাম্ভীর্যের খোলস খসিয়ে আচমকা ছন্দে ছন্দে নতুন ঢংয়ে যেভাবে ছড়া আওড়াতে শুরু করেন তা ‘খাপছাড়া’র চেয়ে যুৎসই নামকরণ আর কী হতে পারে? এর কৈফিয়ৎস্বরূপ কবি বন্ধুবর রাজশেখর

বসুকে ‘খাপছাড়া’ উৎসর্গ করে উৎসর্গপত্রে এই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য এভাবে উল্লেখ করেন,

“চতুর্মুখের চেলা কবিটিরে বলিলে

তোমরা যতই হাস, রবে সেটা দলিলে।

দেখাবে সৃষ্টি নিয়ে খেলে বটে কল্পনা,

অনাসৃষ্টিতে তবু ঝোঁকটাও অল্প না।”

 

‘খাপছাড়া’ কাব্যে ১০৫টি ছড়াকবিতা ও কবির হাতে আঁকা কয়েকটি ছবি প্রাসঙ্গিকভাবেই স্থান পেয়েছে। তেমনি ৩৯ সংখ্যক কবিতায় বাঁশিতে বরকন্দাজের ভুল তানও খাপছাড়া মনে হয় নি।

(২৩৫)

“সভাতলে ছুঁয়ে

কাৎ হয়ে শুয়ে

নাক ডাকাইছে সুলতান,

পাকা দাড়ি নেড়ে

গলা দিয়ে ছেড়ে

মন্ত্রী গাহিছে মূলতান।

এত উৎসাহ দেখি গায়কের

জেদ হল মনে সেনানায়কের-

কোমরেতে এক ওড়না জড়িয়ে

নেচে করে সভা গুলতান।

ফেলে সব কাজ

বরকন্দাজ

বাঁশিতে লাগায় ভুল তান।”

[ ৩৯, খাপছাড়া ]

(চলবে-)

 

লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে