অমল বড়ুয়া :
যাত্রা হচ্ছে প্রাচীন লোকসাহিত্যের একটি ক্রমবিবর্তিত রূপ। যাত্রা একটি জনপ্রিয় লোকনাট্য ধারা। অতি নাটকীয় ভাবভঙ্গি ও আবৃত্তির মাধ্যমে প্রায়ই যাত্রার উপস্থাপনা করা হয়ে থাকে। যাত্রা বাংলাদেশের লোকজ ও মৌলিক সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী অঙ্গ। সাধারণ মানুষের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে যাত্রা অতীতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। যাত্রাশিল্পী ও গবেষকরা মনে করেন, যাত্রা কেবল বিনোদন মাধ্যম নয়, লোকশিক্ষার বাহনও। নিরক্ষতার অনগ্রসর সমাজে যাত্রা পালন করছে ভ্রাম্যমাণ বিদ্যালয়ের ভূমিকাও। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে যাত্রাপালার বহুল প্রচলন দেখা যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, আসাম, ত্রিপুরা ইত্যাদি প্রদেশেও যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির শেকড় ‘যাত্রা’। আর যাত্রা শব্দের দ্বারা সাধারণত শোভাযাত্রা বা মিছিলকে নিদের্শ করে। বিভিন্ন উৎসব ও পূজা পার্বণের দিনে গ্রাম বা নগরের একশ্রেণির নৃত্যগীতি জানা লোক সকলকে আনন্দ দেয়ার জন্য বহু বিচিত্র সমারোহে রঙিন পোষাকাদি পরে নাচগান ও বাদ্যের তালে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে ঘুরে বেড়াত বা প্রদক্ষিণ করত। তাদের এই প্রদক্ষিণ থেকে যাত্রা শব্দটির উদ্ভব হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
এই প্রদক্ষিণ ও পরিক্রমার মাধ্যমে প্রদর্শিত নাচ-গান-অভিনয় লোকের কাছে যাত্রা নামে অভিহিত হয়। তবে সময়ের পালাবদলে প্রদক্ষিণ বা ঘুরে ঘুরে নাচ-গান ও অভিনয়ের ধারাটি নির্দিষ্ট মঞ্চে প্রদর্শিত হলেও তা ‘যাত্রা’ নামে সমধিক পরিচিত হয়ে আসছে। অর্থাৎ ধরন পাল্টালেও যাত্রা এই নামটি রয়ে গেছে।
নাট্যাভিনয়ের ক্ষেত্রে এই যাত্রা শব্দটি ঠিক কবে থেকে এবং কিভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে তার কোনো নির্দিষ্ট ইতিহাস জানা যায় না। অবশ্য অভিনয় ছাড়াও অন্যান্য অর্থে যাত্রা শব্দটির ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই ছিলো। গমনার্থক ‘যা’ ধাতু থেকে যাত্রা শব্দটি নিষ্পন্ন। যা অর্থ গমন করা, ত্র (ভাবে) ত্রা (স্ত্রী বাচক) বি.)। আর যাত্রার সাধারণ অর্থ প্রস্থান বা গমন। অগস্ত্য যাত্রা, তীর্থযাত্রা, ধর্মযাত্রা, রথযাত্রা, বিজয়যাত্রা ইত্যাদি এর উদাহরণ। এছাড়াও যাত্রা শব্দের আরও কিছু অর্থ রয়েছে। যেমন ব্যবহার, যাপন ও উৎসব। আর উৎসব অর্থে যাত্রা শব্দটির ব্যবহার ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকে পাওয়া যায়। গমন, প্রস্থান, নির্গমন; অতিবাহন; যাপন, নির্বাহ, দেবতাগণের উৎসবাদি দোলযাত্রা। ড. সুকুমার সেনের মতে, ‘যাত্রা শব্দের অর্থ ছিল পিছন পিছন যাওয়া, দলবেঁধে বা মিছিল করে যাওয়া।’ ড. আশরাফ সিদ্দিকীর মতে শব্দটি দ্রাবিড় থেকে এসেছে। কারণ দ্রাবিড়দের মধ্যে এখনো এমন অনেক উৎসব আছে যাকে বলা হয় ‘যাত্রা’ বা ‘যাত্র।’ গবেষক গৌরাঙ্গ প্রসাদ ঘোষের মতে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে স¤্রাট অশোক তার অষ্টম শিলালিপিতে উৎসব অর্থে যাত্রা ব্যবহার করেছেন।
খ্রীষ্টপূর্ব ২৩০ অব্দে স¤্রাট অশোক যাত্রা শব্দটি ব্যবহার করেন। তাঁর অষ্টম শিলালিপিতে বিহার ‘যাত্রা’র উল্লেখ পাওয়া যায়। বিহার ‘যাত্রা’য় নানা রকম আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকত। স¤্রাট অশোক তাঁর দশম অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে ধর্মযাত্রা করেছিলেন। এই ধর্মযাত্রা ছিল একপ্রকারের ধর্মানুষ্ঠান বা উৎসব। আবার খ্রীস্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দে বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর বুদ্ধের জন্মোৎসব উপলক্ষে রথযাত্রার আয়োজন করা হতো। পরবর্তীতে ‘রথযাত্রা’ নামক উৎসবটি অন্যান্য ভারতীয় ধর্মেও অনুসৃত হতে দেখা যায়। যেমন-জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা, যা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় সনাতনীয় ধর্মীয় উৎসব। ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতিতে যাত্রা শব্দটি খুবই প্রাচীন। বৌদ্ধ সাহিত্য জাতক কাহিনির বিভিন্ন বিবরণ থেকে নাট্যাভিনয়-রীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। অবদান শতকম: কুবলয় জাতকে উল্লেখ আছে- দক্ষিণাপথ থেকে আসা এক নাট্যাচার্য বুদ্ধের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। গীতি-বাদ্যনির্ভর নাট্যচর্চার ধারাবাহিকতা এখনো বাংলার বৌদ্ধ সমাজে প্রচলিত আছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বুদ্ধের জীবনীনির্ভর ‘বৌদ্ধ সন্ন্যাস’ বা ‘সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ’। এতে সংগীত-বাদ্যবাদন ও অভিনয়সহকারে বুদ্ধের জন্ম, বিবাহ, গৃহত্যাগ ও বুদ্ধত্বলাভসহ বুদ্ধজীবনের চুম্বক অংশ উপস্থাপন করা হয়। এর দ্বারা বুদ্ধের গুণগান প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে নাট্যাভিনয় করা ছিল একটি সাধারণ রীতি। বৌদ্ধরাই তাদের ধর্মসাধনার অন্যতম মাধ্যম রূপে নাটককে অবলম্বন করেছিলেন।
যাত্রা শব্দের প্রাথমিক অর্থ ছিলো পূজা বা উৎসব উপলক্ষে দেব-বিগ্রহ নিয়ে শোভাযাত্রা। রথযাত্রা, দোলযাত্রা ইত্যাদি, যাতে থাকত নাচ-গান ও দেবলীলা নিয়ে গীতিনাট্য ও অভিনয়। এই শোভাযাত্রা নির্ভর গীতি-নাট্যভিনয় বহু অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং বহু এলাকায় এর চলমানতার রেশ ধরে সংস্কৃতির একটি স্বতন্ত্রধারার বিকাশ ঘটে। আর এর থেকে মূলত যাত্রাভিনয় এর উদ্ভব। ৭৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যেও গীতি-নাট্যের প্রচলন ছিল। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে চর্যাগীতিকা। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন সম্পদ চর্যা মূলত গীতি-নাট্যের প্রতিনিধিত্ব করে। চর্যাগীতিকায় নাচ-গান, বাদ্য ও অভিনয় সমান্তরলে উপস্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের নাট্যচর্চার প্রাচীনতম নিদর্শন নিহিত আছে চর্যাপদের ১১নং পদে। বাদ্যযন্ত্রসহকারে (মন্দিরা, মৃদঙ্গ, নুপুরের সঙ্গে চামর দুলিয়ে) চর্যাপদ বা বৌদ্ধগান কাব্য-কবিতা হিসেবে নাচ-গান-নাট্যাভিনয়ের মাধ্যমে পরিবেশিত হতো। চর্যাগীতিকার এই ধারা পরবর্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যাত্রা নাম ধারণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় খ্রীষ্টিয় ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই সম্ভবত বাংলাদেশে প্রচলিত নাট-গীতের ধারাটি ঈষৎ পরিবর্তিত রূপে যাত্রা নামে অভিহিত হতে থাকে। চর্যাপদের বুদ্ধ নাটক থেকে বুঝা যায় যে, সম্ভবত স¤্রাট অশোকের সময়কালীন মগধ থেকে বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে নাটক অভিনয়ের ধারাটি বাংলাদেশে চলে আসে। এই নাটক অভিনয়ের প্রধান অঙ্গ ছিল সম্ভবত গীত ও বাদ্য। আর এ থেকে
যাত্রাপালার গোড়াপত্তন। অনেকে মনে করেন মধ্যযুগে এ দেশে যে পাঁচালী গান প্রচলিত ছিল, তা থেকে যাত্রার উদ্ভব। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ‘নাটপালারই’ প্রকৃষ্ট নিদর্শন। শ্রীচৈতন্যদেব বাঙালীর স্থুলরসের নাটপালাকে রূপান্তরিত করেছিলেন ভক্তিরসাত্মক যাত্রাপালায়। সে থেকে বাংলাদেশে যাত্রাগানের একটি বিশিষ্ট ঐতিহ্যের সূচনা হয়েছে। অষ্টম ও নবম শতকেও এদেশে পালাগান ও পালার অভিনয় প্রচলিত ছিল। শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের আগেও রাঢ়, বঙ্গ, সমতট, গৌড়, পু-্র, চন্দ্রদ্বীপ, হরিকেল, শ্রীহট্টসহ সমগ্র ভূখ-ে পালাগান ও কাহিনিকাব্যের অভিনয় প্রচলিত ছিল। আর এর রেশ ধরে ধর্মীয় বা কোনো উৎসবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার যে রীতি সেখান থেকেই যাত্রা শব্দটি এসেছে।
যাত্রা গবেষকগণ এ শিল্পের উদ্ভবকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত যাত্রার আদিযুগ, ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত যাত্রার মধ্যযুগ এবং উনবিংশ শতাব্দী থেকে চলমান সময় পর্যন্ত যাত্রার আধুনিক যুগ হিসেবে ধরা হয়। তবে স¤্রাট অশোকের ধর্মযাত্রা ও চর্যাগীতির সময়কালকে হিসাবে ধরলে যাত্রার কাল বিভাজনের ক্ষেত্রে যাত্রার আদিযুগ হওয়া উচিত খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দ থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত। যাহোক, যাত্রার প্রথমে শিবোৎসব, পরে কৃষ্ণোৎসব, তৎপর রোম্যান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ইত্যাদির প্রচলন হয়; আর এভাবেই বাংলাদেশে যাত্রা সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। যাত্রার প্রথম নিদর্শন দেখা যায় শ্রীচৈতন্য দেবের আমলে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দশকে। ১৫০৯ সালে অভিনীত পালাটির নাম ‘রুক্ষ্মিণী-হরণ।’ চৈতন্যদেবের পূর্বেও যে যাত্রার অভিনয় হতো তার প্রমাণ আছে চৈতন্যভাগবতে। বৈষ্ণবধর্ম প্রবর্তিত হলে কৃষ্ণযাত্রা দেশের সর্বত্র ব্যাপ্তি লাভ করে। অষ্টাদশ শতক থেকে যাত্রা বিশেষভাবে প্রসার লাভ করতে থাকে। অষ্টাদশ শতকে (১৭০০ সাল) যাত্রা বাংলা ভূখ-ের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় শিশুরাম, পরমানন্দ অধিকারী, সুবল দাস ছিলেন যাত্রার জগতে প্রসিদ্ধ। উনবিংশ শতকে পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক যাত্রা খুব জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় কৃষ্ণলীলা এবং রামায়ণ-মহাভারতের পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি বিদ্যাসুন্দর, লাইলি মজনু, ইউসুফ জোলেখা, বেহুলা লখিন্দর, মা মনসা, লক্ষ্মীর মহিমা, কমলাবতী রানী ইত্যাদির সাথে প্রেমকাহিনি ও লোকজ কাহিনির অভিনয়ও প্রচলিত ছিল। তবে ‘যাত্রা’র যাত্রাপথ মাঝখানে রুদ্ধ হয়ে পড়ে বাংলার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের কারণে। ১৫৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের সাড়ে তিন দশক পর ইংরেজ শাসিত বঙ্গদেশে বাংলা নাট্যাভিনয়ের সূচনা করেন রুশ নাগরিক হেরাসিম লেবেডেফ। উনবিংশ শতকের শেষে এবং বিশশতকের শুরুর দিকে যাত্রায় দেশপ্রেমমূলক কাহিনির অভিনয় শুরু হয়। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বীরভূম জেলার কেঁদুলী গ্রামের শিশুরাম অধিকারী যাত্রাগানে শোনালেন এক নতুন বার্তা। যাত্রাগানের ইতিহাসে তিনি ‘নবযাত্রার পথিকৃৎ’ হিসাবে খ্যাত।
সুরুচিসম্পন্ন উন্নতমানের পালার পাশাপাশি উনিশ শতকের পঞ্চাশ ও ষাট-এর দশকে যাত্রাপালায় এক শ্রেণির সস্তা ও বিকৃতির প্রাদূর্ভাব ঘটেছিল। সেই অশ্লীলতা ও ভাঁড়ামি থেকে যাত্রাকে মুক্ত করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুললেন আরেক বিশিষ্ট পালাকার মতিলাল রায় (১৮৩২-১৯০৮)। বিভিন্ন পালায় তিনি কথকতা, সংলাপ, অভিনয় ও সংগীতের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন। নট ও নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষের (১৮৪৪-১৯১২) হাতে পৌরাণিক যাত্রাপালা নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বতন্ত্রমাত্রা পায়। ঢাকা শহরের প্রথম যাত্রাপালা কৃষ্ণকমল গোস্বামীর স্বপ্নবিলাস (১৮৬১)।
১৮৭৪ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে বরিশালের মাচরঙ্গের নট্ট কোম্পানি যাত্রা পাটির। এটিই অবিভক্ত বাংলাদেশে প্রথম পেশাদার যাত্রাদল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ‘স্বদেশী যাত্রা’ নিয়ে এলেন মুকুন্দ দাশ (১৮৭৮-১৯৩৪)। স্বদেশী যাত্রা থেকে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জয়দূর্গা অপেরা। মাঝে আছে চাঁদপুরের উমানাথ ঘোষালের দল (১৯১৯), ঢাকার অক্ষয় বাবুর দল (১৯১০), ফরিদপুরের শংকর অপেরা পার্টি (১৯২৫), শরীয়তপুরের ভোলানাথ অপেরা (১৯৩০), চট্টগ্রামের শ্যামাচরণের দল (১৯৪০), বরিশালের মুসলিম যাত্রাপার্টি (১৯৩০), মানিকগঞ্জের বাসুদেব অপেরা (১৯৩৩) ও অন্নপূর্ণা অপেরা (১৯৪৪)।
যাত্রার গোড়াপত্তন ধর্মীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করে হলেও কালের পরিক্রমায় তা সর্বজনীনতার রূপ পরিগ্রহ করেছে। ধর্মের গ-ি পেরিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দেশত্ববোধ, মানবতা, স্বাধীনতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রেম-ভালোবাসা, দুঃখ-বিরহ, জীবন ও জীবিকার মৌলিক বিষয়ের প্রকাশে অনবদ্য ভূমিকা রাখছে যাত্রা শিল্প। এখনো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিনোদন ও শিক্ষার গুরুত্বদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে যাত্রা। আবাহমান বাংলার উর্বর ও সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি ও লোকসাহিত্যের মধ্যে যাত্রাপালার জনপ্রিয়তা এখনো ঈর্ষণীয়। সর্বব্যাপী তথ্য-প্রযুক্তির দখলদারিত্বের এই সময়েও যাত্রাকে আরও জনপ্রিয় করতে জাতীয় উদ্যোগ খুবই জরুরী। হাজার বছরের বাংলার ঋদ্ধ ঐতিহ্য ‘যাত্রা’ কে জিইঁয়ে রাখতে হবে আমাদের আগামী প্রজন্মের সাংস্কৃতিক প্রগতির স্বার্থে।
অমল বড়ুয়া, প্রাবন্ধিক ও গবেষক