মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত – অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’ শুধুমাত্র দিনপঞ্জীর একটি রক্তাক্ত দিন নয়— মাথা নত না করার ফলক। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সদ্য স্বাধীন একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর ঔদ্ধ্যত আঘাত মনে করিয়ে দেয় তারা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয়। স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য আগামীতে তাদেরকে বহুপথ পাড়ি দিতে হবে এবং বাঁকে বাঁকে রক্তমূল্য দিতে হবে—‘অমর একুশে’ বাঙালিকে এই দীক্ষা-ই দেয়।
বায়ান্ন থেকে একাত্তর। বাঙালির যাত্রার গতিপথের বাঁকগুলোতে মাথা নত না করা এ জাতি রক্তাঞ্জলি ঢেলে দিয়েছে বারবার অকাতরে। অতঃপর এক সাগর রক্তমূল্যে অর্জিত স্বাধীনতা ও বিজয় কতটুকু পরিপূর্ণ; ভাষা আন্দোলনের ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। অমর একুশের চেতনা যেহেতু মাথা নত না করা এবং অদম্য অহংকারে অচলায়তন চূর্ণ করার স্পর্ধা দেখায়, সেহেতু কোনো পরাভব না-মানারই কথা। তাহলে বিজয় ও স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ ও অপরিপূর্ণ থাকবে কেন?
শান্তি, সাম্য, স্বস্তি, সম্প্রীতি ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে হাহাকারে পরিণত হবে কেন? স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রাপ্তিযোগ মেলাতে গিয়ে দেখা যায়— সব হিসেব-নিকেশ বুঝি ওলট-পালট হয়ে গেল। ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত বিষয়গুলো যখন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং তর্ক-বিতর্কের প্রচণ্ড উত্তাপ ছড়ায় তখন কি মনে হয় না এতোদিন যা সত্য ছিল তা যদি হঠাৎ মিথ্যে হয়ে যায় তাহলে তো অস্তিত্ব বলে আর কিছুই থাকে না! এই অস্তিত্বই যদি না থাকে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ শুধুতো একটি আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
শান্তি, সাম্য, মৈত্রীই যদি আমাদের ঐক্যের মূলমন্ত্র হয় তাহলে বিভেদ-বৈষম্য-বিভাজনের সকল সীমারেখা ভেঙে ফেলতে হবে। সন্দেহ, সংশয়, হীনমন্যতা, নীচতা, হিংসা, বিদ্বেষের বিষমুক্ত বিশুদ্ধ আবহাওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ এবং সকলের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য মাতৃভূমিই আমাদের মুক্তির শেষ ঠিকানা এবং এটাই হবে আমাদের সম্মিলিত পবিত্র অস্তিত্বের শিকড়।