এখন সময়:রাত ৮:৪২- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৮:৪২- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

মানবিক ক্রন্দন

দেবাশিস ভট্টাচার্য: 

মেয়েটির…

জন্মক্ষণেই অলৌকিক ব্যাপারটি ঘটলো, প্রসূতি সূতিকা ঘরে উত্তর দক্ষিণে শোয়া। তার পাশে তোয়ালে জড়ানো মেয়েটি। ঘরটা চৌকোণা। টালির ছাদ। তেমন কোন ফাঁক ফোকর নেই, বাইরে থেকে কিছু ঢোকার। আরো চার পাঁচজন বয়স্ক মহিলা ঘিরে আছে লাল টুকটুকে মেয়েটিকে। সদ্য পৃথিবীতে আসা মেয়েটির মা স্বাস্থ্যবতী, তবে এ মুহূর্তে তার শরীর হালকা, প্রচুর রক্তক্ষরণ ও খালাসের পবিত্রতায়। তবে বেহুঁশ।

যা বলছিলাম অলৌকিক বিষয়টি ..এতগুলো মানুষের পাশ দিয়ে কখন একটা বিষাক্ত সাপ সদ্যোজাত মেয়েটির মাথার ওপর তার দিক চক্রবাল ফণা বিস্তার করে বসলো। সবাই সাপ সাপ বলে পিছিয়ে গেল। চারপাশে চিৎকার চেঁচামেচি, কার আগে কে পালাবে এ অবস্থা। সাপটা কিছুই করছে না শুধু ফণা তুলে আতংকিত মহিলাদের কান্ড দেখছে।

 

দুই

ঘরের একটা মাত্র দরজা, দ্রুত বেরুতে গিয়ে পড়ে গেল একজন। মাথা ফেটে গেছে, রক্ত গড়িয়ে পড়ল কপাল থেকে, বিবর্ণ হয়ে গেল মেয়েটির মুখ।

ষোড়শী সে, সাপটা দেখছে মেয়েটির দিকে। কী দেখছে এমন জ্বলজ্বল করে কে জানে? একসময় ফাঁকা হয়ে গেল ঘর। ঘরের বাইরে তখন রীতিমত জটলা।

কে মারবে সাপটাকে এ নিয়ে, একদল বলছে, লাঠির এক ঘায়ে সাপটার উদ্যত ফণা গুড়িয়ে দাও, থেঁতলে দাও ঐ বিষাক্ত সাপটাকে, এক চশমা দেয়া উস্কে দিচ্ছে ব্যাপারটিকে …।

এসময় প্রসূতির শ্বশুর মাগরিবের নামাজ সেরে ঘরের দোরে জটলা দেখে ছুটে এলেন। মুহূর্তেই পর্যবেক্ষণ করলেন ঘরের সবকিছু। সাপটা অনঢ়, ফণা বিস্তার করে আছে সদ্যোজাত মেয়েটার মাথার ওপর। ইচ্ছে হলে একসাথে মা বেটিকে খেয়ে সাপটা চলে যেতে পারে, কিন্তু সে কিছুই করছে না, দরজার বাইরে যেন কারা কি করছে তাই দেখছে।

লাঠি বাহিনী শ্বশুরের সাথে এবার ঘরে ঢুকতে প্রস্তুত। অলি আহমেদ দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। ওরা নির্দেশ না পেলে ঢুকতে পারবে না। তারা রাগে ফুঁসছে, সাপটা কিছুই করছে না, একই রকম ফণা তুলে সবকিছু দেখে যাচ্ছে কেবল ..

এবার অলি আহমেদ সাহেব ঘরে ঢুকবেন কী ঢুকবেন না তাই ভাবছিলেন, না বিষয়টিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে চাইছেন তিনি সত্যি এখন কী করবেন তিনি ..?

 

তিন.

অলি আহমদ সাহেবের মনে তখন অন্যভাব। তিনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে চাইছেন বিষয়টিকে..

হুটহাট কিছু করন ভালা না …

সবাই মাথা নাড়ায়…

মাথা নাড়াও ক্যান? হ কও..

হ, চাচা ..

বাইরে জবর গোলমাল ..কথা কাটাকাটি।

ঘরে কে ঢুকবে এ নিয়ে চিৎকার ..হুল্লোড়

সবাই চুপ কর…

বহু  ধর্মীয় মহামানবের জীবনে জন্মক্ষণে এমন ঘটনার নমুনা আছে।

কী করবেন ভাবছেন তিনি ..

লাঠিবাহিনী, কিরিচ বাহিনী প্রস্তুত ঘরে ঢোকার জন্য। সাপটা কিন্তু নির্বিকার।

একমন বলছে আদেশ দিতে, অন্যমনে ধর্মীয় অনুশাসন নিষেধ করে। বাইরে কে আগে ঘরে ঢুকবে তা নিয়ে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেছে।

পটাপট লাঠি পড়লো দু ‘জনের মাথায়। একজনের কিরিচের কোপ পড়লো। মহা মুশকিল। এমন কান্ড আর কখনো দেখেননি অলি আহমেদ সাহেব। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি স্তম্ভিত।

কী কর তোমরা ভাইছাব থাম..সবাই.

হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে উনার..

একদল রক্তমাখা ছেলেটিকে নিয়ে হাসপাতালে গেল।

ভিজে গেছে রক্তে জায়গাটা ..

এসব কী হোল? কিসের আলামত ভাবছেন তিনি ..সাপটা নির্বিকার যেন কিছুই হয়নি একইভাবে ফণা তুলে আছে দেখছে চারপাশ ‘।।

 

চার.

তিন চারজনে ধরে ছেলেটাকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতেই থানা পুলিশ হতে পারে ভেবে যে যার মত সটকে পড়লো।

বাড়ির সামনের জটলাটা বোধয় হাসপাতালের দিকে চইলা গেছে চাচা ..

হ যাকগে ..

দুইন্যার আকাম..সাপ মারবো না মানুষ  মারবো যতসব বেয়াক্কেলের দল..!

হ চাচা ..

ঘটনার আকস্মিকতাকে সামাল দিতে বাড়ির ভেতর থেকে দুধকলা নিয়ে এল ঘরের কনিষ্ঠ জন মুকুল…

আলী আহমেদ সাহেব আশ্চর্য হয়ে দেখছেন ব্যাপারটা…হ্যাঁ তাইতো সাপ তো দুধকলা খায়।

 

তার একটু ও হাত কাঁপছে না…

হাঁটুমুড়ে বসে দুধকলার বাটিটা নামিয়ে রাখে বিষাক্ত সাপটার সামনে। সাপটার মত মুকুলের ও ভয় ডর নেই …

প্রার্থনার ভঙ্গিতে সাপটাকে অনুরোধ করলো সে, খাবার গ্রহণ করতে …!

মোম আগরবাতি জ্বালিয়ে এক অপূর্ব ধোঁয়ার জগৎ সৃষ্টি করলো..সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে। সাপটা চারপাশ ভালো করে দেখলো।

তারপর মাথা নামিয়ে মুকুলের দুধের বাটিতে মুখ দিল ..সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো,

আরে এসব কী অইলো মিয়ারা..থামেন…!!

 

চার.

তিন চারজনে ধরে ছেলেটাকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতেই থানা পুলিশ হতে পারে ভেবে যে যার মত সটকে পড়লো।

বাড়ির সামনের জটলাটা বোধয় হাসপাতালের দিকে চইলা গেছে চাচা ..

হ যাকগে ..

দুইন্যার আকাম..সাপ মারবো না মানুষ  মারবো যতসব বেয়াক্কেলের দল..!

হ চাচা ..

ঘটনার আকস্মিকতাকে সামাল দিতে বাড়ির ভেতর থেকে দুধকলা নিয়ে এল ঘরের কনিষ্ঠ জন মুকুল…

আলী আহমেদ সাহেব আশ্চর্য হয়ে দেখছেন ব্যাপারটা…হ্যাঁ তাইতো সাপতো দুধকলা খায়।

তার একটু ও হাত কাঁপছে না…

হাঁটুমুড়ে বসে দুধকলার বাটিটা নামিয়ে রাখে বিষাক্ত সাপটার সামনে। সাপটার মত মুকুলের ও ভয় ডর নেই …

প্রার্থনার ভঙ্গিতে সাপটাকে অনুরোধ করলো সে, খাবার গ্রহণ করতে …!

মোম আগরবাতি জ্বালিয়ে এক অপূর্ব ধোঁয়ার জগৎ সৃষ্টি করলো..সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে। সাপটা চারপাশ ভালো করে দেখলো।

তারপর মাথা নামিয়ে মুকুলের দুধের বাটিতে মুখ দিল ..সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো,

আরে এসব কি অইলো মিয়ারা..থামেন…!!

 

পাঁচ.

ছেলেটাকে ভেতর থেকে এসব কেউ শিখিয়ে দিল?

না, কে শিখাইয়া দিব?

ভাবছেন আলী আহমেদ সাহেব।

ধোঁয়া আর ধোঁয়া সাপের অলৌকিক দুধকলা সেবন…!

মুকুলের ভয় ডর নেই ..

সে শুধু দেখছে সাপটা ঠিকমতো চুকচুক করে খাচ্ছে কিনা।

এসময় দূর থেকে বেশ হল্লা শোনা গেল।

একসময় আবার উঠোনে ..

সূতিকা ঘরে ঢুকে পড়লো সবাই। অলি সাহেবের বিস্ময়ের শেষ নেই যেন।

এই তোরা কি চাস আবার?

এবার নেতৃত্ব দিচ্ছে পাড়ার মুসল্লি। খুব রাগান্বিত। জোব্বা পরিহিত তিনি। ঝড়ের মত এক প্রচ- ধাক্কায় অলি সাহেবকে সরিয়ে। তিনি  এ ঝড় সামলাতে পারলেন না। পড়ে গেলেন কাত হয়ে।

লাঠির প্রথম আঘাতটা লাগলো দুধকলা দিতে আসা মুকুলের পিঠে, পরেরবার সাপের মাথায়। ছেলেটি চিৎকার দিয়ে কাঁদলো, কিন্তু সাপটার কোন কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল না। মাথায় জবর আঘাতে সে নেতিয়ে পড়লো নবজাতিকার পাশে। লাঠির ধারালো ডগার গুতোঁয় বিদ্ধ হলো নবজাতিকার কুনুই..

লাঠির আগায় টেনে আনলো সাপটাকে তারা উঠোনে। চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরুচ্ছে সবার। পিটিয়ে বিষ রক্ত বের করলো যতক্ষণ প্রাণ ছিল সাপটার। এরপর কিরিচ বাহিনী সাপটাকে কুচি কুচি করে তুলে একটা বড় কচু পাতায় নিল। এরপর হল্লটা গ্রামের মসজিদের দিকে মিলিয়ে গেল।

একটা সাপের ওপর এমন আক্রোশ কেন মানুষের  বুঝলেন না অলি আহমেদ সাহেব …!!

এমন এতোটা ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না বাড়ির কেউ, এসমস্ত কান্ডের জন্য বাড়ির খেদমতি রহিমা দায়ী। সেই পানিপড়া আনতে গেছিল ওখানে।

বাড়ির সবাই ধরাধরি করে আলী আহমেদ সাহেবকে চ্যাঙদোলা করে ঘরে উঠিয়ে নেন।

কেমন নীরব হয়ে গেছে বাড়িটা। মেয়েটার জন্মক্ষণে এমন ঘটনা ঘটলো, এতো ভোলার মত নয়।

মাথায় জল ঢালছে হালিমা। অলি সাহেবের ছোট মেয়ে…ভাইবা কাম নাই.

অসুখ আসবো..যা হইবার অইছে। অহন মাথা ঠান্ডা কইরা ঘুমান আব্বাজান।

নবজাতিকাকে মা চৈতন্য ফিরে পেয়ে টেনে নিল বুকে। নানী ছাড়া হয়তো আর কেউ খেয়ালই করেনি, সাপটাকে কেটে টুকরো টুকরো করলে ও সে মরেনি। কারণ তিনি একটু আগেই যেন দেখতে পাচ্ছিলেন মোল্লার মত তার চোখ দুটো জ্বলছিল জ্বলজ্বল করে।

প্রথম যেদিন মেয়েটা গর্ভ নেয়, ঠিক এরকম একটা স্বপ্ন দেখেছিল তার মা। সে স্বপ্নটির সাথে এসবের কোনো যোগসূত্র আছে। ভাবতে থাকেন তিনি।

একটা বিষাক্ত সাপ মেয়েটিকে নিয়ে খেলছে। তার সমস্ত শরীরে দড়ির মত প্যাঁচাচ্ছে সাপটা।  একসময় মিলিয়ে যাচ্ছে তার শরীরের ভেতর। চারপাশে জ্যোছনায় ভরে আছে। রুপালি আলোর ঝলকানি বাইরে …!!

 

 

দেবাশিস ভট্টাচার্য, কথাসাহিত্যিক ও গল্পকার

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে