এয়াকুব আলী : ১৭ মার্চ : জাতির পিতার জন্মদিবস। শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ করে লিখেছিলেন, ‘কবিগুরু তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নেই।’ হাজার বছরের পরাধীন বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণে যে ত্যাগ আর ভালোবাসার উপমা স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাতেও আমাদের সীমাহীন বিস্মিত হতে হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন ছিল বাঙালির বসন্ত-বৎসর। আজও সে বসন্ত বাতাস বইছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে সীমিত আকারে হলেও জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়েছে শহর-গ্রাম-গঞ্জ, সারা বাংলায়। জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানের জন্মোৎসব পালন করেছে দেশে, দেশের বাইরে। আজ থেকে শতবর্ষ আগে, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চের এক বসন্ত-প্রভাতে পরাধীন বাংলার মধুমতির তীরে যে বালকের জন্ম, পরবর্তীতে তিনিই বঙ্গবন্ধু হয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আর একটা বসন্তে স্বাধীনতা এনে দিলেন, হয়ে গেলেন- ‘বাঙালি জাতির জনক’। নূহ-উল-আলম লেনিন তাঁর ‘মুজিব মানেই বসন্ত-উৎসব’ কবিতায় লিখছেন,
‘তোমার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে
বিংশ শতাব্দীর উনিশটি নিষ্ফল বসন্ত পেরিয়ে গেলো
অবশেষে তুমি এলে বিশতম বসন্ত-প্রভাতে মধুমতি তীরে।
তারপর বাকি ইতিহাস।’ সে ইতিহাস বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস। সার্বভৌম ভূখন্ডের ইতিহাস। একটি মানচিত্র অর্জনের ইতিহাস। তবে তিনি আমাদের মতো সৌভাগ্যবান ছিলেন না। স্বাধীন নয়, জন্মেছিলেন পরাধীন বাংলার এক ছোট্ট জনপদে। কেমন ছিল সেদিনের সেই জনপদ? কোথায় জন্ম হলো এ মহান নেতার? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ‘শেখ মুজিব আমার পিতা, ২০১৫’ বইয়ে লিখেছেন,
“বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো সুন্দর একটি গ্রাম। সে গ্রামটির নাম টুঙ্গীপাড়া। বাইগার নদী এঁকে-বেঁকে গিয়ে মিশেছে মধুমতি নদীতে। নদীর দুপাশে তাল, তমাল, হিজল গাছের সবুজ সমারোহ। ভাটিয়ালি গানের সুর ভেসে আসে হালধরা মাঝির কণ্ঠ থেকে, পাখির গান আর কলকল ধ্বনি এক অপূর্ব মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলে। সেখানের একটি গ্রাম টুঙ্গীপাড়া। আর এখানেই জন্ম নেন আমার আব্বা, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। আমার আব্বার নানা শেখ আব্দুল মজিদ আমার আব্বার আকিকার সময় নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। এবং তাঁর মেয়েকে বলেন, ‘মা সায়রা, তোর ছেলের এমন নাম রাখলাম, যে নাম জগৎ জোড়া খ্যাত হবে।’’
জগৎ জোড়া খ্যাতি তিনি পেয়েছিলেন তাঁর জীবৎকালেই। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলেন,
‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় যিনি হিমালয় সমতুল্য। আর এভাবেই আমি হিমালয় প্রত্যক্ষ করলাম।’
ক্ষণজন্মা এ মহান নেতা ইতিহাসের হিমালয় হয়ে উঠেছিলেন তাঁর ৫৫ বছর বয়সেই। তবে তার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। লড়তে হয়েছে সকল প্রতিকূলতার সাথে বাঙালির স্বাধিকারের জন্য। তবে ৫৫ বছরের ছোট জীবন আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে যায় ৪,৬৮২ দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবরুদ্ধ থাকার কারণে।
জনগণের মুক্তির জন্যই ছিল তাঁর সমগ্র জীবন। কিন্তু তার পরেও তাঁকে নিদারুণ যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে বঙ্গবন্ধু নিরাপত্তা আইনে কারাগারে বন্দি। কারাগার থেকেই নির্দেশনা দিচ্ছেন। জেলখানার জানালা দিয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ এর মোহাম্মদ তোয়াহা ও অলি আহাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালন করা হবে। আর ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি আমরণ অনশন শুরু করলেন। তিনি সরকারকে জানিয়ে দেন, ‘আইদার আই উইল গো আউট অব দ্যা জেল অর মাই ডেডবডি উইল গো আউট।’ টানা বারোদিন অনশনের পর তাঁর মুক্তি জোটে। (সনৎকুমার সাহা, বঙ্গবন্ধুÑবাংলাদেশ, কলি ও কলম, মাঘ ১৪২৬, দ্বাদশ সংখ্যা, পৃ. ৫২)।
তারপরেও বঙ্গবন্ধু জেল-জুলুমকে ভয় পেতেন না। অধিকার আদায়ে সর্বদা অবিচল থেকেছেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতি। যা বঙ্গবন্ধু তাঁর বাবার কাছ থেকে শিখেছিলেন। তাঁর বাবা বলতেন, ‘একটা কথা মনে রেখ, “সিনসিয়ারিটি অব পারপাজ এন্ড অনেস্টি অব পারপাজ” (উদ্দেশ্যের প্রতি আন্তরিকতা ও সততা) থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না।’ যদিও রাজনীতিতে আছে, ‘দি এন্ড জাস্টিফাইস দ্যা মিনস’ তথাপিও তিনি সদুদ্দেশ্যে ভুলপন্থা অবলম্বন করতেন না।
আর সে কারণেই তিনি ইতিহাসের নিয়ন্তা হতে পেরেছেন। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু : মধ্যরাতের সূর্যতাপস, ২০২০, পৃ. ০৯’ বইয়ের শুরুতে বলেন,
‘ইতিহাস নেতা তৈরি করে, না নেতা ইতিহাস তৈরি করেনÑ এ বিতর্কটি এখনো অমীমাংসিত। …আমার বিশ্বাস কোনো দেশের বিশেষ পরিস্থিতির বৈপ্লবিক উপাদান থেকেই ইতিহাস নতুন নেতৃত্ব তৈরি করে। সেই নেতৃত্বই আবার ইতিহাসের নতুন মোড় ঘোরানোর দুঃসাধ্য কাজকে সহজ ও সম্ভব করে। ইতিহাস স্বয়ম্ভূ শক্তির মতো। ঘটনার উদ্ভব তার হাতে। তাকে নিয়ন্ত্রণ করে না সে। নিয়ন্ত্রণের ভার দেয় নিজের সৃষ্ট নেতৃত্বের হাতে।’ নেতার সে নেতৃত্বই তখন ইতিহাস নির্মাণ করে। নেতা হয়ে ওঠেন ইতিহাসের নিয়ন্তা। নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে নির্মাণ করেছেন ইতিহাস। বাঙালি জাতিকে জীবনের অধিক ভালোবেসেছিলেন বলেই মৃত্যু নিয়ে পরোয়া করেন নি। অথচ এ অধিক ভালোবাসাই ছিল তাঁর দুর্বলতা। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশি ভালবাসি।’ এ ভালোবাসাই তাঁকে বাঙালির হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,
‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই।’
বঙ্গবন্ধু সকল শোষিত মানুষের সাহস হিসেবে বেঁচে থাকবেন সভ্যতার শেষাবধি।
২। ৭ই মার্চ : রাষ্ট্র বিনির্মাণের অগ্নিঝরা ভাষণ
৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার ঘোষণাধ্বনি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ভাষণ নেই যার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে। ১৯৭১ সালের পড়ন্ত বিকেলে যারা সেদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রত্যক্ষ করেছেন, যারা শুনেছেন, যারা ভবিষ্যতে শুনবেন তারা জানেন এবং জানবেন সেদিন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তাঁর সবটুকু প্রেরণা থেকে রচিত। যে প্রেরণায় মিশে ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বাধীনতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন। সেদিন বাঙালির স্বপ্ন বুননের দিনে ফাল্গুনের অস্তাচলগামী সূর্যের সাথে অস্ত যেতে থাকে পাকিস্তানের চাঁদ তারকা খচিত ঝা-া।
১৯৬৬ সালের ২৩শে মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রচ্ছদে ছাপা হয় ‘আমাদের বাঁচার দাবী : ৬-দফা’। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের ম্যাগনা কার্টা আর ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্র। ৮ মার্চ ১৯৭১ দৈনিক ইত্তেফাক প্রধান সংবাদ করে ‘পরিষদে যাওয়ার প্রশ্ন বিবেচনা করতে পারি, যদি-’। দৈনিক আজাদীর শিরোনাম ‘রেসকোর্সে লক্ষ লক্ষ জনতার সমাবেশে শেখ মুজিব, চারি দফা শর্ত মানিয়া লইলে অধিবেশনে যোগদানের প্রশ্ন বিবেচনা করা যাইতে পারে।’ দৈনিক আজাদের প্রধান শিরোনাম ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। দৈনিক সংবাদের শিরোনাম ‘সামরিক আইন প্রত্যাহার ও গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিলেই পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিব কি না ঠিক করিব, এবার স্বাধীনতার সংগ্রাম : মুজিব’। দৈনিক আজাদ এবং সংবাদ ‘মুক্তি’ ও ‘স্বাধীনতা’ শব্দদ্বয়কে যেভাবে উদ্ধৃত করে ইত্তেফাক বা আজাদীর শিরোনাম সে তুলনায় মৃদু। মার্চের সে উত্তাল ও অনিশ্চিত সময়ে সবকিছুই ঘটতে পারে এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সারা জাতিকে প্রাণিত করেছিল। শিরোনাম আর ভাবনায় যাই থাকুক বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের সকল প্রস্তুতি পুরোদমে গ্রহণ করতে থাকে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শ্রবণের পর হতেই। প্রস্তুতি আগেও চলছিল। তবে প্রাণপ্রিয় নেতার প্রকাশ্য ঘোষণা দোলা দিল সে প্রেরণায়। অর্ধ শতাব্দী পূর্বে শোক ও সংগ্রামে ঋদ্ধ যে শাণিত ভাষণ বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন তা শুধু বাঙালি জাতির ইতিহাসেই নয়, মানবজাতির ইতিহাসে এক অমর মহাকাব্য। তখন এক সপ্তাহের মধ্যে দুইবার গভর্নর বদল হয়। লে. জে. সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে সরিয়ে বেলুচিস্তানের কসাই খ্যাত লে. জে. টিক্কা খানের নিয়োগ হয়। উর্দিধারী জেনারেল ইয়াহিয়া খান পূর্ব বাংলাকে দেশ নয়, জোন ‘বি’ হিসেবে শাসন করতেন। সেই প্রতিকূল পরিবেশে, গুলি ও কামানের নলের ডগায়, লক্ষ লক্ষ জনতার মাথার উপর যুদ্ধ বিমান চক্কর দেওয়া সত্ত্বেও স্থির ও স্পর্ধ্বায় বঙ্গবন্ধুর যে ধ্বনি মঞ্চে উচ্চারিত হয় তার প্রতিধ্বনি বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
সেদিন গুলি আর মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে, ‘কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে’ মিছিলের পর মিছিল আছড়ে পরে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে আছে (পৃ. ২১-২২), ‘ রেসকোর্স মাঠের জনসভায় লোক হয়েছিল প্রায় ৩০ লাখের মতো। কত দূর-দূরান্তর থেকে যে লোক এসেছিল মিছিল করে, লাঠি আর রড ঘাড়ে করে- তার আর লেখাজোখা নেই। টঙ্গী, জয়দেবপুর, ডেমরা- এসব জায়গা থেকে তো বটেই, চব্বিশ ঘন্টার পায়ে হাঁটা পথ পেরিয়ে ঘোড়াশাল থেকেও বিরাট মিছিল এসছিল গামছায় চিড়ে-গুড় বেঁধে। অন্ধ ছেলেদের মিছিল করে মিটিংয়ে যাওয়ার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম।’ তবে এই ক্ষোভ ও উত্তেজনার পারদ নিয়ে জনতার উপস্থিতি নিছক এক দিনের প্রস্তুতি নয়। এর শুরু হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ১ মার্চ মধ্যাহ্নে পূর্ব ঘোষিত ৩রা মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য মূলতবি ঘোষণা করায়। ফলে ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গববন্ধু স্টেডিয়াম) চলমান খেলা মুহুর্তেই বন্ধ হয়ে যায়। সর্বত্র আন্দোলন আর মিছিল ছড়িয়ে পড়ে, ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে, পল্টন ময়দানে জনসভা হয়, হাজার পঞ্চাশেক জনতার উপস্থিতিতে হোটেল পূর্বাণীতে বঙ্গবন্ধুর সংবাদ সম্মেলন, ২ মার্চ ঢাকা এবং ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল ঘোষণা, ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে জনসভা আহ্বান- এক বিকেলেই যেন ২৩ বছর শোষণ আর বঞ্চনার ইতিহাস পরিসমাপ্তির উদ্যোগ হাতে নেয় বাঙালি জনতা। ইয়াহিয়ার এক ঘোষণায় বাঙালির মধ্যে যে ঘৃণা আর রোষের আগুন ছড়িয়ে পড়ে তাতে পুড়তে থাকে পাকিস্তানি পতাকা আর জিন্নাহর ছবি, দগ্ধ হতে থাকে পাকিস্তানি শাসকের তখত্। তখন সমগ্র বাংলা যেন এক তপ্ত কড়াই। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার জন্য। অগ্নি আর বারুদে মেশানো বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করল।
চার খলিফাসহ ছাত্রদের দাবি ছিল সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার। অনেকেই মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে বঙ্গবন্ধু ঢাকা দখলের সুযোগ হেলায় হারালেন। অথচ সেদিন স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত আর পরোক্ষ ঘোষণা দিয়ে তিনি সমগ্র দেশ দখল করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। জয় করেছেন বিশ্ব জনতার হৃদয়। সারা বিশ্বের বঞ্চিত সকল মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল নিউজউইক ম্যাগাজিন তাঁকে ‘রাজনীতির কবি’ আখ্যা দিয়েছে। তারেক মাসুদ নির্মিত মুক্তির গান প্রামাণ্যচিত্রের শুরু হয় ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ এবং বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য ঘোষণা করে ৩০ অক্টোবর ২০১৭। ব্রিটিশ অধ্যাপক জ্যাকব ফ্রান্জ ফিল্ড ২০১৩ সালে ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্যা বিচেস : দ্যা স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টরি’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ২৫০০ বছরের ইতিহাসের সাড়াজাগানো ভাষণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরূপ বহু প্রামাণ্য রচনা ও গ্রন্থনা এ ভাষণকে করেছে অমর এবং শাশ্বত।
তাৎপর্যপূর্ণ এ ভাষণ আমাদের জন্য আজও প্রেরণার। এ যেন ভাষণ নয়, রক্তে লেখা গাঁথা। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনে সকল শহীদের রক্তে রচিত এ এক অমর কাব্য। যে মহাকাব্য ন্যায় এবং শোষিতের পক্ষে কথা বলে। অন্যায় ও অত্যাচারের বিপক্ষে বলে। সতর্ক করে ষড়যন্ত্রীদের ব্যাপারে যারা ছদ্মবেশে আত্মকলহ ও অরাজকতা করবে। দ্ব্যর্থহীনভাবে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা বলে। আইনের শাসন ও সোনার বাংলা গড়ে তোলার কথা বলে। বলে মত-দ্বিমত ও ভিন্নমতের কথা। সংখ্যাধিক্য নয়, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজন যদিও সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব’ বলে। এ এক চিরকালীন সত্য বাণী। ৭ মার্চের ভাষণ ৫০ নয় ৫৫০ বছর এবং তৎপরবর্তীতেও শোষণ ও নিপিড়ণের বিরুদ্ধে বলে যাবে। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতির গর্বিত ইতিহাস। এ ইতিহাস বিস্মৃত হওয়ার নয়; স্মরণের, অনুসরণের।
৩। ২৬শে মার্চ : স্বাধীনতার ঘোষণা ও বাঙালির রাষ্ট্র বিনির্মাণ
অধ্যাপক নুুরুল ইসলাম তাঁর ‘ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-বাংলাদেশ : এ প্রাইমার অন পলিটিক্যাল হিস্ট্রি’ বইয়ের (পৃ.১১) শুরুতে উইন্সটন চার্চিল থেকে উদ্ধৃত করেছেন, ‘ইন্ডিয়া ওয়াজ এ কনসেপ্ট এন্ড নট এ কান্ট্রি।’ কেননা ব্রিটিশ রাজের আগে ভারতবর্ষের বিশাল এলাকা একটি একক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল না। সেখানে বহু প্রিন্সলি স্টেট বা গোত্র প্রধান শাসিত অঞ্চল ছিল। ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয় এবং একক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এর একদিন পূর্বে ধর্মকেন্দ্রিক দ্বিজাতিতত্ত্ব হিন্দু-মুসলিম আইডিয়ায় ভর করে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। যার ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন হয় জাতীয়তাকেন্দ্রিক বাঙালি জাতিতত্ত্ব আইডিয়ার মাধ্যমে। রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখ-, সরকার আর সার্বভৌমত্বের যে রাষ্ট্রবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে, বাংলাদেশের তা আছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্র। আকবর আলী খানের মতে অন্যদের সাথে পার্থক্যটা এই যে, ভাষা ও গোত্রের ভিত্তিতে পাকিস্তানি জাতির ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদও স্থিতিশীল নয়। সে দিক থেকে বাঙালি জাতি স্থির এবং পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। আকবর আলী খান (২০১৭), অবাক বাংলাদেশ : বিচিত্র ছলনাজলে রাজনীতি, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, পৃ.৬৪।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তিতে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের ধারণা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে ধারণা বা আদর্শকে ভিত্তি করে সার্বভৌম পতাকা অর্জিত হয়েছিল সে পতাকা মাঝেমাঝেই হাতবদল হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জাতির পতাকাকে করেছে অপমান, অবজ্ঞা। প্রধানমন্ত্রী এক বিজয়ভাষণে কবি নজরুল থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ‘চাহি না জানিতে বাঁচিবে অথবা মরিবে তুমি এ পথে, এ পতাকা বয়ে চলিতে হইবে বিপুল ভবিষ্যতে।’ অপার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতে পতাকা বয়ে চলার জন্য চাই দৃঢ় মনোবল। তাই প্রার্থনা, ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।’
এ কথা সত্য যে পতাকা বয়ে চলা সহজ নয়। তবে ‘চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়?’ তাই আমাদের জাতীয় চেতনা স্মরণ করা দরকার। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার উল্লাস দেখে সন্দেহ জাগে আমরা কী এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। সা’দত আলী আখন্দ ১৯২৮ সালেই বলেছেন, ‘বাঙালি মুসলিম সমাজ ধর্মের নামে বড়াই করতে গিয়ে জাতীয়তার দাবীকে উপেক্ষা করেছেন। ইসলাম যে একটা ‘ধর্ম’ ‘জাতি’ নয়, এ কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে বাঙালি মুসলিম-তাঁরা জাতিতে মুসলমান একথাটাই জোর গলায় প্রচার করছেন। তাঁরা ‘নেশন’ ও ‘রিলিজিয়ন’-এর একই অর্থ করে বসেছেন।’ পরে অবশ্য মোহভঙ্গ ঘটতে সময় নেয়নি। তাই ১৯৪৭-৪৮ সাল হতেই ‘জাতির পরিচয় মানে ধর্মীয় পরিচয় নয়’-এই আলোচনা শুরু হয়ে যায়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙালী। এটি কোন আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, তা মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জোটি নেই।’ তারপরেও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা থেমে নেই। নতুন প্রজন্মকে বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের ধারণা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। জাতিরাষ্ট্রের ধারণায় ধর্ম মুখ্য নয়, গৌণও নয়। গ্যারি জে. ব্যাস তাঁর ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘দি ব্লাড টেলিগ্রাম : ইন্ডিয়াস সিক্রেট ওয়ার ইন ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে (পৃ. ১৬২) হেনরি কিসিঞ্জার এবং পি এন হাকসার এর মধ্যকার একটি আলোচনা তুলে ধরেন। সেখানে কিসিঞ্জার পাকিস্তানের পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দোষারোপ করলে হাকসার বলেন, ‘যদি ধর্মই জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি হতো তাহলে সম্ভবত ইউরোপ এখনো হোলি রোমান সা¤্রাজ্যের অধীনে থাকতো।’
এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশ একটি নেশন স্টেট, ধর্মীয় স্টেট না, সাম্প্রদায়িকতো নয়ই। কীভাবে এ জাতিরাষ্ট্র গঠিত হলো? বেনেডিক্ট এ্যান্ডারসন ‘ইমাজিন কমিউনিটি’ বইয়ে জাতীয়তাবাদকে মতাদর্শগত দিক থেকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘মানুষ নিজেকে সমগোত্রীয়ভুক্ত কল্পনা করে বলেই একসাথে থাকে, এক রাষ্ট্র গঠন করে।’ ভাষা ও সংস্কৃতি তাকে এরূপ কল্পনা করতে বাধ্য করে। নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হয়। ফরাসি বিপ্লবে ওই ভ্রাতৃত্ববোধ কাজ করেছিল। জাভাভাষিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধন তৈরি হয় ভাষাগত মিলের কারণে। বঙ্গবন্ধু ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে উদাত্ত আহ্বানের মাধ্যমে ভাষা ও ভ্রাতৃত্বের বোধ জাগ্রত করতে পেরেছিলেন বাঙালির কল্পনায়। কল্পনা তখন আর স্বপ্নবৎ থাকেনি। বাঙালির মধ্যে সমগোত্রীয়তার বোধ হতে উৎসারিত একটি জাতীয়তাবাদী চেতনা রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথ তৈরি করে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক তাঁর ‘বাংলাদেশ : জাতির অবস্থা’ শীর্ষক ভাষণেও ‘বাংলাদেশের মানুষ একটি জাতি, কারণ তারা একটি জাতি হতে চায়, অন্য কিছু নয়’ উল্লেখ করেন। এই বাঙালি হতে চাওয়ার জেদ আমাদের জাতিরাষ্ট্রের চেতনা। যে চেতনা বাঙালির সুখে-দুঃখে-গর্বে একই পরিচয়ে পথ চলতে উৎসাহিত করেছে। এই চেতনায় আঘাত বাঙালির জাতিরাষ্ট্রের উপর আঘাত। নিয়ত উৎকর্ষতার মাধ্যমে এ চেতনা পরিশীলিত হয়। তবে বাঙালির এই চেতনা বিনাশে শুরু হতেই চক্রান্তকারীরা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা নিজেদেরকে নিতান্ত দুর্ভাগা ভেবে ভুট্টোর সুরে কথা বলে- ‘রাষ্ট্র তো কেবল ভৌগোলিক বা সীমানা নির্ভর ধারণা নয়। যখন জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও ধর্ম অভিন্ন, তখন দূরত্ব কোনো সমস্যা নয়।’ হাসান ফেরদৌস (২০০৯), ১৯৭১ : বন্ধুর মুখ, শত্রুর ছায়া, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, পৃ. ১২৮। ভুট্টোর মতো অনেকেই এখনো এ স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু কেন সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, ভুট্টো-মোশতাক-মওদুদির প্রেতাত্মারা এখনও বর্তমান? স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণ করেও কী সে আত্মসমালোচনার সময় আসে নি?
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন প্রাগৈতিহাসিক গল্পে দেখিয়েছেন, ভিখারিনী পাঁচী তার পায়ের থকথকে তৈলাক্ত ঘা জিইয়ে রাখে, ঔষধে সারায় না। নিজের স্বার্থে প্রদর্শন করে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ন্যাকড়ায় বাঁধা এমন ঘা মাঝে মাঝেই ব্যবহার করে দেশের মধ্যে ক্ষত তৈরি করে। অথচ ১৯৪৭ সালে যে ধর্মীয় আইডেনটিটির ভিত্তিতে দেশভাগ হয় ১৯৭১ সালে তার মীমাংসা হয়। কিন্তু তারপরেও যুগে যুগে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প আমার দেশ প্রত্যক্ষ্য করে চলেছে। ১৯৯৭ সালে ভারতভাগের ৫০ বছর পূর্ণ হয়। সে বছর প্রকাশিত ‘দি আইডিয়া অভ ইন্ডিয়া’ বইয়ে সুনিল খিলনানি ভারতের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র হয়ে ওঠার ধারণা বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন ভারতের গণতান্ত্রিক আইডিয়া ভারতকে বিশ্বমঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থান করে দিয়েছে। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা যখন ‘এন্ড অভ হিস্টরি’ বা ইতিহাসের পরিসমাপ্তি বলেন তখন একটি আইডিয়ার পরিসমাপ্তির কথা বলেন। অর্থাৎ যে মৌলিক ধারণাকে ভিত্তি করে একটি জাতি গঠিত হয় সে ধারণার পতন যেন জাতিরই যবনিকাপাত। কারণ সমগোত্রীয়তার ধারণা তৈরি করতে না পারলে জাতীয় পরিচয় টিকে থাকে না।
আমাদের রাষ্ট্র বিনির্মাণের ধারণা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার মানবিক মূল্যবোধ। মহিউদ্দিন আহমদ লেখেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম। বাইরের দুনিয়ায় দ্বিজাতিতত্ত্বের বেলুনটা ফুটো হয়ে গেলেও বাংলাদেশের ভেতরে বড় একটি জনগোষ্ঠীর মনের মধ্যে এই তত্ত্বের আগুন ধিকি ধিকি করে জ্বলছিল [জ্বলছে]। একাত্তরে আগুনটা সাময়িকভাবে চাপা পড়েছিল। ক্রমেই তার শিখাটা লকলকে জিহ্বা বের করতে থাকে।’ মহিউদ্দিন আহমদ (২০১৭), আওয়ামী লীগ : যুদ্ধ দিনের কথা, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, পৃ. ১৫১। দ্বিজাতিতত্ত্বের লকলকে জিহ্বা স্পষ্ট দেখতে পাই যখন হাজার বছরের বাংলার সংস্কৃতি, জাতির পিতার স্বপ্ন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিদ্রুপ করা হয়। বিদ্রুপ করা থেকে তাদের ষড়যন্ত্র শুরু শেষটা রাষ্ট্র ধারণায় গিয়ে ঠেকবে না তো? ‘বনের মাঝারে যথা শাখাদলে আগে, একে একে কাঠুরিয়া কাটি, অবশেষে নাশে বৃক্ষে।’ তেমনি ধর্মীয় সামপ্রদায়িক দুরন্ত রিপুরা আমাদের আদর্শ-চেতনার বৃক্ষকে নিরন্তর বিনাশে রত। আর সে কারণে আমাদের চেতনাও লোপ পেয়েছে। আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের জন্মের ইতিহাস, ত্যাগের ইতিহাস, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ধারণার ইতিহাস তথা জাতির পিতার আদর্শের ইতিহাস। তাই প্রতিবাদের নৈতিক শক্তিও দিন দিন হারিয়ে ফেলছি। দেশের জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন তাঁরা আজ সাম্প্রদায়িকতার জয়রব দেখে ভাবছেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে ‘কেন না শুইনু আমি শরশয্যোপরি।’
এয়াকুব আলী : পাবলিসিটি অফিসার
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম