প্রার্থনাঃ ক্ষয়
কতোটা শিশির মাড়িয়ে একটি সূর্যের বেড়ে ওঠা
কতোটা অন্ধকার শুষে নিয়ে একটি চাঁদের জন্ম
কতোটা গাঢ় হলে একটি রাত সার্থক হয়ে ওঠে
ঝরে যাওয়া সমস্ত শিশিরের যতেœ ল্যাপ্টানো
অন্ধকারে ঘুমন্ত সারি সারি গ্রাম এই হৃদয়খানি
এখানে বাঁশের পাতায় খেলা করে বনেদি প্রেম
কুহেলিকা বনে মধুচন্দ্রিমা যাপন শেষে
আয়োজন করে শূন্য সংসার
উদাম দুয়ারে দখিনের হাওয়া নেই তবু
শিশিরের প্রার্থনা আঁধারের প্রার্থনা
গাঢ় রাতের প্রার্থনা
জমা হয় মন্দিরে
সূর্য ও চাঁদের বাড়াবাড়িতে তাই আক্ষেপ নেই কোনো।
পুনর্জন্ম
প্রার্থনায় নত হলে তোমাকে পাই,
পাপে ও তাপে,
আর্দ্রতার কিনারে পাই ঘামের পালঙ্ক- অনিদ্রাসূচকে।
বাতাসে উড়ছে ভুল- বারান্দার ঝুল- গন্ধম সময়-
ধ্যান ভাঙলে একদিন ঈশ্বরের সাথে বদলে নেব
ঘুমের সেফটিপিন, জামার বোতাম-
পুনর্জন্ম হলে একবার প্রেমিক হবো-
হাওয়া বদলে গেলে যেমন-
জোছনায় চোখ রেখে ঘুমঘোরে জেগে ওঠে কুমারী নদী,
মৃতের শহরে দেবদারু গাছ হয়ে ওঠে
প্রিয়তম পুরুষ।
নিখোঁজ ডায়রি
নিজেকে অনেক কিছুই ভাবি-
এই ধরো মানুষ, নদী, পাহাড় কিংবা পাথর
ধরো ব্যথা, সংসার কিংবা তুমি
বুকের পাঁজরে এসে ভেঙে যায় সমস্ত জলের ঢেউ
স্মৃতি থেকে ঝাঁপ দেয় নিখোঁজ ডায়রি- পোড়াগন্ধ,
সন্দেহের শরীর- নথিপত্র- লোনামুখ
নাভির ভাঁজপত্রে পাপের সাইরেন- রাজকপাট
গাঢ় অন্ধকারে নির্ঘুম দেয়ালে নাচে রাত্রির তলপেট।
অন্য মানুষ
চলে যাওয়ার সময় বারবার পেছনে তাকাই-
যদি কেউ ডাকে শেষবার!
ছায়ার মতো হাত নাড়ে
যদি বলে- ফিরে এসো!
হাওয়ার পৃষ্ঠায় নিলাম হয়ে গেছে পিছুটান, নিদ্রিত মুখ-
যেতে যেতে পতনের শব্দ শুনি
প্রতিধ্বনি গিলে খায় নৈঃশব্দ্যের ভাষা, ব্যঞ্জনের মুখম-ল- অনর্গল চেয়ে আছি-
সামনে চোখ রেখে পেছনে হেঁটে যাই, অন্য মানুষ।
সেতুর উপর শুয়ে আছে জল
ভাঙা সেতুর উপর শুয়ে আছে জল- স্বপ্নে বিভোর মানুষেরা পেরিয়ে যাচ্ছে কুয়াশার ভাস্কর্য – যেন বাতাসের অলিন্দে ওত পেতে আছে মৃত মানুষের দীর্ঘশ্বাস- ওপারে কে এঁকে যাচ্ছে আমাদের একান্ত দৃশ্যের কোরিওগ্রাফি? নাচঘরে পড়ে আছে ছায়াদের প্রগাঢ় চুম্বনের ঘোড়া- শেষ দৃশ্যের মাতলামি ভুলে অক্ষর ঘিরে রাখে তোমার নাভী- যাকে নদী ভেবে আমিও বুনেছি স্রোতের ঘামবীজ; ভাঙা সেতুর নিচে ডুবে গেছে মাছেদের আয়ুরেখা- তাড়া খাওয়া রাতের কাছে তুলে দিতে চাও স্মৃতির ঢেউ? জলের নিচে শুয়ে থাকা মানুষেরও পেরুতে হয় জেব্রাক্রসিং- জীবনের নামে উঠে-আসা ঢেউ।