হানিফ ওয়াহিদ:
সবেমাত্র শুয়েছি, রাত আর কতো হবে, আনুমানিক এগারোটা কি সাড়ে এগারোটা । দরজায় টুকটুক আওয়াজ হচ্ছে। আমি দরজা খুলে দেখি লতা ভাবি। মুখটা বেশ মলিন!
আমি বললাম, কী হয়েছে ভাবি? আপনাকে এতো অস্থির লাগছে কেন?
ভাবি বললেন, ভাই, একটু কষ্ট ফার্মেসিতে যেতে পারবেন? ছোট বাচ্চাটার ভীষন জ্বর। এক পাতা নাপা ট্যাবলেট এনে দেন।
ঠিক আছে ভাবি। যাচ্ছি। সফি ভাই কই? সে কি বাসায় নাই?
আছে। সে অন্য রুমে শুয়ে আছে। এখন ডাকা যাবে না। ডাকলে ভীষন রাগ করবেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, তিনি কী বাচ্চার অসুস্থতার কথা জানেন?
জি ভাই। এজন্যই তো অন্য রুমে গিয়ে শুয়েছেন। তিনি বাচ্চাদের ঝামেলা পছন্দ করেন না।
আমি আরও বেশ অবাক হলাম। আর কথা না বাড়িয়ে একটা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নীচে নেমে এলাম। নাপা ট্যাবলেট নিয়ে বাসায় এসে দেখি, ভাবি বাচ্চার শরীর ভিজে গামছা দিয়ে মুছে দিচ্ছেন। বড়ো বাচ্চাটা উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে।
সফি ভাই একজন পরহেজগার টাইপ মানুষ। আমার দেখা সেরাদের একজন। অল্প বয়সেই হজ্ব করেছেন। দিল দরিয়া।
টাকা পয়সা ভালোই আছে। বেশ দান খয়রাত করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে বেশ সম্পত্তির মালিক। সারাদিন ব্যবসায় সময় দিয়ে যেটুকু সময় পান, বেশিরভাগ সময় মসজিদে পরে থাকেন। প্রায়ই দেখি আছর বা মাগরিব নামাজের পর মসজিদে মুসল্লিদের নিয়ে বসেন। হাদিস কোরআন বয়ান করেন।
আমার দেখা চমৎকার একজন মানুষ সফি ভাই। কারও সাতেপাঁচে থাকেন না। আমরা তাকে আদর্শ হিসেবে মানি। এই বয়সে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে চমৎকার একটা মসজিদ বানিয়েছেন। এলাকার লোকজন তাকে সমীহ চোখে দেখে। আমরাও তাকে ভীষন শ্রদ্ধা করি।
এলাকায় কারও মেয়ের টাকার অভাবে বিয়ে হচ্ছে না, কারও হয়তো ঘর নাই,কেউ টাকার অভাবে বিদেশ যেতে পারছে না, সব জায়গায় সফি ভাই। তিনি যথাসাধ্য লোকজনকে সাথে নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করেন।
সে আমার ফুফাতো ভাই।
আমার ফুফাও বেশ পরহেজগার মানুষ ছিলেন। শেষ বয়সে বেশিরভাগ সময় মসজিদে কাটিয়েছেন। তাবলীগ করে বেড়াতেন। মৃত্যুর আগে ভালোই সম্পত্তি রেখে যান। তিনি এতোই ভালো মানুষ ছিলেন যে, তার জানাজায় দশ গ্রামের মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। মৃত্যুর পর অনেক অনাত্মীয়ও তার জন্য কেঁদেছে।
সফি ভাইয়ের বড়ো আরেকজন ভাই আছে। মতি ভাই। মৃত্যুর আগেই ফুফা দুইভাইকে সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে গেছেন। সফি ভাই যেমন পরহেজগার, মতি ভাই হচ্ছে ভ্যাগাবন্ড। বিয়ের আগেই মদ, জুয়া, পান, সিগারেট চা তার নিত্যসঙ্গী। সফি ভাই তার সম্পত্তি ধরে রেখেছেন, মতি ভাই জুয়া খেলে অনেক সম্পত্তি নষ্ট করেছেন। মৃত্যুর আগে ফুফা ফুফু মতি ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক চিন্তা করতেন। লোকজন বলতো, আলেমের ঘরে জালেম হয়েছে!
সেই মতি ভাই যখন নিজে নিজে বিয়ে করে ফেললো, ফুফা ফুফু ভীষন কষ্ট পেয়েছিলেন। তাদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে অন্যত্র আলাদা বাড়ি করে দিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফুফা ফুফু মতি ভাইয়ের বাসায় যান নাই,সফি ভাইয়ের সংসারে থেকেছেন।
আমরা ধরেই নিলাম, মতি ভাই যে মেয়েকে বিয়ে করেছে,তার কপালে অনেক দুঃখ আছে। এমন একজন ভ্যাগাবন্ডকে বিয়ে করেছে বলে আমরা সেই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ শংকিত হলাম।
নব্বই দশকের শেষ দিকে আমি একটা রাজনৈতিক ঝামেলায় পরলাম। আমাকে আশ্রয় নিতে হলো সফি ভাইদের বাসায়। ফুফা ফুফু প্রায় একই সময়ে মারা গেছেন,দুই মাসের ব্যবধানে। ভাইয়ের বউ লতা ভাবি চমৎকার একজন মানুষ। তিনি বেশ শান্তশিষ্ট। বিয়ের পর যখন গিয়েছি, বেশ খাতির যতœ করেছেন।
এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সফি ভাইয়ের সংসার। মেয়ের বয়স চার, ছেলের বয়স দুই। একজন কাজের মেয়ে আছে। মেয়ের নাম তামিমা, ছেলের নাম রহমান। বাচ্চাগুলো বেশ ফুটফুটে। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে। চেহারা ভারি মিষ্টি। লতা ভাবি এবং সফি ভাই দুইজনেই সুন্দর। ওরা মা বাবার সুরৎ পেয়েছে।
আমি প্রায় একমাস ঐ বাড়িতে ছিলাম।
লতা ভাবি আমার সামনে কমই আসতেন। দেখা হয়ে গেলে টুকটাক কথা হতো। যখনই দেখতাম,মুখটা বেশ মলিন। মনে হতো শরীরে আগের সেই প্রাণ নাই। অথচ বিয়ের সময় কতো হাসিখুশি দেখেছি!
লতা ভাবির বিয়ের পরও দুই একবার এই বাসায় এসেছি। তখন ভাবিকে বেশ সুখী সুখী দেখেছি, এই মেয়েটার হঠাৎ কী হলো কে জানে!
সকালে বা রাতে আমি আর সফি ভাই একসাথে খেতে বসতাম। অন্যরা পরে খাওয়াদাওয়া করতো। সকালে নাস্তা খেয়ে আমি হাঁটতে বের হতাম, ভাই তার অফিসে চলে যেতো। দুপুরবেলা কাজের মেয়ে ভাত বেড়ে দিতো। আমি একা একা চুপচাপ খেতাম। আমাদের যৌথ পরিবার। বাসায় সবাই মিলে হৈ চৈ করে খেতাম। এখানে একা একা খেতে আমার ভালো লাগতো না।
লতা ভাবি চুপচাপ থাকতেন। মনে হতো তিনি বাসায় নাই। বাচ্চাগুলোকেও আমার শান্তশিষ্ট মনে হয়েছে। আমার কাজ ছিলো না বলে সকালের নাস্তার পর রাস্তায় ঘুরাঘুরি করতাম,না হয় শুয়ে বসে বই পড়তাম। অনেক সময় বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলা করতাম।
গুনাহ হবে বলে সফি ভাইয়ের বাসায় কোনো টিভি ছিল না। তবে নিয়মিত খবরের কাগজ রাখতেন। সফি ভাই সকালের নাস্তা খেতে খেতে কাগজ পড়তেন।
আমি মনে মনে ভাবতাম, এমন একজন পরহেজগার স্বামী পেয়ে লতা ভাবি ভীষন সুখেই আছে। এমন উদার মনের ভালো স্বামী কয়টা মেয়ের ভাগ্যে থাকে!
দুর থেকে আমরা এই পরিবারটাকে সুখী পরিবার হিসেবেই জানতাম। মনে মনে এমন একটা পরিবার নিজের জন্য কল্পনাও করতাম।
কিছুদিন পরই আমার ভুলটা ভাঙ্গে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম,কোন এক বিচিত্র কারণে লতা ভাবি ভাইকে ভীষন ভয় পেতেন। ভাই কোন অর্ডার করলে দৌড়ে গিয়ে তা পালন করতেন। তাদেরকে কখনোই ঝগড়া করতে দেখি নাই। সফি ভাইকেও উচ্চস্বরে কখনো কথা বলতে শুনি নাই। তারপরও ভাবি কেন ভয় পায় কে জানে!
নাস্তা শেষ করে চা খেতে খেতে বললাম, সফি ভাই, রাতে তো রহমানের ভীষন জ্বর ছিলো, এখন কী কমেছে?
তিনি পেপার থেকে মুখ না তুলেই বললেন, তাই নাকি?
আমি বললাম, কেন? আপনি জানেন না?
তিনি উত্তর দিলেন না। ভিতরের রুমে ঢুকে গেলেন। আমি বেশ অবাক হলাম। ভাবি কি তাকে কিছুই বলে নাই?
আমি আরেকটা বিষয়ে বেশ অবাক হই। বাচ্চারাও তাদের বাবাকে ভীষন ভয় পায়। তারা কখনোই তাদের বাবার সাথে খেলাধুলা করে না। অথচ আমাকে দেখলেই, আংকেল! আংকেল! বলে দৌড়ে আসে!!
বিষয়টা আমাকে বেশ মর্মাহত করে। লতা ভাবি বেশ সুন্দরী। ভাই কি তাহলে ভাবিকে নিয়ে সুখী নয়? এমন একজন শান্তশিষ্ট বউ পাওয়া যে কোন পুরুষের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। ভাবিকে দেখে আমি মনে মনে অনেকদিন বলেছি,হে আল্লাহ! তুমি লতা ভাবির মতোই শান্তশিষ্ট আমাকে একটা বউ দিও!
আরেকটা বিষয় আমাকে বেশ ভাবায়। প্রায় মাসখানেক যাবৎ এ বাড়িতে আছি। ভাবিদের বাড়ির কাউকেই এই বাসায় আসতে দেখি নাই। অথচ ভাবিদের বাসা বেশি দূরে নয়। অনেকের সাথে রাস্তাঘাটে আমার দেখা হয়।
একদিন মধ্যরাতে ঘুম আসছিল না, আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হলো ভাবির রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। ভাই, হিসহিস করে কী যেন বলছেন আর ধমকাচ্ছেন। বারান্দা থেকে ভালো করে কান পাততেই শুনতে পেলাম, ভাবি বলছেন,দোহাই আপনার, এইসব কইরেন না। বাচ্চাগো ভবিষ্যৎ কী হইবো? মানুষকে কী বলবো?সমাজে মুখ দেখামু কেমনে?
ভাই চাপা ধমকের সুরে বললেন, বেআক্কেল মেয়েমানুষ! আজকাল এইসব কোন ব্যাপার? তাছাড়া আমি তো অন্যায় কিছু করতেছি না,
দোহাই লাগে,আপনের পায়ে পড়ি,
চুপ, একদম চুপ। বেশি বাড়াবাড়ি করবা না,
আমি বারান্দা থেকে চলে এলাম। লুকিয়ে অন্য স্বামী স্ত্রীর কথা শোনা আমার জন্য ঠিক হবে না। তাছাড়া আমি এখানে আশ্রিত।
আমি বুঝলাম,প্রদীপের নীচেই হয়তো কোন অন্ধকার লুকিয়ে আছে। কিন্তু এটা বুঝলাম না, ভাই আসলে কী করতে চাইছে। ভাবি কেন কান্নাকাটি করছে!
সফি ভাই কী চরিত্রহীন? তা-ই বা কেমন করে হয়? ছোটবেলা থেকেই সফি ভাইকে তার আদর্শ চরিত্রের জন্য শ্রদ্ধা করে এসেছি। তাহলে?
বিষয়টা কেন যেন আমার মাথায় গেঁথে রইলো। অথচ, সফি ভাই বা লতা ভাবিকে বাইরে থেকে দেখে বুঝার উপায় নাই,তাদের মধ্যে কোন গ-গোল চলছে। বাইরে এরা স্বাভাবিক।
দুই দিন পর সকাল বেলা হাঁটতে বের হয়েছি, রাস্তায় মতি ভাইয়ের সাথে দেখা। মতি ভাইকে আমি একদম-ই পছন্দ করি না,তার ভ্যাগাবন্ড স্বভাবের কারণে। যারা মদ, জুয়া নিয়ে পরে থাকে, তাদেরকে আমার মানুষ বলেই মনে হয় না। মতি ভাইকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতেই ফুফা ফুফু মারা গেছেন। তারা মারা গেছেন হার্ট এ্যাটাক করে।
মতি ভাই আমাকে জোর করে ধরে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। অনেকদিন পর আমাকে দেখে ভাবি এবং তার তিন বাচ্চা বেশ খুশি হলো।
দুপুরবেলা ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হলো। ভাবির রান্নার হাত বেশ ভালো। যদিও তিনি লতা ভাবির মতো ততোটা সুন্দরী নন, গায়ের রং কিছুটা ময়লা,কিন্ত তার চেহারা বেশ মায়াকাড়া। তিনি নিজ হাতে বেড়ে আমাকে খাওয়ালেন। ভাবির ব্যবহার আমাকে বেশ মুগ্ধ করলো। বেশ হাসিখুশিও মনে হলো। অথচ মতি ভাইয়ের বউকে নিয়ে আমরা কতো চিন্তা করেছি!
বিকেলে মতি ভাই বেরিয়ে গেছেন। বাচ্চারা শিক্ষকের কাছে পড়তে বসেছে। ভাবি এলেন আমার সাথে গল্প করতে।
আমি বললাম, আপনি কেমন আছেন, ভাবি?
ভাবি আমার এই প্রশ্নের উত্তর বুঝলেন। তিনি হাসতে হাসতে বললেন,আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি, ভাই। আপনার ভাইও ভালো আছে।
আমার মনে হলো,ভাবির শরীর থেকে সুখ উপচে উপচে পরছে!
আমি জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।
ভাবি বললেন,আপনার ভাইয়ের যতো বদ গুন ছিলো, বিয়ের পর সবই ছেড়ে দিয়েছে। সে মদ তো দুরে থাক, এখন সিগারেট পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখে না। জুয়া খেলে না। এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। প্রায়ই তার মা বাবার কবর জিয়ারত করতে যায়। সন্ধ্যার পর বাচ্চাদের নিয়ে সময় কাটায়। বাচ্চারা তো বাবা বলতে অজ্ঞান!
আমি অবাক হয়ে বললাম, এটা কী করে সম্ভব হলো,ভাবি?
সবই আল্লাহর ইচ্ছা, ভাই। আমার ভাগ্য ভালো,এমন একজন স্বামী পেয়েছি!
আমার মনে হলো,ভাইয়ের পরির্বতনে ভাবির অনেক হাত আছে। ভাই এমনি এমনি পরিবর্তন হয় নাই। মনে মনে ভাবিকে একটা স্যালুট জানালাম।
আমি বললাম, সফি ভাইদের বাসায় যান না?
ভাবি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, না ভাই। আগে যেতাম, এখন যাই না!
কেন ভাবি? কিছু হয়েছে?
আপনি তো ঐ বাসায় থাকেন,কিছু শোনেন নাই?
না তো!
আর বইলেন না, ভাই। সফি ভাইকে শয়তানে পেয়েছে। সে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াইছে। সেই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে। সম্ভবত আগামী মাসেই বিয়ে। গত সপ্তাহে লতা এসেছিল। মেয়েটা কেঁদেকেটে একশেষ।
বলেন কি ভাবি? লতা ভাবির মতো এমন সুন্দরী লক্ষী বউ থাকতে সফি ভাই কেন এমন কাজ করবে?
ভাবি আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,জানি না রে ভাই! দুনিয়ায় কত কিসিমের মানুষ যে থাকে! পুরুষ মানুষের মন বুঝা দায়!!
আমি কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম। এ আমি কী শুনছি! সফি ভাইয়ের মতো চমৎকার একজন মানুষ এই কাজ কীভাবে করতে পারে।
সারাজীবন মতি ভাইকে ঘৃনা করে এসেছি এবং সফি ভাইকে সম্মান করেছি। আজকে মতি ভাইয়ের বউ হাসছে আর সফি ভাইয়ের বউ চিতার আগুনে জ্বলছে!
এটা কেমন করে হয়!
হে আল্লাহ! এটা তোমার কেমন বিচার?
যার হাসার কথা সে কাঁদছে, যার কাঁদার কথা সে হাসছে!
সন্ধ্যার পর সফি ভাইয়ের বাসায় গেলাম। লতা ভাবি সোফায় হেলান দিয়ে উদাস নয়নে ছাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমাকে দেখে চট করে সরে গেলেন। কাপড়চোপড় গুছিয়ে ব্যাগে ভরলাম। এই বাসায় এক মূহুর্ত নয়।
চলে আসার সময় বললাম, আমি চলে যাচ্ছি, ভাবি।
ভাবি উদাস গলায় বললেন, আচ্ছা ভাই। আবার আসবেন।
কেন চলে যাচ্ছি কারণ জিগ্যেস করলেন না।
আমার মনে হলো, একটা জীবন্ত মানুষকে সফি ভাই জিন্দা লাশ বানিয়ে দিয়েছেন।
মসজিদের সামনে সফি ভাইয়ের দেখা পেলাম। কী সুন্দর নুরানী চেহারা! এই মানুষ কোন অন্যায় করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হতে চায় না। কোথাও ভুল হচ্ছে না তো?
আমি বললাম, চলে যাচ্ছি, ভাই।
সফি ভাই বললেন, তোর সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে?
না। তবে আপনার বাসায় আর এক মূহুর্ত থাকতে ইচ্ছা করছে না।
তিনি আমার দিকে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
আমি হঠাৎ সফি ভাইয়ের একটা হাত চেপে ধরলাম। তারপর করুন কন্ঠে বললাম, আপনি এই কাজটা কইরেন না, ভাই। প্লিজ।
সফি ভাই অবাক হয়ে বললেন, কোন কাজ?
আপনি আরেকটা বিয়ে,
লতা তোকে বলেছে?
না।
তাহলে জানলি কীভাবে?
মতি ভাইদের বাসায় গিয়েছিলাম।
ওঃ, তাহলে এই কথা! লতা গিয়ে বলে এসেছে, আমার নামে বদনাম ছড়াচ্ছে! আচ্ছা, তোদের কী মনে হয় আমি অন্যায় কিছু করছি?
অবশ্যই। এটা লতা ভাবির প্রতি অন্যায় নয়?
মোটেই না। আমি যা কিছু করবো,ধর্ম মেনেই করবো। আরে,আমি তো পরকীয়া করছি না। ধর্মে কি দুই বিয়ে নিষেধ আছে? আমি তো অধর্ম কিছু করছি না,,,
ভাই,আপনি আরেকটা বিয়ে করলে ভাবির কী হবে? বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? ভাবির কষ্টটাকে গুরুত্ব দিবেন না?
তোর ভাবিও তো তার স্বামীর ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করছে না। তার কি উচিত না, স্বামীর ইচ্ছার মূল্যায়ন করা? আমার কি টাকা পয়সা কম আছে? আমি কি ঠিকমতো তার ভরণপোষণ করছি না? তাহলে সমস্যা কই? বিয়ে না করে যদি পরকীয়া করি, সেটা কী ভালো হবে? সে কি চায়,আমি পরকীয়া করি?
আমি আর সেখানে দাঁড়ালাম না। হনহন করে হাঁটতে লাগলাম সামনের দিকে। হাঁটছি আর ভাবছি, এই যে সফি ভাই এতো ধর্ম পালন করেন, ধর্ম কী তাকে মানুষ বানাতে পেরেছে? নাকি কিছু মানুষ ধর্মের আড়ালে ভালো মানুষের মুখোশ পরে শুধুই অভিনয় করে যান! মেয়েদের কোথায় যে সুখ,আর কোথায় দুঃখ, বিধাতা ছাড়া কেউ জানে না।
হানিফ ওয়াহিদ, গল্পকার