সত্যব্রত খাস্তগীর: শ্রীযোগেশ চন্দ্র সিংহ- একজন মহান শিক্ষাব্রতী। চট্টগ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য জগতে প্রবাদপ্রতীম পুরুষ। জ্ঞানসাধক ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, যাঁর স্নেহ ধন্য ছাত্রছাত্রীরা দেশে বিদেশে নিজেদের মেধা ও সুনাম ছড়িয়ে স্বনামে সুখ্যাত। তাঁর এক সুযোগ্য ছাত্র বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সমরযোদ্ধা বিনোদ বিহারী চৌধুরীর বর্ণনায় তাঁর ব্যক্তিত্বের কথা উঠে এসেছে- “১৯১৮-এর জুলাই মাস। তারিখটা মনে নেই। অধ্যাপক যোগেশ সিংহ মশায় এলেন। কলেজে ঢুকলেন, পরনে সাদা রং এর ইংলিশ স্যুট। গলায় কালো রং এর টাই। পায়ে কালো রং এর চকচকে জুতা। চমৎকার ম্যাচ করেছে। সুন্দর চেহারা, দেহের সুঠাম গড়ন। গায়ের রং কাঁচা সোনার মত এককথায় তরুণ, সুদর্শন, প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ। যোগেশ চন্দ্র আমাদের পড়াতেন সেক্সপিয়ারের ঈড়ৎরড়ষধহঁং আর চধংং ঈড়ঁৎংব এর ঙঃযবষষড় গ্রীক সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্য এমনকি সংস্কৃত সাহিত্যের ও আলোচনা চলত। এতে বোঝা যেত তাঁর পা-িত্য ও জ্ঞান কত গভীর।”।
চট্টগ্রাম জেলার বাশঁখালী থানার সাধনপুর গ্রামে জ্ঞানতাপস যোগেশ চন্দ্র সিংহ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শ্রী প্যারী মোহন সিংহ সাধনপুর গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। যোগেশ চন্দ্র সিংহ কোলকাতার সিটি কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। ২৮ বছর বয়সে এম.এ পাস করেন। এর এক বছর পর অধ্যাপক হিসাবে চট্টগ্রাম কলেজে যোগদান করেন। যোগেশ বাবু’র সহধর্মিনি ছিলেন শ্রীমতি স্বর্ণলতা সিংহ। স্বামীর স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন: ‘ছুটিতে বাড়ি এলে দেখতাম সকাল ৮ টার সময় চা-খাবার খেয়ে বাইরে বৈঠকখানায় বইপত্র নিয়ে চলে যেতেন। ওখানেই বেলা ১১ টা পর্যন্ত লেখা-পড়া এবং বন্ধুবান্ধব নিয়ে গল্প করতেন। দুপুরের খাওয়া ১২ টার মধ্যেই খেতেন। ১৯৩০ ইংরেজীতে আমাদের রহমতগঞ্জ বাড়ি হয়।’
শিক্ষক রুপে তিনি কেমন ছিলেন, অধ্যাপক ড: আনিসুজ্জামান স্যারের বর্ণনায় সুস্পষ্ট: “ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে তাঁর যেমন অসাধারণ অধিকার ছিল, তেমনি অসাধারণ নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষাদান করেছেন। ধার্মিকতার সঙ্গে ঔদার্যের এবং কর্তব্যপরায়নতার সঙ্গে ¯েœহশীলতার অপূর্ব যোগ তিনি ঘটিয়েছিলেন। কর্মজীবনের পরিচয় যোগেশচন্দ্রকে জানবার জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাব এত সুদুর প্রসারী ছিল যে তা অনায়াসে তাঁর কর্মজীবনের পরিধিকে অতিক্রম করেছিল”
রবীন্দ্র সাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ছিল তাঁর মননশীলতার মূল বিষয়। জগত ও জীবনের সত্যস্বরুপ রবীন্দ্রভাবাদর্শের আলোকেই উপলব্ধি করতে চেয়েছিলেন। তাঁরই সুযোগ্য ছাত্র শ্রী সুবোধ রঞ্জন রায় প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে লিখেছেন: ‘কী অসাধারণ স্মৃতি শক্তি ছিল তাঁর, রবীন্দ্রনাথের ‘মানসসুন্দরী, ‘বসুন্ধরা’, ‘সমুদ্রের প্রতি’, ‘প্রেমের অভিষেক’- এর মতো সুদীর্ঘ কবিতা আগাগোড়া আবৃত্তি করে যেতে পারতেন।’ তাঁর চোখে ‘রবীন্দ্রনাথ শুধুই কবি নন, ‘ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ’। তিনি বিশ^াস করতেন পর্যাপ্ত দার্শনিক জ্ঞান ছাড়া রবীন্দ্রচর্চা অন্ধের হস্তীদর্শনতুল্য’। তাঁর বৈঠকখানার চারিদিকে দেখা যেত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গ্রন্থ। তাঁর বক্তৃতা শক্তি ছিল অসাধারণ। তিনি অনর্গল ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তৃতায় দিতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথের উপর দক্ষতা থাকায় তাঁর বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ থেকে উদ্ধৃতি থাকতো। তাঁর ‘ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক চিন্তা ও ভাবনারাজি সঞ্জত মহৎ শিল্পকর্মের সুংসহত প্রকাশ।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদ যোগেশ চন্দ্রের শিক্ষাদান সম্পর্কে বলেছেন: “ছাত্রদের কাছে তিনি তাঁর বক্তব্যকে রসিয়ে ফেনিয়ে তুলতেন। প্রাসঙ্গিক নানা কথায় তাঁর বক্তব্য সরস ও জীবন্ত হয়ে উঠত। ছাত্ররা অপলক নয়নে তাঁর দিকে চেয়ে থাকত”। তিনি আরো বলেছেন- “তাঁকে সবাই জ্ঞানতাপস আখ্যায়িত করেছেন। এর চেয়ে তাঁর আর কোন বড় উপাধি হতে পারেনা”। অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র সিংহ হলেন বাতিঘর, গোটা চট্টগ্রামকে জ্ঞানের আলোতে উদ্ভাসিত করে গেছেন। অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদ ‘শিক্ষকের স্মৃতি কথায়’ লিখেছেন: ‘যে গ্রামে যোগেশ সিংহ এর জন্ম সে গ্রামে আমারও জন্ম এই ভেবে এবং বন্ধুদের কাছে এ কথা বলে আমি অপরিসীম গৌরববোধ করি। তাঁকে নিয়ে শুধু চট্টগ্রাম নয়, গোটা বাংলদেশ গৌরব করতে পারে’।
যোগেশ বাবুর এক বন্ধু (সারদা রঞ্জন বিশ^াস) আলাপ চারিতায় অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন’ কে বলেছিলেন-‘ এক বিকেলে যোগেশ বাবুকে নিয়ে জিলা বোর্ড রোড দিয়ে বাণীগ্রাম পর্যন্ত (দু’মাইল) হেঁটে আসলাম। সারাপথ তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করে শোনালেন। ঘরে ফিরলাম। তবু যেন আবৃত্তি ফুরায় না’।
১৯৪১ থেকে ১৯৬৪ সলের মধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রবীন্দ্র কবিমানসের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রায় বিশটি প্রবন্ধ গ্রন্থিত করে প্রকাশ পেল তাঁর এক অসাধারণ গ্রন্থ ‘ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ’। ১৯৭২ সনে লিখেছেন: ‘রোমান্টিক রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘মিষ্ঠিক রবীন্দ্রনাথ’ নামে দুটি প্রবন্ধ। আচার্য যোগেশ চন্দ্র সিংহের মহত্তম গ্রন্থ “ ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ” প্রসংগে স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রমিত লেখক বেলাল মোহাম্মদ -এর কবিতার চরণ প্রণিধানযোগ্যঃ
“ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ”
তাতেই ছিলেন গ্রন্থিভূত চট্টলের অনুধ্যান
জাগ্রত জীবন যোগেশ চন্দ্র সিংহ
যে তীর্থে আমরা সবাই সতীর্থ”।
আচার্য যোগেশ চন্দ্র সিংহ উচ্চ শিক্ষা বঞ্চিত, খেটে-খাওয়া মানুষদের চিত্তের দৈন্যদশা এবং মহান ইচ্ছার অপমৃত্যু উপলব্ধি করে চট্টগ্রামে প্রথমে একটি নৈশকলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই নৈশ কলেজ আজকের সুরম্য ভবন-সরকারী সিটি কলেজ। চট্টগ্রামে সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা এবং এর প্রথম অধ্যক্ষ হওয়া- এ ছিল যোগেশ বাবুর গৌরবময় অধ্যায়। তাঁর অনেক বিষয় সম্পদ থাকলেও ছিলেন না বিষয়ী। তিনি তাঁর জীবনের শেষ সঞ্চয়টুকু ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, চট্টগ্রাম প্রবর্তক সংঘের অনাথালয় ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য দান করে গেছেন। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় প্রবর্তিত ‘যোগেশ স্বর্ণপদক-তাঁর মহাজীবনের স্মৃতিস্মারক। সিটি কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে বিদায় নেবার পর নারী সমাজের মধ্যে অর্নিবান দীপশিখা জ¦ালানোর ইচ্ছায় চট্টগ্রামে একটি মহিলা কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। নৈশ কলেজ, সিটি কলেজ, মহিলা কলেজ- এসব প্রতিষ্ঠান তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
যোগেশ বাবু ছিলেন একজন সুসাহিত্যিক। সাহিত্য-চেতনা, সাহিত্য- ধারনা ও সাহিত্য- অনুশীলনই ছিল তাঁর জীবনব্রত। ছিলেন রবীন্দ্রকাব্য ও সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ। তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন কিন্ত শেলি, কীটস এর পদ্য পড়াতে গিয়ে অনর্গল রবীন্দ্রনাথের পদ্য ও গানের অবতারণা করে যেতেন।
ড. আহমেদ শরীফ তাঁর মূল্যায়ন করেছেন এভাবে:- “সংস্কৃতিবান যোগেশ চন্দ্র সিংহ ছিলেন আমার চোখে বিশেষভাবে রবীন্দ্র সংস্কৃতি জগতে এক দুর্লভ পুরুষ। একালে তাঁর মতো আর কাউকে আমরা কখনো পাব না- কালান্তর ঘটে গেছে বলেই। এ কারণে পরম শ্রদ্ধাস্পদ অধ্যাপক যোগেশ চন্দ্র সিংহকে স্থায়ীভাবে স্মরণ করে রাখা চট্টলবাসীর ঐতিহ্যরূপে স্মরণ করা আত্মহিতেই আবশ্যিক মনে করি।’ প্রখ্যাত কুটনৈতিক এদেশে প্রথম ভারতীয় হাই কমিশনার, চট্টলগর্ব সুবিমল দত্ত বলেছেন- তাঁর “অপূর্ব গ্রন্থ ‘গীতাবোধিনী’। বেদ, উপনিষদ ও পুরানের তত্ত্ব নির্যাস করে গীতা তত্ত্বের সঙ্গে সমন্বয় সাধন বিস্তৃত হিন্দু শাস্ত্র ও গীতা অধ্যয়ন ও মনন ব্যতীত এইরূপ গ্রন্থ প্রণয়ন সম্ভব নয়”।
অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র সিংহের সহশিক্ষকদের মধ্যে সুবিদিত কিছু নাম উল্লেখ করা হলো- সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত ড. আনিসুজ্জামান, কালীহর সরকার, অধ্যাপক মুহাম্মদ মনসুর উদ্দীন, অধ্যাপক অমিয় কুমার মজুমদার। তাঁর শিক্ষকতা জীবনে অসংখ্য কৃতিমান ছাত্র-ছাত্রীর উদয় হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে স্বনামে সমুজ্জ্বল হয়েছেন বিপ্লবী প্রয়াত শ্রী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, কূটনৈতিক সুবিমল দত্ত, গবেষক জনাব আহমদ শরীফ, অধ্যক্ষ শ্রী চিত্তপ্রসাদ তালুকদার, অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমেদ, কমরেড পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রমুখ।
তিনি ১৯৭৭ সালে দৈনিক আজাদী’তে এবং ‘হিমাদ্রী’ (সাপ্তাহিক পত্রিকায়) ১৯৬১ থেকে ১৯৭৭ সালে প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর দুিট বিদেশী গ্রন্থের অনুবাদদ (১) চৎধুবৎং ধহফ গবফরঃধঃরড়হ এর অনুবাদ ‘শ্রী মায়ের ধ্যান ও প্রার্থনা’ (২) জড়হধষ ঐবহৎু ঘরপশংড়হ এর ‘ ঞযব ঝবৎধপয ড়ভ ঞৎঁঃয’ অনুবাদ পাঠকমহলে সমাদৃত। ধর্মকে তিনি জীবনের মধ্যেই দেখতে পেতেন। তাঁর মতে, “বিশ^ ভুবনকে সজনে-নির্জনে,অন্তরে-বাইরে, প্রেমের সঙ্গে প্রত্যক্ষণের মধ্যে ধর্মের প্রধান লক্ষ্য নিহিত।” তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রচনা:- ‘মাতৃবন্দনা’, ‘আমারধর্ম’, ‘ভারততীর্থ’, ‘প্রাচ্যজনী প্রবন্ধাবলী। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র সংস্কৃতি ¯œাত একজন মহান লেখক। তাঁর রবীন্দ্র বিষয়ক প্রবন্ধ: ‘রবীন্দ্রনাথের আত্মজিজ্ঞাসা’, ‘রবীন্দ্রনাথের আত্মপ্রকাশ তত্ত্ব’, ‘ভূমারসিক রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রগল্পে আত্মজীবনবেদ’, এ লেখাগুলো তাঁর রবীন্দ্র অনুধ্যানের পরিচয় বহন করে। তাঁর টেবিলে গীতা, কোরআন, বাইবেল এ তিনটি বই থাকতো। প্রতিদিন সকালে বইগুলোর উপর মাথা রাখতেন তারপর পড়তেন। তাঁর ড্রইংরুমে ইংরেজি সাহিত্যের বইপত্র, শেক্সপিয়ার, ব্রাউনিং, মিলটন, কিট্স, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, বাইরনের প্রতিকৃতি শোভিত ছিল। দেশ প্রেমিক যাত্রামোহন সেনগুপ্তের পতœী নেলী সেনগুপ্তার সম্বর্ধনা সভায় তিনি বলেছিলেন- “ও যধফ নববহ ঃবধপযরহম ঊহমষরংয ভড়ৎ সধহু ুবধৎং নঁঃ ও ভববষ ঢ়ৎড়ঁফ ঃযধঃ নু হড়ি ও যধাব ভড়ৎমড়ঃঃবহ ঊহমষরংয”.
১৯৭৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, চট্টল গৌরব শ্রী যোগেশ চন্দ্র সিংহ মহাপ্রস্থানের পথে চলে গেলেন। বীর প্রসবিনী চট্টগ্রাম হারালো এক মহান সাধক, জ্ঞানবৃক্ষ, মানবদরদী শিক্ষাব্রতীকে। সাহিত্যপিপাসু পাঠক হারালো রবীন্দ্র-অনুধ্যানী আচার্য পুরুষকে। অধ্যক্ষ যোগোশ চন্দ্র সিংহের জীবনাচরণ ছিল শিক্ষনীয় ও অনুসরণীয়। তিনি খুব সু-শৃংখল জীবনযাপন করতেন। তাঁর ৮৯ বছরের সুস্থজীবনের মূলে ছিল ভ্রমণচারিতা। আচার্য যোগেশচন্দ্র সিংহ ছিলেন অধ্যাত্মবাদী মানুষ এবং এক্ষেত্রে ছিলেন গোঁড়ামীমুক্ত । তাঁর কাছে শ্রীকৃষ্ণ, যিশু, হযরত মোহাম্মদ (দ.), গৌতমবুদ্ধ সবাই সমানভাবে বরণীয় ছিলেন। তাঁর আদর্শের মূল সত্য ছিল “বহুজন সুখায় বহুজন হিতায়”। তাঁর জন্মদিবস ছিল ১৫ জ্যৈষ্ঠ। উনার নিষেধ থাকায় জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন করা হতো না। মৃত্যুর ২/৩ মাস আগে রহমতগঞ্জের ভবনের দোতলায় সারা ঘরে ঘুরে ঘুরে ছোট ছোট করে রবীন্দ্র পংক্তিগুলো উচ্চারণ করেছেন। শেষের দিকে বুঝতে পারলেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার দিন ঘনিয়ে আসছে। চেয়ারে বসে শুধু ধ্যানমগ্ন থাকতেন। শেষ নিঃশ^াস ত্যাগের মুহুর্তে তাঁর হাত ধরে পাশে বসেছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ চিত্ত প্রসাদ তালুকদার। সন্ধা ৭:৪০ মিনিটে আচার্য দেবের চোখের পাতায় ঘুমের শান্তি দেখা গেল। শুভ্রদেহ, শে^ত বসনে আবৃত পুস্পমাল্যে শায়িত এক দেব ঋষি। শেষ জন্মদিনে তিনি রবীন্দ্রনাথের “চির আমি” গানটি বারে বারে শুনতে চেয়েছিলেন-
“….. কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি,
সকল খেলায় করবো খেলা এই আমি।”
তথ্যঋণঃ “যোগেশস্মৃতি” গ্রন্থ।
সত্যব্রত খাস্তগীর, কবি ও প্রাবন্ধিক