এখন সময়:রাত ১০:০২- আজ: বুধবার-৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

এখন সময়:রাত ১০:০২- আজ: বুধবার
৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

রবির কিরণে জেগে ওঠা চেতনার পথ

জসীম উদ্দীন মুহম্মদ

 

রবীন্দ্রনাথ এমন একটি নাম যা উচ্চারণ করলেই বাঙালির হৃদয়ে ধ্বনিত হয় এক স্পন্দন। আর এজন্য ২৫শে বৈশাখ বাঙালির ইতিহাসে এক আশ্চর্য জন্মক্ষণ, যখন বাংলার আকাশে উদিত হয় এক নতুন সূর্য। তিনি শুধু কবি নন, তিনি এক বিশ্বপুরুষ। শুধু সাহিত্যিক নন, এক ধ্রুপদ আন্দোলন। শুধু গীতিকার নন, বরং এক সুরমগ্ন আত্মা। তাঁর জন্ম যেন অবিভক্ত বাংলার ভাষার এক জাগরণ। তাই ২৫শে বৈশাখ আমাদের ক্যালেন্ডারে কেবল একটি তারিখ নয়, এটি একটি ধ্রুপদী জাগরণের দিন। বাংলা সাহিত্যের অন্তরতম বাতিঘর। বিশ্বকবি যেন বাংলার মানসলোকে জন্ম নেয়া এক শুদ্ধ সৌন্দর্য। তাঁর জন্ম কেবল একজন কবির নয়, একজন বড় মানুষ, এক সময়চেতনার এবং এক মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে ওঠা রূপান্তরের সূচনা।

 

রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় আমাদেরকে ভাবনার ভাষা দিয়েছেন। ছড়া, কবিতা, গল্প, নাটক, গান, উপন্যাস সকল ক্ষেত্রেই তিনি  আমাদের প্রেম, বেদনা ও আনন্দের শব্দরূপ। তিনি বিনি সুতার মালা গেঁথে দিয়েছেন আনন্দে, ছন্দে ও গানে। তিনি বলেছেন, “মৃত্যুরে তুচ্ছ করি জীবনের গীত গাই”, আবার কখনো নিঃসঙ্গ নিশীথে লিখেছেন, “তোমার যড়ষষড়ি াবংংবষ আমি, তুমি করো পূরণ”। তাঁর কলম আমাদের আত্মার দালান নির্মাণ করেছে। যেখানে প্রকৃতি, মানুষ, স্রষ্টা ও নিজস্ব অন্তর্লোক একাকার হয়ে ওঠে।

 

তাই বলা যায়, এই জন্মদিন শুধু স্মরণ নয়, এক দীঘল  অনুশীলন। তাঁর দর্শনের, তাঁর ভালোবাসার, তাঁর অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদের। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মনে করিয়ে দেন, শিল্পের চেয়ে বড়ো শিক্ষা হলো হৃদয়ের বিস্তার। শিক্ষা, প্রেম ও সৃষ্টি এই ত্রিধারায় গড়ে ওঠা রবীন্দ্র-তরঙ্গে আজও ভেসে বেড়ায় আমাদের বাংলা। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে তাই আমরা তাঁকে কেবল স্মরণ করি না; আমরা তাঁর পথেই হাঁটি। তাঁর গান গাই, তাঁর কবিতা পাঠ করি, তাঁর ভাষায় জীবনকে নতুন করে চিনে নিতে চাই। কারণ, তিনি আমাদের সময়ের সীমানা পেরিয়ে যাওয়া পরীক্ষিত মানুষ।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শন ছিল হৃদয়বান, মুক্তচিন্তাশীল এবং মনুষ্যত্বনির্ভর। তিনি শিক্ষাকে কেবল পুঁথিগত জ্ঞান হিসেবে দেখেননি; বরং জ্ঞানচর্চার সাথে প্রকৃতি, সৃজনশীলতা ও মানবিক বিকাশের সংযোগ ঘটিয়েছেন। শান্তিনিকেতন ছিল তাঁর দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ খোলা আকাশ। বৃক্ষের ছায়ায়, গানে, নাটকে, আলোচনায় গড়ে উঠতো শিশুমনের নির্মল আত্মবিকাশ। তিনি বলতেন, ঊফঁপধঃরড়হ রং হড়ঃ ঃযব ধসড়ঁহঃ ড়ভ রহভড়ৎসধঃরড়হ ঃযধঃ রং ঢ়ঁঃ রহঃড় ুড়ঁৎ নৎধরহ… রঃ রং ধ ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ রষষঁসরহধঃরড়হ.

এই শিক্ষা চিন্তা আজও নতুন করে আমাদেরকে ভাবায়। একটি পাঠ্যপুস্তক নির্ভর, গতানুগতিক পরীক্ষা-কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার গদির বাইরে ভাবতে শেখায়।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক অসাধারণ সুরকার। তাঁর সংগীত বিশ্বমানের। রবীন্দ্রসংগীত। শুধু একটি ঘরানার নাম নয়, এটি বাংলার আত্মার সঙ্গীত। যেখানে প্রেম, ভক্তি, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, ঋতুচক্র সব একাকার হয়ে মিশে গেছে। “তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম’এই এক পঙক্তি বহন করে চিরকালীন বিচ্ছেদের গভীরতা; “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” হয় বিশ্বভুবনের একান্ত আপন প্রেমপত্র। তাঁর গানে বাংলা পায় নিজের ভাষা, পায় চোখের জল, পায় প্রাণের ভাষ্য।

রবীন্দ্রনাথের প্রেমভাবনা ছিল বহুমাত্রিক, গভীর ও আধ্যাত্মিক। তাঁর প্রেম কখনো করুণ, কখনো অতৃপ্ত, কখনো অশেষ মুক্তির দিকে ধাবিত। ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে, অন্তরে’, বা ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান’ত্মএই প্রেমে শরীর নেই, আছে অনন্ত আকাঙ্ক্ষা, চেতনার বিস্তার। কাঞ্চন-কমলার মত বিভক্ত জীবন ও মনের দ্বন্দ্বে, চিত্রাঙ্গদা বা নলিনী চরিত্রে আমরা দেখি প্রেমের এক অদ্বিতীয় দর্শন যা আত্মপ্রকাশের, আত্মসমর্পণের, আবার আত্মমুক্তিরও।

এই তিনটি স্তম্ভত্মশিক্ষা, সংগীত ও প্রেম মিলেমিশে  রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছেন বাংলার জীবন্ত আত্মা। তাঁর জন্ম কেবল এক কবির নয়, এক মানবতাবাদী চেতনার জন্ম। যিনি বলতেন, “আমি মানবের গান গাই।” তাই ২৫শে বৈশাখ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি একটি  প্রতিশ্রুতি। এই ঘোরলাগা সময়েও, মানুষ হয়ে ওঠার যাত্রাপথে তাঁর আলো আমাদের পথ দেখাক। রবির কিরণে আবার জেগে উঠুক আমাদের মনুষ্যত্ব, সৃজনশীলতা ও মানবপ্রেম।

 

জসীম উদ্দীন মুহম্মদ: সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ

রেম্ব্রান্টের জন্মশহর লেইডেন, ইনডেক্স পোয়েট্রি বুকস এবং কেইস নুটবুমের তিনটি কবিতা

আলম খোরশেদ বছর ছয়েক আগে জার্মান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের আমন্ত্রণে বিশ্বখ্যাত নাট্যোৎসব থিয়েটার ট্রেফেন এর ছাপ্পান্নতম আসরে যোগ দিতে বার্লিন গিয়েছিলাম, পৃথিবীর আরও কুড়িটি দেশের

আমরাই শেষ জেনারেশন

বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর আমরাই শেষ জেনারেশন, যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখেছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজকের জিমেইল, ফেসবুক,

আন্দরকিল্লা সাহিত্যপত্রিকা এবং স্মৃতিকাতর চাটগাঁ

প্রবীর বিকাশ সরকার “আন্দরকিল্লা” ম্যাগাজিনটি ২৭ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে, আদৌ কম কথা নয়! সাহিত্য, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজবিষয়ক একটি সাময়িকী বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহর