এখন সময়:রাত ৯:৩৪- আজ: বুধবার-৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

এখন সময়:রাত ৯:৩৪- আজ: বুধবার
৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

রবীন্দ্র প্রবন্ধ : শিক্ষা চিন্তা

জান্নাতুল যূথী

ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষা ও সমাজসংস্কার নিয়ে যারা সোচ্চার হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক  ও চিত্রকরই নন তিনি জীবনের একটি বড় সময় ব্যয় করেছেন শিক্ষার সংস্কারকল্পে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন এক নতুন জগতের সন্ধান দেয়। যেই পথে আজও আমরা হাঁটতে পারিনি বলেই জ্ঞাত হই।

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের সংযোগ থাকা অবশ্যম্ভাবী। যে শিক্ষায় আনন্দ যুক্ত থাকে না তা দিনান্তে জড়ভরতে পরিণত হয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে ব্যক্ত করেছেন, মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তাকে সাড়ে তিন হাত জায়গার মধ্যে কবর দেওয়া হয় কিন্তু তাই বলে সে পৃথিবীতে এই সামান্য জায়গায় বসতি স্থাপন করে না। কারণ তাতে তার স্বাধীন চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ঠিক শিশুদের পাঠ্যের মধ্যেই নিবদ্ধ রাখা হয়। পাঠ্যের বাইরে শিশুকে অভ্যস্ত করে তোলা হয় না বরং মানসিক শক্তি হ্রাসকারী নিরানন্দ শিক্ষা শিশুকে গেলানো হয়। যাতে পরীক্ষায় পাস দিয়ে কাজে প্রবিষ্ট হতে পারে।

রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘মাস্টার বলে ছাত্রও বলে, আমার রসে কাজ নাই, টানিয়া-বুনিয়া কোনমতে একটা অর্থ বাহির করিতে পারিলে এ যাত্রা বাঁচিয়া যাই, পরীক্ষায় পাস হই, আপিসে চাকরি জোটে।’

ভারতবর্ষে যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তাতে জীবন নেই, আনন্দ নেই, অবকাশ নেই, নবীনতা নেই এমনকি নড়ে বসার মতো তিলমাত্র স্থানও নেই। সেটাকেই শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম করে তোলা হয়েছে। বর্তমানেও এই জড়ভরত সদৃশ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে জাতি মুক্তি পায়নি। এই শিক্ষাব্যবস্থায় মানসিক পুষ্টি, চিত্তের প্রসার ও চরিত্রের বলিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায় না। বরং এক বিকলাঙ্গ গোলাম জন্ম নেয়। যে বা যারা জানে শুধু মুখস্থ করতে, নকল করতে ও গোলামি করতে। বুদ্ধি খাটিয়ে, নিজের বল খাটিয়ে বাধা অতিক্রম করতে জানে না। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, ‘চিন্তাশক্তি এবং কল্পনাশক্তি জীবনযাত্রা নির্বাহের পক্ষে দুইটি অত্যাবশ্যক শক্তি তাহাতে আর সন্দেহ নাই। অর্থাৎ যদি মানুষের মতো মানুষ হইতে হয় তবে ঐ দুটা পদার্থ জীবন হইতে বাদ দিলে চলে না। অতএব বাল্যকাল হইতে চিন্তা ও কল্পনার চর্চা না করিলে কাজের সময় যে তাহাকে হাতের কাছে পাওয়া যাইবে না এ কথা অতি পুরাতন।’

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার মূল বিষয় তিনি যেমন বিশ্বাস করতেন শিক্ষা আনন্দমুখী হওয়া জরুরি তেমনই তিনি আরো জোর দিয়েছিলেন শিক্ষার সঙ্গে চিন্তা ও কল্পনার মিশ্রণকে। গোগ্রাসে গিলে বা মুখস্থ করে  উগরে দেওয়াকে তিনি শিক্ষার ধর্তব্যের মধ্যে আনতেন না। হাতে-কলমে শিক্ষাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে তার জোর দাবি ছিল। যেমন পড়ানো হয় অমনি সঙ্গে সঙ্গে ভাবনার কাজটিও করানোর প্রতি তার জোর দাবি ছিল স্তূপ উঁচা করতে চাইলে তার সঙ্গে নির্মাণটাও জরুরি। নতুবা ইঁটসুরকি, কড়িবরগা, বালিচুন একস্থানে করে তাকে পিটাইলেই অট্টালিকা গড়ে উঠবে না। তেমনই শিশুকে বিদ্যাশিক্ষা বা সুশিক্ষা প্রদানের জন্য তার মানসিক বৃদ্ধি জরুরি।  ‘অতত্রব ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই, তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে হইবে, নতুবা সে ছেলেই থাকিবে, মানুষ হইবে না। শিশুকাল হইতেই কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে যথাপরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনার অবসর দিতে হইবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেবলই লাঙল দিয়া চাষ এবং মই দিয়া ঢেলাভাঙা, কেবলই ঠেঙা লাঠি, মুখস্থ এ একজামিন-আমাদের এই ‘মানব-জনম’ আবাদের পক্ষে আমাদের এই দুর্লভ ক্ষেত্রে সোনা ফলাইবার পক্ষে,  যথেষ্ট নহে। এই শুষ্ক ধূলির সঙ্গে এই অবিশ্রাম কর্ষণ-পীড়নের সঙ্গে রস থাকা চাই। কারণ মাটি যত সরস থাকে ধান তত ভালো হয়। তাহার উপর আবার এক-একটা বিশেষ সময় আসে যখন ধান্যক্ষেত্রের পক্ষে বৃষ্টি বিশেষরূপে আবশ্যক। সে-সময়টি অতিক্রম হইয়া গেলে হাজার বৃষ্টি হইলেও আর তেমন সুফল ফলে না, বয়োবিকাশেরও তেমনই একটা বিশেষ সময় আছে যখন জীবন্ত ভাব এবং নবীন কল্পনাসকল জীবনের পরিণতি এবং সরসতা সাধনের পক্ষে অত্যাবশ্যক। ঠিক সেই সময়টিতে যদি সাহিত্যের আকাশ হইতে খুব এক পশলা বর্ষণ হইয়া যায় তবে ‘ধন্য রাজা পুণ্য দেশ।’

শিশুর বিকাশের জন্য উপযুক্ত সময় শৈশব-কৈশোর। একমাত্র তখনই তার মনের মাটি সরস থাকে আর রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সেই সরস মাটিতেই সোনা ফলানো সম্ভব। বাল্যকাল থেকে কথার বোঝা টেনে লাভ নেই তাতে উপাদেয় কিছু ফলে না বরং পচন ধরাই স্বাভাবিক। শীতের সঙ্গে শীতবস্ত্রই প্রয়োজন গ্রীষ্মবস্ত্র নয়। আমাদের আজকের দীনতা আমরা সমন্বয়হীন। ক্ষুধার সঙ্গে অন্ন, শীতের সঙ্গে বস্ত্র, ভাবের সঙ্গে ভাষা আর শিক্ষার সঙ্গে জীবনকে একত্র করতে ব্যর্থ হই। ফলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য, জীবনের উদ্দেশ্য বিফল হয়। যেমনটি আজও এ সমাজে বর্তমান। শিশু শুধু মুখস্থের ওপর নিজের ভিত্তি রচনা করতে অভ্যস্ত। তা কিভাবে কোথায় কাজো লাগানো প্রয়োজন তা তার অজনা ফলে শিক্ষা শুধু পাঠেই সীমাবদ্ধ থাকছে বাস্তবতায় নয়।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তার মূলে রয়েছে চাকরির অধিকারের কথা না ভেবে মনুষ্যত্বের অধিকারী হওয়া। দেশের লোককে যদি শিশুকাল থেকে মানুষ করবার সদুপায় উদ্ভাবন করা যায় তবেই কেবল আমরা সর্বপ্রকারে বিনাশপ্রাপ্ত হবো না নতুবা আমরা অন্নে, স্বাস্থ্যে, বুদ্ধিতে, চরিত্র মরবো বলেই বিশ্বাস করতেন রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর। তাঁর বিশ্বাসের গোঁড়ায় এতটুকুও ঘুণ ধরেনি বলেই মনে হয় যখন সমাজের অবক্ষয়কে প্রত্যক্ষ করি! প্রকৃত শিক্ষার অভাবে আজ জাতি নিমজ্জিত। রুচিতে, মেধা-মননে ও মগজে সমাজের ধ্বংস হয়েছে।

ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে শিক্ষা প্রদানের পক্ষপাতী ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। তিনি খোলা আকাশ, বাতাস, গাছপালার সান্নিধ্যে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন আজীবন। সেলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ বীরভূম জেলার বোলপুরে ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ হৃদয়ের যোগেই শিক্ষা লাভ হয়। যে মানুষ জলস্থল-আকাশবায়ুর চিরন্তন ধাত্রীক্রোড়ে জন্মিয়েছে সেখান থেকে তাকে বিছিন্ন করা যথার্থ নয়। মাতৃস্তনের মতো তার অমৃতরস আকর্ষণ করে, উদার মন্ত্র গ্রহণের মাধ্যমেই প্রকৃত শিক্ষার বাণীমন্ত্র লব্ধ করে বালকহৃদয়।

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, শিক্ষার জন্য তাই বনের প্রয়োজন আছে। তাঁর মতে, ‘আদর্শ বিদ্যালয় যদি স্থাপন করিতে হয় তবে লোকালয় হইতে দূরে নির্জনে আকাশ ও উদার প্রান্তরে গাছপালার মধ্যে তাহার ব্যবস্থা করা চাই। সেখানে অধ্যাপকগণ নিভৃতে অধ্যয়ন ও অধ্যাপনায় নিযুক্ত থাকিবেন এবং ছাত্রগণ সেই জ্ঞানচর্চার যজ্ঞক্ষেত্রের মধ্যেই বাড়িয়া উঠিতে থাকিবে। যদি সম্ভব হয় তবে এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে খানিকটা ফসলের জমি থাকা আবশ্যক; এই জমি হইতে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় আহার্য সংগ্রহ হইবে, ছাত্ররা চাষের কাজে সহায়তা করিবে। দুধ-ঘি প্রভৃতির জন্য গোরু থাকিবে এবং গোপালনে ছাত্রদিগকে যোগ দিতে হইবে। পাঠের বিশ্রামকালে তাহারা স্বহস্তে বাগান করিবে, গাছের গোড়া খুঁড়িবে, গাছে জল দিবে, বেড়া বাঁধিবে; এইরূপে তাহারা প্রকৃতি সঙ্গে কেবল ভাবের নহে, কাজের সম্বন্ধও পাতাইতে থাকিবে।’

রবীন্দ্রনাথ গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতির নানাবিধ সমালোচনা করেছেন। তিনি প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সংযোগ ও উন্মুক্ত শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষাচিন্তক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন মানুষের শিক্ষা কৌশল বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকম তাই কোনো নির্দিষ্ট নিয়মে শিক্ষাব্যবস্থাকে বেঁধে ফেলা নিষ্প্রয়োজন। ‘সুখও তাকে শিক্ষা দেয়। দুঃখ তাকে শিক্ষা দেয়। শাসন নইলেও তাহার চলে না। স্বাধীনতা নইলেও তাহার রক্ষা নাই।’

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষণ পদ্ধতি মূলত তিনটি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতা,  সৃজনশীলতার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ও প্রকৃতির সঙ্গে সক্রিয় সংযোগের মাধ্যমে যে শিক্ষা গৃহীত হয় তাতেই রবীন্দ্রনাথের মনোযোগ নিবিষ্ট। তাইতো তিনি বিশ্বভারতীর সান্নিধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নিবিড় মনোযোগে পাঠ হয়ে উঠবে আনন্দের একইসঙ্গে শিক্ষার। ফলে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষাচিন্তায় শিক্ষার্থীর বিকাশের পথে প্রকৃতির সংযোগের সঙ্গে শিক্ষকের প্রাণবন্ত সম্পর্ককেও গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে গুরুর অন্তরে ছেলেমানুষটি একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়েছে তিনি ছেলেদের ভার নেওয়ার অযোগ্য। উভয়ের মধ্যে শুধু সামীপ্য নয় আন্তরিক সাজুয্য ও সাদৃশ্যও থাকা চাই। এইযে দেনা-পাওনার নাড়ির যোগ থাকেনা।’ তাই শিক্ষককে হতে হবে শিক্ষার্থীর বন্ধু, পথপ্রদর্শক ও প্রেরণাদায়িনী শক্তি।

শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর মতে শিক্ষার মাধ্যমে দৈহিক-মানসিক-সামাজিক-আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ সাধন হবে। এছাড়া শিক্ষণ পদ্ধতি হবে সমস্যা সমাধানমূলক। যাতে স্বাধীন ও স্বাভাবিক পরিবেশে বাস্তব জীবনের সংযোগে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে শিক্ষার্থীরা। রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন। সে ভাবনা লেখকের ভাবনা নয় বরং একজন রক্তমাংসের সামাজিক দায়িত্বশীল মানুষের ভাবনা। তাইতো দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে তিনি শিক্ষা সম্পর্কে ভেবেছেন। সে মতো কাজ করেছেন। গড়ে তুলেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনে পঠিত প্রবন্ধে তাঁর শিক্ষানুরাগ সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে: ‘আমাদের বঙ্গসাহিত্যে নানা অভাব আছে সন্দেহ নাই; দর্শন বিজ্ঞান এবং বিবিধ শিক্ষণীয় বিষয় এ পর্যন্ত বঙ্গভাষায় যথেষ্ট পরিমাণে প্রকাশিত হয় নাই; এবং সেই কারণে রীতিমত শিক্ষালাভ করিতে হইলে বিদেশীয় ভাষায় সাহায্য গ্রহণ করা ব্যতীত উপায়ান্তর দেখা যায় না। কিন্তু আমার অনেক সময় মনে হয় সেজন্য আক্ষেপ পরে করিলেও চলে, আপাতত শিশুদের পাঠ্যপুস্তক দুই চারিখানি না পাইলে নিতান্ত অচল হইয়া দাঁড়াইয়াছে। বর্ণবোধ, শিশুশিক্ষা এবং নীতিপুস্তকের অভাব নাই, কিন্তু তাহাকে আমি শিশুদিগের পাঠ্যপুস্তক বলি না।

পৃথিবীর পুস্তকসাধারণকে পাঠ্যপুস্তক এবং অপাঠ্যপুস্তক, প্রধানত এই দুই ভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে। টেক্সট বুক কমিটি হইতে যে-সকল গ্রন্থ নির্বাচিত হয় তাহাকে শেষোক্ত শ্রেণীতে গণ্য করিলে অন্যায় বিচার করা হয় না।’ পাঠ্যপুস্তকের অভাবের কথা বিবেচনা করে রবীন্দ্রনাথ নিজেই কলম ধরেন। রচনা করেন ‘সহজ পাঠ’, ‘ ইংরেজি সোপান’ নামক গ্রন্থ। তিনি শিক্ষাকে দেখেছেন বৃহৎ পরিসরে তাইতো শুধু বিদ্যাচর্চাকে শিক্ষা হিসেবে গণ্য করেননি। রবীন্দ্রনাথের মতে, প্রকৃত শিক্ষা হলো জীবনচর্চা। বাস্তব জ্ঞানের সম্মিলিত রূপেই শিক্ষার সম্যক রূপ পরিগ্রহ হয়।

হাতে-কলমে শিক্ষাকে রবীন্দ্রনাথ এতোটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে তাঁর ‘শিক্ষার মিলন’ প্রবন্ধেও এ বিষয়ে দৃঢ় বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন, এক পিতার দুই পুত্র। পিতা মোটর হাঁকিয়ে চলেন। তবে পিতা মনে মনে স্থির করেছেন তার যে পুত্র মোটর চালাতে শিখবে মোটরটা তারই হবে। ওর মধ্যে একটি চালাক ছেলে আছে। তার কৌতুহল অনেক। সে তন্ন তন্ন করে মোটর চালানোর পদ্ধতি আয়ত্ত করেছে। পরে গাড়ি চালাবার শখ তাকে এতো পেয়ে বসলো যে, পিতা থাকা না থাকাকে সে আমলেই আনলো না। এতে পিতা রুষ্ট না হয়ে বরং প্রসন্নই হলো কারণ তিনি স্বয়ং যে রথের রথী তার ছেলেও সেই রথেরই রথী। অর্থাৎ শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জ্ঞানের সম্মিলন ঘটাতে হবে। যা করতে সক্ষম বহির্বিশ্ব। আমরা জানি, আজকের দিনে পৃথিবীতে পশ্চিমের লোক জয়ী হয়েছে। পৃথিবীকে তারা কামধেনুর মতো দোহন করে চলেছে। কিন্তু বাঙালি ওই দ্বিতীয় ছেলের মতো আমার কিছুতে দরকার নেই’তেই নিমজ্জিত। পিতার রূঢ় আচরণের শিকার হবে কিনা তা ভাবতে গিয়ে কোনো কাজেই সে অংশগ্রহণ করে না। দিনশেষে তার ভাগ্যে তিরস্কার বা পুরস্কার কোনটাই জোটে না! তাই বর্তমান যুগের সাধনার সঙ্গে বর্তমান যুগের শিক্ষার সঙ্গতি হওয়া চাই। শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্রনৈতিক ভেদবুদ্ধির বাইরে এসে জ্ঞানচর্চার অংশী করা চাই। আনন্দের সঙ্গে মুক্তবিহঙ্গের মতো উড়তে শিখতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীর মানসিক পুষ্টি সাধন হবে, মনন ও মগজের প্রসার ঘটবে।

 

জান্নাতুল যূথী, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক

রেম্ব্রান্টের জন্মশহর লেইডেন, ইনডেক্স পোয়েট্রি বুকস এবং কেইস নুটবুমের তিনটি কবিতা

আলম খোরশেদ বছর ছয়েক আগে জার্মান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের আমন্ত্রণে বিশ্বখ্যাত নাট্যোৎসব থিয়েটার ট্রেফেন এর ছাপ্পান্নতম আসরে যোগ দিতে বার্লিন গিয়েছিলাম, পৃথিবীর আরও কুড়িটি দেশের

আমরাই শেষ জেনারেশন

বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর আমরাই শেষ জেনারেশন, যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখেছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজকের জিমেইল, ফেসবুক,

আন্দরকিল্লা সাহিত্যপত্রিকা এবং স্মৃতিকাতর চাটগাঁ

প্রবীর বিকাশ সরকার “আন্দরকিল্লা” ম্যাগাজিনটি ২৭ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে, আদৌ কম কথা নয়! সাহিত্য, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজবিষয়ক একটি সাময়িকী বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহর