রোখসানা ইয়াসমিন মণি :
কীরে এখনোও জুটাইতে পারলি না?
আরে না!
কী বলিস? পটাইতে এতদিন লাগে?
তোর কী মনে হয়? কইলেই পাওয়া যায়?
ক্যান পাওয়া যাইবো না? মিডা মিডা কতা কইয়া টোপ ফেলবি।তারপর পোক্কাত!
মোকাররম,সবুজ,ফাহিম,শাহিন, শিপলু ওরা বন্ধু।
নাবালকত্ব ঝেড়েছে সবে। কোমল নিষ্পাপ পর্দা ফুঁড়ে সাবালকত্ব জাহিরের চেষ্টা চালাচ্ছে। চোয়াল জুড়ে কুৎসিত কাঠিন্যের ছাপ। দুরন্ত কৈশোর অবদমন করে তরতরিয়ে যুবক হয়ে ওঠার অভিনয় রপ্ত করে নিয়েছে। মসৃণ মুখে ধানের চারার মতো গোঁফ গজাচ্ছে।দেখলে মনে হবে জোর করে চামড়ার তলদেশ থেকে এসব বের করে নিয়েছে।এরপরও দুয়েকজনের গজায়নি দেখে নিজেদের শিশু মানতে নারাজ।যে করেই হোক মুখে গোঁফ আনা চাই।পুরুষ হতে হবে না!ভেতরের তেজিল্লা দন্ড টাকিমাছের মতো লাফায়।সংবরণ করা দায়। দিন দিন ওটা বড় হচ্ছে।চারিদিকে এত নীল ছবির ধুম্রজাল।মাথা,শরীর ঠিক থাকে?যৌবন চনমনায়। কী যে করে!গোঁফ না হলে চলে? তাছাড়া বন্ধুদের সাথে সমতা থাকা চাই।তাই যে কজনের গোঁফ ওঠে না কাঁচি, ব্লেড, সেভিং লোশন নিয়ে দৌড়ায়। মুখে এসব মাখে আর ব্লেড দিয়ে মুখে এঁচোড়-পেঁচোড় করে। যদি ব্লেডের ঘষায় কচি ঘাসের মতো সরু গোঁফ ওঠে মন্দ কী! কিছুটা হলেওতো পুরুষ হওয়া যাবে। গোঁফে এক ধরনের শ্রেষ্ঠত্ব আছে। বন্ধুরা বলে, গোঁফ না উঠলে নাই, এমন করিস ক্যানো? আমাদের গার্লফ্রেন্ডের ভাগ থেকে তোদের তো বঞ্চিত করি না।
জবাব শুনে গোঁফহীন শাহিন, শিপলু বলে, তা করিস না। কিন্তু গোঁফহীন হয়ে আনস্মার্ট থাকতে চাই না।
মোকাররম বলে ওঠে, এত প্যাচাল করিস না।আসল কথায় আয়। কতদিন হয়ে গেছে আজো একটা জুটাইতে পারলি না। তোরা করোসটা কী?
সবুজ বলে, সবাই মিলে চেষ্টা কর। আজ না হোক কাল ঠিকই পেয়ে যাবো।
শাহিন, শিপলু বলে,আমি অনলাইন,অফলাইন চষছি।পাখি পাইলেই হইলো। আন্ধা,কানা,
লুলাফুলায় বাছবিচার নাই। ফুটা থাকলেই হইলো।
শাহিন,শিপলুর কথা শুনে অন্যরা হো হো করে হেসে ওঠে।
এটা যখন মাথায় চাড়া দিছে এককাজ করলেই পারিস,রাস্তায় কতজনে দাঁড়িয়ে থাকে। ওইখান থেকে নিয়ে নে,সবুজ বলে।
আরে ধুর! কালা, ধলা, আন্ধা, লুলা বাছবিচার করি না, কিন্তু একজায়গায় পছন্দ ধইরা রাখছি।একটু শিক্ষিত মিক্ষিত না হইলে চলে?আর তাছাড়া এগুলা বাজে মাল।
ফাহিম বলে হ, ঠিক ঠিক।
কিন্তু জুটিয়ে নে বল্লেতো হয় না। ওরকম মেয়ে খুঁজে পেতে হয়। ফাহিম আর সবুজ কলেজ থেকেই শুরু করে।কলেজের কয়েকটাকে টার্গেট করে ওরা। মেয়েদের কমনরুমে পাগলের মতো চেয়ে থাকে।কিন্তু বিফল। মেয়েগুলো ওদের পাত্তা দেয় না। ছুটি হলে মেয়েদের টার্গেট করে ছোট ছোট ঢিল ছোড়ে, কাগজের টুকরাও।ফলে দুয়েকটার থাপ্পড়ও খেতে হয়েছে।এজন্য ওরা একটু চুপসে যায়।সবুজ বলে,একটা জিনিস খেয়াল করেছিস ফাহিম, মাইয়া যেইডারে দেখি হেইডারেই ভাল্লাগে।
ফাহিম হেসে বলে এইডার কারণ আছে।
কী কারণ?
আরে মা আমাগোরে ভিটামিন এ বেশি খাওয়াইছে।এইজন্য চোখ পরিষ্কার। হেইজন্য বেবাক মাইয়ারগোরে আমগো চোখে সুন্দর লাগে বুঝছোস!
ফাহিমের কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় সবুজ।এরপর বলে,যাই কস মাইয়ারগো কব্জিতে জোর আছে।এহনো দুইডা গাল জ্বলতেছে। থাপ্পড়গুলা জব্বর হইছে।
এবার ওরা টার্গেট করে অন্যদিকে।খুঁজতে থাকে কোন মেয়েগুলো গায়ে পড়া স্বভাবের। অবশেষে পেয়ে যায় রিয়া নামের এক মেয়েকে।
মেয়েটা লাফাঙ্গা টাইপের। লাফাঙ্গা এজন্যই মেয়েটার গায়ে পড়া স্বভাব।ছেলে দেখলেই চনচনে হয়ে ওঠে।আর রাখঢাকহীনও।যার তার সাথে কথা বলে।লতানো গুল্মের মত বৃক্ষের ওপর ঢলে পড়া স্বভাব।ফাহিম,সবুজ মুচকি হাসে।সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না ।দুজনেই প্ল্যান করে মেয়েটার সাথে প্রেমের অভিনয় করবে। ফাঁদে ফেলা চাই। যে ভাবা সেই কাজ।শুরু হয় অভিনয়।
ওরা পূর্ণদ্যোমে শুরু করে।লুতুপুতু কথা বলে পটিয়ে ফেলে মেয়েটাকে।
মোকাররম,সবুজ,ফাহিম,শাহিন,শিপলুর মাঝে বোঝাপড়া ছিলো টাইম পাস করার জন্য ওরা মেয়ে জুটিয়ে নেবে।তা যেমন তেমন হোক।
রিয়া কালো কুচকুচে একটি মেয়ে।তবে শরীরে দম আছে।দেখতে নিগ্রোদের মতো।কলেজ ছুটি হলে অনেকেই হাঁটা ধরে গাড়ির জন্য। যারা দূরের ওরা হোস্টেলে থাকে।ফাহিম আর সবুজ শহরে থেকে আসে।ওদেরও গাড়ির জন্য হাঁটতে হয়। রাস্তায় ছেলেমেয়ের একটি দল তৈরি হয়।অনেক মেয়েরা রিক্সায় চলে যায়।রিয়া হাঁটাপথের মেয়ে।খলবল করে পাড়ি দেয় রাস্তা।আর ওখানেই কট খায় ফাহিম আর সবুজের হাতে। মোকাররম, শাহিন, শিপলু কলেজে সুবিধা করতে না পেরে ফেসবুকে আশ্রয় নেয়। কলেজের কতগুলো মেয়েবন্ধুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ফ্রেন্ডলিস্টে এনে শুরু করে চ্যাটিং।দিন নেই রাত নেই চ্যাটিংয়ের পর চ্যাটিং করে সময় পার করে।চ্যাটিং অডিও ভিডিও পর্যন্ত গড়ায়। মোকাররম,সবুজ,ফাহিম,শাহিন,শিপলু বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ছবি দেখে, রেস্টুরেন্টে খায়। স্ট্রিট ফুডের পাশে দাঁড়িয়ে হইচই করে। ওরা বান্ধবীদের আস্থা অর্জন করে। ওদের একজন অঞ্জনা মোটামুটি সুন্দরী এবং সহজ সরল। মোকাররমকে মনে প্রাণে ভালোবাসে।একদিন বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ওরা গ্রামে আসে। অঞ্জনাকে ম্যানেজ করতে মোকাররমের ঘাম ছুটে যায়। একা এতদূর কিছুতেই যাবে না। সময়মতো বাসায় ফিরতে না পারলে মায়ের বকা খেতে হবে। অনেক কারণ দেখিয়ে লাভ হলো না। মোকাররম নাছোড়বান্দা। তাকে নেবেই। বহু গালগল্প আর আশ্বাস শুনিয়ে বের হয় ওরা দুজন হিমড়াতলী গ্রামে। এটাকে ঠিক গ্রাম বলা যায় না। কিছুটা শহরতলীর ছাঁট আছে। আশেপাশে নাগরিক উন্নয়ন চলছে। বিশুদ্ধ গ্রামের পরিধি ভেঙ্গে মাঝখানে ছুটে আসছে ইটসুড়কির দেয়ালি জীবন। ওরা একটা অটো থেকে নামে। পাকা সড়কের দু’পাশে শস্যক্ষেত। মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ধান ক্ষেত। সবুজের সমারোহে চোখে প্রশান্তি নেমে আসে। পেছনে বাস ট্রাকের হর্নের শব্দ আর উঁচু উঁচু অট্টালিকার বাইরে এমন কোমল নিরব প্রকৃতি মনে ভাল লাগা এনে দেয়। অট্টালিকার জীবন মানেই খাঁ-খাঁ রুদ্ধ জীবন। বিশুদ্ধ অক্সিজেনসমৃদ্ধ বাতাস সেখানে প্রবেশ করবে সেই ছিদ্র কোথায়? সত্যি বলতে যেখানে আকাশ ঢেকে গেছে ইট কংক্রিটে সেখানে নীলের মেলা, সবুজের খেলা দেখার আদিম মহিমান্বিত সৌন্দর্য প্রবেশের পথ কোথায়? দাম্ভিক নগরায়নের কাছে আজ সব অপসৃত। কুণ্ঠার শৃঙ্খল ভেঙে অঞ্জনা বলে,বাহ,অপূর্ব! সত্যি, মোকাররম আমার ভালো লাগছে। এত সুন্দর স্পট চয়েস করবে ভাবিনি।
তোমার ভালো লাগছে? মোকাররম প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ, খুব ভালো লাগছে।
এইদিকে এই সবুজ ক্ষেত ছাড়া আর কিছু নেই। তোমাকে এই শস্যবাগান দেখাতে নিয়ে এসেছি।এরপর পাহাড়ে যাবো। তারপর সমুদ্রে। আগে সবুজ দিয়ে শুরু হোক।এবার বলো, কোনদিকে যাবে।
তুমি যেদিকেই যাও।
ঠিক আছে, চলো। কিন্তু এই ক্ষেতের আলপথ ধরে হাঁটতে পারবে? আমরা ওই সামনে কিছুদূর ঘুরে ফিরে আসবো।
ঠিক আছে, চলো।
ওরা দুজন হাঁটে। ধানক্ষেতের মাঝখানে সরু আলপথ।অঞ্জনা খেয়াল করে দূর থেকে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতগুলোর রঙ একই রকম সবুজ মনে হয়।কিন্তু কাছে এসে দেখে সবুজেও কত ভিন্নতা। একেক ক্ষেতের রঙ একেক রকম।কোনটি কালচে সবুজ, কোনটি গাঢ় সবুজ,কোনটি সাদাটে সবুজ টিয়া পাখির মতো।সবুজের কত বাহার চারিদিকে। এখন বোরো ধানের মৌসুম। জলসেচ দিয়ে এই ফসল ঘরে তুলতে হয়। জল পেয়ে ধানগাছগুলো কী পরিপুষ্ট সতেজ আর টাটকা হয়ে আছে। গাছের গোড়ায় স্থির জল রোদে চিকচিক করে। ওরা হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগোয়।দূরে স্যালোমেশিনের শব্দ শোনা যায়। অঞ্জনা বলে, নীরবতা দেখার জন্য গ্রামে নিয়ে এলে। এখানেও শব্দ!
না,ওটা ডিপটিউবওয়েলের শব্দ। এই মেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকে জল তুলে জমিতে দেয়া হয়।এখন শুকনো মৌসুম।জমি যেন অনাবাদি থাকতে না পারে তাই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে ফসল ফলানো হয়।
অঞ্জনা শুনে বলে,বাহ,দারুণ ব্যাপারতো!
চলতে চলতে ওরা ডিপটিউবওয়েলের কাছে চলে আসে।একটি ঘর আছে সেখানে।ঘরটি টিনের। ঘরের একটি বেড়া ফুঁড়ে মেশিনের মুখ বাইরে বের হয়ে আছে।ওখান থেকে গলগল করে জল পড়ছে সামনে একটি জলাধারে। জলাধারটি বেশি বড় নয়। সিমেন্ট দিয়ে বেঁধে চৌবাচ্চার মতো করা হয়েছে। চৌবাচ্চার নিচের দিকে একটু খোলা। ওখান দিয়ে জল বের হয়ে যায় নালায়। চৌবাচ্চার সাথে যুক্ত অনেক প্রশস্ত নালা কাটা আছে।ওই নালা দিয়ে জল চলে যায় ক্ষেত থেকে ক্ষেতে। অঞ্জনা জলের এমন স্রোত দেখে অবাক হয়ে যায়।মোকাররমকে জিজ্ঞেস করে,এই জল খাওয়া যাবে? খুব তেষ্টা পেয়েছে।
হ্যাঁ,খেতে পারবে। এই জল বিশুদ্ধ, জীবাণুমুক্ত।
মোকাররম ওকে ডিপটিউবওয়েলের কাছে নিয়ে যায়।যেখান থেকে ফোয়ারার মতো জল ছুটছে।অঞ্জনা কিছু জল আঁজলায় তুলে মুখে ছিটায়। এরপর পান করে গভীর তলদেশ থেকে ছুটে আসা জল। খাওয়ার পর মোটা নালা দিয়ে জল ছুটতে দেখে বলে, মোকাররম, আমি ওই জলে নামবো।একটু জলের স্রোতে হাঁটবো।
আগে ব্যাগটা দাও ঘরের চালায় রেখে আসি।যদি হাত ফসকে পড়ে যায়? তবে সব ভিজে সর্বনাশ হবে।মোকাররম ব্যাগটা ঘরের চালার চৌকোয় রেখে আসে। এরপর অঞ্জনাকে নালায় নামায়। জল তীব্রগতিতে ছুটছে।অঞ্জনা স্থির থাকতে পারে না।নালা বেশি গভীর না। তবুও হাঁটু ডুবে যায়।ওর প্লাজোর কিছু অংশ ভিজে যায়।অঞ্জনা হৈ হৈ করে ওঠে আনন্দে। ইসস! যদি এখানে স্নান করতে পারতাম? কী যে মজা হতো?
করে ফেলো,
কে জানতো এখানে এরকম জলাধার আছে,না হলে সাথে একসেট জামাকাপড় নিয়ে আসতাম।
আরে ভিজলে কিছু হবে না।হাঁটতে হাঁটতে শুকিয়ে যাবে।
অঞ্জনা অনেকক্ষন জলে লেপ্টেচেপ্টে হুড়োহুড়ি করে। মোকাররম এবার তাড়া দেয়। অঞ্জনা উঠে এসো।ফিরতে হবে আমাদের। আবার কখনো এলে সারাক্ষণ এখানে ডুবে থেকো।মোকাররমের হাত ধরে উঠে আসে অঞ্জনা।চালার কাছে ব্যাগ রাখা। ওটা আনতে যায়।মোকাররম ঘরটা দেখিয়ে বলে এই সবুজ অরণ্যে ছোট ঘর। দরজাটা খুলবো,অঞ্জনা?
ভেতরে কি আছে দেখবে?
অঞ্জনা বলে,না থাক মোকাররম। এত ছোট ঘর।খুলে কী হবে?
দেখি না ভেতরে কী আছে?ওরা ভেতরে ঢোকে।ওয়াও! বিছানা পাতা আছে দেখছি। মোকাররম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।ভালোই হলো। এতদূর পথ হেঁটে একটু জিরিয়ে নিই। তারপর চলে যাবো কী বলো অঞ্জনা?
অঞ্জনা ইতস্তত করে। না মোকাররম, তুমি এতক্ষণ যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়েছো। এখন বিছানা পেয়ে শুলে কেনো?
আরে বোকা! একটা রেডিমেড বিছানা দেখলে কার না শুতে ইচ্ছে করে? দশমিনিট গড়িয়ে নিলে এমন ক্ষতি কী?
অঞ্জনা দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর বলে,ঠিক আছে তুমি দশমিনিট জিরোও।আমি বাইরে অপেক্ষা করি।
অঞ্জনা বের হবে এমন সময় মোকাররম বিছানা ছেড়ে ওঠে। তুমি না থাকলে আমি এখানে শুয়ে কী করবো?
স্যালোডিপ মেশিনের ঘরটিতে একটি চৌকি পাতা।এর ওপর মোটা দস্তরখান বিছানো। দুটো ময়লা বালিশ আছে এর ওপর।রাতের বেলা মেশিন পাহারায় কেউ থাকে। দিনের বেলা
দরকার নেই। তাই জায়গাটা ফাঁকা।মোকাররম বিছানা ছেড়ে অঞ্জনার হাত চেপে বলে আরে যাচ্ছো কেনো? একটু বসো।কলেজে, বাইরে রেস্টুরেন্টে সবখানেই মানুষের ভিড়। মনের মতো কথা বলার নিরব জায়গা কোথাও কী আছে? এখানে নিরবতা পেয়েছি।দুজন একটু কাছাকাছি থাকি।আসো অঞ্জনা,আমার লক্ষ্মী প্রেমিকা, ভেতরে দুজন একটু বসি।অঞ্জনা স্থির দাঁড়িয়ে থাকে।ভেতরে যেতে মন চাইছে না ওর। চুপ দেখে মোকাররম বলে,ভয় পাচ্ছো?ঠিক আছে, চলো।সারাদিন আমার সাথে ঘুরে ভয় পাও না এখন একসাথে বসতেও ভয় পাও। আমি ভয়ের মানুষ তাই না?মোকাররম কপট রাগ দেখায়।
না, না! কী বলছো মোকাররম! ব্যাপার তা নয়।
কেউ এসে দেখে ফেললে কী হবে ভেবেছো?
আরে কী বলো অঞ্জনা! এখানে কে আসবে? আসলে অনেক আগেই আসতো। প্রায় আধাঘন্টা হবে আমরা এখানে এসেছি।
অঞ্জনাকে ভেতরে ঢোকায় মোকাররম। থুতনিতে হাত রেখে বলে,ওহ গড! কী ভয় পেয়েছে আমার প্রেমিকা? আমি তোমার প্রেমিক না? প্রেমিককে কেউ ভয় পায় দুষ্ট মেয়ে?
অঞ্জনা মুচকি হাসে।শান্ত চোখে তাকায় মোকাররমের চোখে।মোকাররম উষ্ণ হয়ে ওঠে। অঞ্জনাকে বিছানায় বসায়।এরপর আচমকা হাঁটুগেঁড়ে অঞ্জনার উরুতে মাথা রাখে।আবেগে বলে,অঞ্জনা আমার প্রেমিকা,আমরা পৃথিবীর নীরব প্রান্তে বসে আছি।আমাদের দেখার কেউ নেই।এখানে দুজন খুন হতে পারি।কে আমাদের রুখে? মোকাররম ওর মাথা অঞ্জনার উরুতে ঘষতে থাকে।অঞ্জনা কেঁপে ওঠে। শিরায় আগুন জ্বলে। মোকাররম ওর মাথা উরুর ভেতর ডুবিয়ে দেয়। অঞ্জনা মোকাররমকে ঠেলে উঠে দাঁড়ায়। এরপর বলে,না মোকাররম,এসব কী করছো? খুব খারাপ হচ্ছে। তুমি এসব করতে পারো না। মোকাররম এগিয়ে আসে। অঞ্জনার বুক বরাবর দাঁড়িয়ে বলে,ও লক্ষ্মী জান আমার,এসব কিছুই না।দুজন একটু নিরব জায়গায় এসেছি। চারিদিকে এত সবুজ আর সবুজ।মাঝখানে তুমি আর আমি। আমরা কি এরকম নিরবতা আর কখনো পেয়েছি বলো,
জান? প্লিজ! রাগ করো না অঞ্জনা। তোমার হাত একটু ছুঁতে দাও। শহরে চলে গেলে কি আর এত কাছে পাবো? মোকাররমের কন্ঠে অনুযোগ ঝরে।
ঠিক আছে, ধরো হাত। অঞ্জনা হাত এগিয়ে দিলে একটানে বুকে টেনে নেয়। বুকে নিয়েই ঠোঁটে, মুখে, চোখে চুমু খেতে থাকে। অঞ্জনা ওকে ঠেলতে চায়, পারে না। মোকাররম জোরে চেপে ধরে অঞ্জনাকে।অঞ্জনার ঠোঁট ওর দু’ ঠোঁটের ভেতর ঠেসে ধরতেই নিথর হয়ে আসে সে।কাঁপতে থাকে।বিবশ অবশ হয়ে আসে শরীর।কী হয় অঞ্জনার জানে না।মোকাররম ওকে ঠেলে খাটে ফেলে দেয়।
ফ্যালফ্যাল মূর্তির মতো তাকিয়ে থাকে শুধু।শরীরের সমস্ত শক্তি কে যেনো নিঃশেষ করে দিয়েছে। বোধহীন একটি ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে যায় সে।মোকাররম ওর বুকের ওপর ওঠে। পাগলের মত চুমু খেতে থাকে।ওষ্ঠের শিখর লালায় ভরে যায়। পাশে ডিপস্যালো মেশিনের জল পতনের শব্দ। ভেতরে উড়ন্ত টাইফুনে দলাই মলাই চলছে সবুজ পৃথিবীর নীরব প্রান্তে। অঞ্জনার মাস্তুল ভেঙে যায়। মোকাররম জামা খুলে ফেলে। ভেতরের তামাটে লেলিহান বিদ্ধ করে উলঙ্গ অঞ্জনার দ্বীপে।ওর নরোম, কোমল ব-দ্বীপ সূচাগ্র ফলায় ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে। অঞ্জনা ব্যথায় গোঙাতে থাকে। উন্মত্ত বাঘ মাংস ছিঁড়ে নিলে নরের যেমন দশা হয় অঞ্জনারও তাই হয়।মোকাররম ওর কোমল পুষ্পিত সৌরভ খুবলে খাচ্ছে।হঠাৎ দরোজায় কারা যেনো লাথি মারে। দরোজা খুলতেই হুড়মুড় করে চারজন ছেলে ঢুকে পড়ে। ওরা ঢুকেই খিস্তিখেউড় করতে থাকে। তাদের মধ্যে একজন এসে বলে, শালা মাগিবাজি করতেছোস? কই পাইলি এই মাগিরে?
আরেকজন বলে,ওই আনছেতো ভালাই হইছে। ল, এবার আমরা শুরু করি।আরেকজন বলে,আহা! বেচারারে শান্তিমতো মজা করতে দিলি না। এইটা কোনো কথা হইলো? যাই হোক একখান জব্বরদস্ত মালই আনছেরে? আরেকজন বলে, এই হালারে উডা। খানকিডারে একটু দেখি। ওরা চারজন মিলে মোকাররমকে উঠায়। ওকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আহারে! শালার দ-টা এহনো পোক্ত হয় নাই। এই ব্যাটা পোক্ত না হইতেই খানকি খাওয়া শুরু করলি?একজন ওকে টোকা দিয়ে বলে,এইখানে মরতে আইলি ক্যান শালা! মাগি নিয়া মরতে শখ হইছে? আরেকজন গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে দাড়ি গোঁফতো গেঞ্জায় নাই। আবে হালা,শরীরে জোস গেঞ্জাইছে?
আরেকজন বলে, শালারে বান্ধ।তার সামনেই হেতের মাগিরে খামু। ওরা চারজন ওঠে মোকাররমকে একটি বাঁশের খুঁটিতে বাঁধে। মোকাররম ওদের হাতে পায়ে ধরে।কান্নাকাটি করে। ভাই আমাদের ছেড়ে দাও।আর কখনও এদিকে আসবো না। ও আমার প্রেমিকা। ওর কোন ক্ষতি করো না।তোমরা আমার ধর্মের ভাই।
আমাদের ছেড়ে দাও। মোকাররমের কান্নাকাটি শুনে ওরা হাসতে থাকে। হালায় কয় কী! চোখের সামনে এরকম ডাঁসা মাল রাইখা তোরে দয়া দেখামু? কস কী! আরেকজন বলে ,ওস্তাদ,তর সয়না। শালারে বান্ধি। মেলা কাম। এত কথা
শোনার টাইম নাই। আরেকজন বলে,এই আমাগো মইধ্যে কে মাইডারে আগে লাগাবি? দরজা খুলছে সবুজে। হেয় আগে লাগাক। আরে না,তোগো মুরুব্বি আমি। আমি আগে লাগাই। তোরা মাইয়াডার দুই হাত ধইরা রাখ।আর ওড়না দিয়া মুখ পেঁচাইয়া দে।মোকাররমকে বেঁধে ওরা অঞ্জনার দিকে এগিয়ে যায়। অঞ্জনা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। প্লিজ, আমার ক্ষতি করো না। আমার কাছে এসো না।আমাকে ছেড়ে দাও। দু’ হাতে মুখ লুকিয়ে চিৎকার দিতে থাকে। একটি ছেলে ওর মুখ বেঁধে ফেলে। বাকী দুজন দু হাত চেপে ধরে। ভয়ে অঞ্জনা অজ্ঞান হয়ে যায়। একের পর এক চারটি ছেলে ওকে ধর্ষণ করে। ওর শরীরের ওপর লাফাঙ্গাদের বিশ্বযুদ্ধ চলে। রক্তে পাটাতন ভিজে যায়। মেয়েটির স্ফীত অবয়ব কামড়ে খামচে ক্ষত করে দেয় পিশাচী শিশ্ন। ওরা এতই উন্মত্ত হয়ে ওঠে যে মেয়েটির নিথর শরীর দেখেও ওদের উন্মাতাল বাহু থামে না। একসময় চারটি ছেলে ধর্ষণ শেষে মেয়েটিকে নিথর দেখে ওর মুখের কাছে এগিয়ে যায়। নাকে হাত দিয়ে দেখে শ্বাস আছে। সবুজ বলে বেঁচে আছে। বাকী তিনজন বলে যা করার কর।মেয়েটিকে জামাকাপড় পরা। আরেকজন বলে,
মাগিটারে তো ছিঁড়ে ফেলছোস? দেখছোস না রক্ত পড়তেসে! মইরা যদি যায় কী করবি?
ফাহিম বলে, আরে না! মরবো না।
ওরা মোকাররমের কাছে আসে। সবুজ বলে, দোস্তরে দারুণ এক মাল আনছোস। কী যে মজা পাইছি। একেবারে টাটকা। ওদের মধ্যে আরেকজন বলে,
মেয়েটা জেগে ওঠার আগেই মোকারমকে বান্ধা থেকে খুল আগে।
ওরা মোকাররমকে খুলে দিলে সে অঞ্জনার কাছে গিয়ে ওর নাক মুখ দেখে শ্বাস আছে কী না?
শ্বাস ঠিক আছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
কী রে দোস্ত কেমন উপহার দিলাম তোদের?
হ,রে ভাই,দারুণ মাল আনছোস!
আমিতো তোদের খাওয়াইলাম।এবার তোদেরগুলা খামু কবে ক!
আরে খাইবি খাইবি সবুর ধর। সবুরে মেওয়া ফলে।ফাহিম, সবুজ একসাথে বলে ওঠে, আমরা দুজনে
একটা খানকি পাইছি। আরে ভাই, কী কমু,শালীরে ডাকতে হয় না,আপনা আপনি গায়ে ঢলে পড়ে। ওইডারে নিয়া আইতে ঝামেলা হবে না।
তাইলে ওইডারে আনার ব্যবস্থা কর।কথা হয় সবুজ আর ফাহিম রিয়াকে সামনের সপ্তাহে এখানে নিয়ে আসবে এবং একই কায়দায় ধর্ষণ করবে।ওরা যখন ঘরে ঢুকবে তখন ধান গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে দরজায় লাথি মেরে ভেতরে ঢুকবে। পাঁচবন্ধু, পৃথিবীর বিশ্বসেরা শয়তান। ওরা ঠিক করেছে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলবে। তারপর ধীরে ধীরে ওদের বশ করে গনধর্ষণ করবে। তবে ধর্ষণটা হবে সাজানো। যার গার্লফ্রেন্ড তাকে বাকীরা কেউ চিনবে না এমন করে থাকবে। পরিপক্ব শয়তানি কাকে বলে! ওদের এককথা মেয়ে হলেই হলো।কালো সাদা, লম্বা, বেঁটে, শুকনা, মোটা বাছবিচারের দরকার নেই। বিছানায় নেয়ার দরকার এটাই আসল কথা। এভাবে চলতে থাকে মেয়ে শিকার আর গণধর্ষণ। একেকজন একেকজনের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসে আর অপকর্ম করতে থাকে। একসময় ভেতরে ভেতরে ওদের জন্য কলেজে গুঞ্জন ওঠে। ওরা লেডিকিলার। মেয়েরা সতর্ক হয়ে যায়। সমস্ত মেয়ে ওদের এভয়েড করে। ওরা সেক্স করতে না পেরে পাগল হয়ে ওঠে। উম্মাদের মত একদিন মোকাররম বলে, এসব কী হচ্ছে? তোরা একটি মেয়েও জুটাতে পারলি না? এভাবে থাকা যায়? ফাহিম দুদিন পর খবর আনে একটি মেয়েকে পেয়েছি ফেসবুকে। তবে মেয়েটির মুখ হাইড করা। ফুলের ছবি দিয়ে রেখেছে। শিপলু বলে, আরে মেয়ে হলেই হলো। তাড়াতাড়ি পটা। আর সহ্য হচ্ছে না।
একদিন ঠিক সন্ধ্যায় ফাহিম মেয়েটিকে নিয়ে আসে। সেই আগের মতো মেয়েটির ওপর ওরা নৃশংসতা চালায়। মেয়েটি কাঁদে খুব। এরপর মোকাররম আসে। মেয়েটির হাত পা বাঁধা। মেয়েটির স্তনে হাত দিয়েছে এমন সময় ওর ফোন বেজে ওঠে। ফোন অফ করতে ওর মনে ছিলো না। ফোনের লাইট জ্বলে উঠতেই সে চমকে ওঠে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে ভয়ে ভয়ে ফোনটি মেয়েটির মুখের সামনে নিয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে পড়ে সে। লাফ দিয়ে উঠে লাইট জ্বালায়। কিন্তু
একি দেখছে সে? না, এ হতে পারে না।
না————– চিৎকার করে ওঠে মোকাররম। আমি কী দেখছি। নীলা তুই?
মোকাররম দৌড়ে এসে ওর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। চোখের সামনে উলঙ্গ নীলা বোবার মতো বসে থাকে। চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে সব। মোকাররম ওর গায়ে পোশাক ছুড়ে দেয়। নীলা শুধু অস্ফুটে বলে,ভাইয়া, শেষ পর্যন্ত তুমিও!
আর কিছু বলতে পারে না নীলা। ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত শরীরটা কোনোরকম টলোমলো পায়ে এগিয়ে নিয়ে যায় সুইচের দিকে। যেখানে লাইট জ্বলছে। নীলা সুইচে হাত ঢুকিয়ে দেয়। মুহূর্তে কম্পন ওঠে নীলার শরীরে। তারপর সব শেষ। নিথর নিস্তব্ধ নীলার শরীর বিদ্যুৎ টেনে নেয়। ওরা সবাই দৌড়ে আসে। মোকাররম মাটিতে আছড়ে পড়ে বুক থাপড়াতে থাপড়াতে বলে,ফাহিমরে এটা কী হলো! এ আমার বোন। আমার আপন চাচাতো বোন। আমরা একসাথে থাকি সবাই। আমি কী করলাম বল! ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই স্তদ্ধ হয়ে যায়। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায় সবাই। ফাহিম নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না। সবুজ বলে,অপরাধ আমাদের সবার। কিন্তু যা হবার হয়েছে। এটার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। এখন বাঁচার চিন্তা কর। মোকাররম, বিপদ তোর হবে বেশি। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমরা বিপদে পড়বো ভাই। চল পালা। আমরা এখানে এসেছি কেউ জানে না। যদি ধরা পড়ি সব শেষ। সবুজের কথায় সায় দিয়ে শিপলু বলে,চল চল পালা তাড়াতাড়ি। ওরা মোকাররমকে ধরে উঠায়। বের হয়ে আসে ডিপস্যালো ঘর থেকে। পরদিন গ্রামের মানুষ আবিষ্কার করে রায়হান চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে নীলা ডিপস্যালো ঘরে মরে আছে। সবাই ভাবে, বিদ্যুতের কানেকশন হয়তো লুজ ছিলো আর তাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সে মারা যায়।
ওদিকে মোকাররম পাগলের মতো হয়ে যায়। নাওয়া নেই,খাওয়া নেই তীক্ষè অপরাধ ওকে তাড়া করে।একটি মেয়ের জীবন মূহুর্তেই ওর চোখের সামনে নাই হয়ে গেলো? কত মেয়ের জীবন সে নষ্ট করেছে।ওহহ! মেয়েদের কান্নারত,ভীত আতংকিত সেই দুঃখী চোখ মুখ ওকে ত্রস্ত করে তুলছে।দিনরাত ওই আতংকিত মুখগুলো ওকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।ওর কানে ভাসে, ভাইয়া, শেষ পর্যন্ত তুমিও!
আহ!! আমি আর পারছি না! এই জীবন আমি বয়ে বেড়াতে পারছি না। মোকাররম এত অপরাধভোগে ভুগতে থাকে যে আর কোনো মেয়ের সামনে দাঁড়াতে পারে না। মেয়েদের দেখলেই ভয়ে পালিয়ে যায়। ভেতরের যন্ত্রণা তাকে কাটতে থাকে। অনেক বুঝিয়েছে নিজেকে। কিন্তু মুক্ত হতে পারেনি ওই বাক্য থেকে। ভাইয়া, শেষ পর্যন্ত তুমিও! একসময় উদভ্রান্ত হয়ে যায়। কয়েক বছর কেটে যায় এভাবে।কত ডাক্তার দেখানো হল। লাভ হয় না কিছু।
এরকম দুরবস্থা দেখে ওর বাবা- মা ওকে বিয়ে করাবে ভাবে। সে এড়িয়ে যায়। মেয়ে দেখলেই ভয়ে কেঁপে ওঠে। দিনদিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে। উম্মাদের মতো হাঁটতে হাঁটতে একদিন কোথায় যেনো চলে যায়। আবার বোরো মৌসুম আসে। চৈতের ঝাঁঝালো রোদ খরা নিয়ে আসে। জীবন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। পুকুর, ডোবা শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেছে। বোরো চাষের স্যালোমেশিন ছেলেবুড়োর ভরসা।
গরম থেকে বাঁচতে স্যালোমেশিনের জলে গা জুড়িয়ে নেয়। এক তাতানো দুপুরে মোকাররমের চাচা রহিম মিয়া স্যালোর জলে স্নান করতে গেলেন। কাপড়চোপড় স্যালোর ঘরে রাখতে গিয়ে দরজা খুলতেই ঘরের ভেতর পোড়া গন্ধ পান। ভেতরে উঁকি দিয়েই মৃগী রোগির মতো লাফাতে লাফাতে চিৎকার করে ওঠেন। তার চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে যায় স্যালোমেশিন ঘরে। সবাই দেখে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মোকাররম স্যালো ঘরের মেঝেতে উপুড় হয়ে আছে। জিহ্বা বের করা, চোখদুটো ডিমের মত বাইরে বের হয়ে আছে। দেখতে কী কুৎসিত আর ভয়ংকর!
রোখসানা ইয়াসমিন মনি, গল্পকার