ভাষান্তর : জ্যোতির্ময় নন্দী
[প্রখ্যাত জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামি (জন্ম: ১২ জানুয়ারি, ১৯৪৯)’র পরিচয় বিশ্ব সাহিত্যের পাঠকদের নতুন করে দেয়ার কিছু নেই । তাঁর উপন্যাস, প্রবন্ধ, এবং ছোট গল্প জাপানে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বহুবার বেস্ট সেলার হয়েছে, তাঁর কাজ পঞ্চাশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং জাপানের বাইরে লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে। বহুপ্রজ লেখক মুরাকামির অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বা বহুলপঠিত ও পরিচিত কয়েকটির মূল জাপানি নাম প্রকাশনার কালানুক্রমে নিচে দেয়া হলো (পাঠকের বোধগম্যতার স্বার্থে বইগুলোর ইংরেজি অনুবাদের নামগুলোও এখানে দেয়া হলো, যদিও সেগুলোর প্রকাশকাল মূল বইগুলোর সমসাময়িক নয়):
‘কাজে নো উতা ও কিকে’ (হিয়ার দা উইন্ড সিং, ১৯৭৯), ‘১৯৭৩-নেন নো পিনবরু’ (‘পিনবল-১৯৭৩, ১৯৮০), ‘হিৎসুজি ও মেগুরু বকেন’ (এ ওয়াইল্ড শিপ চেজ, ১৯৮২), ‘সেকাই নো অওয়ারি তো হাদো-বইরুদো ওয়ান্ডারালান্ডো’ (হার্ড বয়েল্ড ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যান্ড দা এন্ড অব দা ওয়ার্ল্ড, ১৯৮৫), ‘নরউওয়েই নো মোরি’ (নরওয়েজিয়ান উড, ১৯৮৭), ‘দান্সু দান্সু দান্সু’ (ড্যান্স ড্যন্স ড্যান্স, ১৯৮৮), ‘নেজিমাকি-দোরি কুরোনিকুরু’ (দা ওয়াইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকল, ১৯৯৪-৯৫), ‘উমিবে নো কাফুকা’ (কাফকা অন দা শোর, ২০০২), ‘ইচি-কিয়ু-হাচি-ইয়ন’ (ওয়ানকিউএইট্টিফোর, ২০০৯-১০), ‘শিকিসাই ও মোতানাই তাজাকি ৎসুকুরু তো, কারে নো জুনরেই নো তোশি’ (কালারলেস ৎসুকুরু তাজাকি অ্যান্ড হিজ ইয়ার্স অব পিলগ্রিমেজ, ২০১৩) প্রভৃতি। চিন্তাধারা ও রচনাশৈলীর দিকে দিয়ে মুরাকামি যাঁদের প্রভাব স্বীকার করেছেন, তাঁরা হলেন: নাৎসুমে সোসেকি, কেনজাবুরু ওয়ে, ইমানুয়েল কান্ট, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, কার্ল ইয়ুং, লুডভিগ ভিডগেনস্টেইন প্রমুখ। মুরাকামি কেন এখনও পর্যৗল্প সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান নি, সেটা অনেক সাহিত্যামোদির ও সমালোচকের বিস্ময়মিশ্রিত প্রশ্ন বটে। তবে নিজের সাহিত্যকর্মের জন্য অন্যান্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে গুনজো পুরস্কার (১৯৭৯), নর্মা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), তানিজাকি পুরস্কার (১৯৮৫), ইয়োমিউরি পুরস্কার (১৯৯৫), কুওয়াবারা তাকিও পুরস্কার (১৯৯৯), ওয়ার্ল্ড ফ্যান্টাসি পুরস্কার (২০০৬), ফ্রান্জ্ কাফকা পুরস্কার (২০০৬), ফ্রাঙ্ক ও’কনর আন্তর্জাতিক ছোটগল্প পুরস্কার (২০০৬), হ্যান্স খ্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেন সাহিত্য পুরস্কার (২০১৬), আমেরিকা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮), জেরুজালেম পুরস্কার ইত্যাদি। এখানে ধারাবাহিকভাবে দেয়া হচ্ছে তাঁর লেখা ‘শেহেরাজাদে’ নামের বিখ্যাত গল্পটি। “আলিফ লায়লা’ বা ‘হাজার এক রজনী’র গল্পকথক কেন্দ্রীয় চরিত্র শেহেরাজাদের নামানুসারে এ গল্পের নাম রাখা হয়েছে, যেহেতু এ বইয়ের অন্যতম প্রধান চরিত্র মেয়েটিও উপকথার শেহেরাজাদের মতো গল্প বলে। আলিফ লায়লার শেহেরাজাদে যেমন প্রতি রাতের শেষে একটা গল্প অসমাপ্ত রেখে দিতো পরের রাতে বলার জন্যে, এ গল্পের শেহেরাজাদেও তেমনটাই করেছে। গল্পের কোথাও লেখক মেয়েটার আসল নাম লেখেন নি, সবসময় তাকে শেহেরাজাদে নামেই উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পটার বাংলা ভাষান্তর করা হয়েছে মূল জাপানি থেকে টেড গাসেনের করা ইংরেজি অনুবাদ অনুসরণে।]
ছেলেটার শোয়ার ঘর ছিলো দোতলাতেই, যেমনটা শেহেরাজাদে আন্দাজ করেছিলো। তার বিছানাটা ছিলো পরিপাটি করে পাতা। বইয়ের তাকে ছিলো কয়েকটা সিডি-সহ একটা ছোট স্টিরিও। ঘরটার দেয়ালে ঝুলছিলো বার্সেলোনা ফুটবল দলের ছবিসহ একটা ক্যালেন্ডার, আর তার পাশে যেটা ছিলো সেটা কোনো ফুটবল দলের ব্যানার বলেই মনে হচ্ছিলো। কোনো পোস্টার ছিলো না, ছবি ছিলো না। শুধু ক্রিমরঙের দেয়াল। জানলায় ঝুলছিলো একটা সাদা পর্দা। কামরাটা ছিলো গোছানো, সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক জায়গামতো রাখা। কোনো বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই, মেঝেতে কোনো কাপড় চোপড় পড়ে নেই। কামরাটা ছিলো তার বাসিন্দার অত্যন্ত গোছালো চরিত্রের সাক্ষ্যবহ। অথবা হয়তো এটা সাক্ষী দিচ্ছিলো একজন গিন্নির স্বভাবের, যে তার ঘরদোর একেবারে নিখুঁত পরিপাটি রাখতে চায়। কিংবা হয়তো দুজনেরই। ব্যাপারটা শেহেরাজাদেকে একটু শঙ্কিত করে তুলেছিলো। কামরাটা যদি আরো অগোছালো হত, তখন সে সামান্যকিছু এলোমেলো করলেও সেটা কারো নজরে পড়তো না। তারপরও কামরাটার পরিচ্ছন্নতা আর সাদাসিধে চেহারা, এর নিখুঁত শৃঙ্খলা, এগুলো তার ভালোও লাগল। কামরাটা ছিলো একদম যেন ছেলেটার মতোই।
শেহেরাজাদে ধীরে ধীরে ছেলেটার ডেস্কের পাশে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়লো, এবং ওখানেই খানিকক্ষণ বসে রইলো। ছেলেটা প্রতি রাতে এখানেই পড়াশোনা করে, এটা ভেবে তার বুক দুরদুর করছিলো। ডেস্কের ওপরে রাখা জিনিসপত্রগুলো সে একটা একটা করে তুলে নিয়ে আঙুল বুলিয়ে আর শুঁকে দেখছিলো, ওগুলোতে তার ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছিলো। ছেলেটার পেন্সিল, কাঁচি, রুলার, স্টেপলার — এসব নীরস বস্তুই শেহেরাজাদের চোখে কেমন আলো ছড়াচ্ছিলো, শুধু ওগুলো ছেলেটার জিনিস ছিলো বলেই।
ডেস্কের ড্রয়ারগুলো খুলে খুব সাবধানে সে হাটকে দেখলো ওগুলোর ভেতরে কী কী রাখা আছে। সবার ওপরের ড্রয়ারটা ছিলো কয়েকটা খোপে ভাগ করা। প্রত্যেকটা খোপে ছিলো একটা করে ছোট্ট ট্রে, যেগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো নানান বস্তু আর স্মারক। দ্বিতীয় ড্রয়ারটা ভর্তি ছিলো প্রধানত ক্লাসের নোটবই আর খাতা দিয়ে, আর সবার নিচের ড্রয়ারটা (যেটা সবচেয়ে গভীরও) ভর্তি ছিলো পুরোনো কাগজপত্র, নোট খাতা আর পরীক্ষার উত্তরপত্রে। ওখানে রাখা প্রায় সবকিছুই স্কুল বা ফুটবল খেলার সঙ্গে সম্পর্কিত। শেহেরাজাদে আরো ব্যক্তিগত ধরনের কিছু খুঁজে পাবে বলে আশা করেছিলো, যেমন ধরুন একটা ডায়েরি বা কিছু চিঠিপত্র। কিন্তু ডেস্কটায় সেধরনের কিছুই ছিলো না। এমনকি ছেলেটার নিজের একটা ছবি পর্যন্ত না। ব্যাপারটা শেহেরাজাদের খানিকটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছিলো। স্কুল আর ফুটবলের বাইরে ছেলেটার কি আর কোনো জীবন ছিলো না? নাকি সে তার ব্যক্তিগত ধরনের সবকিছু সাবধানে লুকিয়ে রেখেছিলো, যাতে কেউ সেগুলোর খোঁজ না পায়?
তারপরও শুধুমাত্র ডেস্কটায় বসে ছেলেটার হাতের লেখার ওপর চোখ বুলোতে গিয়ে শেহেরাজাদে এতটা আলোড়িত হয়ে পড়েছিলো, যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। নিজেকে শান্ত করার জন্যে সে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মেঝেতে বসে পড়েছিলো। সে চোখ তুলে ঘরটার সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার চারপাশে তখন বিরাজ করছিলো চরম নিস্তব্ধতা। আর এভাবেই সে ফিরে গিয়েছিলো তার ল্যাম্প্রে জগতে।
“তাহলে তোমার উদ্দেশ্য ছিলো এটুকুই,” হাবারা জিজ্ঞেস করল, “এভাবে তার কামরায় ঢোকা, তার জিনিসপত্র হাটকানো, আর তারপর মেঝের ওপর বসে পড়া?”
“না,” শেহেরাজাদে বললো। “আরো অনেককিছু ছিলো। আমি তার নিজস্ব কোনো জিনিস আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। এমনকিছু, যেটা সে প্রতিদিন হাত দিয়ে ধরে বা যেটা তার শরীরের কাছাকাছি থাকে। কিন্তু সেটা এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুও হতে পারবে না, যেটার অভাব সে টের পেয়ে যাবে। তাই আমি তার পেন্সিলগুলোর মধ্যে থেকে একটা চুরি করলাম।”
“একটা পেন্সিল মাত্র?”
“হ্যাঁ। এমন একটা পেন্সিল, যেটা সে ব্যবহার করছিলো। কিন্তু চুরি করাটাই তো যথেষ্ট ছিলো না। তাতে তো এটা একটা ছিঁচকে চুরির ঘটনা হয়ে যেতো। আমি যে এটা করেছিলাম, সে তথ্যটা হারিয়ে যেতে পারত। যতই হোক, আমি তো ছিলাম একজন প্রেমচোর, তাই না?”
প্রেমচোর! কথাটাকে হাবারার মনে হলো কোনো নির্বাক ছায়াছবির নামের মতো।
“তাই আমি একটা কিছু সেখানে রেখে আসবো বলে স্থির করেছিলাম, কোনো একটা চিহ্ন। আমি যে ওখানে গিয়েছিলাম তার প্রমাণ হিসেবে। একটা ঘোষণা যে, এটা সাধারণ কোনো চুরি নয়, বরং একটা বিনিময়। কিন্তু কোন্ জিনিসটা আমার রেখে যাওয়া উচিত? আমার মাথায় কিছু খেললো না। আমার পিঠের ঝোলা আর পকেটগুলো হাতড়ে দেখলাম, কিন্তু যূতসই কিছু পেলাম না। রেখে যাওয়ার মতো কিছু সঙ্গে আনার কথা ভাবি নি বলে আমি মনে মনে নিজেকে লাথি কষালাম। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম একটা স্যানিটরি প্যাড রেখে যাওয়ার। অবশ্যই অব্যবহৃত একটা, এখনো প্ল্যাস্টিক মোড়কে রাখা। আমার মাসিকের সময় ঘনিয়ে এসেছিলো বলে আমি ওটা সঙ্গে রেখেছিলাম কখন কাজে লেগে যায় ভেবে। ওটাকে আমি নিচের ড্রয়ারটার ভেতরে একেবারে পেছনদিকে গুঁজে রাখলাম, যেখান থেকে ওটাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এতে সত্যিই আমার শরীর গরম হয়ে গিয়েছিলো। আমার একটা স্যানিটারি প্যাড তার ডেস্কের ড্রয়ারে গুঁজে রেখেছি, এটা ভেবেই। আমি এত উত্তেজিত হয়ে পড়ার কারণেই সম্ভবত আমার মাসিকটা বলতে গেলে তার পরপরই শুরু হয়ে গেলো।”
একটা পেন্সিলের বিনিময়ে একটা স্যানিটারি প্যাড, হাবারা ভাবলো। হয়তো তার সেদিনকার ডায়েরিতে তাকে লিখতে হবে: “প্রেমচোর, পেন্সিল, স্যানিটারি প্যাড।” সে দেখতে চাইছিলো, এ থেকে ওরা কী মর্মোদ্ধার করতে পারে!
“আমি তার বাড়িতে ছিলাম মিনিট পনেরোর মতো। তার চেয়ে বেশি সময় থাকার উপায় ছিলো না। সেটাই ছিলো কারো বাড়িতে আমার গোপনে ঢোকার প্রথম অভিজ্ঞতা, আর আমার ভয় হচ্ছিলো আমি ওখানে থাকতে থাকতেই কেউ এসে পড়বে। বেরুনোর আগে বাইরে রাস্তাঘাট দেখে নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিলাম সব নিরুপদ্রব আছে কিনা। তারপর নিঃশব্দে দরজা গলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে ফের তালা লাগালাম, এবং চাবিটা আবার পাপোষের তলায় রেখে দিলাম। তারপর আমি স্কুলে চলে গেলাম। সঙ্গে সেই ভীষণ দামি পেন্সিলটা।”
শেহেরাজাদে চুপ হয়ে গেলো। তাকে দেখে মনে হলো, সে ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে গেছে আর চোখের সামনে একের পর এক দেখতে পাচ্ছে এর পরের ঘটনাগুলো।
অনেকক্ষণ থেমে থাকার পর সে আবার বললো, “ওই হপ্তাটা ছিলো আমার জীবনে সবচেয়ে সুখের সময়। তার পেন্সিলটা দিয়ে আমার খাতায় অবিরাম নানা হিজিবিজি লিখে গিয়েছি। ওটাকে শুঁকেছি, চুমু খেয়েছি, আমার গালে ঘষেছি। মাঝে মাঝে এমনকি ওটাকে মুখে পুরে দিয়ে চুষেছিও। আমি যতই ওটা দিয়ে লিখছিলাম ততই ওটা ছোট হয়ে যাচ্ছিলো, আর এতে আমার অবশ্যই কষ্ট হচ্ছিলো। ভাবছিলাম, ওটা খুব বেশি ছোট হয়ে গেলে আমি যখন ইচ্ছে আবার তার বাড়িতে গিয়ে আরেকটা পেন্সিল নিয়ে আসতে পারবো। তার টেবিলে রাখা পেন্সিলদানিতে একগোছা ব্যবহার করা পেন্সিল আছে। ওখান থেকে আরো একটা নিয়ে নিলেও সে টের পাবে না। আর তার ড্রয়ারের ভেতরে গুঁজে রাখা স্যানিটরি প্যাডটা সম্ভবত তখনও তার নজরে পড়ে নি। এটা ভাবলে আমার সীমাহীন উত্তেজনা হত — একটা অদ্ভুত সুড়সুড়ি ধরনের অনুভব হতো আমার কোমরের নিচের দিকে। বাস্তব জগতে সে আমার মুখের দিকে কখনো ফিরে তাকায় না বা এমনকি আমি যে আছি সে-ব্যাপারেও সে সচেতন নয় বলে দেখায়, এগুলো আমাকে আর কষ্ট দিতো না। কারণ আমার দখলে সবার অজান্তে তার কিছু একটা চলে এসেছিলো, যাকে বলা যেতো — তার একটা অংশ।
দশদিন পর শেহেরাজাদে আবারো স্কুলে না গিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্যে হানা দিলো ছেলেটার বাড়িতে। তখন সকাল এগারোটা। আগের বারের মতোই সে পাপোষের নিচে রাখা চাবিটা দিয়ে দরজা খুললো। আবারও দেখলো, ছেলেটার কামরাটা নিখুঁত পরিপাটি অবস্থায় আছে, আগের বারের মতোই। সবার আগে সে আরো অনেক ব্যবহার করা যাবে এমন একটা পেন্সিল বেছে নিয়ে সযত্নে নিজের পেন্সিল বাক্সে রেখে দিল। তারপর অতি সন্তর্পণে সে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো ছেলেটার বিছানায়, হাত দুটো বুকের ওপর জড়ো করে আর সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে। এটাই সেই বিছানা, যেটাতে সে প্রতি রাতে ঘুমায়। এটা ভেবে তার বুকের ধুকধুকি আরো বেড়ে গিয়েছিলো। স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে তার কষ্ট হচ্ছিলো।
নিজের ফুসফুসে সে যথেষ্ট বাতাস টেনে নিতে পারছিলো না আর গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো, যার ফলে কষ্টকর হয়ে উঠেছিলো প্রতিটি শ্বাস নেয়া।
শেহেরাজাদে এবার বিছানা থেকে নেমে চাদরটা টেনেটুনে ঠিক করে দিয়েছিলো, আর তারপর বসে পড়েছিলো মেঝেতে, যেমনটা সে আগের বারও করেছিলো। আবার সিলিংয়ের দিকে তাকিয়েছিলো সে। আমি এখনো তার বিছানায় যাওয়ার জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুত নই, সে মনে মনে বলেছিলো। ওটা সামলানো এখনও আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।
বাড়িটায় এবার আধঘণ্টার মতো সময় কাটিয়েছিলো শেহেরাজাদে। ড্রয়ার থেকে ছেলেটার নোটবইগুলো বের করে সে ওগুলোতে চোখ বুলিয়েছিলো। একটা গ্রন্থ সমালোচনা দেখতে পেয়েছিলো সে। এটা ছিলো সোসেকি নাৎসুনে’র ‘কোকোরো’ উপন্যাসটি নিয়ে আলোচনা। এবারের গরমের ছুটিতে বাড়ির কাজ হিসেবে এটা লিখতে দেয়া হয়েছিলো। ছেলেটার হাতের লেখা সুন্দর, একজন নিয়মিত ‘এ’ পাওয়া ছাত্রের হস্তলিপি যেমনটা হবে বলে সবাই আশা করে। কোথাও একটা বানান ভুল বা কাটাকাটি ছিলো না। লেখাটাকে ‘এক্সেলেন্ট’ গ্রেড দেয়া হয়েছিলো। এটা ছাড়া আর কী-ই বা দেয়া যেতো এমন লেখাকে? যে ছাত্রের কলমের কাজ এতটা নিখুঁত, শিক্ষকরা তাকে স্বতঃপ্রণোদিতোভাবেই ‘এক্সেলেন্ট’ দেবেন, তা তাঁরা লেখাটার একটা বাক্যও পড়ে দেখার পরোয়া করুন আর না-ই করুন।
এরপর শেহেরাজাদে এগিয়ে গিয়েছিলো ছেলেটার ওয়ার্ডরোবের দিকে। ভেতরে পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা জিনিসগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে শুরু করেছিলো সে। শার্ট-প্যন্ট, ফুটবল খেলার ইউনিফর্ম — সবকিছু সুন্দরভাবে ভাঁজ করে রাখা ছিলো। কোথাও কিছু কুঁচকানো বা কোনো দাগ লেগে ছিলো না। এগুলো কি সে নিজেই ভাঁজ করেছে? অথবা যেটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তার মা-ই কি এটা করে দিয়েছে? ছেলেটার জন্যে রোজ রোজ এমন সব কাজ করতে পারে ভেবে তার মায়ের প্রতি ঈর্ষার একটা জ্বালা অনুভব করছিলো শেহেরাজাদে।
শেহেরাজাদে ড্রয়ারের ওপর ঝুঁকে পড়ে কাপড়চোপড়গুলো শুঁকেছিলো। ওগুলোর সবগুলো থেকেই পাওয়া গিয়েছিলো সদ্য ধোলাইয়ের আর রোদের ঘ্রাণ। সে একটা ছাইরঙা সাদামাটা টি-শার্ট তুলে নিয়ে সেটার ভাঁজ খুলে মুখে চেপে ধরেছিলো। এটার বগলের নিচে কি ছেলেটার ঘামের গন্ধের একঝলক কোনোমতে পাওয়া যাবে না? কিন্তু না, কিছুই পাওয়া গেলো না। যাই হোক, শেহেরাজাদে শার্টটাকে কিছুক্ষণ নাকে চেপে ধরে রইলো। তার ইচ্ছে করছিলো শার্টটাকে নিজের কাছে রেখে দেয়ার। কিন্তু সেটা বড্ড ঝুঁকির কাজ হয়ে যেতো। ছেলেটার কাপড়চোপড় বড় বেশি পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা। ওয়ার্ডরোবে ঠিক কটা টি-শার্ট রয়েছে সেটা নিশ্চয় সে (বা তার মা) জানতো। এর মধ্যে থেকে একটা শার্ট পাওয়া না গেলে সারা আকাশ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা ছিলো। শেহেরাজাদে খুব সাবধানে শার্টটা আবার ভাঁজ করে জায়গা মতো রেখে দিয়েছিলো। তার বদলে সে ছেলেটার টেবিলের ড্রয়ারে দেখতে পাওয়া একটা ছোট্ট ব্যাজ তুলে নিয়েছিলো, যেটাকে দেখতে ছিলো একটা ফুটবলের মতো। এটা ছিলো সম্ভবত তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল দলের ব্যাজ। ছেলেটা আদৌ ওটার অভাব বোধ করবে কিনা সেটাই শেহেরাজাদে ভাবছিলো। খুব বেশি হলে, সে ব্যাজটার লাপাত্তা হয়ে যাওয়াটা লক্ষ্য করবে আরো বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর তবে। এসব ভাবতে ভাবতে সে সবার নিচের ড্রয়ারটা আরেকবার হাতড়ে দেখেছিলো। স্যানিটারি প্যাডটা তখনও যথাস্থানেই ছিলো।
স্যানিটারি প্যাডটা ছেলেটার মায়ের চোখে পড়ে গেলে কেমন কেলেঙ্কারি হবে সেটাই শেহেরাজাদে কল্পনা করার চেষ্টা করছিলো। কী ভাববে ওই মহিলা? তার ড্রয়ারের মধ্যে একটা স্যানিটারি প্যাডের উদয় কোত্থেকে হলো, মহিলা কি ছেলের কাছে তার ব্যাখ্যা দাবি করবে? নাকি সেটা চোখে পড়লেও কারো কাছে ফাঁস করবে না, অন্ধকার সন্দেহটা নিয়ে নিজের মনের মধ্যেই বার বার তোলাপাড়া করবে? শেহেরাজাদে সেটা বুঝতে পারছিলো না। কিন্তু স্যানিটারি প্যাডটা যেখানে আছে সেখানে রেখে দেয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সে। যতই হোক, প্রেমিকের জন্যে রেখে যাওয়া তার প্রথম অভিজ্ঞান ছিলো এটা।
ছেলেটার বাড়িতে তার দ্বিতীয় অভিযানের স্মারক হিসেবে শেহেরাজাদে সেখানে তার তিনগাছি চুল রেখে এসেছিলো। এর আগের রাতেই সে মাথা থেকে ওগুলো উপড়ে একটা প্ল্যাস্টিক দিয়ে জড়িয়ে একটা ক্ষুদে খামের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছিলো। এখন খামটা তার পিঠের ঝোলা থেকে বের করে ছেলেটার ড্রয়ারে রাখা একটা পুরোনো অঙ্ক খাতার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখল। চুল তিনটি ছিলো একেবারে সোজা আর কালো রংয়ের, খুব বেশি লম্বাও নয়, খাটোও নয়। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব ছিলো না ওগুলো কার চুল, যদিও ওগুলো যে একটা মেয়ের চুল সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো।
ছেলেটার বাড়ি থেকে বেরিয়ে শেহেরাজাদে সোজা স্কুলে চলে গিয়েছিলো। বিকেলের পর্বের প্রথম ক্লাসটায় সময় মতোই পৌঁছে গিয়েছিলো সে। আরো একবার সে দিন দশেকের জন্যে সন্তুষ্ট ছিলো। সে অনুভব করছিলো যে, ছেলেটা এখন আরো বেশি করে তার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনারা যেমনটা আশা করছেন, এই ঘটনাক্রম কিন্তু কোনো একটা ব্যাপার ছাড়াই শেষ হয়ে যাবে না। কারণ শেহেরাজাদে বলেছিলো, অন্যের ঘরে ঢুকে পড়ার অভ্যেসটা একসময় তীব্র একটা নেশার মতো হয়ে যায়।
গল্পের এ পর্যায়ে এসে শেহেরাজাদে বিছানার পাশে টেবিলে রাখা ঘড়িটার দিকে তাকালো। তখন বিকেল ৪:৩২। “আমাকে এবার যেতে হবে,” সে বললো, যেন নিজেকেই। লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে সে তার সাদা রঙের সাদামাটা প্যান্টিটা পরে নিলো, ব্রা’র হুক লাগাল, তার জিন্সের ট্রাউজারটা পরে নিলো, আর মাথা গলিয়ে গায়ে চড়িয়ে নিলো তার ঘননীল রঙের নাইকে সোয়েটশার্টটা।
তারপর সে স্নানঘরে গিয়ে হাত দুটো ভালো করে ধুয়ে চুলটা একটু আঁচড়ে নিয়ে, তার নীল মাজদাটা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো।
হাতে কোনো কাজ না থাকায় হাবারা বিছানায় শুয়ে শুয়ে শেহেরাজাদের সদ্য বলে যাওয়া কাহিনিটা রোমন্থন করলো। গরু যেভাবে জাবর কাটে, সেরকম একটু একটু করে ওটার স্বাদ নিলো সে। গল্পটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? সে ভাবলো। শেহেরাজাদের অন্যসব গল্পে যেমন, একইভাবে এটাতেও কোনো খেই হাবারা খুঁজে পেলো না। শেহেরজাদিকে হাই স্কুলের ছাত্রী হিসেবে ভাবতে তার কষ্ট হচ্ছিলো। এখন তার শরীরে যে মেদ জমেছে, তখন কি তা থেকে মুক্ত, আরো ছিপছিপে চেহারার ছিলো সে? স্কুল ইউনিফর্ম, সাদা মোজা, চুলে বিনুনি?
তার তখনও খিদে পায়নি, আর তাই সে রাতের খাবার তৈরি করা বাদ দিয়ে সে-বইটা খুলল, যেটা সে আগে থেকে পড়ছিলো। কিন্তু এখন দেখলো পড়ায় সে মনোযোগ দিতে পারছে না। শেহেরাজাদের চুপিচুপি তার সহপাঠীর কামরায় গিয়ে ঢোকা আর তার শার্টে মুখ গুঁজে দেয়া তখনও হাবারার মনে জ্বলজ্বল করছে। এর পরে কী ঘটেছিলো সেটা জানার জন্যে সে অধৈর্য্য হয়ে পড়েছিলো।
হাবারার ওখানে শেহেরাজাদের পরবর্তী আগমন ঘটলো আরো তিনদিন পর, সাপ্তাহিক ছুটি শেষে। প্রতিবারের মতো এবারও সে এলো কাগজের বড় বড় ঠোঙাভর্তি খাবার দাবার নিয়ে। ফ্রিজে রাখা আগের খাদ্যসামগ্রীগুলোতে সে চোখ বোলালো, যেগুলোর মেয়াদের তারিখ পেরিয়ে গেছে সেগুলো সব বদলে দিলো, কাপবোর্ডে রাখা ক্যান ও বোতলজাত খাবারগুলোও সে পরীক্ষা করে দেখলো, মশলাপাতি কোন্ কোন্টা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে সেটাও দেখে নিলো, এবং কী কী কিনতে হবে তার একটা তালিকা লিখলো। ফ্রিজে সে কিছু পেরিয়ার জ্যুস ঢুকিয়ে রাখলো ঠান্ডা হওয়ার জন্যে। সব শেষে সে হাবারার টেবিলে সাজিয়ে রাখলো সঙ্গে আনা বই আর ডিভিডিগুলো।
“তোমার কি আর কিছু চাই বা দরকার আছে?”
“আপাতত কিছুর কথা মনে পড়ছে না,” হাবারা উত্তর দিল।
তারপর, প্রতিবার যেমনটা ঘটে, তারা দুজন বিছানায় গেলো এবং সঙ্গম করলো। যথাযথ পরিমাণে শৃঙ্গারক্রিয়ার পর হাবারা তার কনডমটা পরে নিলো, শেহেরাজাদের ভেতরে ঢোকালো, এবং একটা যথাযথ পরিমাণের সময়ের পর বীর্যপাত করলো। কনডমটার ভেতরে জমা হওয়া বস্তুগুলো পেশাদারি চোখে একবার দেখে নিয়ে, তারপর শেহেরাজাদে তার গল্পের নতুন কিস্তি শুরু করলো।
স্কুলের পড়াশোনায় সমস্ত আগ্রহ সে হারিয়ে ফেলেছিলো। ক্লাসে বসে বসে হয় সে ব্যাজটা বা পেন্সিলটা নাড়াচাড়া করতো, না হয় দিবাস্বপ্নে ডুবে থাকতো। স্কুলছুটির পর যখন সে বাড়ি ফিরতো, ক্লাসে দেয়া বাড়ির কাজগুলো শেষ করার মতো মনের অবস্থা তখন তার মোটেও থাকতো না। ক্লাসে শেহেরাজাদের গ্রেড নিয়ে আগে কখনো কোনো সমস্যা ছিলো না। সে ক্লাসের সেরাদের মধ্যে একজন ছিলো না বটে, কিন্তু তাকে দেয়া অ্যাসাইনমেন্টগুলো শেষ করার ব্যাপারে সে সবসময়েই ছিলো একজন সিরিয়াস ছাত্রী। তাই ক্লাসে তার শিক্ষকের একটা প্রশ্নের জবাব যখন সে ঠিকমতো দিতে পারছিলো না, তখন তিনি যতটা না রেগে গিয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি হয়েছিলেন অবাক। শেষপর্যন্ত, মধ্যাহ্ন বিরতির সময় তিনি তাকে শিক্ষকদের কক্ষে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। “তোমার সমস্যাটা কী?” শেহেরাজাদেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি। “কেউ বা কোনোকিছু কি তোমার কোনো ঝামেলা করছে?” জবাবে সে শুধু তার শরীরটা ভালো লাগছে না গোছের কিছু কথা অস্পষ্টভাবে বিড়বিড় করে বলতে পেরেছিলো। তার গোপন কথাটা ছিলো কারো কাছে প্রকাশ করার পক্ষে বড় বেশি ভারী আর অন্ধকার। ওটা একাই বওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিলো না।
“আমার বাবা-মায়ের নিজস্ব ব্যবসা ছিলো, আর তাই আমার দিকে খুব বেশি নজর দেয়ার সময় তাদের হাতে ছিলো না। আমি কখনো তাদের জন্যে কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়াই নি, তাদের কর্তৃত্বকে কখনো অস্বীকার করি নি। তাই তারা আমার ব্যাপারে নাক না গলানোর মনোভাবটাকেই শ্রেয় মনে করেছিলো। স্কুলের নোট কারুর কাছ থেকে টুকে নেয়া অতি সহজ কাজ ছিলো। আমার শ্রেণি শিক্ষিকাকে বুঝিয়েছিলাম যে, একটা শারীরিক সমস্যার কারণে আমাকে মাঝে মাঝে অর্ধেক দিন হাসপাতালে কাটাতে হচ্ছে। যেসব ছাত্র-ছাত্রী দিনের পর দিন স্কুলে আসছে না তাদের নিয়ে শিক্ষকদের এত বেশি মাথা ঘামাতে হচ্ছিলো যে, আমার যখন তখনকার আধাদিনের অনুপস্থিতি নিয়ে খুব বেশি ভাবনাচিন্তার অবকাশ তাঁরা পেলেন না।”
গল্পটা আরো খানিকটা চালিয়ে যাওয়ার আগে একফাঁকে বিছানার পাশে রাখা ঘড়িটা একনজর দেখে নিলো শেহেরাজাদে।
“চুরি করে তার বাড়িতে ঢোকা আমাকে চালিয়ে যেতে হচ্ছিলো,” শেহেরাজাদে বললো। “আমি বাধ্য হচ্ছিলাম। তুমি তো বুঝতেই পারছ, কতটা ঝুঁকির ছিলো কাজটা। এমনকি আমি নিজেও সেটা বুঝতে পারছিলাম। শিগগিরই বা পরে কখনো কেউ আমাকে দেখে ফেলবে এবং পুলিশ ডাকবে। কথাটা ভেবে আমি ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বলটা একবার গড়িয়ে দেয়ার পর আমার আর থামার উপায় ছিলো না। আমার দ্বিতীয় ‘অভিযানের’ দশদিন পর আমি আবারও সেখানে গেলাম। না গিয়ে আমার কোনো উপায় ছিলো না। ব্যাপারটা এখন ভাবলে মনে হয়, আমি সত্যিই একটুখানি খ্যাপা গোছের হয়ে গিয়েছিলাম।”
“এই যে এত ঘন ঘন ক্লাস পালাচ্ছিলে, এতে স্কুলে তোমার সমস্যা হয়নি?” হাবারা জিজ্ঞেস করলো।
“পাপোষের নিচ থেকে চাবিটা নিয়ে তৃতীয় বারের জন্যে বাড়িটায় ঢুকেছিলাম। ওটা ছিলো আগের মতোই চুপচাপ — না, কোনো কারণে এমনকি আগের চেয়েও চুপচাপ। ফ্রিজটার মেশিন হঠাৎ শব্দ করে ওঠায় আমি চমকে গিয়েছিলাম — শব্দটাকে মনে হয়েছিলো বিশাল কোনো জন্তুর নিঃশ্বাস ফেলার মতো। আমি ওখানে থাকা অবস্থায় ফোনও বেজেছিলো। বাজার শব্দটা এত বড় আর তীব্র ছিলো, মনে হচ্ছিলো আমার হৃৎপিণ্ডটা থেমে যাবে। ঘামে আমি পুরোপুরি নেয়ে গিয়েছিলাম। অবশ্যই ফোনটা কেউ তুললো না, এবং বার দশেক রিং হওয়ার পর ওটা থেমে গেলো। বাড়িটা তখন যেন আরো নিঃস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলো।”
জ্যোতির্ময় নন্দী, কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক