এখন সময়:রাত ২:২৯- আজ: বৃহস্পতিবার-২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:রাত ২:২৯- আজ: বৃহস্পতিবার
২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, বীর মুক্তিযোদ্ধা

জাহিদুল হক- সাফাত বিন ছানাউল্লাহ্

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা বাঙালীদের জন্য এক কলঙ্কময় অধ্যায়। যারা বঙ্গবন্ধুকে মনেপ্রাণে ধারণ করেন ওদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিলো কালরাত্রির পর। অনেকে নির্বাক হয়ে গিয়েছিল দীর্ঘ সময়ের জন্য হঠাৎ এমন এক ঘটনায়। মুজিববাদী দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা সারাদেশে তখন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটি প্রতিরোধযুদ্ধ গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধভাবে। সহজ ছিলো না সেই দিনগুলো। ঘাতকচক্র বাঙালির প্রাণেশ্বর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। যারা এমন নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে তাদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে। হাজার হাজার দেশপ্রেমিককে হত্যা করেছে, গুরুতর আহত করেছে। টাঙ্গাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশব্যাপী। চট্টগ্রাম ও প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে জান্তা সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। প্রথম প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হয়ে জনসম্মুখে এলেন মৌলভী সৈয়দ। যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন গেরিলা যোদ্ধা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর বাকশালের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৌলভী সৈয়দ এর সাথে এরপর আরো অনেকেই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সহ অসংখ্য বীর যোদ্ধা।
অসংখ্য প্রতিরোধযোদ্ধা রয়েছেন যারা নিভৃতেই থেকেছেন আজীবন। যাদের নাম লিপিবদ্ধ হয়নি কোথাও। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন তৎকালীন চট্টগ্রামের শ্রমিক আন্দোলনের প্রথম সারির সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ জাহিদুল হক। নিজেকে নিয়ে গর্ব হয় তিনি আমার শ্রদ্ধেয় বড় ফুফা, মায়ের আপন খালাতো ভাই।
স্বৈরাচারী সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠদের দমিয়ে রাখার জন্য চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা ১,২,৩ দায়ের করে। এই মামলায় জাহিদুল হককে অন্যান্যদের সাথে গ্রেফতার করা হয়। জাহিদুল হকের স্ত্রী জোহরা খাতুন (আমার বড় ফুফু) ঘটনার বর্ণনায় বলেনÑ
১৫ আগষ্টের পর বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা প্রতিশোধের নেশায় দৃঢ় শপথ করেন। জাহিদুল হক তখন ওয়াপদার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। পাশাপাশি আওয়ামী রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জড়িত থেকে ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেকেই তখন নেতা হারিয়ে দিশেহারা। তৎকালীন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিদিন মিটিং করতেন কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। মিটিংয়ের এর পর একসাথে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভা করা হতো সরকারের পেটোয়া বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে। একজন অন্যতম প্রতিবাদী হওয়ায় সরকারের চক্ষুশূল হন তিনি। গ্রেফতারের দিনটি আজো মনে পড়ে তাঁর। সে দিনের স্মৃতি মনে করে বলেনÑ শ্বশুরের (জাহিদুল হক) বাবার জিয়াফত উপলক্ষ্যে বাজার-সদাই কিনে ওয়াপদা কলোনির বাসায় সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম পরেরদিন সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে যাবো। তারিখ ছিলো ১০ জুন ১৯৭৭ সাল। রাতে খেয়ে যার যার কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টায় দরজায় জোরে জোরে ধাক্কার শব্দে ঘুম ভাঙে। সেই রাতেই ওয়াপদা কলোনির বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় জাহিদুল হককে। পরে চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা ২ এ গ্রেফতার দেখানো হয়। বন্দিশালায় চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগের পক্ষে তথ্য প্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হলে এই মামলা থেকে তিনি অব্যহতি পান। একই অভিযোগে আটক হওয়া মৌলভী সৈয়দ নিরাপত্তা গোয়েন্দা বাহিনীর নির্যাতনে নিহত হন।
জনাব জাহিদুল হক দক্ষিণ চট্টগ্রামের পশ্চিম পটিয়ার (বর্তমানে কর্ণফুলী থানা) দৌলতপুরে সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম কাজী আবু লায়েস, মাতা মরহুমা রশিদা খাতুন। তিনি ছিলেন বহুমুখী গুণসম্পন্ন মানুষ। আজীবন চট্টগ্রামে ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল রাজনীতির একজন সামনের কাতারের সৈনিক। ষাটের দশকে চট্টগ্রামে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সংগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত জহুর আহমেদ চৌধুরী (স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শ্রমমন্ত্রী) এবং তিনি মিলে গড়ে তোলেন চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়ন। জহুর আহমেদ চৌধুরী ইউনিয়নের সভাপতি এবং জাহিদুল হক এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের সময় তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন । তিনি ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী এবং মৌলভি সৈয়দের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার অভিযোগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনি তাকে চট্টগ্রামের মনসুরাবাদে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দফতর থেকে ধরে সেনানিবাসে নিয়ে আটকে রাখে। পরে এক পাঞ্জাবি সহকর্মীর সহায়তায় তিনি মুক্তি পান।
সত্তর এবং আশির দশক জুড়ে তিনি পর পর বহু মেয়াদে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। এসময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আজীবন লড়ে গিয়েছেন সত্যের পক্ষে। জাত, ধর্ম, বর্ণ কোনদিনই পার্থক্য করে দেখেননি। উনার মৃত্যুর পর উত্তর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিখ্যাত পাহাড়তলী মহামুনি বিহারে সংঘদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো এক সম্ভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবার। এই পরিবারের আত্মীয়ের মতো ছিলো বড় ফুফার পরিবার। পরিবারের কর্তা নন্দ বড়ুয়া (নন্দ কাকা) বড় ফুফার ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন। চাকরিক্ষেত্র সহ সব জায়গায় তিনি “হক” সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। সক্রিয় কর্মজীবন থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে তিনি একেবারেই নিভৃত জীবন-যাপন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে একজন অমায়িক, সজ্জন এবং পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
মহান মানুষটি গত ২ এপ্রিল ২০২১ চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, তিন ছেলে সহ বহু আত্মীয়-স্বজন গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার একমাত্র কন্যা মর্জিনা আক্তার একজন গৃহিণী, বড় ছেলে আমজাদ হোসেন সাবেক ব্যাংকার এবং ব্যবসায়ী, মেজ ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন বিবিসি বাংলার খ্যাতিমান সাংবাদিক, ছোট ছেলে কামাল হোসেন মিঠু সরকারি কমার্স কলেজ চট্টগ্রামের প্রাক্তন ভিপি, এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির কর্মকর্তা।
৭৫ সালের পর আজ ৪৭টি বছর চলে গেছে। যারা কঠিন দিনগুলোতে জীবনের মায়া ভুলে শুধুমাত্র জাতির পিতা, দেশের ভালোবাসায় প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, আহত হয়েছে, চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেই বীরদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজ সময়ের দাবি।

সাফাত বিন ছানাউল্লাহ্, কবি,প্রাবন্ধিক,সংগঠক, সাতবাড়ীয়া,চন্দনাইশ,চট্টগ্রাম, 

কাজী নজরুল ইসলাম : বাংলা সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণপুরুষ

আ.ম.ম. মামুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামই প্রথম মৌলিক কবি। রবীন্দ্র অনুবর্তী একগুচ্ছ কবির একজন তিনি নন। তিনি অন্যরকম স্বতন্ত্র। শিল্প সাধনায়,

আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ 

প্রবীর বিকাশ সরকার ১৯২৯ সালে বহির্বিশ্বে অবস্থানকালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে ঘটেছে যুগপৎ দুঃখজনক এবং আনন্দদায়ক কিছু ঘটনা। যা নিয়ে বাংলায় সামান্যই আলোচনা হয়েছে, অথবা

হিংস্র ও বুনো অপশক্তির বিনাশ চাই

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় গ্রীষ্মকালটা বড়ই অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এই ঋতুটির তেজ আগে কখনও এত তীব্র ছিলো না। ইতোমধ্যেই