হে অরণ্যকন্যা
নিজেকে তোমার সামনে দাঁড় করালাম হে অরণ্যকন্যা
তোমার ঝাপসা-ঝাপসা ভুরু রেখা
ফোলা-ফোলা চোখের পাতায়
যে-তীক্ষ্ম চাহনি বুকের ভেতরে গিয়ে বিঁধে
সে আমার নিজেরেই চাহনি
যদিও আমার শরীরজুড়ে ভুল নকশায় বানানো
ভুলের শহর
হাতপাতা ভিখিরির জীর্ণশীর্ণ ভঙ্গুর ভঙ্গি
ভেঙে পড়া নগর ব্যবস্থাপনার ত্রাহি রোদন
তবু করুণার কন্যা তুমি, ছায়াবতী বনের ঝরনা
এ অধমেরে চোখ মেলে দেখেছ
এ আমার প্রশান্তি
দুহাতে দিয়েছ সবুজ কলজে চেরা দানা ও পানি
আমি আনন্দ নিয়ে ফিরে যাবো হে কন্যা
তোমাকে রাখবো যুগ-যুগ ধরে
আমার হিয়ার তলে …
ফিলিস্তিন
তুমি যদি হও ঘরহারা, পতিহারা মহিলার বিলাপ
আকাশে-বাতাসে
সন্তানহারা পিতার বুকের চাপড়ানি
তুমি যদি হও গাজায় পশ্চিম তীরে রামাল্লায় জেনিনে
শিশুর নিথর শরীর
ট্যাংকের মুখে বীভৎস বিস্ফোরণ
যদি হও রক্তাক্ত বেয়নেট
এমনকি যদি হও ড্রোনের শিকার
কাশেম সোলেমানির মতো
তবু তুমি মানুষের উল্লাসকর হর্ষধ্বনি
তবু তুমি মানবতার নতুন জন্ম
তবু তুমি নতুন বিজলি রেখা
ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপের মধ্যখানে তীব্র সুগন্ধ ছড়ানো
ঊর্ধ্বমুখী একগুচ্ছ নার্গিস ফুলের গৌরব …
ফিরে-ফিরে মোহের তিমিরে
পারিনি মানব হতে রয়ে গেছি মানুষেরে ঘিরে
ঘোর কোলাহলে ফিরে-ফিরে মোহের তিমিরে
সভায়, সরব মাহফিলে
একটু আদর করে কেউ ডেকে নিলে
প্লাস্টিকের লাল চেয়ারের খোপে বসি চুপি চুপি
মাথায় তাজের মতো পরে চিতিপড়া টুপি
শুনি ওয়াজ, বিরাট নেতার বক্তিতা
শুধুই নালিশ, কেবলই তা তিতা
ছুটে যাই মধ্যরাতে দেহাতি গানের জলসায়
লালনের হাছনের ভা-ারীর সুর
এ দিলের আগুন নেবায়
নেশা-নেশা লাগে
আমার ভেতরে এক আদিপ্রেমিকের সত্তা জাগে
শেষ রাতে মোলায়েম হাওয়া আর পাখিদের কলরবে
আল্লাহ আসেন আমার কলবে
বধূটিও বুঝে গেছে
সংসারের সুতো বাঁধা প্যাঁচে
আমার আরতি দোলে কোন্ সে মোকামে
মূল্যস্ফীতি, টানাপোড়েনের ঘামে
মানুষেরে ঘিরে
তুচ্ছজীবনে উদ্বৃত্ত মূল্য পাবার জিকিরে …
কবি হেবা কামাল
আমি দেখেছি রাতারগুলের গভীর স্বচ্ছজল
পাথরের শরীর যেখানে থরে-থরে কাঁপে
বহুদূর পাহাড়ের শিখর পেরিয়ে এঁকেবেঁকে এসে
থামে সে এখানে ধাপে-ধাপে
নিথর পাথরগুলো কাঁপছেই টলটল স্বচ্ছতায়
ইহুদি যেমন কাঁপে নিজেদের বধির বর্বরতায়
ওই স্বচ্ছতায় ফোটে জলপদ্মসম হেবা কামালের মুখ
নিজেকে দিলেন লিখে সেমেটিক জাতির
প্যালেস্টাইনি বুক
ওই রক্তে ধসে যায় হিব্রুর মিনার
দেখা যাচ্ছে আলো সূর্যের সিনার …
শামা নৃত্য
বাতাসের সম্ভ্রান্ত অধিবেশনে
ধোঁয়ার সফেদ কু-লীর মতো
মাওলানা রুমির ধ্রুপদি নৃত্য আমি দেখি অন্তর্চক্ষে
তাঁর হৃদয়ালুর হূতিতে আহুতি দিয়েছে মন
কাশী-বৃন্দাবনের সকল শরাফত ছাড়ায়ে উঠেছি
মানুষের প্রাণের ব্রহ্মা-ে
আমাকে দেখতে পাও জলাভূমির ঘাসের
গালিচায় সেজদায়
আমাকে দেখতে পাও গরিবের করতলে
শুয়ে থাকা সোনালি মুদ্রায়
শরাবখানায় প্লত নাস্তিকের অধরোষ্ঠে
আদিবাসী সন্তানের মাটির পাঁজরে ঘাম হয়ে শস্যের ফলনে
আমাকে দেখতে পাও কাবায় মন্দিরে বিহার জুড়ে
গান গাই একা বিশ্বজোড়া আদমের …