আন্দরকিল্লা ডেক্স : শতবর্ষ পূর্ণ হওয়া চট্টগ্রামের হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাহাড়তলী অন্যতম একটি। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল ২০২৪ সালে ১০০ বছর পূর্ণ করেছে। ব্রিটিশদের আমলে নির্মিত গাঢ় লাল রংয়ের এই স্কুলটির মূল ভবন দোতলা হলেও উচ্চতায় প্রায় চারতলার মতো! প্রথম তলাটি প্রায় ২০/২২ ফুট উঁচু। অদূর ভবিষ্যতে এই স্কুলটিকে হেরিটেজ হিসেবেও ঘোষণা করা যেতে পারে! কালের সাক্ষী এই রেলওয়ে স্কুলের শতবর্ষ উদযাপন হলো গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ দুই দিনব্যাপী। এক্স স্টুডেন্টস ফোরাম আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই মেগা অনুষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার প্রাক্তন ছাত্র অংশ নিয়েছে। দ্বিতীয় দিনে অনেকে পরিবারসহ অংশ নিয়েছে। দূর দূরান্তে থাকায় এবং অসুস্থতা ও নানা কারণে অনেকে হয়তো আসতে পারেনি। আবার অনেকে শৈশব কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত স্কুলের শতবর্ষ উদযাপনে অংশ নিতে প্রবাস থেকেও ছুটে এসেছেন। শতবর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে আবারও পূর্ণমিলনী হলো রেলওয়ে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের। স্কুল সেজেছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে অনেকে জাতীয় নেতা হয়েছেন, মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়েছেন। আবার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অভিনেতা সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসীন হয়েছেন। এদের কেউ গত হয়েছেন, কেউ এখনও জীবিত আছেন। শতবর্ষ উদযাপনে জীবিতদের মধ্যে অনেকে এসেছেন। সবচেয়ে প্রবীণ যিনি এসেছেন তিনি ১৯৫৪ সালে এই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন তথা এসএসসি পাশ করেছেন। আবদুল মান্নান মজুমদার নামে প্রবীণ এই ব্যক্তির পাঁচ সন্তানও এই রেলওয়ে স্কুলের
প্রাক্তন ছাত্র। এরপর ১৯৫৯, ৬০, ৬২, ৬৪ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০২৪ সালে পাশ করা ছাত্ররাও শতবর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। স্কুল প্রাঙ্গনে এবং পার্শ্ববর্তী রেলওয়ে পুলিশ লাইন মাঠে অনুষ্ঠিত জমকালো এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি সরদার তমিজউদ্দিন আহমেদ, স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা, শফিকুর রহমান স্বপন, মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, রকিবুর রহমান টুটুল এবং আজমল হুদা রিংকু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্কুলের প্রাক্তন কৃতি ছাত্র ডা. শাহনেওয়াজ সিরাজ মামুন। দুই দিনের অনুষ্ঠানেই সভাপতিত্ব করেন স্কুলের ১৯৬৪ সালের কৃতি ছাত্র এবং শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব এবং স্কুলের ১৯৮৫ ব্যাচের কৃতি ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার রিসাত সুমন। একুশের ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে প্রথম দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সুবক্তগীন। ব্যাচভিত্তিক দুই দিনের স্মৃতিচারণ পর্বে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রফেসর ডা. নুরুল ইসলাম খান, প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম, প্রফেসর মোহাম্মদ ইমরান, প্রফেসর মোঃ শহীদুল্লাহ, ব্যারিস্টার গাজী সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক নিজাম হায়দার সিদ্দিকী, এমদাদুল ইসলাম এবং এস এম মোখলেসুর রহমান প্রমুখ।
শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে কয়েকজন শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয় এবং স্কুলের বর্তমান ছাত্রদের সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দিন শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। নানা পর্বে বিভক্ত মেগা এই অনুষ্ঠান সফল করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। তারা হলেন- হেলাল উজ্জামান, এম এম মোর্শেদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম মাসুম, রিটন দাশ, মোঃ ইসকান্দার মিয়া, মোঃ ইব্রাহিম, জামাল উদ্দিন বাবু, কাউসার হোসেন রিপন, মাশুকুল আলম শৈবাল, শাহাবুদ্দীন, মিনহাজ খান, মনিরুল ইসলাম পারভেজ, মইনুল হক চৌধুরী রিংকু, হাফিজুর রহমান বাদল, মোঃ সোয়েব হোসাইন, মাইনুল ইসলাম, সাজ্জাদ চৌধুরী ইভান, মঈনুল হোসেন রাসেল, সাজ্জাদ হোসেন টুটুল, এম এইচ রানা, ইয়াসিন পারভেজ রাজু, নিজাম উদ্দিন মিঠু এবং আনোয়ারুল হক লিটু সহ আরও অনেকে। শতবর্ষের এই অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে স্কুল প্রাঙ্গন থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। সবাই একই রংয়ের টি-শার্ট পরে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। পরে গ্রুপভিত্তিক ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করে। দুই দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্কুলের ছাত্রদের নাটক, কৌতুকের
পাশাপাশি জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীত দল শিরোনামহীন, লালন, জলরং, বে অব বেঙ্গল এবং সাম্রাজ্য সঙ্গীত পরিবেশন করে। এই চার ব্যান্ড সঙ্গীত দলে স্কুলের কয়েকজন প্রাক্তন
ছাত্রও আছে।
সবশেষে আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়। এতে প্রথম পুরস্কার ঢাকা-কাঠমুন্ডু-ঢাকা কাপল বিমান টিকেটসহ মোট দশটি আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয়।
আগামী দ্বিশতবর্ষ অনুষ্ঠানে বর্তমানের কেউ হয়তো বেঁচে থাকবে না, কিন্তু স্মৃতির ক্যানভাসে আজীবন থাকবে শতবর্ষ অনুষ্ঠানের স্মৃতি।