সাঈদুল আরেফীন:
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিবিসির জরীপে বঙ্গবন্ধু বিশে^র বাঙালি সমাজে সমাদৃত হয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের মধ্য দিয়ে। বিশে^র বাংলাভাষাভাষী মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কুড়িজন ব্যক্তির মধ্যে তিনিই হয়ে উঠেছেছিলন সর্বশ্রেষ্ঠ। বঙ্গবন্ধু তার আগেই স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক তথা অসাম্প্রদায়িক নেতা হিসেবে অনেক বাঘা বাঘা নেতাকে ছাপিয়ে অনেক উঁচুতে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু এমন একজন অবিসম্মাদিত নেতা ছিলেন যেখানে সবকিছুকে ছাপিয়ে তিনি ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটাকে উজ্জ্বল থেকে মহাউজ্জ্বল করে তুলেছেন। মাত্র পঞ্চান্ন বছরের জীবনের ব্যপ্তিতে তিনি নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে মহান দেশপ্রেমিক হয়ে উঠেছেন।পচাত্তর পরবর্তী দেশে স্বাধীনতা ও দেশের চরম শত্রুরা বঙ্গবন্ধুর নামটিেেক ইতিহাস থেকে মুছে দিতে আজ ব্যর্থ হয়েছে। শুধু বঙ্গবন্ধু নামেই নয়, তিনি বিশ^ দরবারে বিশ^বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। অসাম্পদ্রায়িক ও মানবিক নেতা হিসেবে তিনি আজ বিশ^ সভায় বিশ্লেষণ ও গবেষণার বিষয় হয়ে প্রতিভাত হয়েছেন।
মুজিব শতবর্ষের ইতিহাসে পেরিয়ে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর মৃত্যুর পর ইতিহাস থেকে মুছে ফেলে দেয়া হয়েছিলো। একুশ বছর ধরে সে চেষ্টা অব্যাহত থাকে। শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর অজানা সমস্ত তথ্য উপাত্ত এখন আমােেদর চোখের সামনে সুষ্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে বাংলার জনগণ ইতিহাসের দুর্লভ স্বাক্ষী হয়ে রইলো। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহণের শততম বছর থেকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই জন্ম শতবর্ষ পূর্তিতে এক অবিস্মরণীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুঁজে পেলো। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন স্যুভেনির, স্মারক বক্তৃতা, দেশি-বিদেশি শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতি দেখলো বিশ^ বরেণ্য এক নেতার আরাধ্য মেধা , স্বপ্ন ও পরিকল্পনার দৃশ্যপট। বাঙালি জাতি আজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনকের মুজিব শতবর্ষের আনুষ্ঠানিকতায় তার প্রমাণ সামান্য কিছুটা হলেও পেয়েছে। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতাকে যুগ যুগ কালের পরিক্রমায় স্মরণ করেও অপরিশোধ্য থাকবে। তাই আজকের দিনে আমরা বিশ্লেষণ করতে চাই একজন কালের মহানায়ককে।
কালের মহানায়ক
কালের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মাটি ও মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ছিলো যাঁর। তিনি আমাদের মহান নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নেতার চরিত্র আদর্শ মেধা প্রজ্ঞা পাহাড় সমান বুক উঁচানো প্রবল সাহস নিয়ে যাঁর জীবনের শুরুটাই হয়েছিলো মানুষের কাছে নিজেকে নিবেদনের মধ্য দিয়ে। আজকের দিনে অবধারিত সত্য যে, বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশ হতো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে? বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ দাঁড়াতেও পারতো না। বাঙালি জাতিসত্ত্বা হিসেবে পরিচয় দেবার ও কিছু থাকতো না আমাদের।
এই মহানায়কের জীবনের প্রেক্ষাপট সত্যিই অনেক কন্টাকীর্ণ ও মৃত্যুঞ্জয়ী। প্রতি পদে পদে বঙ্গবন্ধুকে পিছু ঠেলে দিতে হয়েছে দুর্গম পথ। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সেই গতিপ্রবাহের পরতে পরতে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সহযাত্রী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন ভিন্নভাবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনালেখ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন,“ বঙ্গবন্ধুর আয়ুষ্কাল ছিলো সাড়ে পাঁচ দশক,আর যার ৩০৫৩ দিন কেটেছিলো কারার লৌহকপাটের অন্তরালে। বন্দি বঙ্গবন্ধু মানসিকভাবে ছিলেন মুক্ত বিহঙ্গ। সে কারণে বন্দিত্বের অন্তরালে রচিত হয়েছিলো দুটি অমূল্য জাতীয় সম্পদÑ অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা। দুটি বই যে হাতে পেয়েছি তার কৃতিত্ব দু’জন নারীর। প্রথমজন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, যিনি লেখার খাতা দিয়ে স্বামীকে উৎসাহিত করেছিলেন লিখতে এবং ’৭১-এ অবরুদ্ধ থাকার সময়ে ৩২নং-এর বাড়ি থেকে শেখ হাসিনাকে দিয়ে পা-ুলিপি আনিয়ে সযতেœ আগলে রেখেছিলেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট পা-ুলিপি দুটি উধাও হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অনেক খুঁজে পেতে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন বলেই বই দুটো আমরা হাতে পাই। অবশ্য কারাগারের রোজনামচা নামকরণ করেছেন শেখ রেহানা।” বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের ইতিবৃত্ত উন্মোচনে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তদীয় কন্যা শেখ রেহানাও ইতিহাসের পাদপীঠে স্থান করে নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের আগে থেকেই। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাঙালি জাতির অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু একদিনে বঙ্গবন্ধু হননি। তাঁর ছেলেবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন মানুষকে ভালোবাসার, দেশকে ভালোবাসার। দেশের জন্যে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা নিয়েই জন্মেছিলেন এই ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি আরো স্বপ্ন দেখতেন সুখী সুন্দর সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সোনার বাংলা গড়ার। সারাজীবন নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের মানুষকে উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এমন একজন বাঙালি নেতা দ্বিতীয়টি জন্মাবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে? এবার বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীকে স্মরণ করে কিছুদিন আগে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র তাঁর সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছে এভাবে, “স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিকে হত্যা করে যারা নবীন রাষ্ট্রটির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর অপরিমেয় ক্ষতি ও গভীর শূণ্যতা পূরণ হবার নয়।” যা এদেশের জনগণ নানা সময়ে অনুভব করেছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তাঁর আরাধ্য স¦প্ন বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সাথে করা তাঁর মৈত্রী চুক্তির সুফল সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সহ দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বারবার
পরাজিত শক্তির দোসররা যে প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছিলো তা আজ অস্তমিত সূর্যের মতো পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। শিক্ষা,স্বাস্থ্য,খাদ্য ও অর্থনীতিতে দেশের উন্নয়ন এখন চোখে পড়ার মতো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের দুঃখবোধ ঘুচাতে সচেষ্ট হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু নেই, তাঁর সৃষ্ট স¦াধীন সার্বভ্যেম বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মাথা উুঁচ করে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে দিনরাত সূচিত বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামকে নস্যাৎ করে দিয়ে ঘাতকরা মনে করেছিলো বঙ্গবন্ধুকে বুঝি নিঃশেষ করে দিলো। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু মুজিব অমর অক্ষয় হয়ে বেঁচে আছেন বাঙালির হৃদয়ের মনিকোঠায়। মুজিববর্ষকে সম্মান জানিয়ে কালজয়ী লেখক কলামিষ্ট একুশের গানের ¯্রষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গর্ববোধ করে বলেন, “ আমার পরম সৌভাগ্য, আমি মুজিব যুগে জন্মেছি। তাকে চোখে দেখেছি। তার সাহচার্য পেয়েছি। এখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। আমার মতো সৌভাগ্যবান আর কতজন আছেন? প্রতি যুগে মহামানব জন্ম নেন না। যারা তার সাহচার্য পান তারা হলেন মহাসৌভাগ্যবান। এই অর্থে আমার মতো সৌভাগ্যবান কতজন বেঁচে আছেন।”
বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ^বন্ধু
বিশিষ্ট লেখক ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন তাঁর কলামে উল্লেখ করেন, “’৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত শেখ মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধু। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু। এই বঙ্গবন্ধু অভিধার একটু ইতিহাস আছে, যা জেনে নেয়া উচিত। ’৬৮’র শেষ দিকে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী মোশতাক অভিধাটি চয়ন করেন। আর ডিসেম্বরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ অভিধাটি ব্যবহার করে স্লোগান দেয়। তবে স্বীকার্য, সেদিন রেসকোর্সের বিশাল নাগরিক সংবর্ধনায় ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদের প্রস্তাবনায় ও জনগণের তাৎক্ষণিক সম্মতিতে অভিধাটি জনসমক্ষে এসেছিলো।”
আমরা আজ গর্ব করতে পারি আমাদের জাতির পিতা কেবল আমাদের নয় তিনি বাংলাদেশ নামক ভূÑখন্ডকে স্বাধীন করেই বিশ^নেতাই পরিণত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ১৫ আগষ্ট জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুকে বিশ^বন্ধু বা ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী। লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধু বিশ^ সমাদৃত নেতা হিসেবে সম্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, এককালে বিশে^র মানুষ গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের নামে ভারতকে চিনত (এখনও চেনে) এখন মুজিব বললেই সারাবিশে^র মানুষ চেনে স্বাধীন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ মানেই মুজিব। মুজিব মানেই বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাহিত্য
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে দেশে বিদেশে কতো কতো গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ,নাটক, স্মৃতিকথা লেখা হয়েছে তার কোন হিসেব নেই। বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন কথার ওপর ভিত্তি করে এসব লেখা হয়েছে। কবি জসীম উদ্দিন থেকে শুরু করে আবুল ফজল, আবদুল গাফফার চৌধুরী, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক, রফিক আজাদ,আসাদ চৌধুরী, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, ইমদাদুল হক মিলন,সেলিনা হোসেন সহ সহ হালের নবীন প্রবীণ কবি কথাসাহিত্যিকদের কেউ বাদ যায়নি। ১৯৭৭ সালে এক দুঃসময়ে বাংলা একাডেমী মঞ্চে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতা ‘ আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ পাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর প্রবল দুঃসময়ে কবিতা ও প্রবন্ধ গ্রন্থ ছাপাতে এগিয়ে আসেন তৎকালীন চাকসুর বার্ষিকী সম্পাদক (বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক) মিনার মনসুর, বর্তমানে জনপ্রশাসন সচিব কবি কামাল নাসের চৌধুরী। মিনার মনসুরের ভাষ্যমতে, “বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় শাহাদাৎ বার্ষিকী স্মরণিকা হিসেবে ১৯৭৮ সালের ১৫ আগষ্ট আমরা প্রথম প্রকাশ করি ‘এপিটাফ’। এ নামকরণের মূলেও ছিলো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষাদময় পটভূমি।” একই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদী কবিতা ও ছড়া সংকলন হিসেবে বের হয় ‘ এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’। মিনার মনসুরের লেখায় আরো জানা যায়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মহাদেব সাহা রচিত প্রথম প্রতিবাদী কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে সাড়া দেশে আলোড়ন তুলে। জানা যায়, ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ’ নামে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম সংকলনটি প্রকাশিত হয়। এই অবারিত সময়ে এখনো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রচুর গবেষণা,সাহিত্যচর্চা চলছে ব্যাপক ভাবে। এতে করে বঙ্গবন্ধু মুজিব সম্পর্কে নতুন তথ্য উপাত্ত অজানা বিষয় আশয় বেরিয়ে আসবে। এটা এখন পরিস্কার হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু মুজিব এখন জন মানুষের মণিকোঠায় এতোটা গ্রোথিত প্রোথিত হয়ে আছে, তাঁকে জানবার, অনুধাবন অনুসন্ধিৎসা পাঠকের কাছে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এখানে অবশ্যি বলার অপেক্ষা রাখেনা, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা হলো এখন ইতিহাসের চোখে ঘটনাবহুল দলীল। যা পাঠেই সকল শ্রেণী পেশার মানুষ জানতে পারবে বঙ্গবন্ধুর সরলতার প্রতিচ্ছবি কীভাবে ফুটে উঠেছে বইগুলোর পাতায় পাতায়। শাদামাঠা শব্দ গাঁথুনী দিয়ে হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনাতে এই
গ্রন্থগুলো ৭ ই মার্চের ভাষণের মতোই অন্যরকম জনপ্রিয়তা ধন্য হয়েছে নিঃসন্দেহে।
নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন চিন্তা নেতৃত্বগুণ তুলে ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করতে হবে। পড়াশুনা করতে হবে। উদ্ধার করতে হবে বঙ্গবন্ধুর মানবিক নেতৃত্ব, স্বপ্ন, পরিকল্পনা, দর্শন, চিন্তা, আবেগের স্তরগুলো নিয়ে। আর ব্যাপকভাবে বিশাল মাপের বঙ্গবন্ধুকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের আপামার জনগণের মাঝে। তাহলেই হিমালয়রূপ বঙ্গবন্ধুর সমস্ত স্বপ্ন চেতনার কিছুটা হলেও আমরা সন্ধান পেতে পারি। শেষে এই টুকুই বলা যায়, স্বাধীনতার মহান স্থপতি আজ আমাদের মাঝে নেই। একজন খাঁটি বাঙালি মুসলমান হিসেবে তাঁর স্বপ্নটুকু বাস্তবাায়নের মাধ্যমে জাতির চিরকল্যাণ সাধিত হোক এই প্রত্যাশা। সেই সাথে প্রত্যাশা করি,নতুন প্রজন্ম জাতির জনকের ইতিহাস পড়–ক বেশি বেশি করে, উজ্জীবিত হোক মুক্তিযুদ্ধ শোষণহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।
সাঈদুল আরেফীন : কবি ও শিশুসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, শিক্ষা ও উন্নয়ন গবেষক