বাঁশের কেল্লায় জ্বলে ধ্রুবতারা
হাফিজ রশিদ খান
তিতুমির ছিলেন মানববোমা
উপনিবেশিকতাকে করেননি ক্ষমা
তাঁর রক্ত
প্রগাঢ় স্বদেশভক্ত
বাঁশের কেল্লায় গেঁথেছিলেন মুক্তির ধ্রুবতারা
ছিলেন মাটির ফুলÑ গভীরে শেকড় গাড়া
তাঁর প্রাণ শারদাকাশের উজ্জ্বলতা
লক্ষ—লক্ষ চোখের শুভ্রতা
অনেকের বুঝতে যা দেরি হয়, তিনি তা দ্রুতই বুঝেছেন
প্রবলের সকল ভ্রƒকুটি পায়ে দলেছেন
তিতুমির
বৈরী বাতাসের বুকে ছুটে চলা তীব্র তির
যা আছে তা নিয়ে হার্মাদ ঔপনিবেশিকের পালে
সদলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অমানিশাকালে
তিনি তো সৈয়দ মির নিসার আলি, চাষাদের মিত্র
মাটি ও জলের শস্যে শরীর পবিত্র …
যে—আখ্যান লিখে রেখেছ
নিঃসঙ্গতার ভায়োলিন বাজে কাছে, দূরে
তোমাদের কোলাহলের ভেতরে
মুচড়ে—মুচড়ে বয়ে যায়
বেদনার রঙের প্রবাহ
দৃষ্টির আড়ালে
সকলে এককাতারে দাঁড়িয়ে ওটাকেই বলো
বঞ্চনার ইতিহাস
দুর্গত আত্মার কান্না
যে—আখ্যান লিখে রেখেছ
তার অনেক গভীর তলদেশে
ওই সকরুণ ভায়োলিন বেজে চলে
কাছে—দূরে
অস্তিত্বের রোমকূপ ছঁুয়ে—ছঁুয়ে
আমি তাই নিদ্রাহারা, কর্মবিমুখÑ স্থবির …
========================================
রাক্ষুসে পোকা আর মেঘ
নাসরীন জাহান
যেদিন আয়নাজুড়ে আমার চেহারা প্রস্ফুটিত হল,
শূন্যলোকের দেবতা নই,আমি এক সাধারণ মেঘ।
জেনে শরমিন্দা হলে,
এবং হাতে নিলে শরাবান তহুরা,
যেদিন অন্ধকার ছুড়ে দিয়ে ছুটে গেলে অগ্নুৎসবে।
তার আগে স্পর্শ করলে
চুম্বনে স্নাত করলে আমার দেহ,
শামিয়ানা টেনে দিলে
বিভাজনে রইল না সন্দেহ
যেন রাক্ষুসে পোকার মতো পাখা পুড়িয়ে তুমি
ছুটতেছিলে মরুভূমি ধরে
যেন তুমি মরুসন্যাসী
ছিঁড়তেছিলে ধুলোর কাগজ।
সেদিন থেকে লিখে যাচ্ছি প্রতিসন্ধ্যে একাকিত্বের কিতাব,
যতই অরণ্য থেকে ছুটে আসে সাপ, প্যঁাচায় শরীরে, আমি কেবল জলে পড়ি,
জলের মধ্যে পদ্ম হয়ে ভাসি,
যেদিন গাইতে থাকে আকাশ পরমগীত,
আমি শুনি তোমার কন্ঠ, আমি তখন ঘরদোরছাড়া,
উপচানো উলুখড় রোদ বিছিয়ে
রাখে প্রচণ্ড দুপুরে।
যেদিন মনে হতে থাকে কোন এক খেজুর বাগানে তোমার ছায়া উড়ছে,
আমিও গড়াতে থাকি, খসে
পড়া কুসুমের মতো,
দুলদুল ঘোড়া নেই,
আমার তো অবসরও নেই।
কেবলই খেজুর গাছের কন্টক,কেবলই শূন্যে ওঠানামা।
যেদিন হাতে নিলাম অন্ধের কিতাব।
বেরিয়ে এল চণ্ডালের বিষ নিয়ে শরীরের ভেতরের
শীব ঠাকুরের সাপ,
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ি,
তুমি তো বৃষ্টির নিবাস জানতে চাওনি, তাই দাহে পুড়ে
অগ্নিকে করেছ নিজের নিবাস।
আর আমি ঘরদোর ছাড়া আসমানে বাষ্প হয়ে
খুলে বসি আতরের আড়ত,
যেদিন যুধিষ্ঠির সত্যের আড়ালে মিথ্যা বলে ফেলে।
তখনই ফের জন্মি,
প্রতিদিন জন্মে মহাভারত।
========================================
তোমাকে একদণ্ড পাই
রজব বকশী
তোমাকে একদণ্ড পাই,
হঠাৎ উধাও।
গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমে যেমন
ফুরফুরে হাওয়ার ঝলক।
কিংবা কুয়াশা ছিঁড়ে যাওয়া শীত সকাল
ঝলমল রোদের অভ্যর্থনা।
একান্তে পাবার সিংহভাগ ইচ্ছে কল্পনায় ফোটে
ঝরেÑবাতাসে ও নিশ্বাসে সুরভি ছড়ায়।
কখনো ছুঁয়ে ঘেসে ফণাময়
উঁকি দেয় প্রস্ফুটিত চুমু,
আলিঙ্গনের আমন্ত্রণ।
দেখি অবাধ সবুজ বনÑবনান্তরে
ফোটে আছে
অপার সৌন্দর্যলীলা।
কাচঘেরা এক ম্যাজিক সমুদ্রে
হাবুডুবু খাই
রঙীন মাছের মত
ডুব সাঁতারে আনন্দিত ঢেউ।
এক অতিথি প্রেমিক;
যার বিস্ময়কর অনুভূতির
অফুরান মোহাবিষ্টে জেগে ওঠে,
আরব্য রজনীর ম্যাজিক গল্প।
========================================
মিষ্টি জ্যোৎস্নায় ভরপুর
সাজিদুল হক
আঙুলের স্পর্শে ঝড় এসে ভেঙে দেয় ধানক্ষেতের ধ্যান
হয়তো এইমাত্র যে ফেললো নি:শ্বাস
সেটাই ছিলো স্বস্তির
চিবুকের একটু কাছে রেখে নিরঙ্কুশ ভালোবাসার দাগ
সে ফিরে যাক রুপোলী রোদের মগ্ন বিকেলে
কিছুটা এলোমেলো বাতাসে শুধু দুলবে ধানগাছ
আবার আগের মতো সব ঠিকঠাক
বেখেয়ালি নদীর জলে ভাসবে সম্পূর্ণ একটি চাঁদ
তখন বিকেল গড়িয়ে রাত হলেও আবছা আঁধার
ভালো লাগে আমারও
বহুদিন যারা দেখেনি ঘুমহীন চোখে চাঁদ
দেখতে দাও তাদের দৃশ্যমান চিবুকের দাগ
মিষ্টি জ্যোৎস্নায় ভরপুর জলের কান্না
রুমালে ঢাকা মুখের আড়ালেই থাক।
========================================
এ কোন নিপুণ হাত
প্রদীপ খাস্তগীর
এ কোন নিপুণ হাত ঢেকে দেয় চোখ
হাতের ওপারে থাকে জ্যোৎস্না ও রোদ
এখনও যথারীতি ফুল ফোটে পাপড়ি মেলে
সদ্যজাত শিশু চোখ খুলে দ্যাখে না আলো
দ্যাখে শুধু অন্ধকারে ঢাকা মাতৃমুখ
কালে মেঘে ঢাকা বেলা—অবেলার সুখ—দুখ
এমন পতঙ্গ বারবার দেখি
দেখিনা তবু রোদ জ্যোৎস্নার হাসি
========================================
ভালোবাসার কথা বলতে যেওনা কখনো
মূলঃ উইলিয়াম ব্ল্যাইক
অনুবাদকঃ শফিউল আজম মাহফুজ
খুঁজো না কাউকে বলতে কথা ভালোবাসার
বলা কি যায় কখনো, কথা ভালোবাসার?
দেখোনা স্নিগ্ধ বাতাস যায় বয়ে,
নীরবে, কারো কানে কথা না কয়ে।
আমি বলেছিলুম, আমি বলেছিলুম তাকে
বলেছিলুম উজাড় করে পুরো হৃদয়টাকে
বলেছিলুম মৃত্যুসম ভয়ে, শীতে কম্পমান
আহা! তবু কী ঠেকানা গেলো তাহার প্রস্থান?
আমা হতে যেতে না যেতে
আগন্তুক এলো এক কোথা হতে?
নীরবে, দর্শনাতীতভাবে
নিয়ে গেলো তারে, কতো না সহজে!
লেখক পরিচিতিঃ উইলিয়াম ব্ল্যাইক (ডরষষরধস ইষধশব) ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে ১৭৫৭ সালের ২৮ নভেম্বর এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তাঁর জীবদ্দশায় তিনি তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক সমালোচকই উইলিয়াম ব্ল্যাইককে রোমান্টিক যুগের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচনা করেন। উইলিয়াম কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি, তিনি ছোটবেলায় তাঁর মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর লেখায় চিন্তাশক্তির গভীরতা দেখে অবাক হতে হয়। “ভালোবাসার কথা বলতে যেওনা কখনো” কবিতাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। মূল কবিতাটির নাম “ঘবাবৎ ংববশ ঃড় ঃবষষ ঃযু খড়াব.
========================================
জনগণনার পরে
অর্ঘ্য রায় চৌধুরী
অনন্তর সমুদ্রে ভেসে উঠল এক আবহমানের নৌকা
আর নীল তিমির দল হেঁটে এলো গেমট্র্যাক বেয়ে
যদিও নৌকা কোন অপ্রাণী নয়, আর তিমিদের বিবমিষা
উপস্থিত হয়নি এখনো, তাই কবিতার আসরে দুঃখ দুঃখ
কোলবালিশ পায়নি তারা।
আর ঠিক তখনই হ্যামেলিনের পিছু পিছু হেঁটে এল
চিররুগ্ন বৃক্ষের দল, ঘুনপোকার পদাবলিতে উল্লেখিত হল
দিনের শেষ মানেই সূর্যাস্ত নয়, যদিও ক্যাবারেতে কারো
কোনও আপত্তি নেই, আর নৌকা যেহেতু সন্তরনশীল, তাই
তিমিদের পাড়ায় এক্ষুণি শুরু হবে জনগণনার উৎসব।
পুরনো নাবিকের দল মদের বোতল হাতে বেরিয়ে এলো
বন্দরের গণিকালয় থেকে
আর তখন সমুদ্রে হাওয়াবাজী চলছে তুখোড়।
ক্রমশ শিড়দাঁড়া বেয়ে উঠে গেল লিফট। কারা যেন বলে
গেল পৃথিবীর তিনভাগ জল, তাই আজ বাস্তুচ্যুত তারা।
আর খাদের শেষ মাথায় ঠিক তখনই চাঁদ থেকে ঝাঁপ
দিলো উন্মত্ত বেহালাবাদক
ইন্দ্রেসভায় ঠিক তখনই নির্বস্ত্র ঊর্বশী ঘোষণা করল,
“রাজন, এক্ষণে পৃথিবী পুরুষশূন্য হইয়াছে।”
========================================
বয়েস যখন সাতাশ
আবু তাহের মুহাম্মদ
ঘনঘোর বৃষ্টি বদলে বদলে দিয়ে যায় সব
মখমলের ঝুলপর্দায় এসে হাওয়ার পংক্তিরা
কবির নি:শ্বাসে মেশে ঘ্রাণ ছড়ায় মৃত্তিকার
কথারা আসে আর যায় শুধু সেই কবেকার।
তুমি চলে গেলে প্রাচীন বিষাদের হৈরৈ
বর্ষার ফলায় নিমগ্ন আমিও তাকিয়ে রই।
কেঁপে কেঁপে ওঠে,মাটিতে লুটিয়ে পড়ে
তারে ছুঁয়ে দিতে গিয়ে আবেগে লুটোপুটি
আহা আঁচলে পুষলেনা বয়সের কিছু ত্রুটি।
অন্তর অভ্যন্তরে বৃষ্টি আদরে ডানা ঝাপটায়
হেঁটে হেঁটে আশ্রয়ে হেলে পড়েছো আমিটায়
আমাদেরও দিন ছিল,ছিল পূর্ণিমা আকাশ
স্বপ্নেরা উড়াল দিয়েছিল বয়েস যখন সাতাশ।
========================================
এই বিজয় তারুণ্যের
মুস্তফা হাবীব
একাত্তরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম,
মায়ের দামাল ছেলেরা ক্ষেপে ওঠে অনির্বাণ
আগ্রাসী পাকশত্রুকে পরাস্ত করে স্বাধীন করে
পাতাবাহার রঙের একটি দেশ, আমাদের বাংলাদেশ।
তারপর কিছুদিন যেতে না যেতে চারদিকে মেঘ জমে
সমূহ অর্জন ধুলায় গড়াগড়ি যায়
পাথরের কান্না দেখে কাঁদে স্বজন হারানো পিতৃপরিজন
রাহাজানি আর স্বজনপ্রীতির নির্লজ্জ উত্থানে বিমর্ষ জন্মভূমি।
দেখলাম,অরক্ষিত এই পরাধীন এই দেশে
স্বদেশি মীরজাফরের ধুলিঝর উল্লাস,
আয়নাঘরে গুম হওয়া কাঁচাপাতার তীব্র আর্তনাদ,
পাষাণ দেবীর প্রতিহিংসার ঝাঁঝালো ধ্বনিতে
থমকে দাঁড়ায় পৃথিবী, অপয়া মাদলের তালে তালে
চলে চেতনাখোর বেনে—বেনিয়াদের মহাহরিলুট।
অতঃপর ঝড় ওঠে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঝড়;
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ছাত্রজনতার মুক্তিপণ লড়াইয়ে
ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ বেহায়া স্বৈরিনীর শিরদাঁড়া—ডালপালা।
পাঁচ আগষ্ট দুই হাজার চব্বিশে
আবার হেসে ওঠে স্বপ্নের দেশ, লাল সূর্যের পতাকা,
এ বিজয় তারুণ্যের, এ বিজয় মুক্তিকামী বাংলার সব মানুষের।
========================================
স্বাধীনতা
রূপক বরন বড়–য়া
লাউয়ের ডগা ছুঁয়ে উড়ে গেলে প্রজাপতি
হলুদ ফুলের বুকে ছিটায় বর্ণালি রঙের বেসাতি
ফুল হাসে খুলে রাখে গোপন গোপন
ধরে রাখে রবি, রতি চনমনে উড়াল মন
সেই কবেকার কথা হাজারো রঙের ডানা
বাতাসে রেণুর গন্ধ উড়ে যেতে নেই মানা
এখন বাঁশের চাঙে কাঁটার পঙক্তি
বারো হাজার লেন্স পাহারায়, দেদার শক্তি!
উড়িয়ে দেয় স্বাভাবিক গতি, প্রকৃতি
আহা! চারিদিকে হননের শুঁড়, অসুর আকৃতি
ঝরে পড়ে ঝরে যায় কবিতা শরীর
রুদ্ধ সব পথে পড়িমরি ছোটে আবেগ অধীর
শুভ্রতা শামুক কেবল গুটায়! কোথায় শান্তির নীড়?
পাখিদেরও বাসা আছে, ছায়া নিয়ে সবুজ আবীর!
আছে সবুজের খোপে সতেজ পীরিত
নিচে রক্তচক্ষু নিয়ে নাচে অযাচিত উন্মাদ নৈঋত।
ভালোবাসা রেখে গেছে নরম পিন্ধন বেহুলা ভেলায়
ময়নার শরীর ভাসে খোয়াবের জলে সিন্ধুর মোহনায়
========================================
সময়ের কাছে
দিলীপ কিত্তর্ুনিয়া
সময়ের কাছে কোনওদিন
চতুরতা দাবি করি না আমি
সময়ের প্রতারক হাতের কৌশল
আমার বড় অপ্রিয় —— বড় ঘেন্নার
মুখ ঢাকা বসনের মত সময় আমার কাছে
কিছু গোপনে লুকিয়ে যাক
তা কখনো চাই না আমি —— ভাবি না আমি
প্রত্যাশা করি না এমন কিছু —— তা হোক
থোকা থোকা অন্ধকার
কিংবা নিরেট পাথর
সময় যেন স্বচ্ছ জলের মত
সব সময় পরিস্কার থাকে
ভাল সময়ের আয়নায় মুখ দেখতে
বড় ইচ্ছা জাগে —— সাধ জাগে।
এখন যে ঝড়ের মুহূর্ত উল্টো পাল্টা সময় দেখছি
তা মানুষের হাতে তৈরি
ইচ্ছে করলে আবার মানুষই ফিরিয়ে আনতে পারে সুসময়
নতুন ভাবনায় কবিতা লিখে
নতুন রঙে ছবি এঁকে।
========================================
জোছনা পাগল
নিলয় রফিক
জুলাই মাস ডাকছে,সুরভিত ঘ্রাণ
মনুষ্যত্ব মুখরিত রাজপথে গান
পুরানো শকুনিচোখে ধারালো নখর
লুঠের আনন্দে নৃত্য, অনাহারে তীর
ধৈর্যের জোয়ারে বাঁধ,পূর্ণিমার জল
ক্ষোভের তরঙ্গে ঝড়,জোছনা পাগল
শান্তির মোহনা খুঁজে মুগ্ধতা, সাঈদ
শিলালিপি রক্তফুল অমৃত প্রদীপ
সাহসে সম্মুখে বুক শহীদের সখা
রক্তের শপথে ডানা মুক্তির বিশাখা
আর কতো মৃত্যুপুরী শান্ত হবে তুমি
শাড়ি ধরে টান মারো গঙ্গায় সমাধি।
শান্তির মোহনা খুঁজে সাঈদ,মুগ্ধরা
========================================
মশলা বৌদি
সুজন আরিফ
মশলা বৌদি
সূর্যাস্তের ক্ষীণ—আলোয় এখনও কি চেয়ে থাক তুমি
ভয়ে কম্পমান দলছুট পাখিটির দিকে
এসব দুর্ভাবনা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দাও
আঁধার বিলানোর ধর্মে রাত চিরকালই সাম্যবাদী
পরাধীন চোখেও সরকারি আকাশ হয়ে ওঠে
আনন্দের রৌদ্রময় যাপন।
জোয়ান চাঁদ সমুদ্রকে সঙ্গে নিয়ে
নির্ভয়ে রুখে দেবে সাঙাতের গুপ্তসভা
কলঙ্কিত অধ্যায় সাঙ্গ হবে ঝিনুকের অসম সাহসীকতায়
নুপুরের শব্দে বালির গালিচায় ধরা দেবে সহযোগী অতীত
বোধের জাগরণে এ কোন মধুময় ঘ্রাণ
মগজের কোষে লুকিয়ে থাকা প্রিয় অভিমান
না—কি সত্যেন সেনের কলমে মৌ মৌ করা এলাচি বাতাস।
বহুদিন হলো,
ভালবাসা নিংড়ে ফিরে গেছে কবি আপন ভাবনার ডেরায়
দ্যখো জোয়ারেমগ্ন ঢেউ সদর্পে আঁচড়ে পড়ে
সৈকতের নিরপেক্ষ আঁচলে
মুছে গেছে প্রেমিকের সনাক্ত চোখে মৃত্যুর প্রামাণ্য দলিল
মশলা বৌদি,মুমূর্ষু রোদের পিঠে আঘাত করা জীর্ণ এই শহরের দেয়াল
এসো সমূলে উপড়ে ফেলি।
========================================
শোক
সাইয়্যিদ মঞ্জু
বৃক্ষ খুন হলে ঘরহীন পাখি
খাদকের গ্রাসে
ন্যাড়া পাহাড়ের সিনা
বিবশ নদীর মরণ বিলাপ
বিষজল বুকে
বোধিগাছের তলায় ঝাঁকে ঝাঁক
পলাতক মাছের সন্ধানী
কখনো আবার বিনাশির চোখ থেকে
দরদীয়া শোক ঝরে, খুব প্রয়োজনে!
========================================
দুঃখ বিলাপ
রুহু রুহেল
দুঃখ
শব্দটি এখন বড্ড কাছের
যেদিকে তাকাই দুঃখ জাগানিয়া সুর বাজে
আমরা অনেকে ঠুনকো বানিয়েছি দুঃখকে
দুঃখিত বলে বলে,
না না সরি সরি করে,
আরেক দুঃখ যোগ করি
বাংলিশের অপ্রয়োজন ব্যবহারে!
ভাবছি!
দুঃখের যদি একটি নিক্তি থাকতো?
মানব—জীবনে কার কতটুকু দুঃখ আছে তা পরিমাপ করতে পারতো!
খেটেখাওয়া মানুষের দুঃখ আছে,
নিঃসঙ্গ মানবীদের আছে অনিঃশেষিত অমানিশা দুঃখ!
মধ্যবিত্ত মানবসমাজের আছে সুখ—দুঃখের
অন্যরকম ঘোর লাগা এক মিশ্রণ!
বিত্তবানদের জীবনে আছে
আরো কিছু যোগ করতে না পারার বিলাপ দুঃখ!
পথকলি
শিশুর আছে বেঁচে থাকার আকুলতা দুঃখ!
দুঃখের রঙ কিন্তু একটাই
গাঢ় কাল,
হয়তো ধূসরতায় মেখে দেয়া যায়
তার আদল!
কতদুঃখ যে আছে; বিশাল এ সমাজ মানসে!
পড়ে আছে অযত্ন অবহেলার অন্ধকার কুঠুরিতে!
মা ও বাবা ,ভাই ও বোন
কারো দুঃখ কখনো এক হয় না!
বহু পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা না হওয়ার যে দুঃখ!
তা তো পুরো কুরে কুরে খায় অন্তর!
প্রেমাকুলতায় বিভোরের কথা কী করে বলি?
এ দুঃখের সাথে তামাম রাজ্যপাঠের
কী কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে?
সঙ্গিকে বোঝাতে না পারার দুঃখের ধরণটাইতো অন্যরকম!
দুরু দুরু বুককাঁপা এক কম্পনদুঃখ!
সবচেয়ে বড় দুঃখ আজ
অবজ্ঞা আর অবহেলার দুঃখ!
তার চেয়েও বড় দুঃখ আজ
ভুল মানুষের কাছে
শুদ্ধ মানুষের অসহায় সমর্পণ দুঃখ!
এত দুঃখে যাদের জীবন চলে
তাদের আবার দুঃখ কিসের!
এ দুঃখ!
বড্ড বেশি চেতনা আর বিবেকের
যা হৃদয়পোড়া
ক্ষত ও দহনজ্বালা এক করুণ দুঃখ!
মানচিত্রের ক্ষত
তাপস চক্রবর্তী
সম্মুখে রেখেছি গ্লোব, দেখি উলঙ্গ স্বদেশ
অনুভূতির সরল অংক কষি
কারো পিঠে আজ মানচিত্রের ক্ষত।
খনিজ পদার্থগুলো স্বাস্থ্যের মন্দির
নিবার্ক ঈশ্বর
যদিও দৃষ্টিহীন ভাঙা দরজার মতোই ধর্ম।
মূর্তির মৃত্তিকায় সাজানো তমাল ছবি
কেউ কেউ ভাগ করে
স্বদেশ বিবেক বোধ ও বুদ্ধি।
========================================
অমরত্বের সনদ
আ ন ম ইলিয়াছ
সঘন টুটা স্বপনের স্বপ্নে —
জনারণ্যে যে সাহসী মৃত্যু
সে কি অনন্ত তিমিরে হারিয়ে যাওয়া!
ফিরে আসে বার বার।
ফিরে আসে—
কুল ভাঙা কষ্টের মাঝে চর জাগা সুখে।
চাঁদের ক্ষরণে বিলাসী জ্যোৎস্নার দুঃখ কী!
সে তো পূর্ণ পূর্ণিমায় হবে পোয়াতি।
শোকার্ত চলে যাওয়ার মাঝে থাকে আনন্দ আয়োজন, থাকে
যৌনতার ক্ষরণে নব জন্মের আভাস।
গোধূলির রঙে সূর্যোদয়ের যে আভাস,তাতে থাকে
সোনালি রোদ্দুরে পা রাখার আকুতি।
জীবন যতি—তে তাদের যে অনন্তের শপথ
মহাকাল দেবে একদিন অমরত্বের সনদ।
========================================
একটি অফেন্সিভ ডিজিজ
হোসাইন আনোয়ার
মাইডিয়ার লেডিস এন্ড জেন্টলমেন্ট
কাক্সিক্ষত স্বপ্নের প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে
অনাকাঙিক্ষত ঘটনায় হাবুডুবু খেয়েও
যারা ভালো আছেন, কেবল তারাই হাত তুলুন।
আমি কানা বাউলের ব্যাটা, মোটেও ভালো নেই
ভয়ঙ্কর ‘আলঝেইমারস’ রোগে আক্রান্ত আমি
আমার শর্ট টার্ম মেমোরি এবং লংটার্ম মেমোরি
দুটোই অকেজো হতে চলেছে বয়সের ভারে।
পেছনের সবকিছু আমি ভুলতে চলেছি,
ভুলতে চলেছি জারি—সারি, বাউল—ভাটিয়ালী
দোয়েল—কোয়েল, পিউপাপিয়াদের গান
ছেলে বেলায় সেই ‘হাট্টিমা টিম্ টিম’,
সবুজ পাহাড় আর নদীর কলতান।
ভুলতে বসেছি নিজের ইতিহাস—ঐতিহ্য, ভাষা সংস্কৃতি
এমন কি জন্মদাতা পিতার নাম পর্যন্ত।
কিন্তু ‘আমার বাঁচার আকাক্সক্ষা প্রচণ্ড
মা’কে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি
যেমন ভালোবাসি বাবাকে।
========================================
কল্যাণ প্রেম
বিদ্যুৎ কুমার দাশ
এ জন্মে তোর হল না কিছুই
অন্য জন্ম ভেবে লাভ আছে?
সব পাবি তুই —মানুষের কাছে—
শুধু কল্যাণে চাষ কর ভুঁই।
কুসংস্কার ধুয়ে মুছে সব
ঈশ্বর বিরাজে মনের ভেতর—
মন্দির—মসজিদ—গির্জায় স্তর
দাম্পত্যেই প্রেম জীবন—ভর।
শরতের উম্মাদনা
মারজিয়া খানম সিদ্দিকা
মন উদাস করা ঐ নীল দিগন্তের সাথে
সাগরের কানাকানি,
তুমি কাছে নেই তাই তো এই অপারগতার আলাপনি।
শ্বেত শুভ্র মেঘের ডানায় ভর করে এই ছুটে চলা,
কোথায় যেতে চাই তা আজও হয়নি তো বলা।
কাহারও আবেশ ছড়িয়ে
স্নিগ্ধতায়,মধুর পরশে
জড়িয়েছিলে কোন বাঁধনে,
সেই অদেখা ফস্কা গেরো
আমি তো নই তার উপরও
ছড়িয়ে দিলাম কোন কাননে।
মধুমঞ্জুরীর ঝাড়টি যেন আজ সাজানো বাসর হয়ে,
আমাকে ডেকে নিল মধুর আলিঙ্গনে পেয়ে।
ঝাঁক বেঁধে বলাকারা
উড়ে যেতে যেতে বলে আমায়
হবে কি সঙ্গী মোদের!
দিগন্তের সীমা রেখা ধরে
কেউ কি ভেসে ওঠল পলকে
পত্র —পল্লবে মাখামাখি কুহুদের।
বরষার শেষে দুকূল উপচানো নদীর তীরে,
সাদা কাশ ফুলের ছড়ানো দ্যুতি দুটি নয়ন ঘিরে।
অনুপম ভালোবাসায় স্নিগ্ধ সুষমায় চাঁদের কিরণ,
ভূপৃষ্ঠে লুটিয়ে পড়ে অনুরণন,
হবে কি ফের মাতামাতি
মধুর আবেশে কপোত—কপোতী,
মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অনিমেষ
অতএব প্রিয়ে খুঁজে পেল প্রেমের পরশ।
========================================
শরতে আকাশ
সুলতানা নুরজাহান রোজী
শরতে নীল আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা
মুখরিত হয় ফুল পাখি,
বাতাসে দুলে ওঠে পাতার শরীর,
মাতম ছড়ায় ঝিরঝির করে ফুরফুরে মেজাজে।
শরত এলো বলে ভোরের আলোয়
হিল্লোল জাগায় মনে প্রাণে কাশের বনে
বেলি আর কাঠগোলাপ সুবাসে সুর তুলে
ভালোবাসার এক বিলাপে।
অবন্তী আকাশ ছুঁয়েছে দক্ষিণের জানালার পাশে
ঘুম ঘুম চোখে কুহেলিকা কপাট খুলেছে বিনা কারণে
তন্ময় হয়ে জেগে থাকে সব ইচ্ছে গুলো
মনের মেঝেতে ভাবনার চৌকাঠে!
========================================
নাহার ডেরা
মিজান মনির
লিখি যদি পেরতির মুখ নিয়ে কথা
দোষ হবে সঙ্গ দোষ নাহার ডেরায়
পরিযায়ী পাখি গিলে শুটকীর ভর্তা!
পারাপার অর্থ ঢেলে সুখ অজানায়।
ফুটুক জ¦লুক লাল, যত্রতত্র ঘাম
জ¦লজ¦লে কাম নয়, শূণ্য ঘর—মন!
নাড়ির মমতা ভুলে, পর দেশে খাম
ভালোবাসা ভালোবাসা মৈনাক গর্জন।
জ্ঞানের পথেই হাঁটে! ভুল চিহ্ন আঁকে
মানুষ নাকি ফানুস, সন্দেহ মগজে!
দু’পায়ী মানব সেজে, ছদ্মবেশে থাকে
মন কলুষিত বাজে, লিখে কি কাগজে!
মরা গাছে ফুল ফোটে, মমতার টান
সুখ আছে শোক নেই! ঐক্য প্রতিদান।
========================================
প্রহর গোনা নক্ষত্র
সু শা ন্ত হা ল দা র
আমিও হয়ত থাকবো না
তখন যদি লাল পতাকায় হু হু হাওয়া বদলে যায়
ঘন কুয়াশায় রৌদ্রের ঝিলিক যদি ক্ষিপ্ত উগ্র হয়
সমতট যদি সুনামি ভ্রম্নক্ষেপে তেজোদ্দীপ্ত বিপ্লবী হয়
তবে বুঝে নিও সভাসদ বন্ধুগণ….
তোমাদের অনুপস্থিতিতেই হয়ত একদিন
অসামঞ্জস্যতা খুঁজে নেবে জহুরুল আর বদুরুদ্দিন,
তবুও দিন শেষে বলতেই হয়
নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড় যেন প্রহর গোনা নক্ষত্র—ই হয়!
========================================
আমার নিস্তব্ধ নীরবতা
আয়েশা সিদ্দিকা হ্যাপি
আমার নিস্তব্ধ নীরবতায় লুকিয়ে আছে
শৈশবের অফুরন্ত স্মৃতি কথা
নানা—নানুর প্রিয় হয়ে উঠার অজানা কথা।
আমার নিস্তব্ধ নীরবতায় লুকানো আছে
পাওয়া না পাওয়ার বেদনা
স্বজনদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে
পাথরে মূর্তি হওয়ার ইতিকথা।
আমার নিস্তব্ধ নীরবতায় লুকিয়ে আছে
তোমাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা
লুকানো আছে অসংখ্য বার অবহেলিত হওয়া
তোমার প্রতিটা দিনের কষ্ট কথা
তোমাকে হারিয়ে ফেলার অসম্ভব রকমের ভয় পাওয়া।
আমার নিস্তব্ধ নীরবতায় লুকিয়ে আছে,
আমার ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা।
ভালো খারাপ সবকিছুকে মানিয়ে নিয়ে
অচেনা এক স্বপ্ন পূরণের গগনে আমার পথ চলা।
========================================
ভাবিনি কখনও
আরিফ মোর্শেদ
ভাবিনি অন্য কারো হাত ধরবে
তবুও দৃশ্যটা দেখতে হল
আমিও প্রেমিক ছিলাম বটে
কাঁদতে হইছে অশ্রম্নসিক্ত নয়নে!
তুমুল প্রেমের গাঢ় স্মৃতি
আজও গাঁথা আছে বুকে,
তুমি আজ মহাসুখী, আমার
ঘুম নেই দুটি অঁাখিপাতে!
নেতার প্রতিশ্রুতি শুনে যেমন
জনগণ দেয় ভোট,
আমারও অনুমতি ছিল
ছেঁায়ার নরোম রাঙা ঠেঁাট!
জয়ী হবার পর নেতা যেমন
ভুলে যায় প্রতিশ্রম্নতির কথা,
ভালোবেসে তার কি ঠেকা—
আমার একটি কথা রাখা!
সহজ ছিল না তাকে ছাড়া
বেঁচে থাকা, তবুও বাঁচতে হয়
আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল
যা অঙ্কুরেই বিনষ্ট!
সহজ ছিল না এক জীবনের
হিসাব, কতটুকুই বা পেলাম
তিন শব্দের জীবন দিয়ে
দুই শব্দের মৃত্যু নিলাম!
===================
ধ্বংসাত্বক পৃথিবী
টিপলু বড়ুয়া
মনের কোণে জমে থাকা বেদনা
বৃষ্টি হয়ে ঝরছে,
দুঃখমাখা পাহাড়ি ঝর্ণাও আজ
নদী হয়ে চলছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণিপাকে
বিধ্বস্ত হলো মনবাড়ি,
কষ্ট—বন্যায় প্লাবিত হল
সমস্ত দেহাঞ্চল।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুপাতের মতো
বিষ্ফোরিত হলো সারা দেহ,
কষ্টগুলো ছড়িয়ে পড়ছে
লাভার মতো—
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়ে
চূর্ণ—বিচূর্ণ হলো প্রতিটি অঙ্গ,
পাহাড়—ভূমিতে ফাটল ধরেছে
সবকিছু আজ লন্ডভন্ড।
মানুষরূপী পৃথিবী আমি
অক্ষপথ হারিয়ে মহাকাশে ঘুরি
সৌরজগতে ঠাঁই নাই আজ
ধ্বংস হবো তাড়াতাড়ি।