অনিক শুভ :
প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত অহেতুক সন্দেহপ্রবণ হয়। সহজে কাউকে বিশ্বাস করেনা। প্রায় সবার প্রতি তারা পরশ্রীকাতর, অনুভূতিপ্রবণ ও প্রায়ই বিরক্ত-অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে থাকে। এরা নিজেকে সব সময় অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়। তারা এতবেশি সংবেদনশীল যে, কাউকে কোন রকম সন্দেহ করলে বা তার বিরুদ্ধে যৌক্তিক সমালোচনা করলেও সে সাথে সাথে রাগান্বিত হয়ে কোন কিছু চিন্তা না করেই যে কোন আক্রমণ করে থাকে। অথচ পরবর্তীতে দেখা যায় প্রকৃত পক্ষে তাকে নিয়ে কোন সমালোচনা বা কোন কিছুই হয়নি। এরা কোন অবস্থাতেই নিজের দোষ স্বীকার করেনা। তবে সবসময় অন্যের দোষ বা অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করে। ফলে তারা যেকোন ছোট ছোট ব্যাপারকে খুব বড় করে ভয়ংকর রুপ দেয়। অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই এরা নিজের সন্তান, বাবা-মা এমন কি সদ্য নবজাতকদের নিয়েও সন্দেহ করে ও কুৎসা রটায়। এদের সাথে কারো ভাল সম্পর্ক থাকলেও তাদেরকে নিয়ে সে সবসময় সতর্ক থাকে ও অহেতুক বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতিতে থাকে। এরা সহজে কারো সাথে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনা। যারা তাদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ তাদের তারা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। অন্যদিকে দেখা যায় এরা বেশি বাস্তবযুক্তিবাদী ও উদ্দেশ্যমূলক চিন্তাধারার অধিকারী বলে নিজেদের দাবি করে।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের ভ্রান্তবিশ্বাস ও হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। তারা হঠাৎ মনে করে কেউ বা সে যাকে অহেতুক সন্দেহ করছে সে তার ক্ষতি করবে এবং সেটি তার ষষ্ট ইন্দ্রিয়ের দ্বারা আগে থেকে টের পেয়ে গেছে। অনেক সময় তারা মনে করে কেউ একজন তার সাথে আছে বা কথা বলছে।
যাদের অপেক্ষাকৃত কম পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার, তারা অনেক সময় ঈর্ষাজনিত ভ্রান্তবিশ্বাসে ভুগে থাকে বেশি। এরা কোন কারণ ছাড়াই অহেতুক যুক্তিহীন বিভিন্ন রকমের কুতর্ক সৃষ্টি করে, যার কোনটাই কোন সমঝোতা বা মীমাংসায় আসেনা। ফলে সমাজের অনেকলোক তাদের থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এতকিছুর পরেও তারা কোননা কোন ভাবে তাদের কাজকর্ম, সমাজ বা পরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে চালিয়ে যেতে পারে। তবে মাঝে মাঝে তাদের আচরণে কিছু সমস্যাও দেখা যায়।
পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার’ একটি মনের রোগ। এই রোগে যারা ভোগেন তাদের চিন্তার ধরণ একটু অস্বাভাবিক হয়। এরা অসুস্থ প্রকৃতির, এদের ব্যবহার এবং অনুভূতিও অসুস্থ থাকে। তাই চিকিৎসাও প্রয়োজন। তবে প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছে এমন রোগীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক রোগীই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেন। কারণ এই রোগে আক্রান্তদের আরেকটি ধর্ম হচ্ছে এই রিলেটেড কোন মনোচিকিৎসকের পরামর্শ বা কোন চিকিৎসা না নেওয়া। সাইকোসিস হচ্ছে এমন একটি বড় মানসিক রোগ যার বাস্তবতার সাথে কোন সম্পর্ক থাকেনা। প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার হচ্ছে এই সাইকোসিস জাতীয় মনোরোগ।
অনিক শুভ, ফার্মাসিস্ট, শিশুসাহিত্যিক ও বিজ্ঞানলেখক।