এখন সময়:রাত ১১:০৭- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ১১:০৭- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

মিথ্যে বলার গোপন সত্যগুলো

হামিদ রায়হান: 

ক্ষমতার বাইরে কেউ নেই? যাপনের প্রতিটি সম্পর্ক  ক্ষমতার এক একটা একক। এর প্রভাব ও বলয় থেকে মুক্ত ও বেরুনোর কোন উপায় নেই। তবে এর চর্চা ও প্রতিপত্তি সব মানুষের কাছে সমভাবে থাকে না এই কারণে সাম্যভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ফয়েডের ইডি স্তরে ডুব দেখার মতো। কেউ কেউ বলবেন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আমেরিকার রাজনীতির মতো। কিংবা মনে করুন,  আপনি মধ্যখানে আর আপনার দু’পাশ থেকে পা ও মাথা ধরে ক্ষমতাধর কেউ টানাটানি করছে। এই যেমন আফ্রিকার কথা সামান্য ভাবুন। চর্মহীন শরীর ফুঁড়ে দৃশমান হাড়যুক্ত মানুষ হাসছে।  কি অসামান্য দৃশ্য! তাই না। আপনার আশেপাশে, কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে এমনকি   যাপনের সম্পর্কের প্রতিটা পর্যায়ে সেই অভিজ্ঞতাগুলো দেখা ও স্বাদ পাওয়া যায়। এইসব মানুষের কণ্ঠস্বরগুলো রাস্তার উপর বসে কাঁদছে, রক্ত বমি করছে, দেহ ভেঙে লাল ¯্রােত পথ থেকে পথে নেমে পড়ছে।

উপযোগিতা সবখানে তৈরি হচ্ছে। আমাদের অবচেতনা শাসিত ও পীড়িত। আমাদের নিশ্বাসও উপযোগিতার মূল্যাক্রান্ত, যে কূটাভাসপূর্ণ ও প্রতিবাস্তবতা পৃথিবীতে আমি ও আমাদের উত্তরপ্রজন্ম বাস করি। যাপনের প্রতিটি উপাদান, যেমন- শিক্ষা, সেবা, মিডিয়া, মাতৃত্ব-পরিচর্চা ও শুশ্রুষাকেন্দ্র, সামাজিক ও অসামাজিক সম্পর্কগুলো ক্ষমতার এককটি একক। বলা হচ্ছে, যাপনের সবকিছু এখন সুলভ ও হাতের লাগালের মধ্যে চলে এসেছে। এমনকি পৃথিবীটাও। আসলে, এটা কতটা সত্য? ছদ্মাশ্রিত সত্যের মতো। সর্বত্র প্রতিবাস্তব পৃথিবী। প্রশ্ন, বাস্তবতা কি নেই? আছে। ধারণার মতো। মুছেও ফেলা যায়। ছবি আঁকার পরে যেভাবে আঁকগুলো মুছে ফেলা যায়।

 

 

 

এরপরও, চিহ্ণ রয়ে যায়। যা দেখা হয় নি, দেখা যায় না, এর মতো। তবে তাও দৃশ্যমান; সবাই তা দেখার সামর্থ্য রাখে না। তাই এত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় সবখানে, মানুষে-মানুষে। গোত্রে-গোত্রে। যাপনের প্রতিটি সম্পর্ক ক্ষমতার একক হিসেবে বিবেচ্য। এর পরিধিতে রযেছে মানুষ, বস্তুবাদী জগত। প্রতিটি তত্ত্বই ক্ষমতার কেন্দ্রাভিমুখী, উপনিবেশিকের অস্ত্র,  যা অপরকে উপনিবেশিত কণ্ঠকে দলিত রাখার মাধ্যম।

এর বিপরীতে, ইতিহাস কি বলে? ইতিহাস কদাচিৎ সত্য প্রকাশ করে। মাঝে মধ্যে ইতিহাস ক্ষমতার বাইরে এর সার্চালো ফেলে। সব ছাপিয়ে আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রে প্রজ্জ্বলিত হয় অপ্রকাশিত এমন সব সত্য, ফলে আমরা শিউরে উঠি, উদ্ভাসিত হই। পরক্ষণে, হেজিমনিবাদী প্রভাব ও প্রতিপত্তি এর স্থান দখল করে নেয়। এবং এর রূপ ও ধরণ পরিবর্তিত হয় পরিবেশ, পরিস্থিতি ও ক্ষমতার কেন্দ্র পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, যা শ্রেণি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নয়, বরং কার্যকারণ, প্রয়োজন ও চাহিদার কারণে এটা হয়ে থাকে। যা পরে উপনিবেশিকের ইচ্ছাতলে এর বিস্তার ও বিস্তৃতি ঘটে। এ প্রসঙ্গে, বৃত্তি, প্রণোদনা, সম্মাননা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাই হেজিমনিবাদী চেতনা-কাঠামো রাষ্ট্র ও সমাজে সত্যান্বেষণ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা প্রশ্নবোধক। তবু সত্য খোঁজা জরুরি যদিও তা গুপ্তধন খোঁজের মতো, অধিবিদ্যার চেয়েও দুর্জ্ঞেয়। তাই ইতিহাস কখনও সত্য বলে না, কদাচিৎ সত্যোন্মোচন করে, তাও আংশিক ও খ-িতভাবে, যা ভয়ানকই নয়, উপনিবেশিকের চেয়েও হিং¯্র ও অমানবিকও। বিপরীতে, একটি চেতনাকাঠামোয় আমরা দাঁড়িয়ে জ্ঞানভাষ্যের অনিবার্যাংশ হিসেবে নি¤œবর্গীয়দের  পাঠ থেকে আমরা কতটা এড়িয়ে বা দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি? আদ্যে কি এটা সম্ভব হচ্ছে? বরং সর্বত্রগামী হয়ে উঠছে পুঁজিবাদী ও হেজিমনিবাদী রাষ্ট্র এবং এর চেতনাবাহী যাপনের প্রতিটি সম্পর্কে। পুঁজি ও বস্তুবাদীর উলটো মেরুতেও এর প্রতিপত্তি ও প্রভাব হাঁটু গেড়ে বসেছে, যা স্পষ্ট; তবে শঙ্কা ও আতঙ্কজনকও। মার্কসের সাম্যবাদী সমাজ ইউটোপিয়া, যা কেবল তত্ত্বিয় ও বস্তুগত জ্ঞানভাষ্যালোচনায় মানানসই কিন্তু কল্যাণগামী সম্প্রসারণ নেই। অনেকটা গণতন্ত্রের মিথ্যে প্রতিশ্রুতির মতো। এ কারণে, যে তত্ত্বগত টেক্সটের জগত আমাদের চারদিকে গড়ে ওঠে, এর  খোঁজ ও তল্লাশি অতি গুরুত্বপূর্ণ।

এখন যে সমাজে আমরা বাস করছি, তা প্রকৃতপক্ষে তত্ত্বের কাঠামোয় মোড়া। তাই  আমরা দেখি, উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে উত্তরৌপনিবেশিক তত্ত্ব সর্বদাই অধ্যয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাক্ষেত্রগুলোতে একটি অপরিহার্য পাঠ হিসেবে বর্তমানে ভাবা হচ্ছে। নি¤œবর্গীয়দের ধারণাটি উত্তরৌপনিবেশিক পরিস্থিতি উদ্ভূত, যা সাহিত্যের তাৎপর্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর্থ-সামাজিক কর্মপরিধিতে নি¤œবর্গীয় শব্দটির যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তিত হয় হেতু গণতান্ত্রিক উত্তরৌপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোর প্রেক্ষাপটে নতুন নি¤œবর্গীয় চরিত্রগুলো দ্বারা সংজ্ঞায়িত ও নির্ধারিত হয়। নি¤œবর্গীয় অধ্যয়ন ক্রমাগত বিকশিত হওয়ার কারণে উত্তরৌপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোতে নি¤œবর্গীয় অধ্যয়নের বিবর্তন ও বিকাশের প্রক্রিয়াগুলোকে চিহ্নিতের চেষ্টা করে। উত্তরৌপনিবেশিক সাহিত্য অধ্যয়নে মৌলিকতার সন্ধান করায় নি¤œবর্গীয় অধ্যয়নে একটি নতুন মাত্রা সংযোগ ঘটায়। সমস্ত ধরণের নি¤œবর্গীয় চেতনা ও উপনিবেশিক প্রতিনিধি শ্রেণির নিপীড়ন থেকে নি¤œবর্গীয়দের মুক্ত করে না কারণ শাসক শ্রেণির জন্য নি¤œবর্গীয় সবসময় একটি অনিবার্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়, যেখানে একমাত্র স্বাধীনতা হচ্ছে একটি নতুন নৈতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে একটি নিপীড়ক রাষ্ট্র থেকে মুক্ত হওয়া। গ্রামসি নি¤œবর্গীয় স্বায়ত্তশাসনের ধারণাটি প্রস্তাব করেন। প্রত্যেকের নিজের পক্ষে কথা বলার সমান সুযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি। নি¤œবর্গীয় প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি উত্থাপিত হয় এবং যুক্তি দেখায় উত্তরৌপনিবেশিক রাজনীতির অনিবার্যতা, যা নি¤œবর্গীয় প্রতিনিধিত্বের রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়। এটা অবিচ্ছেদ্যভাবে যোগাযোগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নি¤œবর্গীয়তার পরিস্থিতি তদন্তে একজনকে প্রথমে প্রতিনিধিত্বের রাজনীতিকে উন্মুক্ত করতে হয় কারণ এটা রাজনীতিতে উপস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। নি¤œবর্গীয় রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে উত্তরৌপনিবেশিক অধ্যয়নকে ছাড়িয়ে উপস্থাপনা সম্পৃক্ত ভিন্ন প্রসঙ্গগুলো অধ্যয়নে একটি শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়, যা নি¤œবর্গীয় শব্দকে একটি বিশ্লেষণাত্মক বিষয়ে রূপান্তরিত করে। তবে নি¤œবর্গীয়তা সাধারণীকরণ করা যায় না। তাই এটা এত মারাত্মক হিসেবে দেখা হয়। তবে এটা একটি শ্রেণি সম্পর্কিত ও পুনরাবৃত্তিযোগ্য। নি¤œবর্গীয় প্রচেষ্টা শব্দটির একটি স্পিভাকিয় ‘পুনরাবৃত্তি’, যা এর পক্ষে দাঁড়ায় যারা হেজিমনিবাদী পরিস্থিতির শিকার হয় এবং বিবেচনাধীন ক্ষেত্র বা নির্দিষ্ট সামাজিক আন্দোলনানুসারে সংজ্ঞায়িত করা হয়। পরিচয় হাতছাড়া বা হারানোর বদলে নি¤œবর্গীয় একে পুনরায় উত্থাপন ও শক্তিশালী করে। অর্থাৎ, নিঃশব্দতা নি¤œবর্গীয়তা সংজ্ঞায়িত যুক্তি হিসাবে কাজ করে না, বরং এটা পরিচয়ের অন্যান্য দিকগুলোকে স্পষ্ট করে। প্রতিনিধিত্বের রাজনীতি প্রকাশ পায় যখন এটা উল্লেখিত হয় যে নি¤œবর্গীয়দের প্রতিনিধিত্ব বা পুনঃপ্রস্তুত করা হয় কীভাবে প্রতিবাদ আন্দোলনগুলো প্রচলিত মাধ্যমগুলো যেমন মিডিয়া অবকাঠামোকে যতটা কাজে লাগায় এর ফলশ্রুতি এটা নি¤œবর্গীয়দেরকে সম্পন্নতায় মিডিয়া দ্বারা ব্যবহৃত বর্ণনামূলক কৌশলগুলোর ফলাফল।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিশেষভাবে দক্ষিণ এশীয় ইতিহাস অধ্যয়নে ১৯৮০-এর দশকে যুক্ত হওয়ার পর থেকে ‘নি¤œবর্গীয়’-এর ধারণাটি বহুল প্রচলিত হয়। উত্তরৌপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলো বিশেষত আধুনিক চীন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিষয়ের উদ্ভবের মার্কসবাদী ও জাতীয়তাবাদী উভয় ইতিহাসকে অস্থির করে দেওয়া অধস্তন পার্থক্যের চিত্র হিসাবে শব্দটিকে এর মূল ধারণার সঙ্গে বেঁধে রাখা এখন অসম্ভবই নয়, কঠিনও বটে। এর প্রাথমিক পর্যায়ে, এটা প্রাথমিক উপায়ে ধারণা করা হয়: অভিজ্ঞতাগতভাবে শ্রমজীবী কৃষক হিসাবে, কাঠামোগতভাবে ঔপনিবেশিক বিরোধী বিদ্রোহের একটি নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য হিসাবে এবং পরিসীমার ভেতরে ও বাইরে উভয় লিঙ্গযুক্ত তৃতীয় বিশ্বের সামাজিক চলমান বিষয়ের বিপক্ষ ব্যাখ্যা হিসাবে দেখা হয়। লাতিন আমেরিকান অধ্যয়ন, আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যয়ন, আদিবাসী অধ্যয়ন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, নারীবাদী ও উত্তরৌপনিবেশিক অধ্যয়নের কারণে বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসায় ১৯৯০-এর দশকে নি¤œবর্গীয়দের জীবনের বর্ণনামূলক গতিপথ বিস্তৃত হয়। নি¤œবর্গীয়দের কণ্ঠস্বরের অভূতপূর্ব বৈশ্বিক উচ্চারণ দ্বারা প্রমাণিত যে বস্তুর নৈতিক প্রতিনিধিত্বের অসম্ভবতাকে গ্রহণ করে এমন একটি ধারণায় উপনীত হয় যেখানে এর উপস্থিতি দেখা যায়, এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এটা একটি অন্তর্নিহিত প্রশ্ন যা উত্তরৌপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোর সাহিত্যে নি¤œবর্গীয় চরিত্রগুলোর সাহিত্যিক সমালোচনামূলক উপস্থাপনাগুলোর উপর প্রতিফলিত হয়। নি¤œবর্গীয় লক্ষ্য হচ্ছে উত্তরৌপনিবেশিক ও ডায়াস্পোরিক সমাজে বিভিন্ন সংখ্যালঘু বিষয়ের অবস্থান অন্তর্ভুক্ত করতে ‘নি¤œবর্গীয়’ শব্দটিকে বিস্তৃত করার সম্ভাবনা ও ঝুঁকিগুলোকে উন্মোচনে তরুণ বুদ্ধিজীবীদের প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। এক স্তরে, সামাজিক বা ঐতিহাসিক নথিপত্রের পরিবর্তে সাহিত্যের পাঠ্যগুলোতে মনোনিবেশ করা সুবিধাজনক। অন্যার্থে, সামাজিক বা ঐতিহাসিক নথিকরণের পরিবর্তে সাহিত্য পাঠের উপর গুরুত্ব দেওয়া সুবিধাজনক। বুদ্ধিবৃত্তিক পরিধি জুড়ে, ‘নি¤œবর্গীয় এর নীরবতায় একটি অভিজ্ঞতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করা কঠিন ছিল। তাই বলে কি শ্রমিক, কৃষক বা  দলিতরা কথা বলে না?

প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা হিসাবে ‘কথা বলা’ সম্পর্কে সমস্ত যুক্তি কেবল শোনা যায় এমন একটি প্রত্যক্ষ কণ্ঠস্বর নয়, বধিরতা কানে পড়েছে। অপুনরুদ্ধারযোগ্য কণ্ঠস্বর ও নীরবতার ব্যাখ্যার ধারণাটি পাঠ্যের জগতে আরও ক্রিয়াশীল বলে মনে হয়, বিশেষত সেই সমস্ত প-িতদের জন্য যারা ঘনিষ্ঠ পাঠ্যাধ্যয়নে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত। কারণ এটা পরবর্তী আদর্শিক স্বচ্ছতার সীমার সঙ্গে অনেক বেশি মানানসই, বিশ্লেষণের জন্য যা বক্তৃতা এবং এর গ্রহণের মধ্যে, জ্ঞানের বিষয় এবং এর বস্তুর মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাবের জন্য সংবেদনশীল। উত্তরৌপনিবেশিক বৃত্তির বিষয়টি, সম্ভবত, এ কারণে পরিত্যক্ত হয়। এটা প্রাথমিকভাবে একটি হস্তক্ষেপবাদী কৌশল ও সমালোচনামূলক অনুশীলন হিসাবে কাজ করবে। ভূ-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির সমালোচনাকারী প্রাসঙ্গিক ও ঐতিহাসিক চেতনাকে জড়িত ও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এ সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিগুলো বিশ্বের অসম শক্তি সম্পর্কে অবহিতকরণ ও স্থায়ীকরণ লক্ষণীয়।

উত্তরৌপনিবেশিক তাত্ত্বিকানুশীলনের একটি সম্প্রসারণ হিসাবে নি¤œবর্গীয় অধ্যয়নের উদ্দেশ্য এ হস্তক্ষেপবাদী উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। প্রান্তিক ইতিহাস, পরিচয় ও জ্ঞানের পদ্ধতিগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদ ও পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উদীয়মান, নি¤œবর্গীয় অধ্যয়নগুলো একটি বিভক্ত, ঐতিহ্যবাহী ও হেজিমনিবাদী ব্যবস্থার সীমানাগুলোকে পুনঃপ্রসঙ্গায়িত, সংযোগায়িত ও প্রতিরোধ করে। এটা একটি ক্রমাগত সমালোচনা ও ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী এবং ক্ষমতা ও মতাদর্শের হেজিমনিবাদী কাঠামোর পুনরাবিষ্কার বজায় রাখে, পরিচয়ের বর্তমান জ্ঞানভাষ্যগুলোতে। এর প্রতিরোধী ও মুক্তির সম্ভাবনা নি¤œবর্গীয় অধ্যয়নকে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার হিসেবে উপস্থাপন করে এবং এটা  বর্তমানের উপর প্রভাব ফেলে একটি সেতু নির্মাণ করে। এটা একটি উত্তরৌপনিবেশিকানুশীলন হিসাবে নি¤œবর্গীয় অধ্যয়নের সমসাময়িকতা দেখে যা একে এর উৎস থেকে পুনরুদ্ধার করে – প্রাথমিকভাবে ঔপনিবেশিক বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও ভারতীয় ইতিহাস রচনায় শ্রেণি ও রাষ্ট্রের সহজ ধারণাগুলোর উপর একটি জ্ঞানভাষ্য হিসাবে বিকশিত হয়, যেখানে এটা রূপান্তরিত হয় সাময়িক, কৌশলগত ও বর্তমান জ্ঞানের উপায় হিসেবে। তাই কীভাবে উত্তরৌপনিবেশিকতার প্রাথমিক উদ্দেশ্যকে জড়িত ও প্রসারিত বা পুনরুদ্ধার করে? এর প্রাসঙ্গিকতাকে অপরিহার্যতায় নি¤œবর্গীয় জ্ঞানভাষ্যের ইতিহাসের প্রথম দিকের সময়গুলো পুনরালোচনা করা অতি জরুরি বলে ভাবা হয়। প্রকৃতপক্ষে, অভিজাতদের ভূমিকার উদ্দেশ্যমূলক মূল্যায়নের পরিমাপ এবং সেই ভূমিকার অভিজাতবাদী ব্যাখ্যার সমালোচনা হিসাবে উভয় নি¤œবর্গীয় কাজগুলোর উপর আমাদের জোর দেওয়া নিশ্চিত করা আমাদের প্রচেষ্টার একটি অংশ হবে। প্রকল্পটি বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, এর আত্মসচেতন এবং ‘নি¤œস্তর থেকে ইতিহাস’-এর সংশোধনবাদী পাঠকে মার্কসবাদ-পরবর্তী অবস্থানের সমালোচনায় পরিবর্তিত হয়। ১৯৮৯ সালে একটি আনুষ্ঠানিক তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে। নি¤œবর্গীয় তত্ত্বের প্রকল্পটি এখন বিলম্বিত পুঁজিবাদের সাংস্কৃতিক যুক্তিতে মার্কসবাদকে পুনরুদ্ধার করার প্রয়াসে একটি তাত্ত্বিক কার্যবিধি হিসাবে পুনরাবিস্কার করা হয়।

আশির দশকের গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে এর উৎপত্তি থেকে, নি¤œবর্গীয় অধ্যয়ন স্কুলটি পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ও মার্কিন শিক্ষাক্ষেত্রগুলোতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের সঙ্গে, প্রকল্পটি শক্তি ও প্রতিরোধের উপর প্রাথমিক মার্কসবাদী আর্থ-সামাজিক গুরুত্বের চেয়ে পাঠ্য ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি সাংস্কৃতিক জ্ঞানভাষ্যে পরিণত হয়। সমসাময়িক রাজনীতি, শ্রম, সংস্কৃতি ও পুঁজির আন্তঃদেশীয় আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কীভাবে নি¤œবর্গীয় অধ্যয়নের পরিধির পুনর্নির্ধারণ ও প্রসারণ বর্তমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতের সঙ্গে জড়িত তা পর্যালোচনার পরিসরগুলো বিস্তৃত করে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বাইরে গিয়ে, এটা নির্দেশ করে যে পরিস্থিতিগুলো কীভাবে মোকাবেলা করে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের সাম্রাজ্যবাদের উদ্বেগ ও নতুন আন্তর্জাতিক সামাজিক আন্দোলনের ভবিষ্যত। লিঙ্গ, শ্রেণি, বর্ণ, যৌনতা, ধর্ম বা জাতি নিঃসন্দেহে পরিপ্রেক্ষিতের অবস্থানকে পুনর্নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উত্তরৌপনিবেশিক বক্তৃতায় এর হস্তক্ষেপকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং এ সমস্ত প্রয়োজনীয়তাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে ক্ষমতা, বিষয়ের অবস্থান ও হেজিমনি উন্মোচনের প্রাথমিক কার্যবিধিকে জোর দিতে একটি জ্ঞানভাষ্য হিসাবে হস্তক্ষেপ করে।

বোধগম্যভাবে, আমরা হেজিমনিবাদী অনুশীলনে একটি আখ্যান ও বিপ্লবী বিকল্প সমালোচনা প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী নই এবং আমাদের পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে নতুন নি¤œবর্গীয়, বলা হয়, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিসরগুলোতে জড়িত। এ বোঝার সঙ্গে যে এটা এখন জ্ঞান ও উপযোগিতা মূল্যের উৎপাদনে একটি উপনিবেশিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোর বর্তমান ক্ষেত্রের পুনঃপ্রেক্ষিতে পরিণত হয়। ঔপনিবেশিক ইতিহাস থেকে এর বিস্তৃত ও বিকৃত রীতিতে, নতুন নি¤œবর্গীয় শ্রম ও পুঁজির আন্দোলনে দেখা একটি পুনর্বিবেচনামূলক সাংস্কৃতিক-বৈশ্বিক পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক নারীবাদী রাজনীতির সঙ্গে একটি সম্পৃক্ততাও জড়িত করে। এভাবে, ভিজ্যুয়াল ও মিডিয়ায় অনূদিত পাঠ্যের অন্বেষণ মৌখিক ইতিহাসগুলোকে অমার্জিত আখ্যান হিসাবে পর্যালোচনা করা এবং আইনি উচ্চারণের উপায় হিসাবে বিভিন্ন উপায়ের অংশ যেখানে নতুন নি¤œবর্গীয় একটি উত্তরৌপনিবেশিক তাত্ত্বিক অনুশীলন হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করে। যদিও সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস ও সমাজের উপর লেখার নি¤œবর্গীয় অধ্যয়ন প্রকল্পের ভূখ-ের মানচিত্র, এটা প্রাথমিকভাবে ১৯৮০-এর দশকে এর সূচনা থেকে এ ক্ষেত্রের তাত্ত্বিক মাত্রাগুলো উন্মোচনের উপর মনোযোগ আকর্ষণ করে। মিডিয়ার সমসাময়িক উপস্থাপনা ও ক্রমবর্ধমান সংখ্যক পাঠ্যের স্বীকৃতিতে নি¤œবর্গীয়দের শ্রেণিবিভাজনের আরও সমালোচনামূলক-আক্ষরিক বিশ্লেষণ যা একটি অ-রৈখিক, ভিন্নধর্মী বিতর্কিত শ্রেণি হিসাবে নি¤œবর্গীয়কে উৎপন্ন ও পুনরাবিস্কার করে, কেন্দ্র ও পরিধিকে বিভক্ত করে। নতুন ও জটিল উত্তরৌপনিবেশিক ও বিশ্বায়িত বাস্তবতায় দ্বৈততাগুলোকে পরিধি বা পুনর্বিন্যাস করা জরুরি, যেখানে আমাদের আয়তন অগত্যা হস্তক্ষেপ করে এবং নি¤œবর্গীয়তার অনুশীলনকে সরিয়ে ফেলে, যার শিকার আমাদের তৃতীয়বিশ্বেও চেতনাকাঠামোও। এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সর্বত্র পরিবর্তিতরূপ নিয়ে, যা সৃষ্টি করছে একটি অভিন্ন বিকল্প পরিসর, যার ছায়া নিচে আমাদের বাস, প্রভাব ও প্রতিপত্তি, এবং উত্তর প্রজন্মের প্রতিবাস্তবতার পৃথিবী। উত্তরৌপনিবেশিক রাষ্ট্র ও সমাজগুলোতে আমরা এখনও কি এসব অনুশীলন করছি না? পাঠক, আপনিই বলুন, আপনি কেন নি¤œবর্গীয় অধ্যয়ন করবেন? কেন পাঠ করবেন যাপনের সম্পর্কগুলোতে কারা কারা ঢুকে পড়ছে ফেয়ার এন্ড লাভলির মতো রঙফর্শা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। নির্বাচনের পূর্ব ও পরবর্তি  জনপ্রতিনিধির ভূমিকাগুলো স্মরণ করবেন, থাক; বরং তাদের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান কাজগুলো নিজ চোখে দেখুন। তাতে আপনার কপাল খুলে যেতে পারে, অনেকের খুলেছে। সেই ¯্রােতে কম-বেশি মিশে গেছে। তাতে আপনিও আক্রান্ত। তাই প্রতিবিপ্লব কখনও সম্ভব নয়!! স্বার্থে কম পড়লে সবাই চিৎকার করে। যা আমরা প্রতিবাদ, বিপ্লব, অধিকারের লড়াই, ইত্যাদি নামে ডাকছি। তাই যারা সেই প্রবাহে নামতে পারেন না, তারা সবাই সক্রেটিসের দলে নিজের নাম লেখান, তুলে নিচ্ছেন হেমলকের পেয়ালা, ঝরে পড়েন নীরবে; কেউ কেউ এটা দেখেন। সত্য তাই বলা কঠিন। জটিল হচেছ যাপনের সম্পর্কগুলোর মতো, তত্ত্বের মতো। এর থেকে বেরোতে চান, চারদিক থেকে আপনাকে মরণবাণের মতো ক্ষমতার প্রতিপত্তি ঘিরে রেখেছে। এরপরও বিরল কেউ কেউ এর বাইরে পা রাখেন। কঠিনও হলেও আপনি এটা চেষ্টা করতে পারেন। বনে বন্দি পাখিকে যেভাবে তার দলের সব পাখি গাছের শাখা থেকে মাটিতে পড়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে সেই গোপন সত্যটা বলে গেলেন। তা যদি আাপনার পক্ষে সম্ভব না হয়, তবে ফেয়ার এন্ড লাভলির মতো খোলশ পাল্টান তাতে অন্তত আপনার পার্থিব সমৃদ্ধি ঘটবে। সত্যের চেয়ে মিথ্যা বলা সহজ। ফেয়ার এন্ড লাভলির মতো কেবল কৌশলগুলো রপ্ত করুন। এটা যত তাড়াতাড়ি করতে পারবেন, তত শিগগির ভাগ্যপাখি আপনার আঙুলের ডঠায় বসবে। আর ইচ্ছেমতো তাকে নিয়ে মানে মানুষকে নিয়ে খেলতে পারবেন। যেভাবে আপনার চারপাশে কেউ কেউ খেলছে।

 

 

হামিদ রায়হান, কবি ও কথাশিল্পী, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে