এখন সময়:সন্ধ্যা ৬:১০- আজ: সোমবার-২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৬:১০- আজ: সোমবার
২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

অপেক্ষার আকাশঃ কাব্যের মাঝে জীবনের প্রতিচ্ছবি

রবি বাঙালি

অপেক্ষার আকাশ মুন্সী আবু বকর (ড. এন এইচ এম আবু বকর)-এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রথম হলেও এটি আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে যা পাঠককে চিন্তা ও আবেগের গভীরে প্রবেশ করতে অনুপ্রাণিত করে। কবির  জন্মস্থান চট্টগ্রাম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি তাঁর সৃজনশীল চিন্তা এবং সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে সমাজের দুঃখ, সংকট এবং মানবতার প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন। অপেক্ষার আকাশ  খড়িমাটি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যার বিনিময় মূল্য ৩০০ টাকা। গ্রন্থটিতে মোট ৬৮টি কবিতা স্থান পেয়েছে এবং প্রতিটি কবিতার মাধ্যমে কবি সমাজের বিভিন্ন দিক, মানুষের যন্ত্রণা, প্রতিবাদ এবং ভালবাসার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

কাব্যগ্রন্থটির প্রতিটি কবিতা এক একটি নিঃশব্দ চিত্রের মত, যা কবির অন্তর্নিহিত আবেগ এবং চিন্তার গভীরতা প্রকাশ করে। অপেক্ষার আকাশ শুধু একটি কাব্যগ্রন্থ নয়, এতে দর্শন এবং কাব্য সাহিত্যের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। এর প্রতিটি কবিতায় কবির জীবনদর্শন, তার অনুভূতি এবং সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হয়েছে। কবির কবিতাগুলি শুধু একটি ব্যক্তিগত অভ্যন্তরীণ যাত্রা নয়, বরং একটি বৃহত্তর সমাজ এবং পৃথিবী সম্পর্কে চিন্তার বাস্তবায়ন।

গ্রন্থটির প্রচ্ছদে শিল্পী আল নোমানের অসাধারণ কৃতিত্ব দেখা গেছে, যা গ্রন্থের মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে খুব ভালোভাবে মেলে। প্রচ্ছদে কবির চিন্তা, সমাজের অবস্থা এবং আধুনিক পৃথিবীর সংকটকে একটি চিত্রকল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এক কথায়, কাব্যগ্রন্থটির প্রচ্ছদ একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে যা পাঠককে কবির চিন্তার সাথে সঙ্গতি রাখতে সাহায্য করে।

কাব্যগ্রন্থটি যখন পড়তে শুরু করি, তখন থেকেই এটি আমাকে এক গভীর উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায়। বিশেষ করে কবি তাঁর কবিতাগুলির মাধ্যমে সমাজের সমসাময়িক অবস্থা, মানুষের যন্ত্রণা এবং সরকারের অন্ধকার দিকগুলিকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। কবির কবিতাগুলোর মধ্যে যেমন “উন্নয়নের ফাঁকা প্রেক্ষাগৃহ” কবিতায় কবি রূপকের আলোকে সাম্প্রতিক উন্নয়নের নামে সমাজে প্রচলিত ফাঁকিবাজি ও নৈতিক অবক্ষয়ের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন, তেমনি “অপেক্ষার আকাশ” কবিতায় মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা, দুঃখ এবং জীবনের মূল উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার চেষ্টাকে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।

কিছু কবিতায় যেমন “স্বাধীনতার রূপকথা”, “অস্থির পৃথিবী”, “সমতার প্রতীক্ষা”, “শব্দের রাজনীতি”, “প্রকৃতির চক্র” – এসব কবিতা তাঁর দর্শনশাস্ত্রের গভীরতার সঙ্গে সমাজের নৈতিক সংকটের কথা বলে। কবি একদিকে সমাজের অন্ধকার দিকগুলিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখান, অন্যদিকে মানুষের জন্য একটি আশার আলোও প্রদান করেন।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কবি তাঁর কবিতার মাধ্যমে শব্দের শক্তি এবং এর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের ওপর আলোকপাত করেছেন। যেমন “শব্দের শক্তি” কবিতায় তিনি শব্দের মাধ্যমে ক্ষমতার খেলাকে চিহ্নিত করেছেন এবং “মৃতের দণ্ড” কবিতায় সমাজের অব্যাখ্যাত শাস্তির নিন্দা করেছেন। কবি কখনও মৃদু প্রতিবাদে মগ্ন হন, আবার কখনও গভীর চিন্তার মাধ্যমে নিজের দর্শন প্রকাশ করেন।

যেমন “নির্বাক প্রতিবাদ” এবং “নির্বাক স্পন্দন” কবিতাগুলিতে কবি আধুনিক বিশ্বের নিঃশব্দ প্রতিবাদের দিকে নজর দিয়েছেন। “স্বপ্নভঙ্গের দহন” ও “নতুন মশালের স্বপ্ন” কবিতায় একটি নতুন দিগন্তের দিকে তাকানোর আহ্বান করেছেন, যা মানবতার মুক্তির প্রতীক হতে পারে।

এছাড়া, “দর্শনের প্রশ্ন”, “ছায়ার খেলা”, “প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি”, “অস্থিরতার দোলাচল”, “সংকটের গল্প” প্রভৃতি কবিতায় কবি চিন্তা এবং দর্শনের এমন নতুন দিগন্ত তুলে ধরেছেন, যা পাঠককে প্রবোধ ও উদ্বুদ্ধ করে। এই কবিতাগুলির মাধ্যমে কবি যেন তাঁর দর্শন এবং জীবনের উপলব্ধি পাঠকের কাছে পৌঁছে দেন, যা পাঠককে জীবনের গভীরে নিয়ে যায়।

কবির এই কাব্যগ্রন্থে প্রেম, প্রতিবাদ, বিচ্ছিন্নতা, মানবতার সংকট এবং আশা সব কিছু একত্রিত হয়ে একটি সুন্দর পুঞ্জীভূত রূপ ধারণ করেছে। তাই, *অপেক্ষার আকাশ* কাব্যগ্রন্থটি শুধু একটি সাহিত্যকর্ম নয়, এটি সমাজের গভীরতর অবস্থা এবং মানুষের অব্যাখ্যাত যন্ত্রণার ছবি, যা মানুষের হৃদয়ে দাগ রেখে যাবে। এটি কেবল একটি বই নয়, এটি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাহিত্যের মাধ্যমে পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখা।

সর্বোপরি, *অপেক্ষার আকাশ* কাব্যগ্রন্থটি এমন একটি সাহিত্যকর্ম যা কেবল পাঠকদের মননকে সমৃদ্ধই করবে না, বরং তাদের মানবিকতাকে আবারো নতুন করে জাগিয়ে তুলবে। এটি মুন্সী আবু বকরের সাহিত্যের প্রতি এক অনন্য অবদান, যা তাঁর কবিতার মধ্যে সমাজের অব্যক্ত চিত্রকে সযত্নে তুলে ধরেছে।

 

রবি বাঙালী, প্রাবন্ধিক ও গবেষক, নাটোর

অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না

শোয়েব নাঈম শব্দের মধ্যেই থাকে জীবনের আসল দর্শন। শব্দের কারণেই মানুষ হয় নির্বাসিত। এখন মঙ্গলের অমরতায় ঘামছে গ্রীষ্মের বৈশাখ মাস। মঙ্গল এই শব্দবোধে যতটা কল্যাণ

চীনের মতো আমাদেরও ভাবা উচিত

আমির হোসেন চীনে ফেসবুক, ই’নস্টাগ্রা’ম, ইউটিউব, গুগল, গুগল ম্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ, এমনকি ক্রোম ব্রাউজারও ব্যান! শুরুতে শুনে বিরক্ত লাগলেও এখন বুঝতে পারছি- ওরা আসলে অনেক আগেই

গল্পশূন্য জীবনের ইতিকথা

আন্দরকিল্লা ডেক্স : আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন। থাকতেন মাটির কাঁচা ঘরে। অর্থাভাবে-অন্নাভাবে কখনও-সখনও উপোসও করতেন। পরতেন মলিন পোশাকপরিচ্ছদ। আমাদের বাবারা চাইলেন আমরাও যেন

সংস্কার চাই : চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন

নিখিল রঞ্জন দাশ সম্প্রতি চট্টগ্রাম এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামকে আগামী ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনকে দেয়া হবে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজনে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের ৬০

চল্লিশ বছর পর জীবনের প্রথম প্রেম আবার ঝড় তুলল মৈত্রেয়ীর জীবনে “মির্চা, মির্চা আই হ্যাভ টোল্ড মাই মাদার দ্যাট ইউ হ্যাভ কিসড মাই ফোরহেড'”

নহন্যতে উপন্যাসে মৈত্রেয়ী দেবীর এই উক্তি টি অবশ্যই পাঠকদের মনে আছে? মির্চা এলিয়াদ আর মৈত্রেয়ী দেবীর প্রেম কি শুধুই প্রেম ছিল নাকি সেই সাথে কিছু