মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ তখন আহমদ ছফার পিছন পিছন ঘুরতেন। লেখক হুমায়ূন আহমেদ-কে প্রতিষ্ঠার পিছনে যে আহমদ ছফার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, সে কথা মোটামুটি সবাই জানেন।
হুমায়ূন আহমেদ ছাত্র জীবনে আহমদ ছফাকে পীর মানতেন। বোধকরি, সারাজীবনই হয়তো তাঁকে পীর মেনেছিলেন। আহমদ ছফা প্রায় রাতেই, হুমায়ূন আহমেদদের নিয়ে হাটতে বের হতেন। আর নীলক্ষেত্রে মোড়ে মাঝে মাঝে চিৎকার দিয়ে বলতেন, ‘আমার বাংলাদেশ! আমার বাংলাদেশ!’
সে কারণে হুমায়ূন আহমেদ তাঁকে বলতেন ‘হন্টন পীর’।
এই ‘হন্টন পীর’ আহমদ ছফা একদিন হুমায়ূন আহমেদকে জোর করে বাংলা বাজার নিয়ে যান। প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং প্রথম বই নন্দিত নরকে প্রকাশের বন্দোবস্ত করে দেন। এরপরের কাহিনি সকলের জানা। হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্যঙ্গনে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং বাংলা একাডেমী থেকে সাহিত্য পুরষ্কারে ভূষিত হন।
এরপর হুমায়ূন আহমেদ পিএইডি সম্পন্ন করে দেশে ফিরলে, তাঁকে বাংলা একাডেমির প্যানেলভুক্ত করা হয়। আর এই প্যানেল থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হত, এইবছর কে সাহিত্য পুরষ্কার পাচ্ছে! সেবছর হুমায়ূন আহমেদ পুরষ্কারের জন্য আহমদ ছফার নাম প্রস্তুাব করলেন। যথারীতি সে প্রস্তাব বাতিলও হল। কিন্তু এই ঘটনা আহমদ ছফা কিভাবে যেন জানতে পারলেন। এরপর আহমদ ছফা হুমায়ূন আহমদকে লোক মারফত খবর পাঠিয়ে, দেখা করতে বললেন।
হুমায়ূন আহমেদ দেখা করতে গেলেন। আহমদ ছফা বললেন, ‘হুমায়ূন আপনার কত্তোবড় সাহস, আপনি আমার নাম প্রস্তাব করেন। আপনি আর কক্ষনো আমার সামনে আসবেন না। আমি যেন আর কোন সময় আপনার এই মুখখানি না দেখি’। আর সম্ভবত সেটাই ছিল হুমায়ূন আহমেদ এবং তাঁর হন্টন পীর আহমদ ছফার শেষ দেখা।
ছফানামা (সংগৃহীত)