এখন সময়:রাত ১১:০১- আজ: রবিবার-৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ১১:০১- আজ: রবিবার
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

উত্তরলব্ধি

ফাহমিনা নূর

লোপার ব্যস্ত একটা দিন যাচ্ছে। কলেজ ছুটি কিন্তু ঘরে বাইরে ইঁদুরদৌড় থেকে ছুটি নেই। ক্লান্তিকর লাগে একেক সময়। সকালে ব্যাংকে গিয়েছিলো ফেরার পথে মাসের শুকনো বাজার। ঘরে ফিরে রান্না চাপিয়ে গোসল সেরে খেয়ে উঠতে না উঠতেই বেলা ৩টা। এখন আবার মেয়েকে শিল্পকলায় নামিয়ে দিয়েই ছুটতে হচ্ছে শীলা মামির বাসায়, মেহেদীবাগে। মামার বড় ছেলে ওষুধ পাঠিয়েছে হাসানের বন্ধুর মারফৎ নিউইয়র্ক থেকে সেগুলোই পৌঁছে দিতে হবে। ওষুধ বলতে জীবনীশক্তি বর্ধক অষুধ। বয়স্ক নারীরা যা খেয়ে থাকেন। মামি একা থাকেন কাউকে পাঠিয়ে আনিয়ে নেবেন সেই জো নেই। হাসানকে বললে পৌঁছে দিতো কিন্তু সময় নিতো কম করে এক সপ্তাহ, তা—ও নিশ্চিত বলা যায় না। তার চেয়ে নিজে গিয়ে দিয়ে আসা ভালো, তাছাড়া  মামিকেও দেখতে যাওয়া হয় নি ম্যালা দিন।

সি এন জি না ছেড়েই মেয়েকে শিল্পকলায় নামিয়েছিলো।

 

 

মেহেদীবাগের গলির ভেতর ঢুকতেই একটা ক্লান্তি হাঁটিহাঁটি পা পা করে এগিয়ে এলো লোপার দিকে। যাওয়া তো হলো, ফিরবে কী করে!  এই গলির ভেতর রিকশা সিএনজি কিছু পাওয়া যায় না ফেরার পথে মেইন রোড পর্যন্ত হাঁটতে হবে ভাবতে গেলেই লোপার শরীর ভারী হয়ে আসে চোখ বুঁজে আসে ক্লান্তিতে। মামির বাসায় অন্তত আধা ঘন্টা তো বসা উচিত। কত কথা মামির বলার থাকে! সিএনজিওয়ালাকে অপেক্ষা করতে বলে দেখতে পারে,  লোকটা রাজি হবে তো! হলে কতগুলো টাকা দাবি করে বসতে পারে ভাবতে ভাবতেই ভেবে নিলো যাক্ কিছু টাকা বাড়তি গেলে যাক্। মাঝে মাঝে বেহিসেবি হতে হয় জীবনেরই প্রয়োজনে। এই যেমন আজকে যদি এসেই না পড়তো তাহলে মামিকে দেখাটাও তো হতো না। যদি বাড়তি কিছু খরচ হয়ে থাকে তো হোক, মামিকে সময় দেয়াতো হবে। একটা পারিবারিক দায় বোধ, সামাজিক কর্তব্যওতো থাকে। এইসব ভাবতে ভাবতে, সিএনজি থেকে নামতে নামতে অপেক্ষা করার কথাটা পাড়লো লোপা। যেমনটা ভেবেছিল তেমন কিছুই হলো না। উপরন্তু কেমন শান্ত আর আন্তরিক গলায় সিএনজিওয়ালা বললো— সমস্যা নাই আপা আমি আছি, আপনি ঘুরে আসেন। কন্ঠে কিছুতো ছিলো লোপা আর টাকার কথাটা পাড়লো না।

 

মামির সাথে গল্প করতে করতেই হাতে চা— নাস্তার ট্রে নিয়ে এলো সালেকা,  মামির অনুচর। ঝট করে লোপার মাথায় এলো সিএনজি ওয়ালাকে নাস্তা পানি দেয়া দরকার। মামিকে বলতেই ব্যবস্থা করলেন। মৃদু স্বরে কেবল জানতে চাইলেন — ট্যাক্সিওয়ালা তোর পরিচিত?

লোপা হ্যাঁ আর না এর মাঝে অস্ফুট এক আওয়াজ করেই আনমনা হয়ে গেলো। কিছুতো ছিলো লোকটার গলার স্বরে!

 

মেহেদীবাগ থেকে ফেরার পথে মেয়েকে তুলে লোপা যখন জামালখানে নিজ বাসার সামনে তখন গোধূলি গাঢ় হয়ে সন্ধ্যা নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিএনজি থেকে নামতে নামতে আলতো গলায় লোপা জানতে চায়—

:কত দেবো আপনাকে?

: কিছু দিতে হবে না।

অবাক হয় লোপা।

: দিতে হবে না মানে কী? আপনি ভাড়া নেবেন না!

: ভাড়া লাগবে না।

লোপার চোখ সরু হয়ে ওঠে।  বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করতে গেলে ওর কপালের চামড়া হালকা ঢেউ তুলে ভ্রম্ন যুগলকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। রাস্তার নিয়ন আলো জ্বলে ওঠার খানিক আগেই জ্বলে ওঠে একজোড়া চোখ। পিঙ্গল বর্ণের কটা চোখ। মুখের রোদ পোড়া রঙটা এক সময় হয়তো ফর্সাই ছিলো। চেহারাটা এই প্রথম ভালো করে দেখার চেষ্টা করে লোপা। স্মৃতি সক্রিয় হয়ে ওঠার আগেই কথা ব’লে ওঠে ঐ মুখ।

: আমারে চিনতে পারেন নাই আপুনি? আমি কাজল।

: কাজল? কাজল!

কাজল তো কেবল একটা নাম নয়। কাজল একটা অধ্যায়, এক গুপ্ত ইতিহাস, একটা তীব্র প্রশ্ন যার সুস্পষ্ট উত্তর জানা হলো না কোনোদিন।

 

বিস্ময় যেন লোপাকে হতবিহ্বল আর অবশ করে তুলেছিলো। স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে থেকে স্মৃতির কাছে সমর্পিত সে যেন এক কাঠের মূর্তি। স্মৃতি তখন টাইম মেশিনে চড়ে বসেছে। বাতাস কেটে হু হু হুহু করে ছুটছে। পেছনে। কত কত দৃশ্য পেরিয়ে যাচ্ছে! লাভলেইনের বাসা, শিউলি তলা, মেরুন রঙের গেট, গেট থেকে বাসা পর্যন্ত ইট বিছানো রাস্তা। মনে আছে গেটের উপর লোহার শিক দিয়ে তৈরি আর্চকে অবলম্বন করে বেড়ে উঠেছিল অপরাজিতার ঝাড়। ভেতর ঢুকতেই ডানপাশে পাতাবাহারের ঝোপ, অন্যপাশে ভাই বোনের মতো হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকা জবা আর গন্ধরাজ ফুলের গাছ। মা, বাবা, দাদা, ছোট কাকা, দাদলু (বড় ভাই), দি, ছোটন, নেহার খালা, কাজল। কী যে সুন্দর ছিল দিনগুলো! ফেলে আসা দিন অবশ্য সর্বদাই এক করুণ সৌন্দর্যমণ্ডিত বিভূষণ নিয়ে হাজির হয়ে থাকে মানসপটে যার অনেকটাই বাস্তব। মানুষের অবচেতন মন সেই বাস্তবতার গায়ে অনুমান আর কল্পনা নির্ভর যে আবীর মাখে তা সে বাস্তবতা বলেই জ্ঞান করে। লোপার অন্তরে অতীতচারণ এক ধরনের স্বপ্ন বিলাস। মন যে কেমন করে অতীতাকাশে উড্ডীয়মান কথা বলা হুদহুদ পাখি হয়ে ওঠে কেউ তা জানে না।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় গোপীনাথপুর  ইউনিয়নের  ছোট্ট গ্রাম হরিয়াবহ। সেই গ্রামে মিঞা বাড়ির শেষ নিবাসী দাদা আহমেদুল মিঞা। শেষ নিবাসী বলার কারণ হলো এরপর তাঁর চার পুত্র দুই কন্যার সকলেই শহরবাসী হয়েছেন। এদের মাঝে একজন আবার থিতু হয়েছেন ভিনদেশের শহরে।  বাড়িতে দাদা একাই থাকতেন। দাদি মারা যাওয়ার পর অনেক চেষ্টা করা হয়েছিলো তাঁকে শহরমুখী করার, হয় নি তাঁকে দিয়ে। শহরের গন্ধ, আওয়াজ আর হাল হকিকত তিনি সইতে পারতেন না।

 

লোপাদের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিলো গ্রামের বাড়িতে। দুই ঈদ,শীত বা গ্রীষ্মের ছুটি তো ছিলোই সবার নিশ্চিত যাওয়া। সময় সুযোগ পেলে বাবা আর ছোট কাকা যেতেন আরও বেশি। মেজো কাকা প্রবাসী, তাকে কোন ছোটবেলায় দেখেছিলো লোপা মনে পড়ে না। দেশে আসেনই না বলতে গেলে। বড় কাকা ঠিক কোন কারণে পুরো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন লোপার কাছে পরিষ্কার নয়। শুধু মনে আছে রঙ্গন ফুলের থোকার মতো একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে লেগে থাকা হরিহর আত্মা পরিবারে হঠাৎ ভাঙনের ঢেউ আছড়ে পড়ে নেহার খালা আর তার ছেলে কাজলকে লাভলেইনের বাসায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। পরিবারটি দু’ভাগ হয়ে গেলো যেন কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে ভরা পূর্ণিমার চাঁদকে কেটে দু’টুকরো করে ফেললো।

 

সিএনজিটা ধূসর হতে হতে দৃষ্টির আড়ালে মিলিয়ে গেলে স্থানু হয়ে থাকা লোপার পাদু’টো সচল হয়। লিফট উঠতে থাকে উপরে, খেয়ালই করলো না মেয়ের বিস্ময় ভরা চোখ রাজ্যের প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেমন ছিলো প্রশ্নের ডালি নিয়ে তার নিজের চোখ দুটো বহু বছর আগে।

 

লোপার বয়স তখন পাঁচ কী ছয়, গ্রামের বাড়িতে, পরিস্থিতি থমথমে। বড় চাচা এই পরিবারের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করে বউ বাচ্চা নিয়ে চিরতরে চলে যাচ্ছেন এমন ঘোষণা দিয়ে সত্যি সত্যি চলে গেলেন। তাঁর ঘোষণা যে নিছক রাগের বশে বলা কথা ছিলো না সেটা উপলব্ধি করতে পরিবারের অন্যদের বেশ ক’ বছর লেগে গেলো। তার আগ পর্যন্ত কারো কারো অন্তরে বিশেষ করে দাদির মনে হয়তো ক্ষীণ আশা ছিলো যে সব একসময় সহজ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাঁর বড় ছেলে আবার তাঁর কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু দাদির মৃত্যু সংবাদও যে সেই গোপন আশার গুড়ে পানি ঢেলে দিয়েছিলো সেই নিষ্ঠুর বারতা কবরস্থ দাদির মরমে পেঁৗছেছিলো কি না তা আর জানা হলো না।

 

জীবদ্দশায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন এই লৌহ মানবী এমন প্রথা বিরোধী এক সিদ্ধান্তই বা কীভাবে কিসের জোরে নিয়েছিলেন তা হৃদয়ঙ্গম করার মত উচ্চতা খুব বেশি মানুষের ছিলো না। সমস্ত বিতণ্ডার উৎস যে নেহার খালা তার ভূমিকা ছিল সেদিন লক্ষ বছরের পুরনো প্রস্তরখণ্ডের মত। যেনো তার কিছুই বলার নেই। যেনো এতসব লঙ্কাকাণ্ড তাকে স্পর্শ করছে না। যেনো তার কোনো দায় নেই, নিজের সমস্ত ভার দাদির উপর চাপিয়ে সে কেবল ছায়ার অনুসরণ ছাড়া কিছু নয়। আড়াই বছরের কাজল যে মা মা করে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছে সেদিকেও যেনো তার বিশেষ অবজ্ঞা।

 

শিশু লোপা শুধু বুঝেছিলো দাদির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নেহার খালা আর কাজল এখন থেকে তাদের সাথে লাভলেইনের বাসায় থাকবে। শুধু ভেবে পাচ্ছিলো না বড় চাচার এতে তুমুল আপত্তি কেন অথচ ভাববার বিষয় ছিলো বড় চাচার প্রস্থান ঠেকানোর চাইতে নেহার খালার তাদের পরিবারে জুড়ে যাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কেন। সে তো তাদের কেউ না।

 

বড় হতে হতে ক্রমে ক্রমে লোপা যা বুঝলো তা কোনো ধারা বিবরণী লব্ধ জ্ঞান নয়। টুকরো টুকরো ঘটনা, টুকরো টুকরো মন্তব্য, কিছু বা গল্প—স্বল্প, দ্বিপ্রাহরিক আড্ডা যার উৎস রয়েছে পারিবারিক পরিসরে বা পরিবারের বাইরে বা একান্ত নিজস্ব উপলব্ধি তাকে বুঝতে সাহায্য করেছে তার জীবন, পরিবার আর পারিপার্শ্বিকতাকে। তারই আলোকে এই পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু দাদী উদ্ভাসিত হন এক মহান শক্তিধর মহীয়সী নারী রূপে। যার সিদ্ধান্ত এই পরিবারে শেষ কথা। আমৃত্যু বহাল ছিল সেই ব্যক্তিত্বের দাপট।

 

নেহার খালা ছিলেন বিধবা, নিঃসন্তান। তার স্বামী ‘বর্ডার হাট’ সংলগ্ন এক মেস চালাতেন শরীকে। দুম করেই একদিন চলে গেলেন, হার্ট অ্যাটাকে। হাসপাতালে নেয়ার সুযোগটাও পাওয়া যায় নি। স্বামীর মৃত্যুর পর মেসের অংশ বেচে শুরু করলেন কাপড়ের ব্যবসা। বর্ডার পাড়ি দিয়ে কাপড় আসতো, সেই কাপড় চালান হতো মফস্বলে। ছোট পুঁজির ব্যাবসা লাভ খুব বেশি হতো না। বেশি লাভের প্রয়োজনও তার ছিলো না। লোপার দাদি ছিলেন তার বাঁধা কাস্টমার। তার আবার কারণে অকারণে জনে জনে উপহার  দেবার বাতিক। সেই সূত্রে তৈরি হলো অসম বন্ধুত্বের এক বিচিত্র পালা। তখন থেকে সবাই ধীরে ধীরে জানলো মিঞা বাড়ির কেউ না হয়েও নেহার খালা মিঞা বাড়িরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বাড়ির ভালো মন্দ সব কিছুর সাথে মিশে যেতে থাকলেন, নদীবাহিত পলি যেমন কালে কালে মিশে যায় ধানের জমিতে।

 

কিছু কথা থাকে যা জিজ্ঞেস করে জানতে হয় না, ডায়রির পাতাতেও লেখা থাকে না, থাকে না তার কোনো নথিপত্র। সময়ের কিছু ভাষা থাকে যা কালের স্রোতে আপনাতেই কথা বলে ওঠে আর মানুষ জেনে যায় যা তার জানা আবশ্যক। লোপাও জানতে পারে নেহাল খালা মা হবেন এমন খবর যখন জানাজানি হয় তখন তার গ্রামে টেকা মুশকিল হয়ে গিয়েছিলো। গিরিখাদের দূ’ পাশে যেমন পাথুরে পাহাড় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তেমনি ভাবে যদি দাদাজান আর দাদি নেহাল খালাকে সমস্ত ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষা করতে দাঁড়িয়ে না যেতেন তবে নির্ঘাত নেহার খালার পরিণতি তাই হতো যা এসব ক্ষেত্রে অন্যদের বেলায় হয়ে থাকে।

 

শুধু বিত্তশালী বলে নয়, ন্যায়বান বলেও গ্রামে দাদা—দাদির আলাদা একটা প্রতিপত্তি ছিলো। তাই নেহার খালার প্রতি ছিঃ ছিঃ রব উঠলেও তা তাকে গ্রামছাড়া করার মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠতে পারে নি। তবে তার স্বামীর ভিটেতেও তার জায়গা হয় নি। স্বামীর জ্যাঠাতো ভাই যারা স্বামীর মৃত্যুর পর তার দায়িত্ব নিতে যথেষ্ট উদাসীন ছিলো তারা বেশ সোচ্চার হয়ে উঠলো বংশের মান মর্যাদা নিয়ে। বিশেষ করে এই অবৈধ শিশুকে তারা তাদের বংশের নাম দিতে রাজি নয়। অবৈধ!!  হুঙ্কার দিয়ে দিয়ে উঠেছিলেন লোপার দাদি। জীবন্ত এক মানবশিশু যে জানেনই না কীভাবে সে এই দুনিয়ায় এলো, কোথায়ই বা এলো কেনই এলো সে কিভাবে অবৈধ হয়?!

 

লোপার মনে পড়ে লাভলেইনের বাসাটা কীভাবে একটা আড়াই—তিনবছরের শিশুর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছিলো। ঘরের সবাই ওকে ভীষণ আদর করতো, তার জন্ম ইতিহাসের দায় তার জীবনে ছায়া ফেলতে পারে নি তাই সে কলকল ধ্বনিতে বেড়ে উঠছিলো সকল স্নেহাশীষের অবাধ ধারায়। বাসায় নেহার খালার অবস্থানটা ছিলো অনেকটা হাউস কিপারের মতো। না আত্মীয়া না গৃহপরিচারিকা। তাতে সংসারে  মায়ের কাজে যতই সুবিধে যুক্ত হোক, পরিবারের এ রকম একজন মানবীকে জায়গা দিতে মা’কে মনের সাথে কতখানি আপস করতে হয়েছিল তা জানতে খুব সাধ হয়। বাবাকে সে বরাবর দেখেছে স্ত্রী অন্তপ্রাণ। যতটা হলে একজন পুরুষকে আড়ালে অনেকে স্ত্রৈণ বলে পরিহাস করে। তাই ভরসার একটা নিশ্ছিদ্র বন্ধন বা বলয় হয়তো তৈরিই ছিলো দু’জনকে ঘিরে। আর ছিলো ছোট কাকা, গান পাগল এই মানুষটাকেতো সন্তের মতোই মনে হয়। শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোকে ঘিরে তাই তরতর করে বেড়ে উঠছিল লোপাদের চার ভাইবোনের সাথে কাজলের জীবনও, একদম সমান তালে। কাজলকে বড় করে তুলতে বাবা—মা কোনো কার্পণ্য করেন নি। তারতম্য রাখেন নি নিজ সন্তানদের সাথে। অবশ্য ছোটনের জন্ম হয়েছিলো কাজলরা আসার আরও অনেক পরে। কাজলের জন্ম ইতিহাস রহস্যাবৃতই রয়ে গেলো। ইংরেজদের মত টকটকে গায়ের রং, খাঁড়া নাক, কটা চোখ, ধারালো মুখের ককেশীয় আদল গ্রামের কারো সাথেই মেলে না। বাচ্চাটার জন্মের পর গ্রামের লোকজন যেন এক ধাঁধায় পড়ে গেলো। শতচাপেও নেহার খালা কারো কাছে মুখ খোলেনি। দাদিজান হয়তো জানতেন,  কিন্তু তাকে জিজ্ঞেস করার মতো বুকের পাটা কারো ছিলো না। ধারণা করা হয় বর্ডারের ওপাশ থেকে আসা কোনো টুরিস্ট বা পশ্চিমা কোনো নাগরিকের সাথেই হয়তো বা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। কতজনই তো দুই বাংলায় আসা যাওয়া করে এই বর্ডার দিয়ে। কেউ গবেষণা করে, কেউ ডকুমেন্টারি বানাতে আসে,  কেউ খণ্ডকালীন চাকুরি করে। আর ব্যবসার কারণে নেহার খালারও তো আসা যাওয়া ছিলো।

 

গর্ভকাল থেকে আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত কাজলরা গ্রামে দাদুর বাড়িতেই ছিলো। তাতে তাদের যত্ন আত্তিতে কোনো কমতি ছিলো না। তারপরও দাদিজান কেন তাদের শহরে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার কোনো সরাসরি উত্তর জানা না থাকলেও লোপার বুঝতে অসুবিধে হয় না। দাদিজান হয়তো কাজলের ভবিষ্যৎ ভেবে এটা করেছিলেন। চেয়েছিলেন তার জন্মাতীত দাগ যেন তার জীবনে ছায়া ফেলতে না পারে। তাই তাদের গ্রামের পরিচিত পরিমণ্ডল থেকে দূরে যাওয়া আবশ্যক ছিলো। কিন্তু জন্মদাগ কি এতো সহজে মুছে ফেলা যায়! না কি সমাজে একটা পরিচয়ের গুরুত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায়! যায় না। তা যতোই প্রতিপত্তি দিয়ে চেপে রাখার প্রয়াস থাকুক। যায় না এমনকি গ্রাম থেকে শহরে, দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে বেড়ালেও। একটা শিশু একটু একটু করে বড় হতে হতে কীভাবে যেন জেনে যায় পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের যেমন মা থাকে তেমনি করে একটা বাবাও থাকতে হয়, জীবিত বা মৃত। স্কুলে ভর্তির জন্য প্রয়োজন পড়লো একটা জন্ম সনদের, তা একটা বানিয়ে নেয়াও গেলো। পিতার নামের জায়গায় লেখা হলো মরহুম (হতেই হতো, তা না হলে হাজির নাজির করে দেখাবে কি করে!) এহতেশামুল করিম।

 

সময় যেতে—যেতে আর কাজল বড় হতে—হতে বুঝতে থাকে সে একাধারে এ পরিবারের কেউ না আবার অনেক কিছু। মমতার এক বন্ধন থাকে, মায়ার এক টান থাকে সমূলে তাকে উপড়ানো যায় না তবুও এইসব মায়াগত বন্ধনের বাইরেও সমাজসৃষ্ট মানুষের কিছু দাবি অন্তরে আপনাতেই তৈরি হতে থাকে যা সহজাত। জন্ম পরিচয় নিয়ে তার যে সমূহ জিজ্ঞাসা তা  শৈশবে তাকে অশান্ত করলেও কৈশোরে পা রাখতে গিয়ে বুঝে গিয়েছিলো সব প্রশ্ন সামনে আনতে নেই। বয়সের তুলনায়  কিছুটা গাম্ভীর্য সে ধারণ করে বটে তবে একে তার এক নিরাপদ বেষ্টনীও বলা চলে। এসব গাম্ভীর্যের খোলস ছেড়ে ভেতরের শামুকটি গুটি গুটি পায়ে মাঝে সাঝে বেরিয়ে এসে যার কাছে চঞ্চল প্রজাপতির মতো ধরা দিতো সে তার আপুনি, লোপা আপু। খুব দরকারি কথাগুলো, খুব প্রয়োজনের কথাগুলো কাউকে যদি বলতেই হয় তো সে হলো আপুনি, এমন কি মা’ও নয়। এই আপুনিই তার মানসিক আশ্রয়। কাজলের দশ বছর বয়সে যখন তার মায়ের ব্রেইন টিউমার ধরা পড়লো, তখনই সে বুঝে গিয়েছিলো তার জগতটা আরো সঙ্কুচিত হয়ে উঠছে, হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে তার মনে কোনো সংশয় থাকলো না যেদিন জানলো এই টিউমার ম্যালিগনেন্ট এবং দ্রুতই তা অপসারণ করতে হবে। মা বেশি ভোগায়নি অপারেশন টেবিলেই দম চলে গিয়েছিলো। এরপর বাড়ির সবাই তার প্রতি অতিশয় যত্নশীল হয়ে উঠলেও কাজলের মনে হতে থাকে সে প্রকৃত অর্থেই একা হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর মতো অলঙ্ঘনীয় ঘটনার মাধ্যমে মা বুঝিয়ে দিয়েছেন মায়ের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। এই পৃথিবীতে তার আপন দাবী করার মত একটা মানুষও থাকলো না। আপুনির মায়া যতই দরদিয়া হোক, তার ওপর এবং তাকে যথাসাধ্য আপন করে নেয়া বাড়ির অন্য মানুষগুলোর উপর তার যে প্রকৃত দাবি খাটে না এমন একটা শূন্যতাবোধ তাকে ক্রমাগত খোলসের ভেতর টেনে নিয়ে গিয়েছে। জনসমুদ্রের মাঝে থেকেও তাই তার মনে হতে থাকে সে এ গ্রহের কেউ নয়। তাকে বরাবর হাতছানি দেয় দূরের অস্পষ্ট কোনো গ্রহ যা হয়তো তার নিজের।

 

নিজের ভেতর গুটিয়ে যাওয়া কিশোর কাজলের মেধা খারাপ ছিলো না। স্কুলের পরীক্ষার ফলাফলই বলে দেয় সে মাঝারি মানের ছাত্রদের চাইতে ভালো অবস্থানে ছিলো। মায়ের শখ ছিলো সে বড় ডাক্তার হবে। মায়েরা সে সময় ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ারের বাইরে বেশি কিছু ভাবতেও পারতো না। ছোটবেলায় কাজলকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো সে রেলগাড়ি চালাতে চায়। অতবড় সাপের মতো দেখতে গাড়িটা ঝুক্ ঝুক্ ঝিক্ ঝিক্ করে এগিয়ে নিয়ে যায় যে মানুষটা সে—ই তার স্বপ্নের বীর। কী তার ক্ষমতা! কাজলের শিশুমনে সে এক বিস্ময়কর জাদুকর। এখন অবশ্য সে আর রেলগাড়ি চালাতে চায় না। কি হতে চায় এ ব্যাপারে কিশোর কাজল স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না। হাসপাতালের গন্ধ তার ভালো লাগে না, দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই আর যাই হোক ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে নেই।

 

সেদিন প্রায় পঁচিশ বছর পর দেখা হওয়ার ধাক্কাটা সামলাতে লোপার বেশ খানিকটা সময় লাগে। কাজল বেঁচে আছে! কাজল তাহলে বেঁচে আছে!  এই কথাটাই খানিকক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকলো মাথার ভেতর।

কিন্তু এ কী অবস্থা! আদরের কাজল এখন সিএনজি চালক!

 

বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে উঠতেই, একনাগাড়ে অনেক প্রশ্ন। তুই এ শহরেই থাকিস? দেখা করলি না! ফিরে এলি না! যোগাযোগও রাখলি না! কেমন আছিস? কোথায় থাকিস?

উত্তরের অপেক্ষা না করে লোপা তাকে উঠে আসতেও বলে। তার বাসায় আসতে বলে, কিছুটা আড়ষ্টতা থাকলেও। কাজল বলে, “আজ থাক, বাসাতো চিনলাম, অন্য কোনো দিন। ” মোবাইল নাম্বার চাইলে সেটাও এড়িয়ে গেলো। লোপা জোর করতে পারে না। মাঝের পঁচিশ বছর সময় কমতো নয়! যে কাজলকে সে চিনতো সে ছিলো নবম শ্রেণির ছাত্র, এক শান্ত, লাজুক কিশোর। সামনে যে, সে মধ্য বয়েসি এক সিএনজি চালক! গত পঁচিশ বছরে কোনো কোনো পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে গিয়ে একটা মানুষ কেমন আমূল বদলে যেতে পারে সে হিসেব কি লোপা জানে না!

 

এরপর একদিন হঠাৎই এলো। তাও এমনই এক পড়ন্ত বিকেলে। সেদিন তাকে যথেষ্ট ভদ্রস্থ দেখাচ্ছিলো। জানালো ভালো আছে সে, বিয়ে করেছে। দু’টি সন্তান। বড়টি মেয়ে, মেডিক্যালে পড়ছে, ছোটটি এস এস সি দেবে। বলার সময় একটা অহঙ্কার একটা আত্মতৃপ্তি ফুটে উঠলো কি! তা উঠতেই পারে, লোপারও কিছু কম সুখ হয়নি শুনে। কত আদরের ছিলো এই কাজল! জানলো, সে এখন ঠিক সিএনজি চালক নয়, তার মোট চারখানা সিএনজি ট্যাক্সি আছে যার একটা সে নিজেই চালায়। না, পড়ালেখা তার আর হয়নি, বিচিত্র ধরনের কাজ করেছে বেঁচে থাকার তাগিদে। এই বৈরী পৃথিবীটার ওপর অনেক অভিমান নিয়ে সে অদৃশ্য হয়েছিলো। জেদ চেপেছিলো। দুনিয়াকে দেখাতে চেয়েছিলো সে এই পৃথিবীর দ্বিতীয় আদম, তার কোনো পিতা নেই, মাতা নেই, কেউ নেই, থাকতে নেই। এই বন্ধুর, এই বিরান পৃথিবীতে সে এসেছে এক নতুন উত্তরলব্ধি তৈরির নিমিত্তে। পিতৃ পরিচয়কে অপ্রাসঙ্গিক করে এক নতুন উপলব্ধির স্রষ্টা সে। তার সন্তান বড় হচ্ছে  মিনহাজুল আশরাফ কাজলের পরিচয়ে। এর পেছনের অতীতকে চিরতরে সিলগালা করে দিতে সমর্থ হয়েছে সে। তার সন্তানরা জানতে চায় না কোনো অন্ধকারের ইতিহাস, তাদের সেটার প্রয়োজনও নেই। আলোর মশাল হাতে নিয়ে তাদের দৃষ্টি সামনের পৃথিবীর পথে। বাবাকে তারা অন্তর দিয়ে ভালোবাসে,  ভালোবাসে তাদের  মা’কেও। তারা জেনেছে পায়ের নিচের ভিত শক্ত হলে যেকোনো দৌড়কে ছন্দময় করে তোলা যায়। কারণ তারা আদম সন্তান।

 

কাজল সেদিন বসেনি বেশিক্ষণ।  তাড়াহুড়ো করেই চলে গেলো, এবার অবশ্য যোগাযোগের একটা সূত্র রেখে গেলো, তার সেল নাম্বার। মোবাইল নাম্বারটা সেইভ করতে করতে চোখ ভিজে উঠেছিলো লোপার। বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এক অসম্পূর্ণ অধ্যায় ছিলো আজকের দিনের অপেক্ষায়। একটা গভীরস্থ বাঁধের আগল খুলে গেলে লোপা শব্দ করে কেঁদে ওঠে।

 

পঁচিশ বছর আগের একটা দিন লোপা কতবার যে ক্যালেন্ডার থেকে মুছে দিতে চেয়েছে! বদলে ফেলা যেতো যদি দিনটা! পুরো পরিবার তখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারে নি। দাদা বিগত হয়েছেন সবে সপ্তাহ পুরালো। জীবনে এই প্রথম বোধয় মেজ চাচাকে দেখলো। দাদার মৃত্যুখবর পেয়ে এসেছেন। সপ্তাহান্তে জানা গেলো অন্য একটি কারণও আছে। তাঁর টাকা পয়সা লাগবে অনেক। পৈত্রিক সম্পত্তির যেটুকু উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলেন তা অন্য ভাইদের কাছে বিক্রি করে দ্রুত আবার ফ্রান্সে ফিরে যেতে চান। এই সব ফয়সালা করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো এক অমোঘ সত্য। দাদাজান সম্পত্তি হিবা করে গিয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিলিয়ে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দাদার নেহায়েত কম নয়। সকল সম্পত্তি তিনি পুত্র কন্যাদের পাশাপাশি কাজলকেও দিয়ে গেছেন পুত্রজ্ঞান করে। দানপত্রে তাকে ঔরসজাত সন্তান হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো লাভলেইনের সেই একতলা বাড়িতে। পুড়তে থাকলো এক একটা সম্পর্ক। সকল সমীহ, বন্ধনের সকল গেঁড়ো যেন ফটাস ফটাস শব্দে ছিঁড়ে ফেটে গেলো। শিক্ষা, সংস্কারের খোলস ভেঙে বেরিয়ে এলো স্বার্থের দগদগে ঘা। এই কাগজ, এই দানপত্র কেউ মানতে রাজি নয়। না বড় চাচা,  না মেজো চাচা এমন কি ছোট চাচার নীরব সমর্থনও যেন হেলে পড়লো তাদের দিকে। প্রয়োজনে তারা আইনের আশ্রয়ও নেবেন। বাবা অসহায় হয়ে পড়লেন। বুঝাতে চাইলেন দাদাজানকে ভুল বোঝা হচ্ছে, তিনি মোটেও দায়ী নন। কাজলকে সন্তান জ্ঞান করা দাদির ইচ্ছে ছিলো, দাদার নয়। দাদিজানের ইচ্ছের প্রতি সম্মান জানানো ছাড়া তার আর কোনো স্বার্থ নেই, ছিলো না কোনোদিন। কিন্তু বুঝবে কে!  বোঝাতে গেলে কীসব শব্দ তীরের মতো ছুটে আসছে… বেজন্মা, জারজ, কুলাঙ্গার, বেওয়ারিশ,… দুধ কলা দিয়ে পালিত কালসাপ। আর এর কোনোটাই অনুচ্চ স্বরে উচ্চারিত হয় নি। পাশের ঘরে তখন ঠকঠক করে কাঁপছে কাজল।

সেই রাত কীভাবে পার হলো তা পরম করুণাময় জানেন। কিন্তু পরদিন লাভলেইনের সেই বাড়িতে ভোর হলো কাজলের অন্তর্ধানের ভেতর দিয়ে। যেন পূবের আকাশ হতে ছড়িয়ে পড়া আলোক রশ্মি বেয়ে ঐ আলোকপিণ্ডেই চিরকালের মত হারিয়ে গিয়েছিলো কাজল। আজ এত বছর পর তাকেই লোপা ফিরে দেখলো মধ্যগগনের দীপ্ত সূর্যের মত যেখান থেকে শুরু হলো নতুন উত্তরলব্ধি।

 

 

ফাহমিনা নূর, গল্পকার

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে