বাবুল সিদ্দিক
কাক—মা জানত তার বাসায় কোকিলের ডিম। সে কোকিল—মা কে তার বাসা থেকে চুপিসাকে বেরিয়ে যেতে দেখেছে। বাসায় ফিরে সে গুনে দেখেছে, তার বাসায় ডিমের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। জানলেও সে কাউকে কিছু বললো না। ধৈর্য্য ধরে ডিমে তা দিল, বাচ্চা ফুটলে তাকে পোকাটা—মাকড়টা খাইয়ে বড় করে তুললো। সে জানত, এই অবোধ শিশুটি একদিন ভিন্ন স্বরে গেয়ে উঠবে গান, আলাদা করে নিবে নিজেকে। সবই জানত কাক—মা কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিল না।
সবই ভাবল, তার মত বোকা আর কেউ হয় না ! তাকে বার বার বোকা বানিয়ে যায় কোকিল—মা। দুনিয়ার কাছে বোকা হয়েও সে চুপ করেই থাকলো, নইলে কি হতো কোকিল ছাগুলোর ? জন্মই যে হতো না তাদের ! আর জন্ম না হলে কেই বা গাইত বসন্ত দিনের অমন বন—মাতানো, মন—মাতানো গান ? মা যে তাদের উড়নচন্ডী ! বাসা বানানোর ধৈর্য্য নাই, সারাক্ষন শুধু উড়ে—উড়ে, সুরে—সুরে, ঘুরে—ঘুরে বাড়াচ্ছে।
তাকে অবশ্য দোষ দেয় না কাক—মা। সবাই কি আর একই রকম হয় ? সে নিজে কি অমন গাইতে পারবে কোন দিন ? যে পারে সে না হয় একটু কম সংসারী হলই ! তার সন্তানদের বড় করে দিতে কোন আপত্তি নেই কাক—মা এর। এক একজন এক এক ধারার বলেই না এতো রঙ, এতো রূপ, এতো সুর এই জগতটায় !
কোন এক বসন্তের দিনে বাসায় বসে দূরে কোন কুকিলের কুহু রব শুনে স্বরটা কেমন চেনা চেনা লাগলো কাক—মায়ের ! খুশিতে, তৃপ্তিতে চোখ বুজে আসে তার। মনে মনে কত যে আশীর্বাদ করে সে তাদের। আহা বাছারা ! বেঁচে থাকো। কাক—মাকে নাইবা মনে করলে, মধুর গানে ভুবন খানি ভরিয়ে রাখো।
দুনিয়ার সবাই তাকে বোকা ভাবলেও একজন কিন্তু ঠিকই চিনেছে তাকে। নইলে কেনই বা সে ডিম পাড়ার সময় হলেই বারবার সেই কাক—মায়ের বাসাতেই ফিরে ফিরে আসে। কাক—মা আর কোকিল—মা এর এ এক অদ্ভুত রসায়ন !