আমির হোসেন
চীনে ফেসবুক, ই’নস্টাগ্রা’ম, ইউটিউব, গুগল, গুগল ম্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ, এমনকি ক্রোম ব্রাউজারও ব্যান!
শুরুতে শুনে বিরক্ত লাগলেও এখন বুঝতে পারছি- ওরা আসলে অনেক আগেই অনেক বড় এক বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করেছে।
আজকের একটি নিউজ দেখে বুকটা কেঁপে উঠল। দেখলাম, ইস’রাইয়েল এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও) ব্যবহার করে ফি-লি’স্তি,নি মানুষদের টার্গেট করে হত্যা করছে!
AI নিয়ে কাজ করি বলেই মাঝে মাঝেই গভীরে ঘাঁটতে হয়, আর সেখান থেকেই একটা কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় AI-এর সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে ডেটা। যত বেশি ডেটা, তত বেশি শক্তিশালী মডেল। আর এই ডেটা আমরা নিজেরাই প্রতিদিন ফ্রিতে দিয়ে যাচ্ছি- একটা বড় মস্ত ভুল করে।
Ma, Baba, Boro Vai নামে সেভ করা নম্বরগুলো থেকেই তারা বুঝে ফেলে কার সাথে আপনার কী সম্পর্ক আর আপনি যেসব পারিবারিক ছবি পোস্ট করেনৃ আপনি ভাবতেই পারবেন না, সেগুলো একেকটা ডেটা পয়েন্ট। একটা যুদ্ধের সময় এগুলোই আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়াবে।
এখন প্রশ্ন হলো উপায় কী?
চীনের মতো নিজেদের প্ল্যাটফর্ম না বানালে আমরা কখনোই স্বাধীন নই, শুধু আধুনিক দাস! যাদের হাতে আপনার সবকিছু তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আগে ভাবুন, আপনার শক্তি আসলে কোথায়?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন আর ভবিষ্যতের কল্পনা নয়—বরং এটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম এক চালিকাশক্তি। আর সেই শক্তিকে নতুনমাত্রা দিতে চীন নিয়েছে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগামী শরৎকাল থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে এআই শিক্ষা! শুনতে অবাক লাগলেও,বেইজিং মিউনিসিপাল এডুকেশন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, স্কুলগুলোকে বছরে অন্তত ৮ ঘণ্টা এআই শেখাতে হবে। এটি আলাদা একটি বিষয় হিসেবেও পড়ানো যাবে, আবার বিজ্ঞান বা তথ্যপ্রযুক্তি পাঠ্যে একীভূত করেও শেখানো যাবে। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো—মাত্র ৬ বছর বয়স থেকেই শিশুরা হাতে-কলমে শিখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি! এই উদ্যোগের লক্ষ্য এক নতুন “শিক্ষক-শিক্ষার্থী-মেশিন” মডেল গঠন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতাও গুরুত্ব পাবে। কেবল চীন নয়, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও ইতালিও এআই শিক্ষা নিয়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মাধ্যমিকে গিয়ে তারা শিখবে কীভাবে এআই ব্যবহার করে পড়াশোনা ও দৈনন্দিন সমস্যা সমাধান করা যায়, আর উচ্চমাধ্যমিকে গড়বে নিজের উদ্ভাবনী সক্ষমতা।
বিশ্বজুড়ে যখন AI নিয়ে দৌড় চলছে, তখন DeepSeek, Alibaba-এর মতো চীনা কোম্পানি রীতিমতো ঝড় তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অও কোম্পানিগুলো যখন মুনাফা কমছে, তখন চীনা শেয়ারে রেকর্ডমাত্রায় মুনাফা অর্জন। এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে চীনকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-যুদ্ধে এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিযোগীতে পরিণত করবে,এবং ছোট হাতেই তৈরি হবে বড় সম্ভাবনার ভুবন!
Amir Hossan, Tsinghua University
#জীবন চক্র