মুহাম্মদ ইসহাক
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা একটা দ্বীপ হল মহেশখালি। চারিদিকে সমুদ্রবেষ্টিত একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপের নামই মহেশখালি। ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক কারণে মহেশখালি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মহেশখালি একটি ছোট্ট দ্বীপ হলেও বিশ্বের বুকে নানান কারণে এ দ্বীপের পরিচিতি রয়েছে। মহেশখালির মিষ্টিপান জগৎব্যাপী খ্যাতি রয়েছে। চিংড়ি, শুঁটকী ও কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই দ্বীপে আরো রয়েছে বনজ সম্পদ। মহেশখালির উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে লবণ, চিংড়ি, শুঁটকী ও মিষ্টিপানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর মহেশখালির উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্বসহ নানান দিক নিয়ে মহেশখালি: উন্নয়ন, নীতি ও নিয়তি নামে বইটি লিখেছেন প্রতিবুদ্ধিজীবী’র সম্পাদক সাদাত উল্লাহ খান ও শিক্ষাবিদ শাওয়াল খান। বইটি প্রতিবুদ্ধিজীবী হতে ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। মহেশখালির নানান সমস্যা ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখা রয়েছে গ্রন্থটিতে। তবে সময়ের সাহসী- ভাবুক প্রকৃতির চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে দেশের স্বার্থে, দ্বীপের প্রয়োজনে ও মহেশখালির সার্বিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে সলিমুল্লাহ খান, সাদাত উল্লাহ ও শাওয়াল খান মহেশখালির নানান বিষয় নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরেছেন।
বইটির ভূমিকা লিখেছেন এসময়ের জ্ঞানতাপস ও বহুমাত্রিক চিন্তাবিদ অধ্যাপক ড.সলিমুল্লাহ খান। সম্পর্কে তিনজনই ভাই-বোন। বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত শিল্প -সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সাধনায় নিয়োজিত এক মহান জ্ঞানী পরিবারের সন্তান। তাঁরা রক্তের বন্ধনে দৃঢ় আবদ্ধ। বাংলাদেশে যে কয়েকজন নিরপেক্ষ, নির্লোভ,একনিষ্ঠ জ্ঞানসাধক ও বহুমাত্রিক চিন্তাবিদ রয়েছেন তৎমধ্যে সাদাত উল্লাহ খান, শাওয়াল খান ও সলিমুল্লাহ খান অন্যতম। লেখা, পড়া ও গবেষণার কাজে সর্বদা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখেন। মহেশখালির ঊর্বর মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন সমাজচিন্তক ও দার্শনিক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, নৃবিজ্ঞানী ও অনুবাদক সাদাত উল্লাহ খান ও শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী শাওয়াল খান। তাঁরা তিনজনেরই জন্মভিটা ও জন্মভূমি হল ছোট মহেশখালির সিপাহিরপাড়া গ্রামে। সিপাহিরপাড়ার খান পরিবার দেশ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আর এ প্রবন্ধের লেখক মুহাম্মদ ইসহাক এর জন্মভিটা ও জন্মস্থান হল বড় মহেশখালি ফকিরাকাটা গ্রামে। সম্প্রতি বাংলা সাহিত্যে গদ্য/ প্রবন্ধে বিশেষ অবদানের জন্য মহেশখালির ভূমিপুত্র অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ এর পদক লাভ করেন। লেখকের এ অর্জন মহেশখালি তথা জন্মভিটা ও জন্মভূমিকে আরো সুপরিচিত ও সুখ্যাতি করে তুলেছে। এটা দ্বীপের লোকজনের কাছে একটা বিশাল সুসংবাদ। তরুণ লেখক ও পাঠকদের জন্য অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যোগাতে সহযোগিতা করবে লেখকের এ অর্জন।
তিনজনের জন্মস্থান মহেশখালিতে হলেও জীবন -জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনজনই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ছাত্র অবস্থা থেকে তিনজনই নানান বিযয়ে লেখালেখি করছেন। মহেশখালির বুকে জন্ম নেয়া এরকম মহৎ,জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিগণ সমাজ ও দেশকে নিজস্ব আলোতে আলোকিত করেছেন। বহুকাল যাবৎ ঢাকায় অবস্থান করলেও শেকড়ের টানে নিজের জন্মস্থান বা জন্মভিটা মহেশখালিকে বিন্দু পরিমাণ ভুলতে পারেনি। তাই নিজের জন্মভূমি মহেশখালির মাটি,পানি,বায়ু ও নদী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখা বই আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জনগণের কল্যাণে ও এলাকার স্বার্থে এরকম কাজ বিরল দৃষ্টান্ত। একজন সচেতন নাগরিক হিশেবে নিজের জন্মভূমি নিয়ে চিন্তা, চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন এ বইয়ে।
সাদাত উল্লাহ খান একজন সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানী হিশেবে দেশে খ্যাতি রয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর পড়াশোনা শেষ করে স্বাধীন লেখকের জীবন পছন্দ করে নেন।তিনি ছাত্রজীবন থেকে গল্প, প্রবন্ধ, অনুবাদ ও সমালোচনা লিখে আসছেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ নামে এক গবেষণা পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তিনি একজন ব্যতিক্রমধর্মী লেখক ও গবেষক। তিনি বহু গ্রন্থের প্রণেতা। জ্ঞানচর্চা জগতে সাদাত উল্লাহ খানের বিচরণ অসাধারণ। তাঁর রচিত, সম্পাদিত, অনুবাদিত ও বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষিত সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের নাম:
উন্নয়নের সমাজতত্ত্ব(১৯৯৮), নৃবিজ্ঞান কোষ দুই খণ্ড (২০০১), নৃতাত্ত্বিক চিন্তাধারার সংক্ষিপ্ত পরিচয় (২০০৫), হস্তীর বৎসর(২০০৪), আধুনিক মালেশিয়ার গল্প (২০০৫),বাংলার কৃষক(২০০৮), প্রতিবাদী খ্রিস্টধর্ম ও ধনতন্ত্রের প্রাণশক্তি, রাজনৈতিক ইসলামধর্ম ও সাম্রাজ্যবাদসহ আরো বহুগ্রন্থ।উল্লেখ্য যে প্রতিবুদ্ধিজীবী ১৯৯৮ সাল হতে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪১ টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। যা বাংলা সাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি এ বইয়ের আলোচনাকে দুই ভাগে বর্ণনা করেছেন। প্রথমভাগের তিনটি প্রবন্ধ লিখেছেন সাদাত উল্লাহ খান। পর্যটন শহর হিশেবে কক্সবাজার দেশ-বিদেশে সমধিক পরিচিত। মহেশখালিতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মৈনাকপর্বত /আদিনাথ ও সোনাদিয়া। ভূরাজনৈতিকভাবে মহেশখালি দ্বীপটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিকট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ সরকার মহেশখালিতে দীর্ঘমেয়াদি ও বড় বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
মহেশখালির এলাকাকে অর্থনৈতিক জোন হিশেবে ঘোষণা করেছে। বড় বড় প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে। নৃবিজ্ঞানী সাদাত উল্লাহ খান লিখেছেন, “মহেশখালির উন্নয়ন মানে বাংলাদেশের উন্নয়ন। মহেশখালির উন্নয়নের সাথে সাথে গণমানুষের স্বার্থও দেখতে হবে,পরিবেশের প্রতিও সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। সবুজ অর্থনীতি এখন সময়ের চাহিদা। আরও
কিছু দূর অগ্রসর হলে দেখা যাবে বর্তমানে পৃথিবী সুনীল অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করেছে”।
উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে মহেশখালিতে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু মানবসৃষ্ট বিপর্যয় আরো ভয়াবহ হয়ে উঠে। “কক্সবাজার ও মহেশখালির বিগত একশত বছরের ইতিহাসে দৃষ্টি দিলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চিত্র দেখা যায় -সেসব বিপর্যয়ের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি, প্রাণিসম্পদ ও ধনসম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। এসব মাথায় রেখেই মহেশখালিতে উন্নয়ন প্রকল্প ও কৌশল গ্রহণ করতে হবে”। একটি সমাজ বা দেশকে আলোকিত করার পেছনে সুস্থ সংস্কৃতি, সৃজনশীল সাহিত্য ও শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রতিবছর ঢাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে বইমেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু মহেশখালির মতো বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিপ্রেমিদের মিলনমেলা তথা বইমেলার আয়োজন করেন নৃবিজ্ঞানী সাদাত উল্লাহ খান।
তিনি ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম মহেশখালিতে লেখক উৎসব ও বইমেলার আয়োজন করেন। জ্ঞানজগৎ ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মহেশখালিতে বইমেলা ও লেখক উৎসব একটি বিরল ঘটনা। মহেশখালিতে লেখক উৎসব ও বইমেলার ভূমিকা নিয়ে নৃবিজ্ঞানী সাদাত উল্লাহ খান লিখেছেন, “সমাজে যখন একটা চিন্তাশীল তরুণ সমাজ গড়ে ওঠে, তাদের চিন্তা ও কর্ম প্রকাশের একটা বৃহত্তর ক্ষেত্র তৈরিতেও লেখক উৎসাহ অনুপ্রেরণা দিতে পারে, পথ দেখাতে পারে। শুধু বসে বসে চিন্তা করলেই হবে না,চিন্তা প্রকাশের একটা আলাদা পথও তৈরি করা চাই। আমাদের আশা এই লেখক উৎসব আমাদের তরুণ সমাজের চিন্তাভাবনা প্রকাশের একটা সুযোগ করে দেবে। শুধু সুযোগ নয়,সাহসও যোগাবে”। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সমাজও পরিবর্তন হয়।জাতি শিক্ষিত ও সচেতন হলে সমাজ পরিবর্তনে সহজ হয়।মানব শরীর যখন রোগাক্রান্ত হয়,তখন চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।আত্মা ও মনে যখন হৃদয়ক্ষরণ দেখা দেয়, তখন সংস্কৃতি ও শিল্পের চর্চার প্রয়োজন হয়।নৃবিজ্ঞানী সাদাত উল্লাহ খান লিখেছেন, “লেখকরাই সমাজের সংস্কৃতি চিকিৎসক।তারাই সমাজের চিন্তাধারা বিকশিতকরণ এবং দেশ-বিদেশের নতুন চিন্তার সাথে দেশ ও সমাজকে পরিচয় করিয়ে দেন।বর্তমানে মহেশখালিতে যে একদল লেখক ইতিমধ্যে জন্মেছেন তাদের সাথে অনাগত লেখকদের একটা সেতুবন্ধন তৈরিতে এই লেখক উৎসব ও বইমেলা নিশ্চয় একটা ভূমিকা পালন করবে”। সংস্কৃতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সামাজিক সংস্কৃতির পাশাপাশি মহেশখালিতে আরেকটা সংস্কৃতি প্রচলিত আছে। এটার নাম গেলমান সংস্কৃতি। এ বইয়ে গেলমান সংস্কৃতি সম্পর্কেও বর্ণনা রয়েছে।
বইটির দ্বিতীয় ভাগের পাঁচটি প্রবন্ধ লিখেছেন শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী শাওয়াল খান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৮৮ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন থেকে সৃজনশীল লেখালেখি করে আসছেন। শাওয়াল খান একজন লেখক, গল্পকার, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের নাম: বাংলা একাডেমি থেকে অক্টোপাস (১৯৯৬), রাঙাডোরা(২০০২), শিক্ষাজগৎ (২০০৯), রোদেলা হতে মার্কিন সাম্রাজ্য পতনের পরে(২০০৯), এডুসেন্ট্রিক হতে শিক্ষার দৃষ্টান্ত ও শিক্ষানীতি (২০২৪)। সম্প্রতি ২০২৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাষ্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শিক্ষাবিদ ও খ্যাতিমান লেখক শাওয়াল খান। তাঁর এ অর্জন মহেশখালিকে আরো সমৃদ্ধ ও জাতীয় পর্যায়ে আরো পরিচিত করে তুলেছে। তিনি বর্তমানে শিশু ও নারী শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও অব্যাহত শিক্ষা গবেষণায় নিয়োজিত। তিনি এ বইয়ে মহেশখালির বনজ সম্পদ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ,নারীদের অবস্থান, উন্নয়ন ও পরিবেশ নিয়ে সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন। “মহেশখালি বঙ্গোপসাগরের কোলে সবুজ ঘেরা অনন্যসুন্দর একটি দ্বীপ। এ দ্বীপের সবুজের সমারোহ বনজঙ্গল, পাহাড়পর্বত, নদী শুধু সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়,মূল্যবান প্রাকৃতিক পুঁজিও। আমরা যেন প্রাকৃতিক পুঁজি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হেলায় না হারাই। প্রাকৃতিক পুঁজি হারিয়ে উন্নয়ন টেকসই হয় না, ভারসাম্যমূলক অর্থনীতিও তৈরি হয় না। উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি”। মহেশখালিতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। সরকার আরো নানা ধরনের প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু প্রকল্পগুলো যেন পরিবেশবান্ধব হয়। এ উন্নয়নে এলাকার জনগণের পেশার পরিবর্তন হবে।জমি হারানো ব্যক্তিরা যেন ন্যায্য পাওনা পায়।উন্নয়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।
এ সময়ের জ্ঞানশীল দূরদর্শী চিন্তাবিদ অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান এ বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, “এই বইয়ের লেখকদ্বয় আমার নিকটতম আত্মীয় -যথাক্রমে আমার সহোদর ভাই ও বোন। তবে মাত্র সেই কড়ারে আমি এই ভূমিকা লিখিতে বসি নাই।বয়সে কিছু ছোট হলেও দায়িত্বজ্ঞানে,কি কর্তব্যনিষ্ঠায় কিংবা দূরদৃষ্টিযোগে তাঁহারা নিঃসন্দেহে আমার উত্তমর্ণ।তাঁহাদের বিষয়ে আমার বেশি কথা বলা হয়তো
সমীচীন হইবে না। এই অবসরে মাত্র বলিতে পারি,শিক্ষাজীবনের দোরগড়ায় ইঁহারা দুইজনেই মহাত্মা আহমদ ছফার সাহচর্য লাভ করিয়াছিলেন। আর কি বলিব,ইহাদের উদাহরণ হইতে আমি অনেক কিছু শিক্ষা করিয়াছি। আমাদের বাড়িতে যে কয়েকটি লেখক জন্মিয়াছেন তন্মধ্যে এই দুইজনই শ্রেষ্ঠ”।
লেখক সলিমুল্লাহ খান ২০২১ সালের মার্চ মাসে ফিনল্যান্ডের কবি পেন্টি সারিকস্কির কাব্যগ্রন্থ ‘উহারা বাতাসে : কবিতা ১৯৫৮-১৯৮০’ অনুবাদ করেন। তিনি জার্মান কবি ডরোথি জুল্লের কবিতার বই অনুবাদ করেন। ১৯৯৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ‘আল্লাহর বাদশাহি’ নামে প্রথম প্রকাশ পায়। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায় ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে। অনুবাদ করেছেন ‘সক্রাতেসের তিন বাগড়া’ (২০০৫)। এছাড়া আরো অনেকগুলো বই রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:- আ মরি আহমদ ছফা : বিষয় বাঙালি মুসলমানের মন (২০২৪), উৎসর্গ : পরিবার প্রজাতি রাষ্ট্র (২০২৩), ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়: ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা (২০২৩), প্রার্থনা (২০১৯), আহমদ ছফা সঞ্জীবনী (২০১০), স্বাধীনতা ব্যবসায় (২০১১), আদম বোমা (২০০৯), এক আকাশের স্বপ্ন (১৯৮১) ও বাংলাদেশ: জাতীয় অবস্থার চালচিত্র (১৯৮৩) ইত্যাদি।
বইটির বিষয়বস্তু মূলত: মহেশখালিকে নিয়ে আলোচনা। মহেশখালিকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন ও বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা ও জনগণের দাবি ফুটে উঠেছে। মহেশখালি দ্বীপে জন্ম গ্রহণ করেছেন বলেই দ্বীপবাসীর চিন্তা- চেতনা ও অধিকার নিয়ে লেখকদ্বয় বইটি প্রকাশ করেছেন। মহেশখালির ইতিহাসে লেখকদ্বয় এরকম সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল কাজের জন্য অমর হয়ে থাকবেন।
মুহাম্মদ ইসহাক, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক