এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৫১- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৫১- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

টাস্কি খাওয়া

হানিফ ওয়াহিদ:

সালেহা ভাবি আমাদের পাশের বাসার নিজাম ভাইয়ের বউ। আমার বউয়ের সাথে তার গলায় গলায় ভাব।

আমার ধারণা, যদি তাদের লেজ থাকতো, তাহলে লেজে লেজেও ভাব হতো।

নিজাম ভাই আমাদের বংশীয় আত্মীয়। চাচাতো ভাই। তার সাথে আমার সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়। ওয়ারিশান সম্পর্কিত বিরোধ আছে।

নিজাম ভাইয়ের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বউ প্রায়ই খোঁটা দেয়। তার ধারণা নিজাম ভাই মাইডিয়ার টাইপ লোক। এমন ভদ্রলোক কালেভদ্রে দেখা যায়।

আমিই বরং শয়তানের জ্যাঠাশ্বশুর। নিজাম ভাই নেহায়েত ভদ্রলোক বলেই আমাদের সাথে সম্পর্ক এখানো ধরে রেখেছেন। আর যদি তিনি আমার মতো মিচকে শয়তান হতেন তবে,,,, এমন জামাই পেলে যেকোন মেয়ের জীবনই সার্থক।

সালেহা ভাবি আর বউয়ের মধ্যে এতোটাই ভাব যে তারা পারে তো এক ব্রাশ দিয়ে  দুইজন দাঁত মাঝে। এক কাপ চা-ও তারা দুইজনে ভাগ করে খায়। এই বাড়ির আলুভর্তা শুটকি ভর্তা ঐ বাড়িতে যায়। ঐ বাড়িতে ডাঁটা শাক রান্না করলেও এ বাড়িতে আসে।

এরা কথা বলে যত, খিলখিলিয়ে হাসে তত। যেন ছোটবেলার সখি।

আমি তাদের ভাব ভালোবাসা দেখে একদিন বললাম, যত হাসি তত কান্না, বলে গেছেন রাজেশ খান্না।

বউ বিরক্ত গলায় বলল, কেন, আমাদের  বন্ধুত্ব দেখে তোমার হিংসা হয়? এমন বন্ধুত্ব করতেও মুরোদ লাগে।  আছে তোমার এমন মুরোদ?  পেট বোঝাই খালি হিংসা!

আমি বলি, ও মা! হিংসা হবে না!  এই বদ মহিলার কারণেই তো তোমাকে কাছে পাই না।

বউ তেড়ে এসে বলল, এই খবরদার! বদ মহিলা বলবা না। মানুষকে সম্মান দেখানো পারিবারিক শিক্ষা। বুঝতে পারছি তোমার সেই পারিবারিক শিক্ষা মোটেও নাই। থাকলে এমন একজন ভালো মানুষকে বদমহিলা বলতে না…

আমার হিংসার কারনেই হউক, কিংবা বদদোয়ার কারণেই হউক, তারা এখন চিরশত্রু। একজন যদি ভারত হয়, অপরজন পাকিস্তান।

ইদানীং দুইজন হয়ে গেছে জানের দুশমন। একজন আরেকজনের ছায়া দেখতেও নারাজ। পারে তো একজন আরেকজনের পিছনে গুন্ডা লেলিয়ে দেয়।

একজনের বাড়িঘর আরেকজন পুড়িয়ে ছারখার করে দিতেও তাদের আপত্তি নাই।

তাদের এই শত্রুতার পিছনে আছে সালেহা ভাবির ছোট্ট একটা ভুল। তিনি একদিন ভুল করে আমার বউয়ের কাছে আমার প্রশংসা করে বলেছিলেন, এই বয়সেও ভাইকে বেশ হ্যান্ডসাম আর কিউট লাগে। জামাই হো তো এ্যয়সা! আহা! কী অমায়িক মানুষ!

এরপরই তাদের সম্পর্ক কাটআপ।

বউয়ের ধারণা সালেহা ভাবি আমার দিকে কুনজর দিয়েছেন। সে নাকি তার সারাজীবনেও এতো খারাপ মহিলা দেখে নাই!

আমি একদিন মিনমিনে গলায় বললাম, সেই বেচারা  না হয় আমার প্রশংসা করে ভুল করে ফেলেছে, তুমি যে সারাক্ষণ তার জামাইয়ের প্রশংসা কর, তার কী হবে?

বউ আমার দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, তারপর জ্বলন্ত চোখে আমাকে ছাই ভস্ম করার উপায় খুঁজতে খুঁজতে বলল, বেচারা!  সেই দুষ্ট চরিত্রের মহিলা তোমার কাছে বেচারা হয়ে গেল! আমি হয়ে গেলাম তোমার শত্রু? যাও, দৌড়ে গিয়ে সেই মহিলাকে কোলে নিয়ে একটু নেচে আসো? দৌড় দেও, বসে আছো কেন? মুরগি দেখলেই নিজেরে শিয়াল ভাবতে ইচ্ছে করে, না?

আরে এসব কী বল! আমি তোমার জামাই না!

জামাই হলে কী হবে,পুরুষ মানুষ তো। পুরুষ মানুষের খাইষ্টা খাসালত আছে, এরা মরার পর খাটিয়ায় ওঠেও যদি একটু চোখ মেলবার সুযোগ পায়,আগে তাকাবে মেয়েমানুষের দিকে।

ভয়ে আর কথা বাড়ালাম না। পাগল খেপিয়ে লাভ কী? আমি ভালো করেই জানি, বউ আর কোকের বোতল একই জাতের, হুদাই ছ্যাঁৎ কইরা ওঠে।

এরপরও বউ একদিন খোঁটা দিয়ে বলল,  জগতে কিছু মানুষ আছে, গ্যাঞ্জাম  ছাড়া তাদের ভালো লাগে না। আবার কিছু মিচকে শয়তান আছে পেটে বোমা মারলেও কথা বের হয় না। সালেহা ভাবি  প্রথম দলে, তুমি দ্বিতীয়।

আমি বললাম, আমাদের এলাকার অনেকেই জানে,  তোমার ঘরে একজন অতি নিরীহ  জামাই আছে, যাকে তুমি ভুল করে মিচকে শয়তান বল। দিস ইজ নট ফেয়ার!

বউ অবাক হওয়ার ভান করে বলল, তুমি নিরীহ?  হাউ ফানি জরিনার নানি! তুমি যদি নিরীহ হও, তবে ছাগলও সিংহ। এই সংসারটা টিকে আছে শুধু আমার জন্য। তুমি তো টাকা ছাড়া কিছুই চেন না, ব্যাংকে যে কিছু টাকা জমাইছো, কার জন্য?

আমি একদিন অতি নিরীহ গলায় জানতে চাইলাম, আচ্ছা বউ, তোমাকে যদি আজকে ব্যাংকে রাখি, সুদে আসলে দশ বছর পর কয়টা বউ পাওয়া যাবে?

বউ পারে তো তক্ষুনি আমাকে খুন করে!

নিজাম ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। সালেহা ভাবিসহ এসেছেন দাওয়াত দিতে।

ভাই আমার হাত ধরে বলল, হানিফ ওয়াহিদ ভাই, শত হলেও আমরা কিন্তু রক্তের ভাই।  আমার মেয়ে আর আপনার মেয়ে কোনো পার্থক্য নাই। বিয়েতে কিন্তু ভাবিকে নিয়ে অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন।

সালেহা ভাবিও বউয়ের হাত চেপে ধরে বলল, ভাবি যদি ভুল করি,ক্ষমা করে দিয়েন। আপনি না গেলে কিন্তু ভীষণ কষ্ট পাবো।

বউ নাকমুখ শক্ত করে বসে রইল। কোনো কথা বলল না।

তারা চলে যাওয়ার পর বললাম, কী করবা? বিয়েতে যাইবা?

বউ রাগি গলায় বলল, তোমার মনে যদি এতো রং লাগে তাহলে তুমি যাও। আমার মনে এতো রং লাগে নাই তুমি তো যাইবাই, ঐ বাড়িতে তোমার নাগর থাকে না!

এরপর আর কথা চলে না।

এর কিছুদিন পরই বউ বলল, এই চল, মার্কেটে যাবো। কিছু কেনাকাটা করতে হবে। জামাকাপড় কিনবো।

আমি অবাক হয়ে  বললাম, তুমি তো ঈদের সময় সারা বছরের জামা জুতো কিনে আনো। এখনো ঈদের মেলা দেরি।

আরে বুদ্ধু, ঐ বাড়িতে যে বিয়ে তা ভুলে গেলা? বিয়ের সময় এই ত্যানাত্যানা  কাপড় পরলে তোমার মান থাকবে?

আমি আনন্দে নাচতে নাচতে বউকে নিয়ে মার্কেটে দৌড় দিলাম। যাক, অবশেষে বউ বিয়েতে যেতে রাজি হয়েছে। হায় আল্লাহ! বিয়েতে যাবে না বলে মনে মনে কত গালি দিয়েছিলাম, অথচ বউটা আমার কতো ভালো!

নিজের মনে নিজেই লজ্জিত হলাম।

এক দোকান থেকেই বাড়িতে পরার জন্য সে চারটা ড্রেস কিনলো। বাইরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য কিনলো দামি দুইটা।

বাড়িতে প্রচুর ড্রেস আছে, তারপরও এতোগুলো কেনায় মনে মনে বিরক্ত হলেও প্রকাশ্যে কিছু বললাম না। পাগল খেপিয়ে লাভ নাই।

আমি দাম দিতে যাবো, দোকানদার আরেকটা দামি ড্রেস বের করে বলল, ভাবি, এইটা দেখেন। এইটা পরলে আপনাকে একেবারে দীপিকা পাড়ুকোনের মতো দেখাবে।

হাবভাবে বুঝলাম, বউ ড্রেসটা পছন্দ করেছে। সে একহাতে ড্রেস নাড়াচাড়া করছে আর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমার মনোভাব বুঝতে চাইছে।

আমি বললাম, পছন্দ হলে নিয়ে নাও।

বলতে দেরি,দোকানদারের প্যাকেট করতে দেরি নাই।

সেখান থেকে বেরিয়ে আমাকে টেনেহিঁচড়ে  নিয়ে গেল একটা পুরুষদের কাপড়ের দোকানে। ব্রান্ডের দোকান। আমার জন্য দুইটা দামী শার্ট আর একটা প্যান্ট পছন্দ করলো।

আমি তার কানে কানে বললাম, আরে ঘটনা কী?  আমার জন্য এতো কাপড় কিনতেছো কেন? বাড়িতে কাপড়ের অভাব আছে?

সে ফিসফিস করে বলল, বোঝ না কেন? বিয়ে-শাদির ব্যাপার স্যাপার,,,বাড়িতে ত্যানা পইরা থাকবা নাকি?

আমিও ফিসফিস করে বললাম, এতো এতো সুন্দর জামাকাপড় পরে যদি ঘুরে বেড়াই, সালেহা ভাবির আমার উপর  নজর লাগবে না তো?

বউ কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

বিল মিটিয়ে  দোকান থেকে বেরিয়ে আমি  বললাম, মনে হইতছে সালেহা ভাবির মেয়ের বিয়ে নয়, আমাদের মেয়ের বিয়ে। উনারাও নিজেদের জন্য এতো জামাকাপড় কিনে নাই। বিয়েতে তুমি একসাথে কয়টা জামা পইরা যাইবা?

বউ থমকে দাঁড়িয়ে বলল, কে বলল আমি বিয়েতে যাবো?

এবার আমার ভিমরি খাওয়ার পালা, এই যে এতো জামাকাপড় কিনলা?

আরে বুদ্ধু, বাড়ির উপর বিয়ে। তোমার কত দূরের  আত্মীয় স্বজন আসবে। আমি কি ফকিরের মতো ঘুরবো নাকি! লোকজন আমাদের দেখবে না? আমাদের একটা ইজ্জত আছে না!

আমি রাগান্বিত হয়ে বললাম, সেটা না হয় বুঝলাম, আমার জন্য এতো কাপড় কিনলা কেন? বিয়েতে না গেলে আমিও কি ওগুলো পরে বসে থাকবো?

অবশ্যই। সেদিন তুমি নতুন জামাকাপড় পরে বাড়িতে ঘোরাঘুরি করবা, যাতে বিয়েবাড়িতে যত মহিলা আসবে, ওরা যেন তোমারে দেখে টাস্কি খায়।

টাস্কি খেয়ে লাভ কী?  আমি কি এই বয়সে ওদের সাথে প্রেম করবো? কয়জনের সাথে করবো?

বউ গদগদ কণ্ঠে বলল, ওরা দেখুক, আমার জামাইটা কত কিউট। কত হ্যান্ডসাম। বলেই সে গর্বিত হয়ে  আমার একটা হাত চেপে ধরল।

আমি অভিমান করে বললাম, এখন কিউট বলতেছো, মাঝে মাঝে যেই পচানি দেও…

বউ আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, আরে হাবলু, মেয়েদের মুখের কথা সবসময় ধরতে নাই। মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তাকে উল্টাপাল্টা কথা বলে মজা পায়।

কিছুক্ষণ আগে আসা রাগ হঠাৎ করে কেন যেন জল হয়ে গেল। আমিও তার হাত চেপে ধরলাম।

বুঝলাম, বিয়ের পর মেয়েদের গর্বের একমাত্র জায়গা হচ্ছে তার স্বামী।

সব মেয়ে চায়, তার স্বামীকে দেখতে যেন সুন্দর দেখায়।

 

 

হানিফ ওয়াহিদ, গল্পকার

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে