মিনহাজুল ইসলাম মাসুম
তাবুকের কথা:
বিশ্বনবি (সা.)—এর তাবুক অভিযান এবং বর্তমানে নিওম সিটির কারণে তাবুক আমাদের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে! অবশ্য এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে আগে থেকেও ছিলো। তাবুক সৌদি আরবের উত্তর—পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। যা জর্ডান—সৌদি আরব বর্ডারের কাছাকাছি। লোহিত সাগর বয়ে গেছে তাবুকের পাশ দিয়ে। সাগরের অপর তীরে রয়েছে গৌরবময় মিশর। টলেমি আরবের উত্তর—পশ্চিম কোণে ‘তাবাওয়া’ নামে একটি জায়গার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এই নামটি থেকে ‘তাবুকা’ বা ‘তাবুক’ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। তাবুক প্রদেশের আয়তন ১,৪৬,০৭২ বর্গ কি. মি. এবং মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ৭,৯১,৫৯৫জন। অভিবাসীসহ প্রায় ২৫ লাখেরও বেশি বলে প্রবাসীরা জানিয়েছেন। আয়তন বাংলাদেশের প্রায় সমান হলেও জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ হাজার হাজার বছর এগিয়ে! ১৯৮৭ সাল থেকে তাবুকের গভর্নর হিসেবে আছেন ফাহাদ বিন সুলতান।
হৃদয়ের জল্পনা—কল্পনা যখন তাবুক:
তাবুকের আসার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন আগে থেকে। এবার উমরাহ সফরে এখানে আসাটা পরিকল্পনায় এগিয়ে রাখি। ৫ অক্টোবর’২৩ মদিনা আসি চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাংলাদেশ বিমান করে। ছয়দিন মদিনায় থেকে ১২ অক্টোবর সেপ্টকো বাসে করে তাবুকের অভিমুখে রওয়ানা দিই। এর আগে বন্ধু ইলিয়াসসহ গিয়ে টিকেট কনফার্ম করি। অগ্রজপ্রতীম ও তাবুকে অবস্থানরত মাহমুদুল হক ভাইকে আসার কথাটা জানিয়ে দিই।
পাহাড়তলীর বড় ভাই দিদারুল আলম চৌধুরী এবং ফটিকছড়ির দাঁতমারার সেলিম ভাইকেও আমার আসার ব্যাপারে কনফার্ম করি। সকাল ৯টায় গাড়ি ছাড়ে। এগিয়ে যায় ধূ ধূ মরুর বুক চিরে। চারদিকে জনমানবহীন বিশাল প্রান্তর। ইলিয়াস কিছুক্ষণ পর পর ফোন দিয়ে জেনে নেয় কতদূর গেলাম। ৪/৫ ঘণ্টা চলার পর ‘তাইমা’ নামক স্থানে যাত্রা বিরতির জন্য গাড়ি থামে। এর আগে ঐতিহাসিক স্থান ‘মাদায়েন সালেহ’ ফেলে এসেছি। গাড়িতে থাকায় নামবার সুযোগ ছিল না। এটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং সৌদি আরবের প্রথম বিশ্ব ঐতিহ্য। ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর ৩২ তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
ড্রাইভার আধঘণ্টা বিরতির কথা বলে প্রায় একঘণ্টা পর গাড়ি ছাড়েন। দেরি হওয়ার পরও যাত্রীদের কোনো বাৎচিত নেই! চুপচাপ বসে আছেন সবাই। ‘তাইমা’ থেকে আরও কিছু যাত্রী আমাদের গাড়িতে যোগ দেয়। একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, সৌদিয়াতে পাবলিক বাসে সামনের অর্ধেক বাসে মহিলাদের জন্য খালি থাকে। মহিলা যাত্রী থাকুক বা না থাকুক পুরুষ বসলে এসিস্ট্যান্ট গিয়ে সসম্মানে সিট থেকে তুলে দেন। নারীর প্রতি যে বিশেষ মর্যাদা ইসলাম প্রদত্ত, এটা তার ছোট্ট উদাহরণ মাত্র।
মাহমুদ ভাইকে তাবুক সেপ্টকো স্ট্যান্ডের কাছাকাছি আসলে ফোন দিই। তিনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললেন। স্ট্যান্ডের মাঝখানে কুলিং কর্ণার দেখতে পেলাম। ১ কাপ লাল চা অর্ডার করি। চুমুকে চুমুকে চা শেষ করতে না করতেই মাহমুদ ভাইয়ের কল এলো। সালাম দিলাম। অপর প্রান্ত থেকে বলতে থাকে, আপনি কি মাসুম আঙ্কেল? বললাম, জি। বাইরে আসুন। আমি রাফি, মাহমুদ সাহেবের ছেলে। গাড়িতে উঠার আগে কুশল বিনিময় হলো। মিশরীয় ড্রাইভার করিম গাড়ি চালাচ্ছেন। পৌঁছে গেলাম মাহমুদ ভাইয়ের ইশারা তালাতিনের কর্মস্থলে। রাফি কোথায় জানি গেলো! কিছুক্ষণ পর রাফি এসে বললো, ‘আসুন আঙ্কেল, আপনার থাকার জন্য সবকিছু রেডি।’ মাহমুদ ভাইয়ের অফিসের উল্টো দিকে রোডের অপর পাশে বাসা। রাফি বলল, এখানে থাকবেন আপনি।
বিশাল রুম। কয়েকটা বেড আছে। পরিচ্ছন্ন এবং গোছগাছ করা।
রাফি বলল, এখানে আপনি একা থাকবেন। ভয় লাগবে?
বললাম না। অন্যরা কোথায় থাকবে?
এটা আমি এবং আব্বার রুম। আম্মা ফ্যামিলি ভিসায় আসাতে পাশে আরেকটি রুম নিয়েছে তারা।
আচ্ছা।
রাফি বিদায় নিয়ে চলে গেল। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। দেখি টেবিলে আমার জন্য রাতের ডিনার এরাবিয়ান ফুডস্। পেটে বেশ খিদে ছিলো। খাবার এতো বেশি ছিলো যে, একজনের দ্বারা সাবাড় করা সম্ভব নয়। কিছু খাবার নষ্ট হলো। শোবার আগে মাহমুদ ভাই কল দিয়ে খোঁজ—খবর নিলেন এবং কোনো সমস্যা হলে নিঃসংশয়ে জানাতে বললেন। আমি তো চাওয়ার চেয়ে বেশি পাওয়ায় অভিভূত!
পরদিন ছিলো জুমাবার। মাহমুদ ভাইসহ তাবুকের ‘গলাকাটা মসজিদ খ্যাত মালিক আবদুল আজিজ মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম। প্রখর রোদ বাইরে। রোদ চশমাটা ব্যাগ থেকে বের করলাম। মাহমুদ ভাই ও রাফি সাথে। মসজিদের চারপাশে বিশাল খোলা ময়দান। এখানে ইসলামি শরিয়া মতে বিচারে দণ্ডপ্রাপ্তদের শিরচ্ছেদ করা হতো। একে পাশ্চাত্য মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে বলে শোরগোল করে থাকে। কিন্তু শরিয়া মতে বিচারকে ইগনোর করার কোনো সুযোগ নেই।
আসরের পর ফটিকছড়ির সেলিম ভাই আসলেন। তিনি তাবুকের বাঙালিস্তান খ্যাত ‘সারা আল আমে’ নিয়ে গেলেন। প্রতি জুমাবার বিকেলবেলা সেখানে বাঙালি প্রবাসীদের মিলনমেলা! দিদার ভাই এলে তিনি চলে যান। কিছুক্ষণ পর নিজাম ভাইয়ের ফোন। তিনি সপরিবার তাবুক থাকেন। পরিবারসহ তারাও এলেন। রাতে এখানে—সেখানে অনেক জায়গায় নিয়ে গেলেন দিদার ভাই এবং বিভিন্ন পেশার প্রবাসীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। রাতে তার বাসা এবং ফ্যাক্টরিতেও নিয়ে গেলেন। কর্মচারীদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আরেকদিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের খতিবের হাটের আলমগীর ভাইয়ের অফিসে নিয়ে আসলেন দিদার ভাই। আলমগীর ভাই রাতে ডিনারপার্টি দিলেন। আরও ছিলেন হাটহাজারীর হাসান ভাই।
রিয়াদে থাকেন অনুজপ্রতীম মীর সালাউদ্দিন। তাকে ফোন দিয়ে তাবুক—জেদ্দা এবং জেদ্দা—দাম্মাম ডমেস্টিক টিকিট কেটে নিলাম। ব্যাগপত্র গোছাতে থাকি। ফ্রেশ শাওয়ার নিলাম। এবার বিদায় নেওয়ার পালা। কিছুক্ষণ পর মাহমুদ ভাই, মহিউদ্দিন তালত ও রাফি এলো। মহিউদ্দন ভাই দুপুরে এরাবিয়ান খাবার খাইয়ে দিলো। সন্ধ্যায় তাবুক এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয় রাফি এবং মিশরীয় ড্রাইভার করিম। কয়েকজনকে ফোন দিয়ে তাবুক সফরের সমাপ্তি টানি। এভাবে কয়েকদিন চমৎকার সময় কাটে তাবুকে। যা স্মরণ রাখার মতো।
নবিজি (সা.)—এর নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী :
ইসলামের ইতিহাসে তাবুক অভিযানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মদিনা থেকে তাবুকের দূরত্ব ৭০০ কি. মি। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে নবম হিজরিতে আল্লাহর নবি (সা.) ৩০ হাজার সেনা নিয়ে রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এটা ছিলো নবিজি (সা.)—এর জীবনে সর্ববৃহৎ সেনা অভিযান। রোমান সৈন্যরা নতুন ইসলামি রাষ্ট্র মদিনার দূত হারেস বিন উমায়ের (রা.)—কে হত্যার কারণে এ অভিযানের সূত্রপাত।
তাবুক যুদ্ধের পটভূমিতে নাজিল হয়েছে তাওবার এই আয়াত। এরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে আল্লাহতায়ালা তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য কোনো জাতিকে নিয়ে আসবেন। আর তোমরা কিন্তু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা তাওবা: ৩৯)
ইসলামি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার নীলনকশা নিয়ে রোমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু তারা ময়দানে আসেনি। নবিজি (সা.) ২০ দিন তাদের মোকাবিলা করার অপেক্ষায় ছিলেন। পরে প্রতিপক্ষ না আসায় মদিনায় ফিরে আসলেন।
মদিনায় ফিরে এসে দেখেন তিনজন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবি তাবুক অভিযানে শামিল হননি। তারা হলেন : কা’ব ইবনে মালেক (রা.), হেলাল বিন উমাইয়া (রা.) এবং মুরারা বিন রবী (রা.)। তারা রাসূল (সা.)—এর নিকট দোষ স্বীকার করেন। তাওবা করেন এবং ৫০ দিন পর সে তাওবাহ আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়। যুদ্ধের কারণ, প্রেক্ষাপট ও ফলাফলসহ বিশাল কাহিনি হাদিসগ্রন্থে রয়েছে। এ আলোচনায় সে প্রসঙ্গ আনছি না।
তাবুকে যা যা দেখলাম:
বর্তমান সৌদি আরব সরকার ভিশন—২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপের মধ্যে পর্যটনকে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে পর্যটনশিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। হজ্ব, উমরাহ ও জিয়ারাহ ভিসার পাশাপাশি সবধরণের ভিসা সহজতর করা হচ্ছে। গ্রাম ও শহরগুলিতে তথ্য—প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখলে যে কেউ অবাক হবেন! শহরগুলোর আয়তন আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পুরো দেশটিকে পাল্টে দেয়ার এক বিশাল পরিকল্পনা এগিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রথমে অবাক হয়েছি ইশারা খামসিনে বিশাল থানা ভবনটি দেখে! মাশাআল্লাহ! এত বড় থানা কম্পাউন্ড আমি দেশ—বিদেশ আর কোথাও দেখিনি।
তাবুক অভিযানের সময় যেখানে আল্লাহর নবি ১০ দিন পাঁচ ওয়াক্ত করে নামাজ আদায় করেছিলেন এক জায়গায়। সেখানে একটি মসজিদ গড়ে উঠেছে। এটিকে ‘মসজিদে রাসুল’ বা তাওবার মসজিদ বলা হয়। এক রাতে দিদার ভাইসহ গিয়েছিলাম রাসূলের মসজিদে। তখন রাত দশটার মতো হবে। এশার সালাতের পর মসজিদ বন্ধ থাকায় প্রবেশ করতে পারিনি। তাবুকের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। ঐতিহাসিক অনেক কিছু দেখার ও শেখার আছে। তাবুক মিউজিয়াম, তাবুক দুর্গ, আইনে সিকির কূপ এবং শহরের অদূরে বয়ে যাওয়া কালের সাক্ষী লোহিত সাগর রয়েছে। হযরত মুসা (আ.) নিয়ে এ সাগরের অনেক কাহিনি রয়েছে। লোহিত সাগরের জেদ্দা এবং ইয়ান্বু অংশে আগেও গিয়েছি। এই অল্প ক’দিনে বাংলাদেশ সমান আয়তনের তাবুক দেখা পুরোপুরি সম্ভব নয়। বাকিস্থানগুলো ভবিষ্যতে অন্যকোনো সময়ের জন্য তোলা রইল।
তাবুকের নিওম সিটি বা ল্যান্ড অফ দ্য ফিউচার:
‘নিওম’ বা ঘঊঙগ সিটি। ইতোমধ্যে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে সৌদি আরবের এই মেগা প্রজেক্ট। উত্তর—পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে লোহিত সাগরের তীরে বিলাসবহুল নিওম সিটি গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশ—দেশান্তরের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কেমন হবে সেই শহর? কল্পনার রাজ্যে ঢেউ খেলে যায়! যতদূর জানা গেছে, ১৬টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হবে নিওম, যা ৩৩টি নিউ ইয়র্কের সমান হবে নতুন এই শহরের আয়তন। লোহিত সাগরের তীরে নির্মাণ প্রকল্প ‘নিওমের’ আওতায় ২৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নিমার্ণকাজ এগিয়ে যাচ্ছে। তাবুক প্রদেশ, জর্দান ও মিশরের কাছে এর অবস্থান। যার বাজেট ধরা হয়েছে কমপক্ষে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫০ হাজার কোটি ডলার। ১০০ মাইল লম্বা বিলাসবহুল শহরটি পরিচিত হবে ‘দ্যা লাইন’ নামে। কার্বনমুক্ত ‘দ্যা লাইনে’ ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করতে পারবেন। শহরটি চলবে শতভাগ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি দিয়ে। এই শহরের নিয়মকানুনও সৌদি আরবের অন্যান্য এলাকার তুলনায় আলাদা থাকবে বলে জানা গেছে। এখানকার আইনি ব্যবস্থা একমাত্র সৌদি আরবের বাদশাহ’র কাছেই দায়বদ্ধ থাকবে।
‘নিওম’ নামটি নেয়া হয়েছে গ্রিক এবং আরবি থেকে। গ্রিক শব্দ নিও, যার অর্থ নতুন। আর আরবি শব্দ মুসতাকবাল, যার অর্থ ভবিষ্যৎ অর্থাৎ এই দুটো শব্দের সমাহারে শহরের নাম রাখা হয়েছে ‘নিওম’। ‘নিওম’ শহরের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে শহরটির সব কাজ শেষ হবে ২০২৫—৩০ সালের মধ্যে।
‘নিওমে’ রাতের বেলায় পুরো এলাকার আকাশজুড়ে থাকবে কৃত্রিম চাঁদ। আসল চাঁদের মতোই তার আলোয় আলোকিত হবে পুরো এলাকা। এতে কৃত্রিম মেঘমালা তৈরি করার প্রযুক্তি থাকবে। এসব মেঘের ফলে মরুভূমিতে আরও বেশি করে বৃষ্টি হবে। ‘নিওমে’ জুরাসিক পার্কের মতো একটি দ্বীপও থাকবে, যেখানে রোবট ডাইনোসরের দেখা পাওয়া যাবে।
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের মতে, ‘প্র্রযুক্তির দিক থেকে শহরটি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্টে্রর সিলিকন ভ্যালির মতো, বিনোদনের দিক থেকে হলিউডের মতো আর অবসর কাটানোর জন্য ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরার মতো।’ (বিবিসি বাংলা অবলম্বনে)
‘নিওম’ হবে আগামী পৃথিবীর আরেক শ্রেষ্ঠ আশ্চর্য! তাবুকের এখনকার যে অবস্থা, দিন দিন শহরটি দ্রুতই সম্প্রসারিত হচ্ছে। ‘নিওম’ সিটি চালু হলে পাল্টে যাবে তাবুকসহ পুরো সৌদি আরবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা।
পরিসমাপ্তি :
তাবুক থেকে এয়ারে জেদ্দা আসার সময় কিছু বিপত্তি ঘটে। মদিনা থেকে তাবুক আসার আগে ‘আবইয়ার আল মাসি’র মনির আহমদ ভাই মাজরা থেকে ৮/১০ কেজির মতো ভালো খেজুর দিয়েছিলেন। হ্যান্ড ট্রলিব্যাগে কাপড়—চোপড় এবং খেজুরসহ সামান ১৬ কেজি হয়ে যায়। নিয়মমতে একজন ডমেস্টিক যাত্রী ৭—১০ কেজি বহন করতে পারেন। তাবুক এয়ারপোর্টে গিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিই। ওমরাহ হাজির পরিচয় দিয়ে ১৬ কেজির অনুমতি পাই। কিন্তু পরের ধাপে চেকিং অফিসার আবার মেপে দেখেন। মাল—সামান একটু বেশি। উনি ৭—১০ কেজির বেশি নিতে দেবেন না! মুখে আঙুল রেখে বিদ্রুপ সহকারে আমার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কালাম ওয়াহেদ। নো চুদুরবুদুর!’ মনে মনে গালি আসে! শালা কয় কী? শিখলো কোথা থেকে একথা?’ অনেক অনুনয়—বিনয় করলাম। কাজ হয়নি। অগত্যা ৫ কেজি খেজুর এবং আমার লেখা ৮টা বই রেখে আসতে হলো। বইগুলো প্রবাসী লেখকবন্ধুদের জন্য এনেছিলাম। এয়ারপোর্টে কাজ করে এমন একজন বাঙালিকে ডেকে খেজুর এবং বইগুলো দিয়ে দিই।
বড়ই আফসোস! এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি কাম্য ছিল না। অফিসারটি আমাকে ছেড়ে দিলেই পারতেন। হয়তো কোনো কারণে বাঙালিদের প্রতি ক্ষোভ আমার উপর প্রয়োগ করেছে। কয়েক বছর আগেও বাঙালিদের কাতির মুশকিল বা বড়বিপদ বলে ডাকত! এখন সে সময় আর নেই। বাঙালিদের কাজের সুনামই বেশি। মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম হয় না, তা নয়। অন্যান্য দেশের আজনবিদের শ্রম ও কষ্টে গড়ে উঠছে আধুনিক সৌদি আরব। ভিশন—২০৩০ বাস্তবায়নের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সৌদি আরব সরকার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে চায় তারা দেশকে।
তাবুক এয়ারপোর্ট থেকে জেদ্দায় মামুন মামাকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ‘বিমান থেকে নামার পর এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে এসে রোডে এসে নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করুন। আমি ১০/১৫ মিনিটেই আসছি।’ জেদ্দায় উনার বাসায় ক’দিন থাকার পর ওমরাহ্ করতে মক্কায় এলাম।
মিনহাজুল ইসলাম মাসুম, সম্পাদক, ইদানিং