এখন সময়:রাত ৮:৫৭- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:রাত ৮:৫৭- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

নাকের নোলক

অরূপ পালিত

কাল রাত থেকেই শরীরটা তেমন ভালো নেই। প্রতিদিন অফিস আর বাসা, এইটুকু করতে করতে দিন পার হয়ে যায়। সকাল থেকে অফিসে যাব কি যাব না এই করতে করতে নয়টা বেজে গেছে। অফিস থেকে বসের ফোন। একটু অফিসে আসতে হবে। নিরুপায় হয়ে নেভী থেকে ১০ নাম্বার বাসে উঠলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। বাসে ভীষণ গাদাগাদি। মনে হচ্ছে কেউ একজন এই ভিড়ের মধ্যে আমার পকেটে হাত দিল। সরে গিয়ে কষ্ট করে একপাশে কোন রকম দাঁড়ালাম। ইপিজেডের কাছে আসতে বাসের ভিড় কমে গেছে। একটু স্বস্তিবোধ হলো। ড্রাইবারের সামনে গিয়ে মহিলার পাসের সিটে হেলান দিয়ে বসলাম।
হঠাৎ চোখ পড়লো মহিলার সিটের দিকে। চোখে কী দেখলাম বুঝতে পারছি না। নিজের চোখকে কষ্ট হচ্ছে বিশ^াস করতে।
নন্দিনী এই শহরে! তা আবার আমার এতো কাছে। সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে আসলো। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে ঘামে আমার সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে। হাতে একটু চিমটি কাটলাম। না তো ঠিক আছি। কাছে গিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, তুমি তো আমার নন্দিনী?
বুঝলাম না,এ কি করে সম্ভব ?
মানুষ যে বলে পৃথিবীটা গোল আসলে ঠিক। যেমন আত্মার সাথে মিললে আত্মীয়তা হয়। মনের মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন শুনতে পেলে তো হয় প্রেম। ভালো লাগলে তবেইতো ভালোবাসা ।
ভালোবাসার মানুষটিকে কোন সময় ফাঁকি দেয়া যায় না। হৃদয়ের টানে একসময় না একসময় দুজনকে কাছে নিয়ে আসে।
নিজের অস্থির মনকে শান্ত করতে স্থির করলাম ভিড়ের মাঝে নন্দিনীর চোখের আড়াল হয়ে বাস থেকে নেমে যাব। সামনের বাস স্টপেজ, বাস থামলো। কী দুর্ভাগ্য আমার। শেষ পর্যন্ত তুমি দেখেই ফেললে। নন্দিনী তোমার চোখে চোখ রাখতে আমার কষ্ট হচ্ছে। নিজের উপরে রাগ ও লজ্জা লাগছে ভীষণ ।
আজকেও তুমিই সেই আগের মিষ্টি হাসিটা দিলে। যে হাসিটার প্রতি আমি সবসময় দূর্বল ছিলাম। আমি তোমার চোখে চোখ রেখে হাসতে পারলাম না, কষ্টে। তোমার মুচকি হাসিতে চোখ পড়লো আমার দেওয়া সেই নাকের নোলকে। চিকচিক করছে আজও তোমার নাকের নোলকটা। আমার হৃদয়টা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। মনে হচ্ছে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
”বিশ্বাস করো প্রিয়া
হতে পারতাম যদি- তোমার নাকের নোলক
জড়িয়ে নিতাম সুখ
আদরে আদরে ভরিয়ে দিতাম
তোমার হাসিমাখা মিষ্টি চাঁদ মুখ।”

নন্দিনী হঠাৎ তোমার রক্তচক্ষুর চাহনি দেখে মনে হলো, আমাকে সামনে পেলে হিং¯্র বাঘিনীর মতো এক থাবায় আমার হৃদয় উপড়ে নিয়ে যাবে। জানি,আমার উপরে অনেক রাগ জমে আছে তোমার।
সেদিন না হয় ভুল করেছিলাম তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে। সেই ভুলের মাশুল এইভাবে আমাকে আমৃত্য পর্যন্ত দিতে হবে। যতদিন বেঁচে থাকব তোমার কাছে মরার মতো হয়ে বেঁচে থাকব।
সেদিন তুমি ছিলে সঠিক,আমি ছিলাম ভুলের দ্বারপ্রান্তে।
আমার দেওয়া সেই নাকের নোলকটা এখনো তোমার নাকের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে। আজকে তুমি আমাকে দেখার পর থেকে তোমার নাকের ওপর হাত দিয়ে বসে আছো।
মনে হয় তুমি তো সবকিছু জানতে। তবে আসনি কেন? মেডিকেলে কতো বছর কেটেছে সেটা এখন মনে করতে পারিনা।
তোমার কি মনে আছে ? আমার প্রথম টিউশনির টাকা দিয়েই তোমাকে প্রথম ভালোবাসার উপহার দিয়েছিলাম।
তুমি সেদিন আমার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বলেছিলে, এটা তোমার জীবনের প্রথম এবং শেষ নাকের নোলক হবে। তুমি তোমার কথা রাখলে। কিন্তু আমি তো পারলাম না।
সেদিন তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আমি যে ভুলটা করেছিলাম, আজ সেই ভুলের মাশুল এখনো দিচ্ছি।
আমাকে কাপুরুষের দলে ফেলো না।
তোমার সেই শূন্যস্থানটা এখনো পূরণ করতে কেউ আসেনি। আর আসবেও না।
আমার কাছে তুমি সেই রাতে শূন্য হাতে চলে এসেছিলে। তোমার কান্নায় আমি কেঁদে ছিলাম। আমার বাসায় কারো হৃদয়ে একটু মমতা জাগেনি। উল্টো তোমাকেই আমার পরিবারে সবাই মিলে অপমান করেছে। কারণ কী জানো ?
তুমি ছিলে আমার চাচির বোনের মেয়ে। চাচির মনে বড্ড হিংসা ছিল।
তুমি আড়ালে যাওয়ার পর থেকে আমি বন্দীত্বতে বরণ করে নিলাম। অনেক দিন ঘরের মধ্যে বন্দি জীবন। কিছুদিন পর পর মেডিকেল।
আমাকে ওরা বাঁচিয়ে রেখেছিল আমার সম্পদের জন্য। তোমার জন্য এখনোও কাঁদি। সেই কৃষ্ণচুড়া গাছের নীছে। একা…..
অন্ধকার নেমে আসলে।
মেরুদন্ডহীন পুরুষ আমি। খবর নেইনি সেই রাতে তুমি কোথায় গিয়েছিলে ? অথচ তুমি সেই রাতে আমার কাছে এক কাপড়ে চলে এসেছিলে। এই বৃষ্টি রাতে আদৌও কি তুমি তোমার মা বাবার কাছে কী ফিরতে পারলে কিনা খোঁজ নিতে পারেনি। আমার চাচাতো ভাই কাসেম আমাকে বলেছিল তোমাকে যদি বিয়ে করি তোমার ছোট ভাই অনিকে কেটেঁ কর্ণফুলিতে ভাসিয়ে দেবে। বিশ্বাস করো নন্দিনী আমাদের সুখের চাইতে তোমার পরিবার রক্ষা আমার কাছে আগে ছিল।
বেকারত্ব জীবনের চেয়েও চাচা চাচীর মুখের উপরে আমি কোনদিন কথা বলিনি।
সেদিন নিজের ভালোবাসাকে নিজেই গলা টিপে হত্যা করলাম।
আজ কোন মুখে তোমাকে জিজ্ঞাসা করি। কেমন আছো তুমি?
ইচ্ছে করছে আজ তোমার নাকের নোলকটা ছুঁয়ে দেখতে। সামনের স্টপেজ আমি নেমে যাব।
তোমার গন্তব্য কোথায় জানিনা। হয়তো বা আর কোনদিন দেখা হবে কি-না তা ও জানিনা। আর বলা হবে না তোমার সেই শূন্যস্থানের কথা। বিশ্বাস করো তোমার মিষ্টি কন্ঠস্বরটা আজো ভুলতে পারিনি। আমি চোখ বুঝলেও শুনতে পাই।

” মন পড়ে, কত-না দিন রাতি
আমি ছিলেম তোমার খেলার সাথী।
আজকে তুমি
তেমনি করে সামনে তোমার রাখো ধরে,
আমার প্রাণে খেলার সে ঢেউ
তোলাও, তোলাও, তোলাও আমার হৃদয়”

হঠাৎ বাসর কন্ড্রাক্টরের চিৎকারে আমার সম্বিৎ ফিরে। স্যার, সবাই নেমে গেছে আপনি নামবেন না। একটি দীর্ঘশ্বাস…
তুমি ভালো থেকো, হে আমার নন্দিনী।

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে