এখন সময়:রাত ১:৫৪- আজ: বৃহস্পতিবার-২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:রাত ১:৫৪- আজ: বৃহস্পতিবার
২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

নায়েব বাড়ির বড় বউ

রোখসানা ইয়াসমিন মণি

 

সিনথি, আমরা অ্যাম্বুলেন্সে। হাসপাতালে রওয়ানা দিয়েছি। আম্মা স্ট্রোক করেছে।তুমি টাওয়ারে চলে যাও।ওখানে লিজা ভাবি,রিপন,বাবু, টুপুল সবাই আছে।কান্নাকন্ঠে ফোন করে রায়হান।

সিনথি কী করবে ভেবে পায় না। মাত্র মিটিং শেষ করে বাসায় ঢুকেছে।এখনও ফ্রেস হয়নি।সারাদিন উপজেলা পরিষদে প্রধান শিক্ষকদের সভা ছিল। একটানা চলেছে মিটিং মাগরিব পর্যন্ত।লাঞ্চ, নামাজ কিছুর জন্যও  বিরতি পায়নি। শেষে সকল প্রধান শিক্ষক অসহ্য হয়ে হৈ — চৈ শুরু করে দিলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিটিং শেষ করতে বাধ্য হন। নামাজ পড়তে না পেরে কিছু শিক্ষকদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।তবে ভয়ে কেউ কিছু বলছে না। ক্ষুধা,ক্লান্তি,দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে পায়ের ব্যথা নিয়ে সিনথি যখন বাসায় ঢোকে তখন রায়হানের ফোন। ওর মা সাবিহা বেগমকে কুমিল্লা টাওয়ারে নিয়ে আসা হচ্ছে। সিনথিকে যেতে হবে। ফ্রেস না হয়েই যে পোশাকে ছিল সে পোশাকেই ছোট ছেলে অন্তুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।হাসপাতালে গিয়ে দেখে ওর মেজ জা লিজা এবং রায়হানের মামাতো ভাই রিপন,বাবু টুপুল সবাই উপস্থিত। সিনথিকে দেখে লিজা শোকগ্রস্ত হয়ে বলে,ভাবী কি হয়ে গেলো! রায়হান ভাই ফোনে জানাল খালা স্ট্রোক করেছে।

 

 

হয়ত আর বাঁচবে না। রায়হানের মেজ ভাইয়ের বউ লিজা। খালাত বোনকে বিয়ে করে ওর মেজ ভাই সায়হান। লিজা কখনো সাবিহা বেগমকে আম্মা ডাকেনি। খালাই ডেকে গেছে। সবার মুখ ভারাক্রান্ত। পণ্ডিত বাড়ির অতি প্রভাবশালী আর ক্ষমতাধর মহিলা অ্যাম্বুলেন্সে। এটা ভাবা যায়? ওনার একচেটিয়া আধিপত্যে সবাই ধরে নিয়েছে এই মহিলার অন্তর্ধানের সময়সীমা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। তিনি পৃথিবীতে মোটামুটি স্থায়ী হয়ে গেছেন। কিন্তু এ কী  শুনলো সিনথি!

অ্যাম্বুলেন্স থামে হাসপাতালে। দ্রুত ট্রলিতে রোগিকে ওঠানো হয়। এই ভারী মহিলাকে কেবিনে নামাতে পাঁচ ছয়জন মানুষ কাহিল হয়ে যায়।বেশি চাপ গেছে সিনথির ওপর। সে দীর্ঘাঙ্গী বলে ওকে কেবিনে তুলে দেয়া হয়। লম্বা শরীর আর হাত দিয়ে সাবিহা বেগমকে যেন নামাতে পারে। বেডে উঠে বুক ডাউন করে ট্রলি থেকে সাবিহা বেগমের থলথলে ভারী শরীরটা কোমর পেঁচিয়ে সিনথি দেয় টান।  অমনি ট্রলি থেকে শরীর কেবিনে চলে আসে। এরপর ধরাধরি করে হাত পা লম্বা করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। প্রচণ্ড খিঁচুনিতে সাবিহা বেগমের ডান হাত ডান পা বাঁকা হয়ে আসে। হাত পা যেন বাঁকা না হয় সেজন্য ওরা কয়েকজন সাবিহা বেগমকে চেপে ধরে।

কন্তু কিছুতেই খিঁচুনি বন্ধ হয় ন। খিঁচুনিতে সবাই ছিটকে পড়ে যাবে এমন অবস্থা। সাবিহা বেগমের হাত,পা লোহার মত শক্ত হয়ে আসে। শরীর এভাবে শক্ত হতে দেখে সিনথি ভয় পেয়ে যায়। এমন খিঁচুনি সে কখনো দেখেনি। প্রায় সাত থেকে আটজন মানুষ সাবিহা বেগমকে সোজা রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সিনথি ভাবে এটা কী মৃত্যু! ওরা কি মৃত্যুকে চেপে ধরে আছে? এত শক্তি মৃত্যুর! এতগুলো লোক সমস্ত জোর  দিয়ে চেপে ধরেও সাবিহা বেগমের হাত পা বাঁকা হয়ে আসা ঠেকাতে পারে না। মৃত্যুর কী অদ্ভুত শক্তি! প্রচণ্ড খিঁচুনিতে সাবিহা বেগম ইমমম ইমমম করছেন। শরীর অকেজো হয়ে আসছে। জিহ্বা আটকে যাচ্ছে দাঁতে। ডাক্তার দাঁতের ফাঁকে চামচ দিয়ে  জিহ্বা আলগা করার চেষ্টা করছেন। কাজ হচ্ছে না। দাঁতের চাপে জিহ্বা টুকরো হয়ে যায় করাতকলে কাটা কাঠের চেলির মতো। কী ভয়ংকর! চোয়ালের দুইপাশে রক্ত গড়াতে থাকে। সেই রক্ত এসে পড়ে সিনথির হাতের তালুতে। হায় রক্ত! আজ সিনথিরই হাতে,সময় কত বেঈমান! ঠিকই সে তার হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দেয়। যে সিনথিকে সাবিহা বেগম সহ্য করতেন না, নিজের বোনের মেয়ের জন্য জান খানদান করে দিতেন আজ সেই বোনের মেয়ে কেবিনে নিচে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। আর মৃত্যুপথযাত্রী সাবিহা বেগমের সমস্ত শরীরের ভার সিনথির ওপর। সিনথির দৈহিক গড়নের সুবিধা সবাই নেয়।লম্বা বলে যে যার মত খাটায়।পন্ডিতবাড়ির বাকী বউগুলো বেঁটে বা মাঝারি। লম্বা আর আকর্ষণীয় চেহারার জন্য সিনথি অবলীলায় সবার নজরে পড়ে যায়। তাই ডাকও পড়ে যেকোন কাজের জন্য। আজও শাশুড়ীর কেবিনে সেবা দিচ্ছে। তিনদিন আইসিউতে থাকার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাবিহা বেগম। চোখের সামনে ঘটে গেল পণ্ডিতবাড়ির তেজস্বী নারীর অকাল জীবনাবসান। অত্যন্ত কুটীল,ছলনাবাজ,ষড়যন্ত্রী ও ধূর্ত এক নারীর  জীবন প্রদীপ এভাবে নিভে যাবে কেউ কল্পনাও করেনি। মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পণ্ডিত বাড়ি। সিনথির শাশুড়ি মারা গেছে শুনে দেখতে আসেন সিনথির মা রেজিয়া বানু। বেয়াইনের মৃত্যুশয্যায় বসে দোয়া দরূদ পড়ছেন। সাবিহা বেগমের মাথার কাছে ওনার মেয়েরাও বসে আছে। সবাই তসবিহ জপছে। দাফনের পর সিনথির মা চলে যেতে চাইলে সিনথির বড় ননদ কোয়েল বলে,খালা যাবেন না। আমার মা নেই। এখন আমরা কীভাবে থাকি? আপনি আমাদের সাথে থাকেন। আমার মায়ের জন্য দোয়া দরূদ পড়েন। আপনি নামাজি মানুষ। আপনার দোয়া আল্লাহ কবুল করবে। সিনথির মা কী করবে বুঝতে পারে না। সিনথিকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়,ওরা থাকতে বলছে যখন থাকো। কখনোতো বলে নাই তোমাকে থাকার জন্য। আজ মা মরায় হয়ত তোমার জন্য খারাপ লাগছে ওদের। রেজিয়া বানু বলেন,না মা,তুমি আমাকে থাকতে বলো না। বাড়ি খালি রেখে আসছি। আনোয়ারার জ্বর। সে আমাকে বলেছে আজ কাজ করতে পারবে না। তোমার শাশুড়ি মরায় আমি এদিকে চলে আসছি। ওইদিকে আনোয়ারা কী করে কে জানে? আনোয়ারা হচ্ছে সিনথির মায়ের বাঁধা কাজের বুয়া।আজ চল্লিশ বছরেরও বেশি এই মহিলা ওদের কাজ করে আসছে। সিনথিদের কখনোই মনে হয়নি এই মহিলা ওদের কাজের লোক। নিজের মানুষের মতো আজীবন  দেখে এসেছে। চাচি বলেই ডাকে। সিনথি মাকে বুঝায়,আজ আমার শাশুড়ি মরে গেছে। এখন কার ওপর রাগ হবে মা?যে মহিলা আজীবন আমাকে কষ্ট দিয়েছে তোমাদেরও দিয়েছে সেতো নাই। আজ সব ভুলে যাও।

রেজিয়া বানু বলেন,নারে মা,কথা এটা না।কথা হচ্ছে আমার শরীরটা কেমন যেন করছে। মনে হয় বাড়ি গেলে শান্তি পাব। যাহোক, সিনথির মায়ের আর যাওয়া হলো না। থেকে গেলেন। সারারাত কোরআন দোয়া,দরূদ পড়লেন। সিনথির মা খুব পরহেজগার মানুষ। অসুখ হলেও নামাজ ক্বাজা করেন না। মাথার ডানপাশে কোরআন শরীফ আর বামদিকে অজিফা নিয়ে ঘুমান। এশার নামজ পড়ার পর সময় নিয়ে সারারাত কোরআন তেলওয়াত করেন। তারপর তাহাজ্জুদ এবং ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমান। রেজিয়া বানু পরহেজগার মানুষ। এজন্য এলাকার সবাই ভক্তি আর শ্রদ্ধা করে। সিনথির মা নিজের বাড়িটাকে ইবাদতখানা ভাবেন। এবাদতের জন্য বাড়িটা নিরিবিলি এবং যথেষ্ট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন । নিজের বাড়ি ছাড়া আর কোথাও ইবাদতে মশগুল হতে পারেন না। সেজন্য  কোথাও গিয়ে থাকতে চান না। সেই রেজিয়া বানু  রয়ে গেলেন সিনথির শশুর বাড়িতে। পরদিন দুপুরে খেয়ে দেয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় সিনথির ননদেরা বলে,খালা কাল আসবেন। আগামীকাল আম্মার জন্য তিনদিনের মিলাদ পড়ানো হবে। আপনি অবশ্যই আসবেন। রেজিয়া বানু বলেন, শরীর যদি ভালো থাকে আসবো। না হলে চিন্তা করো না। আমার বাড়ি থেকে তোমার মায়ের নামে দোয়া—দরূদ পড়বো।আর খাওয়ার কথা বলছো? শরীর এত খারাপ থাকে যে এখন না খেয়েও থাকতে পারি। খাওয়া বড় কথা নয় মা,শরীর সুস্থ থাকাটাই বড় কথা।

পরদিন মিলাদ শুরু হয়।সবাই সিনথিকে জিজ্ঞেস করে কীরে তোর আম্মা আসে নাই? মুরুব্বিরা বলে,এটা কথা? রায়হানের শাশুড়ি কত দোয়া দরূদ পড়লো,কোরআান শরীফ একটানা পড়ে গেছে,এখন মানুষটা নাই। মুরুব্বীরা মানতে পারেন না। সিনথির ননদদের বলছেন, ওই বেডিরা,তোমরা রায়হানের শাশুড়িরে বাদ দিয়া কেমনে খানা খাইবা?

বাড়ির ভেতরে চঞ্চলতা দেখা যায়। সাবিহা বেগমের পরে মুরুব্বি হলো সিনথির মা। এখন এই বয়স্ক মানুষ ছাড়া আর সবার বেয়াই বেয়াইন এসেছে। সিনথির মায়ের কদর বেড়েছে সাবিহা বেগমের মৃত্যুর পর। সহজ সরল ও এরকম পরহেজগার মহিলা অত্র অঞ্চলে দ্বিতীয়টি নেই কথাটি সবার মুখে মুখে। সবার সমীহ বাড়ে রেজিয়া বানুর প্রতি। রায়হানের শাশুড়ি আসে নাই খবর বাড়ির কর্তাদের কানে পেঁৗছে। সিনথির বড় ভাসুর আরমান এসে জিজ্ঞেস করে,সিনথি,খালা এলো না কেন?

মায়ের শরীর ভালো নেই, ভাইজান।

আমারে বললা না কেনো? রিকশা পাঠিয়ে দিতাম।

না, ভাইজান।মায়ের শরীর আসলেই খারাপ। গতকাল বহুকষ্টে সবাই মিলে রেখেছি।বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিল।

দেখি,খালার নাম্বার দাও। সবাই এসেছে। শুধু খালা ছাড়া। এটা কোন কথা? রায়হানের কোন আক্বেল নাই। রেজিয়া বানুকে ফোন করে আরমান,খালা রেডি হন। রিকশা যাচ্ছে আপনার জন্য। কতক্ষণ পর সিনথির ফোনে রেজিয়া বানু ফোন করেন,আমাকে নিয়ে টানাটানি করিস না মা! তোদের কাউরে বোঝাতে পারবো না আমার শরীর কত খারাপ! বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাইতে মন চায় না তোর শাশুড়িকে দেখে আসার পর আমার হাত পা ভেঙে গেছে। আমিও বাঁচবো নারে মা! এরকম মনে হইতেছে।

মা,কী বলছো তুমি! এমন অলুক্ষুনে কথা বলো না।

তোমার কিছু হবে না। আল্লাহ ভরসা।চলে এসো ! আমার একটা মানইজ্জত আছে না? সবাই আসছে আমার শাশুড়ির মিলাদে। শুধু তুমি নাই।

ঠিক আছে,আসতেছি আমি। কিন্তু শরীর আমার ভাল ঠেকছে নারে মা!

শেষ দুপুরের দিকে সিনথির মা আসে। কিন্তু এত দূর্বল যে কিছুই খেতে পারেন না। তসবিহ নিয়ে শুয়ে থাকেন আর চোখ বন্ধ করে জপেন। রাতটা কোনরকম ছিলেন। পরদিন সকালেই উঠে শুরু করেন বাড়ি চলে যাবেন। রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। জুনের শেষ বৃষ্টি। আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে। সকাল বেলা সবাই দেখে জলেকাদায় মাখামাখি বারান্দা উঠোন। গত কয়েকদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে তলিয়ে যাওয়ায় টের পায়নি কেউ। পণ্ডিত বাড়ির ক্ষমতাধর নারীর মৃত্যু যেনতেন ঘটনা নয়। বাড়ির পুরুষ থেকে চাকর পর্যন্ত যার ভয়ে সবাই তটস্থ থাকত সেই নারী মরে আত্মীয় স্বজন সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করেছেন। মৃতের প্রতি শেষ নিবেদন জানাতে যে যার মত ছুটে এসেছে। আহা মৃত্যু! পরম সত্যরূপে ফিরে এসেছে। আবার সারথিকে নিয়ে চলেও গেছে। কারো জন্য অপেক্ষা না করেই। রেজিয়া বানু উঠলেন। চলে যাবেন। সিনথি অনেক জোরাজুরি করেছে থাকার জন্য। ওর ননদ ভাসুরও। না থাকবেনই না। শেষে সিনথি মাকে ধরে নিয়ে রিকশায় তুলে দেয়। উঠান পিচ্ছিল হয়ে আছে। মায়ের শরীর অসুস্থ। রাতে কিছু খায়নি। তার ওপর ডায়াবেটিস রুগী। সিনথির বুক হু হু করে ওঠে। গত চারটি মাস সিনথির ওপর ঝড় গেছে। করোনা পৃথিবী গিলে নিয়েছে। সবখানে যখন লকডাউন তখন সিনথি হাসপাতালে। আত্মীয় স্বজনের সেবায় এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটেছে। দুইহাজার একুশ সাল ওর জন্য অভিশাপ নিয়ে এসেছে।একদিনের জন্যও স্থির থাকতে পারেনি। গত দুইমাসের ব্যবধানে দুই কাকার মৃত্যু,বছরের প্রথমে রায়হানকে নিয়ে ক্যান্সার হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি ওর অপারেশন,

এরপর বোনের অপারেশন,ওর ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়, নিজের চাচি, চাচি শাশুড়ি এলাকার লোকজন এদের জন্য খাটাখাটুনি করে সে ক্লান্ত। এরওপর শাশুড়ি সাবিহা বেগমের মৃত্যু সব এলোমেলো করে দিয়েছে।যেদিন সিনথির মা ওর মৃত শাশুড়িকে দেখতে আসে সিনথি খেয়াল করে ওর মা সাবিহা বেগমের মৃত মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে আছে তো আছেই।চোখের পলক পড়ে না।বিশ্ব চরাচর পেরিয়ে ওই দৃষ্টি যেন অনন্তলোকে পাড়ি দিচ্ছে। কত ঘন,গভীর আর নিষ্পলক দৃষ্টি! সিনথির বুক কেঁপে ওঠে। মায়ের ওই চাহনী ছিল শীতল,ঠান্ডা।মা কি শাশুড়ির চোখে অশরীরি মৃত্যুকে দেখতে পেয়েছিলেন?

 

মাকে বিদায় দিয়ে সিনথি কাজে নেমে পড়ে। কাজ করতে করতে অচল হয়ে আসে শরীর। একটু বিশ্রামের জন্য বিছানা খেঁাজে। কিন্তু ফুসরত পায় না। শাশুড়ী মরার পঞ্চম দিনেও একেবারেই ভেঙে পড়ে। হাত পা অবশ অবশ লাগে। হাঁটবে সে শক্তি নেই। শাশুড়ির ঘর থেকে অবসন্ন শরীর নিয়ে নিজের ঘরে আসে। এসেই দড়াম করে ফ্লোরে পড়ে যায়।অন্ধকার ঘর। বাইরে লাইট জ্বলে। ওই আলোয় ঘর আবছা হয়ে থাকে। দরোজা খোলা রেখে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর রায়হান ঘরে ঢোকে। এসেই হৈচৈ শুরু করে,সবাই আম্মার ঘরে আর তুমি এখানে! এটা কোন কথা? ওরা কী বলবে? ঘরের বউ কাজ ফেলে শুয়ে থাকলে মেহমান সামলাবে কে? রায়হানের কথায় সিনথির গা জ্বলে যায়। কোনরকম নিজেকে সামলে বলে,দেখো রায়হান চিৎকার করবে না। আমার শরীর খুব খারাপ। হাঁটু ভেঙে আসছে। শরীরে বল শক্তি পাই না। আমার কলিজা ধড়ফড় করে। আমার হাত, পা, হাঁটু ভেঙে আসছে ওদের বলেছি। মনে হয় মারা যাব এরকম লাগছে। তোমার চিৎকারে  মাথা ধরে গেছে। দোহাই লাগে চুপ করো। সিনথি এতটুকু বলে অসাড় হয়ে পড়ে থাকে। কথা বলবে সেই শক্তিও নেই। দশমিনিট পর হঠাৎ রায়হান বলে ওঠে, সিনথি গোপালপুর যেতে হবে। গোপালপুর সিনথির বাবার বাড়ি। আচমকা গোপালপুর যেতে হবে শুনে সিনথি অবাক হয়। ঘরভর্তি মেহমান রেখে সিনথি যাবে গোপালপুর,আশ্চর্য ব্যাপার না? রায়হান আবার বলে,ওঠো সিনথি, রেডি হও। জহির ফোন করেছে। তোমার মায়ের অবস্থা ভালো না। তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

কী হয়েছে রায়হান,সঠিক করে বলো। আম্মুর কী হয়েছে?

আরে চিন্তা করো না,বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাব। তাড়াতাড়ি চলো।

সিনথি ওঠে। কাপড় নামাতে আলমারির কাছে যায়।কাপড় আর নামাতে পারে না। ওখানেই পড়ে যায়। দাঁত মুখে খিঁচুনি ওঠে। গেঁা গেঁা করতে থাকে। রায়হান আমার আম্মু মরে গেছে, রায়হান আমার আম্মু মরে গেছে। তুমি গোপন করলে কী হবে আমি টের পেয়েছি। আমার হাত পা যখন ভেঙে আসছিল তখনই টের পেয়েছি কোথাও কিছু একটা হতে যাচ্ছে। রায়হান তুমি ঠিক করে বলো,আমার আম্মু মারা যায়নি? সিনথি মূর্ছা গেলে রায়হানের চিৎকারে সমস্ত মানুষ এসে ভীড় করে সিনথির ঘরে। ওর ননদেরা মূর্ছা সিনথিকে পোশাক পরিয়ে ধরাধরি করে রিকশায় ওঠায়। গোপালপুর এসে দেখে লোকে লোকারণ্য। সিনথি রিকশা থেকে নেমে ঘরে ঢুকে দেখে ওর মৃত মায়ের মাথার কাছে চাচিরা কোরআান তেলওয়াত করছে। তসবিহ জপছে। লোবানের গন্ধে ম— ম করছে ঘর। সিনথি মৃত মায়ের বুকে মাথা রেখে অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলেই গগনবিদারী চিৎকার জুড়ে দেয়,মাগো মা! কীভাবে ফাঁকি দিলে? গতকাল তোমার সাথে শেষ দেখা হবে  যদি জানতাম তোমাকে কী ছাড়ি মা! মাগো! আমাকে রেখে কী করে চলে গেলে তুমি? এত নিষ্ঠুর কী করে হলে মাগো ? আমাকে কার কাছে রেখে গেলে? বাবা মরার সময় কিছু বুঝি নাই, এখন তুমি নাই এই শোক কই রাখি! সিনথির গগনবিদারী চিৎকারে নায়েব বাড়িতে শোকের মাতম ওঠে। সবাই ওকে থামাতে চায়, পারে না। পরদিন সকাল দশটায় গোপালপুর গ্রামের সবার প্রিয় মানুষ সবার প্রিয় বউ, কারো ভাবি, জেঠিমা,সময়ের আবর্তে দাদি হয়ে ওঠা নায়েব বাড়ীর লক্ষ্মী বউটিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হলো। বাড়ি জুড়ে মানুষের হাহাকার। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। যারা রেজিয়া বানুর হাতে খেয়ে পরে বড় হয়েছে, বিপদে যে মানুষটি সবার ভরসা ছিলো সেই মানুষটিকে হারিয়ে গোপালপুর গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামে বেদনায় হায় হায় রব ওঠে। সিনথি অচেতন হয়ে পড়ে আছে। ঘরের ভেতর যারা আছে চোখের জলে রেজিয়া বানুর স্মৃতিচারণ করছে। সিনথির ছোট ফুফু শাহানা বেগম সিনথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন,সিনথি,তোর মা শহরের মেয়ে ছিল। জোবেদা খানমের ডাকসাইটে কন্যা। ডাকসাইটে কেন বলেছি সেটা পরে বুঝবি। তোর নানা ছিলেন রেলওয়ের বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার। বড্ড ধোপদুরস্ত অফিসার। চলনে বলনে কী ডাঁটসাট মানুষ। কী আভিজাত্য চলাফেরা। মাথায় হ্যাট পরতেন আর সবসময় স্যুটেড, বুটেড থাকতেন।হাতে রূপার বাঁধা ছড়ি, ক্যাপস্টেনের সুকা দিয়ে পাইপ টানতে টানতে যখন চলতেন তখন তাকে ইংরেজি সাহেবদের মত মনে হত। তোর নানা যখন আমাদের গ্রামে বেড়াতে আসত সবাই সাহেব ডাকত। অত্যন্ত সৌখিন আর চৌকস ছিলেন তোর নানা আবুল কাশেম সরকার। জমিদারের পুত্র বলে কথা। সেই জমিদারের বড় কন্যা তোর মা রেজিয়া বানু, আমাদের ভাবি হয়ে এলেন। ভাবি রাণির মতোই ছিলেন। অসাধারণ সুন্দরী,দীর্ঘদেহী,দীর্ঘচুল,পাতলা নাক, চিকণ ঠেঁাট আর ভীষণ মায়াবী। ভাবি ছিলেন তোর নানার খুব আদরের মেয়ে। চাকুরির জন্য তোর নানাকে বিভিন্ন দেশ বিদেশে যেতে হত। তখন ভাবি তোর নানার সফরসঙ্গী হতেন। ভাবী হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। তোর মায়ের হাতের লেখা ছিল মুক্তার দানার মতো গোলগাল আর তারার মতো উজ্জল। লেখাগুলো জ্বলজ্বল করত খাতায়। খুব মেধাবী ছিলেন। তার চুল ছিল বিখ্যাত। যখন স্কুলে যেতেন দীর্ঘ চুলের দুটি বেণী পিঠের ওপর সমান্তরালে বয়ে হাঁটুর নিচ অব্দি পেঁৗছে যেত। তিনপ্যঁাচে করা বেণী পিঠের ওপর ঝুলিয়ে যখন চলতেন তখন সবাই স্তব্ধ হয়ে যেত। এত লম্বা আর গোছাভরা চুল হয় কোন মেয়ের? কিন্তু তোর মায়ের ছিল এমন ভুবনভোলানো চুল। পেছন থেকে দেখলে মনে হত যেন রেলওয়ে জংশনের রেললাইন পিঠের ওপর সমান্তরালে বয়ে গেছে। তোর মায়ের স্কুলে যাওয়ার পথে থাকতো দুজন আয়া। একজনে ধরে রাখত মাথার ওপর ছাতা,আরেকজনের হাতে থাকতো স্কুল ব্যাগ আর টিফিন বক্স। তোর নানা বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় সরকারি বাংলোয় থাকতেন।বাংলোর পাশেই স্কুল।ওই স্কুলে তোর মাকে হেঁটে যেতে হবে তাতেও তোর নানার আপত্তি ছিল। তোর মা শুধু নিজের শরীর, শরীরের ওপর পোশাক,আর বিশাল চুলের বহর বহন করে স্কুলে যেত। সহপাঠীরা তোর মাকে সমীহ করে চলত। তোর মায়ের রাজকীয় জীবন ছিল ঈর্ষনীয়। অনেক গল্প আছে তোর মাকে নিয়ে। অসাধারণ সে  সব গল্প। একদিন তোর মা আমাদের বাড়ির বউ হয়ে এলেন। সে সময়ের বহু ডাকসাইটে তরুণের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে তোর মা নায়েব বাড়ীর বড় বউ হলেন। তোর দাদাা হাজী ইউনুস মিয়া পৃথিবীর প্রথম মহিলা নবাব,

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম মহিলা কবি নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণীর নায়েব ছিলেন।এই পরিচয় এবং তোর বাবা  কুমিল্লা জেলার নামকরা গণিত শিক্ষক জেনে তোর নানা আমার বড় ভাইয়ের কাছে মেয়ে বিয়ে দিলেন।গ্রামের  মানুষ কানাঘুষা,

ফিসফাস করে,হায় হায়,হাজী সাহেব কী করেছে? শহর থেইকা সাহেবের মাইয়া ধইরা আনছে?আমাদের রত্নের মতন পোলা,এত বড় সংসার, এত মানুষের গমগম, গিজগিজ করা পরিবারডারে এই সাহেবের মাইয়া সামলাইতে পারবো? হায় হায়,মাইয়ার রূপ দেইখা হাজী সাব পাগল হইয়া গেছে। রূপে কী অয়? গুণ যদি না থাকে? এই মাইয়ার গায়ে ছটাক গোস্তও নাই।। বাতাসে ধরবার আগে উইড়া যাইব। মাথায় কতগুলান আলগা চুল দিয়া ঠাইস্যা আইছে। হায় হায়,নায়েব বাড়ী শেষ। মুরুব্বিদের মাঝে হায় হায় শোরগোল। এই মাইয়া পরি। তাবিজ করছে। চুল খুইলা দেখ। মুরুবিরা চুল খুলতে লাগলো,কিন্তু চুলতো শেষ হয় না। দীঘল চুলের নাগাল পায় না ওরা। একেকজনের কাছে চুলও রূপের গল্পকাহিনি একেকরকম হতে হতে শেষে সারা গাঁও গেরাম ছেড়ে মানুষের মুখে মুখে তোর মা রাজকন্যার মতো কিংবদন্তি হয়ে ওঠে। গল্প শুনে মহিলারা ছোটে তোর মাকে দেখতে। এক ঝলক নায়েব বাড়ির বউকে দেখতে। মুরুব্বিরা বলতে লাগল,গোস্ত অইব কেমনে? চুলের ভারেইতো মাইয়া শেষ। মহিলারা চুল ধরে,তাদের কোলে তোলে। চুলের ওজন দেয় বাটখারায়। তোর মা কিছু বলে না। কী বলবে,তোর মা যে ওদের কথাও বোঝে ন!। শুধু মুচকি হাসতো। কথার জবাব হাসিতে বুঝিয়ে দিত।

তোর মা, সেই শহুরে মেয়ে নায়েব বাড়ির দায়িত্ব ঠিকই সামলাতে পেরেছে। মমতা, ভালোবাসায় এই বিরাট বাড়ির প্রতিটি মানুষকে বুকে টেনে নিয়েছে। গরীব আত্মীয়, অনাত্মীয় কেউ তোর মা থেকে নিরাশ হয়নি। বড় ঘরের মেয়ে। মনটা ছিল আকাশের চেয়েও বিশাল।নজর বড় ছিল। সবাই জানতো সব বিপদগ্রস্তদের ভরসাস্থল তোর মা। তিনি যখন নায়েব বাড়ির বউ তখন তোর কাকা ফুফিরা মিলে এগারজন। তার মাঝে দুই ফুফির বিয়ে হয়ে গেছিল। তোর মা এসে আমাকে বিয়ে দিলেন। এত বড় বাড়ি, বাড়ি ভর্তি মানুষ অতিথি সবাইকে ভালবেসেছেন তোর মা। তোর মা কোন রান্নাবান্না জানতো না। একসময় নিজেই রান্না করে সবাইকে খাইয়েছে। তোর অচল দাদিকে সামলিয়েছে। তোর দাদি মারা যাবার পর আমাদের সন্তানের মত আগলিয়ে রেখেছে। মা মরে গেছে একদিনও মনে হয়নি। তোর কাকাদের শিক্ষিত করেছে। মানুষ করেছে। বিয়ে দিয়েছে। শহরের মেয়ে বলে একদিন যারা ভয় পেয়েছিল শেষে তারাই বলত বাড়িতে বউ আনলে এমন বউই আনো। নায়েব বাড়ির বড় বউয়ের মতো। এতকথা বলে হাঁফাতে থাকে সিনথির ছোট ফুপু শাহানা বেগম। তারপর সিনথিকে বুকের ভেতর জোরে চেপে এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বলে,ও ভা—— বি——— রে!আমাদের  ছেড়ে মাটির নিচে একা  কেমনে শুইয়া রইলা তুমি?সিনথির শোক থামাতে গিয়ে যে প্রচেষ্টা এতক্ষণ শাহানা বেগম করেছিল হৃদয়ের আবেগের কাছে মিথ্যা প্রমাণ করে সেটা শাহানা বেগমের বুকেই ফিরে এলো।সংক্রামক ব্যাধির মতো এই চিৎকার সবাইকে ছুঁয়ে গেলো। একে একে উপস্থিত সকল মহিলার চিৎকার আর বিলাপে ভারী হতে থাকে নায়েব বাড়ি। সবাই শোকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শোক গভীর ক্ষত তৈরী করে। এই ক্ষত এমন যে কেউ কাউকে উপশম করতে পারে না। পারবে কী করে?যেখানে মৃত্যু খুব কদাকার আর কুৎসিত এবং শক্তিশালী সেখানে মানুষের শোক আর হাহাকার ব্যথা উপশমের নিয়ামক হয়ে ওঠে।মানুষ মৃত্যকে তো দেখতে পায় না। কিন্তু শোকের খুব গভীরে যেয়ে একে অপরকে ছুঁয়ে থাকতে চায়। কিছু মৃত্যু এমন সবাই চায় ওদেরও মৃত্যু হোক।

নায়েব বাড়ির বড় বৌয়ের মৃত্যুতে সেদিন নায়েববাড়িতে এমনই ঘটেছিল শোকে মূহ্যমান প্রতিটি মানুষ মৃত্যুর স্বাদ নিতে চেয়েছিলো। মৃত্যুও হয়তো দূর থেকে দেখছিল এই আহ্বান। কিন্তু তাতে কি তার কিছু যায় আসে? সে নিজেই সঙ্গহীন বলে কাউকে পরোয়া করে না। শুধু মাঝখান থেকে বিষাদগ্রস্ত মানুষগুলো হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকে।

 

রোখসানা ইয়াসমিন মণি, গল্পকার

কাজী নজরুল ইসলাম : বাংলা সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণপুরুষ

আ.ম.ম. মামুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামই প্রথম মৌলিক কবি। রবীন্দ্র অনুবর্তী একগুচ্ছ কবির একজন তিনি নন। তিনি অন্যরকম স্বতন্ত্র। শিল্প সাধনায়,

আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ 

প্রবীর বিকাশ সরকার ১৯২৯ সালে বহির্বিশ্বে অবস্থানকালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে ঘটেছে যুগপৎ দুঃখজনক এবং আনন্দদায়ক কিছু ঘটনা। যা নিয়ে বাংলায় সামান্যই আলোচনা হয়েছে, অথবা

হিংস্র ও বুনো অপশক্তির বিনাশ চাই

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় গ্রীষ্মকালটা বড়ই অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এই ঋতুটির তেজ আগে কখনও এত তীব্র ছিলো না। ইতোমধ্যেই