কথার ঝিনুক
নিলয় রফিক
চাঁদের শরীর ঢাকা শব্দের চাদরে
মুখের নজরে ঠোঁটে গিলাফ-তিলক
আলোর মুগ্ধতা প্রেমে ইতিবৃত্তে তীরে
গল্পেই শুরু প্রমত্ত সমুদ্রে-পলক।
শিল্পের উদ্যানে ঘ্রাণ এলোমেলো শীত
কথার ঝিনুক গেঁথে বিশুদ্ধ শহরে
বোধের পাঠশালায় মোমের প্রার্থনা
পুড়ে পুড়ে স্বপ্নলিপি অন্দর মহলে।
পরিযায়ী পাখিগুলো নদীর কিনারে
সময় ফুরিয়ে গেলে অদৃশ্যে উড়াল
সুন্দর বীজতলায় জোড়ামন তীরে
প্রকৃতির বিলবোর্ডে উথাল-পাথাল।
———————————–
সক্রেটিসের বিজয়ীমুখ
সুজন আরিফ
বিকল বিশ্বাসে স্থবির ডোরাকাটা বাঘের জীবন
সূর্যমুখী অরণ্যের অকালপতন,কেউ নেই পাশে দাঁড়াবার
শঙ্কিত সময়ে জোছনার ফুল হাতে সার্কাসে মেতে আছে আগুয়ান নদী
মাকড়সার জালের ভয়ে মুহ্যমান সবাই যেন নাবালক শিশু
ভোজের আয়োজনে সর্বদা লোভনীয় শিকার,
বিপদের আঁচ পেয়ে আগেই পালিয়েছে নিরীহ হরিণের দল।
বানানো সংলাপে যথারীতি লাভবান ধূর্ত শেয়াল
ফুলের টবে কৌশলে ঢেলে দেয় ভয়াবহ মৃত্যুবীজ।
দেয়ালে ঝুলানো আকাশের গায়ে মৃত নক্ষত্রের ছবি
ধ্বংসের মুখে মানুষের ঘামে ভেজা সভ্যতার শরীর
যদিও এথেন্সের দেয়ালে এখনও বইছে মহাজীবনের রক্ত¯্রােত
হাসে হেমলক,ইলিসিয়ামের আলোয় আজও উজ্জ্বল সক্রেটিসের বিজয়ীমুখ।
———————————–
কবি
হো সে ই ন আ জি জ
আইয়ুব আলী মাতুব্বর এলাকার মান্যি লোক
একদিন তাঁরে পাইয়া জিগাইলাম
লোকে কা’দেরে কবি কইয়া ডাকে?
আমারে ভিনগ্রহের প্রাণী ভাইবা
দুদ- রাগী চোখে তাকাইলেন
আমার আপাদমস্তক জরিপ কইরা
তারপর আইয়ুব আলী কইলেন
‘পৃথিবীটারে যেই পাগলেরা স্বর্গ বানাইবার চায়’।
———————————–
কুহকিনির প্রিয় সানাই
রুহু রুহেল
পড়ন্ত দুপুরে দেখা সেদিন; বুকের মাঝে ধুকপুক
বিকেল নামে নরোম রোদেলায়- দায়িত্বের দিন গুণি
রাতের নক্ষত্রগুলো একে একে হিসেব-খাতায়
নিমজ্জন নিবিড়েই ছবি আঁকি মৌনসন্ধি-পাঠে
শিশিরস্নাত ভোরের সবুজে বেশ স্বপ্ন বুনি মোহনার
অনুরাগের বিনোদ বিন্দুতে ভালো লাগার শত ঢেউ
মফস্বল না শহর; পার্থক্য দেখিনি প্রেমার ভেতর
নিশ্চয় তুমি দূরত্ব খোঁজোনি সামীপ্য সম্পর্ক রূপ
অথচ আমার দিন বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় আজো দোলে
ভেবেছিলাম ধ্বংসের পরে সৃষ্টির বীণ নিয়ত বাজে
পাহাড় অরণ্যে বেজে ওঠে কুহকিনির প্রিয় সানাই
তেমনি ভেবেছি তুমি আমি অবশিষ্ট জীবন মোহনায়!
ওই পড়ন্ত দুপুরে মনে গেঁথেছিলাম গোলাপী রূপ
নীরব রাতের খেলা ঘরে নিরন্তর খুঁজি হৃদি পদ্মপুর!
———————————–
বোধের বৃক্ষ
শাহীন মাহমুদ
বোধের বৃক্ষ
কোকিল ডেকে ক্লান্ত
যেন ঈশ্বর।
েৈচত্রের ফুল
চুম্বনের প্রলাপ
কালিন্দী ঘাট।
হৃদ মন্দির
চৈত্রের কফিনে ঝুলছে
কলঙ্কের চাঁদ।
———————————–
শীতলক্ষ্যার চুলে বিলি কাটে
রোকসানা পারভীন সাথী
শুক্রবারে হাটবারে কাক ভোরে ডুবলাম ভাসলাম স্মৃতির অথৈ রূপগঞ্জে
পুণ্যতোয়া লাল-সবুজের মৃত্তিকায় জন্মেছিলেন মা আমার।
মায়ের আঁচল বিছানো সাদা কাশবন সারা রাত জেগে রয়
মুক্তির সন্তানেরা আসবে স্বাধীনতা নিয়ে ফিসফিস কথা কয়।
অপারেশন সার্চলাইটের মাতঙ্গে মিটিমিটি তারারা বোবা কালা রয়!
খর¯্রােতা ভস্মচোখ লুটেরার জ্বলজ্বল করে হুকোর দাবানল
অমাবস্যার নিকষ আঁধারে চান্নিপসর অম্বর হাসে খলবল
লেফট রাইট লেফট!
চলরে ঊর্মিদল! সূর্য আনবি চল!
নদীখেকো,মাটিখেকো,বালুখেকো, জলখেকো, স্থলখেকো,
গাছখেকো,
স্বপ্নখেকোর দল
হুলুস্থূল তা-বলীলায় হায়েনারা রাতারাতি বনে যায় দেশপ্রেমিক চাটুকার ভন্ড খল
নামে বেনামে ভুয়া দামে কেনে নসীমনের বাপদাদার ভিটেমাটি
সমীরণ,লখীন্দর,বেহুলার চিরহরিৎ সংসার পরিপাটি
নাড়ির টানে উদ্বাস্তুর পিলে চমকায় চমকায় জল্লাদের হুঙ্কারে
লখীন্দর-বেহুলা কলার ভেলা ভাসায় দুর্গা মায়ের ওঙ্কারে
সাতপুরুষের চোখ মুছে চিটচিটে তেলতেলে বিবর্ণ ক্ষয়ে যাওয়া গামছায়
অপার্থিব মমতায় দগদগে হার্মাদ ঘামাচিরা চোরা নখে খামচায়
দূর হ্! অভাগার পোলা!দিছি বেবাক মিটায়
চইল্যা যা হারামজাদা!ঘুঘু চড়াব ভিটায়
সাতসকালে শীতলক্ষ্যায় হাবুডুবু খায় রতইন্যার একচোখা লাশ!
রতইন্যার চোখ তো দুইখানই আছিল?
আর একখান চক্ষু খাইলো কোন বেডায়?
জলের জিন্দা পীর খেওয়াজ খিজির! ভুঁইখোর মেম্বারের ডাইলখোর পোলাডা নাতো?
হায় ভগবান!ও মোর খোদা..
কান্নার রোল হাহাকারের মাতম দোল খায় কাশবনে!
শীতলক্ষ্যার চুলে বিলি কাটে বুভুক্ষু হাঙর মুক্তো ছড়ায় উলুবনে!
তোমাদের অপেক্ষা সন্ধ্যা ছুঁয়ে চিতাবাঘ
রওশন রুবী
ঠিক যেন হাওয়া এসে তোমাদের মাথার পাশে-
পাখা নিয়ে দিচ্ছে আরাম, একদল মৌমাছি-
অদূরেই ছিল, মৌ এনে ঠোঁটে ঠৌটে রাখছে সঞ্চয়
রোমে রোমে জমে উঠা নোনতা স্বাদ বেহুদাই
সারছে আলাপ, তোমাদের চোখে, কপোল কপালে
আলতো আদর ছোঁয়ায় কুচির সুবাস,
কেউ একজন দলের লোক বলে-
এখন নিশ্চিন্ত বসন্তকাল? কোকিল ডাকেনি-
কোথাও, পাঠ থেকে ফেরেনি আর সব পাখি,
নতুন পাতার বুকে শত্রুও বসাবে না ছুরি,
কেউ কেউ লাল চোখে তখনও সামনে দাঁড়ানো
হরতনের তাস বিবি ও গোলামের দিকে তাকিয়ে
ফিসফিস করে- আহাম্মক,
ঐ দেখ বিজিপি বিএসএফ কাঁটাতার
ঐপারে আমাদের বসন্ত ঘুমায়, ঐপারে আমাদের-
বর্ষা লাগাম খুলে অদ্ভুত নৃত্যে- মত্ত, যেন উদভ্রান্ত,
যেন ঐশ্বরিক ছোঁয়ায় ঝরে পড়ে জলজআগুন।
তোমাদের অপেক্ষা সন্ধ্যা ছুঁয়ে চিতাবাঘ
জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে নক্ষত্রপুঞ্জ পোড়ায়
তোমাদের ইচ্ছে ভোরের দিকে আগুয়ান
সুযোগের জন্য হাতড়ে বেড়ায় সময়
ভোর কেউ দৌড়ায়, কেউ বলে এই না! না! থাম!
তখনই গুলির শব্দ, তখনই শ্রমিকের চিৎকার
তখনই এপার ওপারের ঋতুচক্র রক্তে ভেসে যায়…
ভালোবাসার মৃত্যুর হলে মানুষেরা কখনও কখনও-
দম নিতে ভুলে যায়, তোমরা তখন নিশ্চুপ নিস্তরঙ্গ
শুধু ভোরের পাখি ডানা জাপটায়
শুধু বুটের শব্দ ঘন হয়ে দূরে চলে যায়
শুধু এবড়ো থবড়ো শোক দীর্ঘশ্বাস হয়ে যায়…
———————————–
হাসি
রফিক আনম
নারীদের হাসলেই সবচেয়ে ভালোলাগে, সুন্দরী দেখায়
জীবন বৈভব ঢালে প্রেমিকেরা রূপসির টোলপড়া গালে
প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমে যদি থাকে মাধুরীর মতো হাস্যময়ী
লিওনার্দোর মোনালিসা সমাদৃত রহস্যময় হাসির কারণে
সুন্দরী না হলেও নারী লাস্যময়ী, হাসিমুখে কথা বলে যদি
সুন্দর হাসির জন্যে পুরুষেরা নারীর প্রতি ব্যাকুল থাকে
প্রেমেজরা খরানারী দেখেশুনে লিপস্টিক রাঙা মুখ খুলে
ওষ্ঠ-অধরের ফাঁকে শুভ্রদাঁত বিরল ঝলকে বিধে বুকে
মোহমুগ্ধ নরাধম আশীবিষে মৃতপ্রায় পথেঘাটে মজে
কে হাসে আর কে দাঁত প্রদর্শন করে অন্তর্দৃষ্টি ভালো বোঝে
অন্তর্দৃষ্টি ভোঁতা হলে শিকারির তীক্ষ্ণদাঁতে সিক্ত লালা হাসে
ধুতুরা ফুলের হাসি সর্বনাশী সারাজীবন পাগলপারা
রাজ্যের দাঁতের পাটি হাঙ্গরের মসৃণ কাঁটার শানে হাসে
নির্ভেজাল হাসি থাকে গোলাপের কম্পমান ঠোঁটের আড়ালে
———————————–
মাংসের শীতরস
বিদ্যুৎ কুমার দাশ
ঝুলে আছে শীত জল
রাতে কলাবাদুড় খাই।
শতদিনে একবার-
মানুষ তৃপ্তিতে পায়।
প্রায় রাত শীতজল
কলাবাদুড়কে তৃপ্তি দেয়।
ঝুলে থাকা শীত রসের
কলস দেখে মানুষ পাগল হয়।
মাংসের নান্দনিক রস মানুষ ফেলে-
শুধু কলা বাদুড়ের হয়ে যায়।
———————————–
বিষ টোপ
সুশান্ত কুমার দে
খড়গ আমার মাথার ওপর
মাথাটা ঐ হাড় কাঠে,
চারিদিক বৈরিতা ধূলি ঝড়
গন্ধ উড়ে ভুবন মাঠে।
পা ফেলতেই ভ্রুকুটির ভয়
নানা মতের রাজনীতি,
জাত বিচারে সব নয় ছয়
উন্মত্তের ঐ কূটনীতি!
যোগ্য মানুষ, কি নিষ্ঠাবান
নাই শুদ্ধির অভিযান,
কালো বিড়ালের নীতিবান
মানো যদি বাঁচে প্রাণ!
———————————–
বৈশাখী রঙ
সুলতানা নুরজাহান রোজী
বৈশাখী রঙে রাঙিয়ে নিয়েছে যৌবনা মন
মন মেতেছে রঙের মেলায় উৎসবি হলো ক্ষণ
চৈতালি হাওয়ায় জমেছে পাতার অঙ্গ ফুলে ফুলে টলমল
স্বপ্ন ভেলায় চড়ে আম্রমুকুল ঝরে সবুজের হাত ধরে
এলোমেলো হয়ে রঙধনু চুলে ওড়ে বৈষ্ণবী
আছে যতো কালো ঝরে পড়–ক সবি জেগে উঠুক সিন্ধু আলো রবি
বৃষ্টির মতো করে
শান্তি আর মঙ্গল বার্তা আসুক ফিরে
সোনার রথে চড়ে ভালোবাসা রবে
ধরণী ভরে!!
———————————–
জীবননান্দ
রফিকুজ্জামান রণি
একটা পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকেÑ
সামনে
পেছনে
উপরে
এবং নিচে;
কিছুতেই ডিঙাতে পারি না পাহাড়টি
প্রায়শ তার ঝর্নার জলে
ডুবে যায় তাবৎ শিল্পসত্তা
তখনÑ
কাহ্নপা
লুইপা
ভূসুকুপা
এবং কুক্করিপার কথা ভুলে
মীননাথকে খুঁজি
গুরুদেব মৎস্যেন্দ্রনাথও থমকে দাঁড়ান
পিপাসার বালুচরে
তারপর আনত মস্তকে
এনহেদুয়ান্নার সামনে গিয়ে দাঁড়াই
আমি
একটি
পাহাড়
ডিঙাতে চাই; বলতেইÑ
ভ্রুকুঁচকে জানতে চান,
কী নাম পাহাড়ের?
কোথায় অবস্থান?
নাম তার জীবননান্দ দাশ
বুকে,
রক্তে
এবং ধমনীতে
তার অবাধ বিচরণ
দৃঢ় অবস্থান।
তিনি হাসলেন; বললেন
যাওÑ
পথের বাঁকে পথ খুঁজে নাও পথিক
শক্ত খুঁটি পায়ের তলায় রাখো
নিজের তুলির আঁচড় দিয়ে
নিজের ছবি আঁকো!
———————————–
জ্যামিতিক দুঃখ
সারমিন চৌধুরী
নিজের আপন নিজে হতে পারে না মানুষ
চন্দ্রগ্রহণের মতো সমস্ত দুঃখ হৃদয়ে পোষে
নির্জনে বিষের ঠোঁটে রাখে ঠোঁট,
চূর্ণবিচূর্ণ হয় নিজের ভেতর
শোনো হে জ্যামিতিক দুঃখরা আমার!
মধ্যমা স্পর্শ করতে গিয়ে বিফল হয়েছে
আতœচিৎকারের নিবিড় প্লাবনে-
আমাকে আর কি দুঃখ দেবে মহাকাল?
আদিযুগ থেকেই থেকেছি স্বত্বহীন
পান করেছি বিরহবিধুর সুধা রুপে-অরুপে,
অনাদর, অবহেলায় গড়েছি অলীক সংসার।
স্বপ্নের কাছে আমি এক চেনা কৃতদাস
যার কপালে রাত্রির নিস্তব্ধতা লিখে দিয়েছে
‘মৃত্যুই মুক্তি বেঁচে থাকাটা অভিশাপ’!
যেখানে একাকিত্ব রাজা-মহারাজা-
চাবুক ছুঁড়ে রক্তাক্ত করে পাঁজরের হাড়
সেখানে অশ্রুবিন্দু নির্বাক সাক্ষী।
———————————–
তুমি এলে অবশেষে
মাহবুবা চৌধুরী
দুদিন থেকে প্রচন্ড দাহ,
বোশেখী সূর্যের বিস্ময়কর সোচ্চার , নেই ঝড়ের আশ্বাস
উত্তপ্ত আকাশ থেকে নেমে আসছে আগুনের লাভা
ঝলসে গেছে সবুজ পাতারা,
বাতাস উত্তপ্ত হয়ে ছুটছে
সরে যাচ্ছে দূরে
ডানে বায়ে ফাঁকা ,সব কিছুতেই সহিষ্ণু উৎকন্ঠা
সারি বেঁধে দন্ডায়মান অশ্বত্থ, গুবাক তরুরা
ক্লান্ত, সেজদায় নত, একটু জলের স্নান চাই।
হঠাৎ সূর্যকে ঢেকে নেমে এলো তিমির আঁধার
থেকে থেকে ঝলকে উঠলো আলো
বেড়িয়ে এলাম, দাওয়ায় দাঁড়াতে দেখি
আঁধার জড়িয়ে প্রচন্ড বিক্ষোভে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণি
উড়ছে ধূলো, মর্মর পাতারা অন্ধ মূক চতুর্দিক
গোধূলির কাতর ললাটে জ্বলছে স্নাযুবন্দি আকাশবাতাস।
বুঝলাম তুমি আসছো মহাকাশ ছিড়ে
হঠাৎ একঝলক বাউন্ডুলে বায়ু কুন্তলকরবি দিল খুলে
গড়িয়ে পড়লো নিতম্ব ছেড়ে মেঘকালো কেশপাশ
উড়ছে দুর্মর অজেয় তাঁতবোনা শাড়ির আঁচল
ঝাপটে ধরে সামলে নিতে নিতে
উঠনের বায়ু দ্রুত ঘুরতে শুরু করে
ঘুরতে ঘুরতে চক্রাকারে উঠে যায় ওপরে
মনে হলো আমাকেও উড়িয়ে নেবে ঐ চক্রবাঁকে
ঠিক ঐ সময়, আকাশ খানখান করে নেমে এলো বজ্র
সাথে তুমি। ছাতি ফুলিয়ে লুঙ্গি ঘুড়িয়ে
আমার দাওয়ায়। আমাকে উড়িয়ে ঢুকে পড়লে আমার কুটিরে।
ততক্ষণে আঁচল গড়িয়ে পড়েছে সোমত্ত বুক থেকে
পাঁজরে সঞ্চিত সুখ বাজছে সংগীত হয়ে টিনের চালে
ঝমঝম ঝমঝম। ঝমঝম ঝমঝম।
———————————–
কে আছে এমন
সুশান্ত হালদার
কে আছে এমন
ভাই বলে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরবে বুকে
কে আছে এমন
পিতৃস্নেহে সারাটা দেহ মুছে দেবে ছেঁড়াফাঁড়া রুমালে
কে আছে এমন
মায়ের মতো খাবার নিয়ে বসে থাকবে মাদুর পাতা উঠোনে
কে আছে এমন
বোনের মতো ভালোবেসে চুমু খাবে কপালে
কে আছে এমন
বিরহ তপ্ত দুপুরে নির্মাল্য আকাশ দেখাবে
চাঁদ ওঠা হাসনুহেনা সকালে
কে আছে এমন
ভাই হত্যার প্রতিবাদে রক্তাক্ত একাত্তর হবে
কে আছে এমন
পিতার লাশ কাঁধে নিয়ে চলে যাবে শ্মশানে
শত্রুর মুখে বুলেট গুঁজে চলে আসবে ‘জয় বাংলা’ বলে
কে আছে এমন
বৈশাখ ঝড়ে বুক চেতিয়ে চলে আসবে মিনারে
যেখানে লাঞ্ছিতা মা আমার লিখে রেখেছে নাম লাল সবুজে।
———————————–
তোমাতেই আমার প্রাণ
নাজমুল ইসলাম সজীব
পাগলী মেয়ে আমায় চেয়ে
ভাইয়ের মতো কাছে পেয়ে
আসছে কাছে মনের নাচে
অধিকারের রোষানলে
মন খুলে কথা বলে
মসজিদের ভাষার তরে
ভাই ভাই একে অপরে
সাম্যবাদী নজরুলে
কারাবরণ বিদ্রোহে
খোদার বন্ধু জৈষ্ঠের তরে
নিজেকে বিলিয়ে মন উজাড় করে
আমি আছি কাছাকাছি
পরিবারেই বেঁচে আছি।
পরিবারের জটলা দূরে
ভালোবাসা মন জুড়ে
তোমায় আমি কাছে পেয়ে
পরিবারের গান যাই গেয়ে
তোমার হাতে পরিবার
প্রশান্তি অনুভব বারবার
তুমি জানো মায়ার যাদু
আমি খুঁজি হাসি মৃদু
তোমার হাসি আমার হাসি
তোমাতে পরিবারকে ভালোবাসি।
———————————–
হাওর ঝিলে নতুন ফসল
মোহাম্মদ আবদুস সালাম
বৈশাখ মাসে পড়ছে গরম
হাঁটতে হচ্ছে ঘেমে।
একটু শান্তির পরশ খুঁজি
শীতল জলে নেমে।
পুকুর পাড়ে দাঁড়ায় দেখি
জলের রেখা নিচে।
বিলের মাটি ফেটে চৌচির
বৃষ্টির আশা মিছে।
হাওর ঝিলে নতুন ফসল
সোনালি ধান হাসে।
নতুন গন্ধ ছড়ায় পড়ে
পুবালি বাতাসে।
বর্ষ বরণ উৎসবের পর
কৃষক হাসে মাঠে।
ধান কাটিয়া সুখ আনিবে
গাঁয়ের নান্দীপাঠে।
বোরো ধানে গোলা ভরবে
খুশি হাওরবাসী।
বৈশাখ মাসে সুখ এসেছে
চাষির মুখে হাসি।
ধানকে ঘিরে হাজার স্বপ্ন
কিনবে নতুন শাড়ি।
নতুন আশায় শপথ নেবে
সাজবে কৃষাণ বাড়ি।