এখন সময়:রাত ৩:০৩- আজ: বৃহস্পতিবার-২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:রাত ৩:০৩- আজ: বৃহস্পতিবার
২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

পদাবলি (এপ্রিল ২০২৫ সংখ্যা)

শঙ্খশুভ্র পাত্র-এর দু’টি কবিতা

 

অপস্রিয়মাণ

 

‘স্বাক্ষর’ রইল সখ্য সে কি তুমি বক্ষ পেতে নেবে?

বিশ্ব কবিতার দিনে, যাবতীয় হিসাবনিকাশ

ভুলে, অপরাহ্ণে, কাহ্ন– দাউদাউ পলাশের প্রেমে

কেমন মেতেছি! চৈত্র– চিত্রে তার আপন বিকাশ

দেখেছি কি? তুমি জানো সসাগর, শঙ্খের ভুবন

প্রকৃতিকে কৃতী ভাবি: আমি যে সাক্ষরজ্ঞান, শুধু

ধুধু বিকেলের কাছে শিখে নেব আদিগন্ত শিখা

ফিরে এসে ভালবেসে আঁকো তুমি সন্ধেতারাটিকে।

 

অপেক্ষা, উপেক্ষা নয়। অপক্ষিতিতেজমরুৎব্যোম

প্রেক্ষিতে জাগিয়ে তুলি। শূন্য পাতা, তুলিকা নিশ্চল

তোমার ছবির পানে একদৃষ্টে… শুষে নিই ওম

মোম ঝরেও শুষনি পাতা তুমি নিদ্রার মতন

মেঘে-মেঘে ছেয়ে আছত্ম সুদর্শনা, প্রথম কদম

বিশ্ব কবিতার দিনে মনে পড়ে ‘অপস্রিয়মাণ’…

 

 

 

কথা

 

কথা কি লতার মতো? চন্দ্রমণি? মৌননিশিঘোর?

সমুদ্রজোয়ারভাঁটা উষালগ্ন শান্ত বেশভূষা

সূর্যোদয়, বোধোদয়ত্ম জলস্রোতে শ্বেতাভ টগর

রাশি-রাশি ভেসে যায় কোথাও নেই তো কানাঘুষা

কেবল হাওয়ার টান, নোনাবাস, মর্মরিত ঝাউ…

এখানে কি কথা হবে? একা-একা কুয়াশা মদির

বসে থাকি চুপচাপ ঢেউ জানে আউলবাউলত্ম

পলাশের অগ্নিশিখা একবার গ্রাস করে যদি…

 

দীর্ঘশ্বাস হঠে যাবে। আবার চঞ্চল হবে দিঘি

দিঘল আঁখিতে তার ছুঁয়ে যাবে কত স্বপ্নঘোর…

ছলাৎ ছলাৎ সুরে ছলাকলা সেরে নেবে ডিঙি

রোদ ও ছায়ার সঙ্গে লুকোচুরি বসন্ত আদর

কথা তো জেনেছে, লতা, বুকের গভীরে সেই টান

থেকে যায় চিরদিন যাকে বলে প্রিয় অভিমান…

 

 

 

 

 

 

 

 

======================

 

চারটি চতুর্পদী

জাহাঙ্গীর আজাদ

 

এক.

আয়নাও কতো রহস্য ধরে রাখছে

অদেখাই থাকে তোমার আমার মিলটি

চিবুকের স্বেদ দেখা যায় প্রিয় আয়নায়

ঢাকা থাকে প্রিয় বেণীতে ঘাড়ের তিলটি

 

দুই.

শাদা ধূসর এলোচুলের মতো

এ মুহূর্তে দৃষ্টি জুড়ে মেঘ,

ফাঁক-ফোকরে আকাশও দেয় উঁকি

তবুও তুমি ঘুমাও নিরুদ্বেগ!

 

তিন.

যতোদূরে ভাবো, ততোদূরে নও

ওই দ্যাখো জানালায় তৃতীয়ার চাঁদ

চাঁদের তুলনায় নিকটেই থাকো

এসো, পেতে রাখি প্রণয়ের ফাঁদ

চার.

কোন কোনদিন রাতপাখিটি পাখা ঝাপটায়

ঘোলা কাচ ঘেরা বন্ধ জানালার অন্ধকারে,

সন্তর্পণে কপাট খুলে শূন্যতা শুধু শূন্যতা দেখি

খোলা জানালায় একবারও কেন পাইনা তারে?

 

 

===================

 

মেঘদূত হয়েছিলাম দুর্দমনীয় প্রতাপে

সুশান্ত  হালদার

 

ম্যানগ্রোভ বনে গোলপাতার ছাউনি থাকে

সেখানে যদি যাই নিয়ে যাব তোমারে

উড়ুক্কু মাছ যদিও নাই

তাতে কী

জোনাক জ্বলা রাত এনে দেব সোনার পাতিলে

 

সকালের ঘুমে যদি কাকাতুয়া ডাকে

সিংহের গর্জন যদি তীব্র থেকে তীব্রতর হয় খেয়ানৌকা ঘাটে

তুমি তখন ভয় পাবে ফেলে যাওয়া কোন সাপের খোলস দেখে

আমি তখন গোলমরিচ আর দারুচিনি মুখে

গুনে গুনে চুমো দেব উদ্ধত ফণিমনসার বুকে

 

তাতে যদি শ্মশানমুখী হয় অভিযাত্রী সকলে

ভেবে নিও

কাঞ্চনজঙ্ঘায় সেদিন মেঘদূত হয়েছিলাম দুর্দমনীয় প্রতাপে!

=======================

কিভাবে যাই বলো

রূপক বরন বড়ুয়া

 

আমরা শুয়েছিলাম সে রাতে

কী ঘুমই না পেয়েছিলো দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে।

সারাদিন, বারুদ আর তপ্ত সিসার ধোঁয়ায়

এ নরম শরীরে নেমেছে রাজ্যের ক্লান্তি!

শেষমেশ গা এলিয়ে দিয়েছি ‘রাফা’র

শরণার্থী শিবিরে। ক্ষুধা আর শ্বাসের আর্তি

ক্রমশ টানছিল মৃত্যুর মিছিলে।

গা করিনি! রোজকার বুকের হাপরে

ঢেউ তোলা একই শব্দ শুনছি তো শুনছিই

জন্মের পর থেকে! সেজদায় পড়ে কতবার

প্রতিদিন দু’হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে ভিক্ষা চেয়েছি

স্বস্তির নিঃশ্বাস! আমাদের কথা কানেও তোলেনি

কামুক ঈশ্বর! শুধু বিয়াতে জানে

যত্ন করতে জানে কি?

 

শব্দ একটা আমরা শুনতে পেয়েছিলাম

তারপর আর কিছু মনে নেই আগুনের সাথে মিশে গেছি

আগুন হয়ে জ্বলছি সেই থেকে।

সমস্ত অস্থি, আমাদের করোটি, শিরা, উপশিরা

এখন অঙ্গার কিছুই অবশিষ্ট নেই আমাদের।

আমাদের আর কোন পরিচয় নেই

নেই ভিটে মাটি, ঠিকানা জন্মের!

বিশ্বের মানচিত্রে কোথা আজ ‘গাজা’

কোথায় তার রাজধানী ‘রাফা’

 

‘সালেহ আল জাফরী’

তুমি জান্নাতে যেতে চাও,যাও

তুমি ফেরশতা হতে চাও মৃত্যুর পর

হও না; কে করে মানা!

আমরা মানুষ ছিলাম এখন আগুনের গোলা

কি করে যাই বলো জান্নাতে!

জন্মের ঋণ শোধিতে আমরা বুমেরাং হয়ে ফিরে যাবো

তার কাছে, যারা আমাদের আগুনের শবে

দিয়েছে ঠেলে! ঢের আগুন জ্বেলে দেবো

মানবতা বিদ্বেষী শিবিরে

‘জাফরী’ তুমি একদিন দেখবে,শুনতে পাবে জান্নাতে বসে

‘রাফা ‘ আর গাজা’য় কাবা’র নতুন বসত হবে

মানবতা ধুয়ে দেবে মানুষের কলঙ্ক জগত!

‘ সালেহ আল জাফরী তুমি উল্লাস করো!

উল্লাস করো! অপেক্ষা করো সেদিনের।

 

 

 

 

==============================

 

 

ভূমিকন্যা

(প্রয়াত সন্জীদা খাতুন স্মরণে)

মজুমদার শাহীন

 

ভূমি বধির নয়, ভূমি কথা বলে-

অনার্য দ্রাবিড়কাল থেকে।

পঁচা শ্যাওলার মাঠে

হরিৎ জংলায় আত্মভোলা

পাখি ঘুমায় সূর্য তাপে।

পৃথিবী ঘুমিয়ে গেলে

কীটপতঙ্গের কলরবে, শুনি

ধানক্ষেতে ঝিঁঝি পোকা ডাকে।

সবুজ পাতার উপর হিস হিস

করে উড়ে যায় হাওয়া;

তুমি ভূমিকন্যা হাওয়ার বাঁশিতে

সুর তোল,মন্দিরা তবলায়

মেলাও যুগের কন্ঠস্বর।

একটু একটু করে

জমানো সিকির মত

জীবনে সঞ্চিত হয়

‘কাআ তরুবর পঞ্চবি ডাল

চঞ্চল চীত্র পইঠো কাল ‘

অথবা রবীন্দ্রনাথের গান

সেই গান শুনে

মেঘদূত নেমে আসে

শোভামণ্ডিত সন্ধ্যার কোমল

পাহাড় ও লেকে,

রবীন্দ্রনাথ হয়ে ফিরে আসে

ছায়ানটে – বটবৃক্ষে।

এই পহেলা বৈশাখে

তুমি আবার গান শোনাবে

রমনার ছায়াতলে তোমাকে খুঁজে নেবো ঘাসের শেকড়ে

লুকিয়ে থাকা অনুজীবে।

 

 

 

 

 

 

========================

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হাফিজ রহমান কবিতাত্রয়

 

ঘরবন্দী

বহুকাল ঘরবন্দী -বলা যায় একটা জীবন

কতবার বোশেখের মেঘ ডেকে গেছে

কতবার বোশেখের ঝড় ছুঁয়ে গেছে

তবু কাটেনি বন্দীত্ব।

বহুকাল ঘরবন্দী – বলা যায় একটা সমগ্র জীবন

কতবার বর্ষার জল ভাসিয়েছে

কতবার শরতের নীল রাঙিয়েছে

আঁচড় কাটেনি তবু মনে!

বহুকাল ঘরবন্দী – বলা যায় সহস্র জীবন

কতবার হেমন্তের শিশির ভেজায়

কতবার শীতের প্রাবল্য কাঁপায়

খোলেনি বন্ধ কক্ষ তবু।

ফুঁসে ওঠে সন্দ্বীপের জল- চিত্ত অতল

তবু সেই ঘরবন্দী মনটা তরল

দোদুল্যমান বেতশ শাখের মতো কাঁপে-প্রবল উত্তাপে।

 

এই সেই মেঘ

এই সেই মেঘ তাকে ডেকেছিল সময়ের তীর

প্রলুব্ধ মন-তবু চিত্ত অধীর

ধরিত্রী পুড়ে যায় ঘন রোদ্দুরে

বুকের গভীর হতে শব্দ আসে – হাহাকার

ঐ মেঘ আসে…

 

কালের স্রোতের ধারায়

কালের স্রোতের ধারায়  মুছে যায় সব পঙ্কিলতা

পুড়ে যাওয়া ধূসর মাটির বুকে উর্বরতা

আসে নতুন ফসল সবুজের সমারোহ

অবশেষে ঘরবন্দী মনটা উত্তাল আকাশে ওড়ে-

 

======================

হিংসা

মানস বড়ুয়া

 

হিংসা থাকে মনের ভিতর

কিভাবে দিই চিরতরে কবর

সঠিক মার্গ মনে মনে খুঁজি

ভয়ানক হিংসাকে হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝি

হিংসা ঠিক আগুনেবর মতন

জ্বলে দিবারাত করে জ্বালাতন

অপরের শ্রী দেখে উল্লাস করি যদি

দূর হবে হিংসা থাকব সুখে নিরবধি

 

==================

 

হৃদয়ে নীল জোনাকি জ্বলে

গাউসুর রহমান

 

একদিন ধোঁয়া মেঘে বৃষ্টি হয়ে কেউ এসেছিলো

কেউ এসেছিলো নিয়ম ভেঙে  নিবেদিত চুম্বনে

কেউ এসেছিলো মরু মরু খরায়

ভালোবাসার শ্রাবণ হয়ে।

কেউ এসেছিলো কাঁটার অন্ধকারে

মনোরম ফুল হয়ে।

 

কেউ এসেছিলো হৃদয়ের নৈঃশব্দে

ভালোবাসার মায়াবী বাতি জ্বেলে।

কেউ এসেছিলো স্নায়ু অবশ করা প্রেমে

কেউ এসেছিলো নিশিদিন কলহ-বিবাদে।

 

একদিন ছিলো প্রিয়দর্শিনীর উষ্ণ জড়াজড়ি

একদিন ছিলো কেউ রঙিলা প্রিয়তমা,

একদিন ছিলো কেউ দাহ ও দহনের পরম সুখে-

একদিন ছিলো কেউ দানাপানি তুচ্ছ করে

হৃদয়ে নীল জোনাকি জ্বেলে।

 

একদিন ফিরে গিয়েছিলো কেউ রক্তজবার

ছিন্নমালা ফেলে,

একদিন ছিলো কেউ ভালোবাসার আদব-লেহাজে।

 

====================

 

 

 

আমি তো মানুষ নই

মারুফ মোহাম্মদ

 

ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন বলে আর

কাঁদবো না, মায়াকান্নার মাতমে আমি আর নেই

আমি বরং হাসবো, হেসে হেসে হবো খুন

ভেংচি কেটে এই অথর্ব আমাকে সাজাবো সং

হেসে হেসে হবো কুটিকুটি জাতের আঁচড়ে

দুই শত কোটি বেজাতের চোখে।

 

তোমরা মানুষ

কাঁদবে তো কাঁদো…  আমি তো মানুষ নই!

ধ্যানহীন জ্ঞানহীন অমানুষ এক

পাষণ্ড পুরোহিতের মানবিক আস্তাকুঁড়ে

ঈশ্বরের চোখে চোখ রেখে আমি

মুচকি মুচকি হাসতে থাকবো

বিদেহী মানবতার বেওয়ারিশ ঠোঁট টিপে টিপে।

দুর্বিপাক এবং দুঃখপেয়ালা

এম এ ওয়াজেদ

 

কোনো এক বিভ্রান্তির কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে

বেড়ে চলে বিপথগামিতার অশুদ্ধ উচ্চারণ

বিশৃঙ্খলার কৃপণ বিদ্বেষের বেখাপ্পা দৃশ্যপটে

অশ্রুবাষ্পের বিজয়িনী তরুণী পুষ্টিকর স্যুপে উন্মাদগ্রস্ততা

কোটিপতি পুরুষ মাছের মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে

সারিবদ্ধা রমণী মাছেরা চারদিক ঘিরে ফেলে

কাজে আসেনা স্মৃতিচারণের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব

নস্টালজিয়ার ম্যাককার্থিইজম প্রবীণা প্রভাতের উপাসনা।

 

সন্ত্রাসের শস্যধ্বংসী পতঙ্গগুলো প্রতিদ্বন্দ্বীহীন

না মানে যুক্তিবাদ না মানে শুভময়তার বসন্ত-উৎসব

না চিনে গোলাপের কুঁড়ি না চিনে ন্যায়বাদের প্রেমসদন

রক্তাক্ত জাজিমে ভয়ঙ্কর প্রাণসংশয়ের কর্তৃত্ববাদী ইঙ্গিত

দীর্ঘ লেজের বদ্ধোন্মাদ আমেরিকান বাজপাখি

খেয়ে ফেলে কুমারী ম্যাগনোলিয়ার শিকড় ও কাণ্ড

মানসিক বিকৃতির মুখস্থ নোটবই পড়ে

পাস করেনা নৈতিক মুক্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা।

 

আগেই পলাতক হয়েছে যিশুখ্রিস্টের বারোজন শিষ্য

সভ্যতার মাইক্রোফোনে ধ্বনিত হয় হত্যার নৃশংস রীল

মানবতাবাদী স্বরধ্বনির ই-মেইল আইডি লগআউট

যন্ত্রণার সুদীর্ঘবাদ গ্াস করেছে বঞ্চনার ইউজার ডিভাইস

ভূপৃষ্ঠের উপরিতলে ছড়িয়ে পড়ে শঠতার লম্পট লাভা

অদ্ভুত স্নায়বিক অস্থিরতা ভর করে –

অসুস্থ জিহ্বার মানসিক ভারসাম্যহীন ইক্সিয়নের ঘাড়ে

দুর্বিপাকের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুঃখপেয়ালায়

আশ্রয় নিয়েছে প্রতারিত মানুষের শোকসংগীত ।

===========================

এসো হে নতুন

মাহবুবা চৌধুরী

 

সেই থেকে শুরু তোমার মায়ায় আগামীর আনাগোনা

দক্ষিণে দেখি উত্তরে বায়ু নেমে আসে নতজানু

গরম দুপুরে ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে এঁকে যায় আলপনা

তুমি এলে যদি , জল কই মেঘে গাছের ছায়ারা স্থানু।

 

পৃথিবীতে আজ লেলিহান আগুন ধোঁয়ায় হারাল নীল

খুঁজে ফিরি আলোছায়া

কোথায় মালতী শীতল পৃথিবী শোভাময় বর্ণীল

শরীর জুড়ানো মায়া

অথবা পাহাড় শাল অরণ্যে আমাদের ভালোবাসা

উদ্বেগে কাটে দিন

অথচ এখনো বটের ঝুরিতে তোমাকে ফেরার আশা

প্রতিটি রাত্রিদিন।

 

ওঠে তো উঠুক তান্ডব ঝড়, জ্বলুক আগুন

কবি কবিতায় চির প্রতিবাদ

আষাঢ়ের জলে ভাসিয়ে সকল রিক্ততা-গ্লানি

এসো হে নতুন অবাধ সুখের স্বাদ।

 

=====================

বৈশাখের বার্তা

রুহু রুহেল

 

কে আছে এমন   বৈশাখে হই না আকুল!

আবাহনে ফিরে ফিরে আসে চিত্তে জাগে দোদুলদুল

সওদার বিকি কিনি বছরের প্রথম দিন

হালখাতা ও মিষ্টান্নে মধুর আয়োজন

পুরো বছরের হিসেব পাততাড়ি গোটায়

ধর্ম বর্ণ সকলে মিলে;  অপূর্ব এক সমাজ বন্ধন!

বিশাখার আলোকছটায় খুঁজি বৈশাখী বন্দনা

উড়ে যাক  মুছে যাক সমস্ত জরা; পুরনো আবর্জনা!

আগামীর স্বপ্ন বুনি সকলে

যে যার মতো যেন সুখানন্দে উন্মনা!

 

জব্বারের বলিখেলা  বীরত্বের প্রতীক

চট্টলার আয়োজন ছড়িয়েছে পুরো দেশ

সূচনাকাল  উনিশ শ’ নয়, থাকুক অক্ষয়

লালদীঘির ঐতিহাসিক মাঠ সাক্ষী সমুজ্জ্বল

বারো বৈশাখ নির্ধারিত দিন – চলে তিনদিন

একদিকে বলিখেলা  অন্যদিকে মেলার বৈভব

জমজমাট রূপে মাহিয়ান আন্দরকিল্লা’র জনপদ।

 

বাংলার জনমানব জানে ইতিহাস তার সুনামে!

যাপিত জীবনের ঘর গেরস্থির আয়োজন এ নামে!

প্রান্তীয় জনমানুষ- খুদে ব্যবসায়ী

দিনরাত অর্থ ও শ্রমে তৈরি করে বাহারি সব শিল্প

সবার চোখ ধাঁধায় হস্তশিল্প, কারুশিল্প ও মৃৎশিল্প

যান্ত্রিকতা হতে মুক্ত নিত্যপণ্যে নগরজীবন কত না ধন্য!

 

পুন্যাহের আয়োজনে পাহাড়ে নামে

নৃগোষ্ঠীর রাজ্যপাটে  নব কর বিন্যাস!

চাকমাদের বিজু আর বৈশাবী,মারমাদের চলে সাংরাই,

বছর শেষে সনাতন ধর্মের চৈত্র সংক্রান্তিতে ফুরায় অষ্টপ্রহর রাত।

 

ইতিহাস নির্মাণে অগ্রণী সম্রাট আকবর

ফয়জুল্লাহ মুন্সি যিনি জোতিষ জ্যোতির্ময় কারিগর!

 

বৈশাখ আসে বৈশাখ যায়,আবাহনে তার খেলা

হারাই দু:খ, হারাই কষ্ট , সদানন্দ থাকি সারা বেলা

নববর্ষ সমস্বরে ডাক পাড়ে ; সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি চিরায়ত হোক অনন্তবেলা।

 

========================

মানব সভ্যতায় কর্ণফুলি

রবি বাঙালি

 

লুসাই পাহাড়ে সবুজ অরণ্যে কর্ণফুলির জন্ম

সেথা হতে এঁকে বেঁকে,

হিমশীতল বারি ধারায় ছুটে যায় নিরবধি সাগর প্রাণে

সঙ্গমে তরঙ্গ বুকে।

দীর্ঘ পথে তোমার দু’ধারে গড়ে  শহর বন্দর বাজার

বুকে ভাসে জেলে ডিঙ্গি,

নানা দেশের কত জাহাজ আসে পণ্য ভরে বঙ্গে

সবটাই নিত্য দিনের সঙ্গী।

 

করণফোল জাহাজ ডুবি সে থেকে করণফোলের নামে

কর্ণফুলি হলো নদী

প্রেয়সীর কর্ণ ফুল পড়লে জলে রাজপুত তুলতে বলি

কর্ণফুলি নাম সেই থাকি।

 

শাখা হালদা বোয়ালখালী চেঙ্গি বাঁধে প্রীতি বন্ধনে

স্রোতস্বিনী কলকল্লোলে,

জীবন প্রবাহের সুদীর্ঘ পথে কতো ওঠা পড়া

হাসিকান্না হিল্লোলে।

 

কেড়ে নিলে খরো স্রোতের টানে কতো শত প্রাণ রে

ওহ! নিষ্ঠুর পাষাণী মনে,

গুঁমড়ে কাঁদে পিতা মাতা স্বজনে,বুকে চাপড়ে চাপড়ে

শোকে জলহীন নয়নে।

 

জলরাশির উত্তুঙ্গ হিংস্রতায় ধবংসে পড়ে জনপদ

ভূখা নাঙ্গার হাহাকারে,

সমূদ্র সঙ্গমে নোনাজলে মিটেনা পিপাসা

শস্যহীন ক্ষুধার্তগণরে।

 

বহে চলো মনানন্দ ধারায় কারো পুষ্ট তুষ্টে

কষ্ট বুকে চাপা রেখে,

তবো উদারসত্তা কর্ণফুলি চিরকালের জন্যে

সভ্যতার ক্যানভাসে রবে এঁকে।

==========================

মুহূর্ত

জান্নাতুল মাওয়া

 

একটি উষ্ণ নোনতা চুমু চাই

একটি তুফানময় সন্ধ্যা চাই

একটি হিংস্র নজর চাই

নিয়ন্ত্রণহীন তুমি চাই।

 

কয়েক দফা উষ্ণ নোনতা চুমু চাই

বৃষ্টিস্নাত ভোর চাই

লাগামহীন স্পর্শ চাই

আর নিয়ন্ত্রণহীন তুমি চাই।

 

অজস্র উষ্ণ নোনতা চুমু চাই

কোলাহলমুক্ত দুপুর চাই

অস্থিরতায় ভরা মুহূর্ত চাই

আর……

 

 

===========================

তেজোহীন নক্ষত্র

ইশরাত জাহান রুতমিলা

 

দুঃখের কালো ধোঁয়া যখন ঘিরে ফেলে চারিদিক

আমি কেবল আকাশ দেখি

আকাশ আমায় দু’হাত পেতে কাছে টানে চম্বুক আকর্ষণে।

বৃষ্টির কণার মত জমা হয় তখন বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা হৃদয়ে,

ভালোবাসার শান্ত শীতল স্পর্শে আমার চক্ষু আসে মুদে

হু হু বাতাস তখন ঢুকে পড়ে মনের আবদ্ধ ঘরে,

আমি যেনো হয়ে যাই সপ্তসুর!

 

মন খারাপের দিনে আমি কেবল আকাশ দেখি

দেখি ভয়হীন পাখিরা কেমন করে রচে জীবনের গল্প আকাশের বুকে,

সন্ধ্যা হলে পরে কোথায় যেনো যায় হারিয়ে নীড়ে ফেরার তাগিদে।

তারকারাজি অহোরাত্রি নিভে আর জ্বলে

মাঝে মাঝে বিভৎস স্মৃতিগুলো হয়ে উঠে দগদগে।

 

আমি কেবলই আকাশ দেখি

দেখি নানা রঙের ঘুড়ি মেঘের সাথে খেলে লুকোচুরি

আমারো ইচ্ছে জাগে সীমাহীন বিশালতার মাঝে

ঘুড়ি হয়ে উড়ি,,,,,

কিন্তু আমার যে অনেক দুর্গম পথ দিতে হবে পাড়ি!

 

জন্ম মৃত্যুর মাঝে ক্ষীণ দূরত্বের  লুকোচুরি এই খেলা একদিন বন্ধ হবে,

ধূসর বর্ণের মতো তখন মিলিয়ে যাবো সন্ধ্যাবেলার দূর আকাশে

লক্ষ কোটি নক্ষত্রের মাঝে সেদিন আমিও রব এক তেজোহীন নক্ষত্র হয়ে।

 

=======================

বৈশাখী ঈদ

আব্দুস সাত্তার সুমন

 

বৈশাখী ঈদে গরম জ্যোতি

দুটো পাশাপাশি,

তোমার ছোঁয়ায় ভাসলো ভেলা

বৈশাখী ভালোবাসি।

 

ঈদের মৌসুম ঘরে ঘরে

বার্তা নিয়ে এলো,

আনন্দ লগন চলছে ধরায়

নববর্ষে চলো।

 

আত্মীয়-স্বজন, প্রীতি ভোজন

চলবে দিবা রাতি,

ঠান্ডা হাতে গরম তাপে

তুমি হবে সাথী।

 

দিবস আসবে, সময় যাবে

পান্তা ইলিশ গত,

উৎসব মুখর বাংলার মাটি

উল্লাস করছি কত!

 

ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা

সবাই তাহা জানে,

বাংলা মায়ের মহা উৎসব

বৈশাখ মধ্যখানে।

===========================

 

নারী দিবস

মুন্সী আবু বকর

 

নারী শক্তি, নারী সাহস

এ কথা শুনে শুনে ক্লান্ত,

কিন্তু, কোথায় সেই শক্তি?

কোথায় সেই সাহস? কোথায় তার প্রতিবাদ?

 

আমরা জানি,

তারা প্রতিদিন পুড়ে যায়

তবু, আমরা শুধু সেলফি তুলি,

আর জয়ন্তী দিবসে ফুল চড়াই।

 

সমাজ বলে,

নারী অগ্রগতির পথে,

কিন্তু কিসের অগ্রগতি?

যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপেই

নির্যাতনের শ্বেত রেখা আঁকা।

 

 

নারী অধিকার?

কোন অধিকার?

যেখানে কেবল মুখে বলার মতো

পিছনে থাকে অসীম অন্ধকার।

 

হ্যাঁ, নারী মর্যাদা পাচ্ছে,

তবে কতটুকু?

ভেতরটা তো এখনও একই,

যেখানে সে শুধুই ছায়া হয়ে থাকে।

 

নারী দিবস

একটি অগোছালো উল্লাস,

কী হয়েছে তা’তে?

সমাজ বদলেছে কি সত্যিই?

না, শুধু প্রতিশ্রুতি বয়ে যায়,

আর কিছুই নয়

একটি নিষ্ফল অঙ্গীকার।

 

 

 

==================================

 

 

স্বাধীনতা

নিবেদিতা বড়ুয়া

 

স্বাধীনতা তোমার জন্মের জন্যে

তলপেটে পুড়িয়ে রেখেছি অর্ধকাপড়ে

নগর গণিকা নামে

আর অর্ধেক ভাইয়ের কপ্টিনে চিহ্ন এঁকেছি বিধ্বস্ত কপালে

এখনও কলঙ্কের তিলকে বেড়াই আঁতুর ঘরের—

আগ্নেয়গিরির লাভায়।

অনাদি কালের মৌনতায় ঢেকেছে ভেতর বাড়ির চাতাল।

উতুঙ্গ উগ্রবাদের দুর্গন্ধে

ঘোরতর বদলে গেছে চোখের তৃষ্ণা

বুকের মধ্যে চলে সন্ন্যাসী আলাপন

অফুরান স্বপনে, নোঙ্গর তুলেছিলো রাজহাঁস,

খরস্রোতা পদ্মার বুকে।

আজ বিষাক্ত তরঙ্গের হুংকারে মেঘভাঙ্গা রক্তপাতে

অকাল প্রসবে মুচড়ে পড়ে জলকন্যা।

তাঁকে গেরুয়া পিরান দিয়েছে ঢেকে অশত্থের নীচে।

ব্রতচারী রং ঝিমায় তাঁর বোধি চিত্তে

তুমুল ভাঙচুরে

জোছনা কাঁদে শ্রাবণ রাতে

স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে পানসে পেখম,

ফেনায়িত আলো বিক্রি করে অন্ধকারের কাছে।

ক্ষুধার তাঁতঘর কর্কশায় দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া

দু-কূল ভাঙে।

শুবোধ, আজ কষ্টে অসহায়,

ঘাতকেরা মিথ্যা চেরাগ জ্বালায় ক্রোধের গর্জনে।

==========================

 

আমার আমি

আলী আকবর বাবুল

 

আমি স্বাধীনতার লাল সূর্যে গড়েছি স্বপ্ন,

শোষিতের কান্না মুছে জাগিয়েছি আলো,

রক্তে লেখা ইতিহাস বয়ে চলেছি আজও,

গর্বিত আমি, আমার দেশ, আমার আলো।

 

আমি সাগরের গর্জন, আমি মাটির গান,

আমি বাউলের সুর, আমি কৃষকের প্রাণ।

সোনার বাংলার বুকে জ্বলেছি আগুন,

অন্যায়ের বিরুদ্ধে করেছি প্রতিরোধ স্থির।

আমি ভাষার জন্য দিয়েছি প্রাণ,

সংগ্রামের পথে রয়েছি অবিচল,

সাহসী বীরদের স্মৃতি বয়ে চলি,

গৌরবের পতাকা রাখি উঁচু করে।

আমি বাংলার হৃদয়, আমি চেতনার আলো,

স্বাধীনতার জয়গান গাই কাল থেকে কালো।

 

আমি পদ্মার ঢেউ, মেঘনার গর্জন,

আমি শ্যামল প্রান্তর, সজীব সংগীত

মুজিবের কণ্ঠে শুনেছি যে ডাক,

সে ডাকেই জেগেছে আমার মনোবৃত্তি।

আমি শহীদের রক্তে রাঙানো মাটি,

আমি বিজয়ের দীপ্ত আলোকবর্তিকা।

শোষকের শৃঙ্খল করেছি ভাঙন,

আমি সংগ্রামের অগ্নিশিখা।

আমি বাংলার মুখ, আমি স্বপ্নের দিশা,

আমি সোনার বাংলার চিরন্তন দিগন্তরেখা।

 

আমি বীরত্বের ধারায় বইছি নতুন গাথা,

প্রতিটি নিঃশ্বাসে বাজে মুক্তির অনন্ত ধ্বনি,

প্রাচীন ঐতিহ্যের মাঝে খুঁজে পাই নব স্বপ্ন,

আমি নবরাত্রির রঙে সেজেছি বাঙালির মন।

অন্তরের তালে গেঁথেছি ন্যায়বিচারের গান,

প্রত্যয়ের আগুনে জ্বলে চলেছি অটুট আর্তনাদ,

শুভ্র ইতিহাসের পাতায় লেখা সাহসের শিরোনাম,

আমি বাংলাদেশের হৃদয়ে জ্বলে বীরত্বের প্রেরণা।

সমাজের প্রতিটি কোণে বয়ে যায় অবিচল আশা,

স্বাধীনতার দীপ্তিতে আমার জীবন সুধা ও সুধাসার।

 

আমি সূর্যোদয়ের নতুন আলোর সুরে,

শত্রুর অন্ধকারে প্রজ্জ্বলিত মানবতার দ্যুতি,

আমি সৃষ্টির উজ্জ্বল স্বপ্ন, মুক্তির আগুন,

পথ চলার প্রতিটি ধাপে গাঁথা সাহসের গল্প।

অটুট আশায়, অনন্ত আশীর্বাদে ভরা,

নবপ্রভাতের আলোয় সোনার শপথ ঘোষণা,

আমার কন্ঠে বাজে বাউলের প্রাণবন্ত গান,

হৃদয়ের গভীরে প্রতিধ্বনিত জয় বাংলার সুর।

আমি পথিকের পায়ে নবোন্মেষের দিশা,

চিরন্তন বাঙালির গর্বে লিখছি নতুন ইতিহাস।

=============================

 

অপেক্ষার প্রলম্বিত ছায়া

জহিরুল হক বিদ্যুৎ

 

মগজের ভেতর প্রত্যাশার কুচকাওয়াজ

জেগে আছে বুভুক্ষু চোখ, তৃষ্ণার্ত হৃৎপিণ্ড

এখনো ঘুণপোকার কাছে বিধ্বস্ত

খেটে খাওয়া মানুষের সজ্জিত ওয়ারড্রোব

নেংটি ইঁদুর কেটে যায় মায়ের আঁচল

কিংবা বোনের শাড়ি কিংবা শিশুর ছোট বসন

অথচ গৌরবের সব সার্টিফিকেট জমা ছিল

মা-বোনের সম্ভ্রম ও সংগ্রামী চেতনার বেদিমূলে

প্রত্যাশা ও পূর্ণতা যেন সমান্তরাল সন্ধিক্ষণ,

মেঘের কোলে লুকানো চোখ যেন ধূধূ মরুভূমি

যুগযুগ কিংবা শত সহস্র বছর ধরেই

মুক্তি কিংবা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে,

কেউ দিয়েছে হাত কিংবা পা, কেউ বা চোখ

রাস্তায় পড়েছিল কারো দ্বিখণ্ডিত হৃৎপিণ্ড।

সব কষ্টের কোরাস এ ভূখণ্ডের দিগন্ত ছুঁয়েছে

তবু অপেক্ষা অন্তহীন, হাঁটছি প্রলম্বিত ছায়া ধরে।

=========================

 

মৃত্যু

শাহেদ সাদ উল্লাহ

 

যতদূর গেলে মানুষের কোনো চিহ্ন চোখে পড়ে না,

ততদূরে গিয়ে শুধু দেখেছি রাত্রি যেন জন্মান্ধ।

শীলা-ছায়ার ভেতর কেউ যেন রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন,

কেউ যেন রেখে গেছে ঘাসের উপর ডুমুরের ফুল।

 

চাঁদ শুধু থেকেছিল একা ডোবার জলে

আমার ভেতর থেকে যে-ফড়িং উড়ে-উড়ে,

উড়ে-উড়ে চলে গেছে, তার চোখের মতো

উজ্জ্বল ছিল বেদনাগুলো!

 

তবুও সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি একা চলে যাই

পরিত্যক্ত ডোবায়–যেখানে চাঁদ পড়ে আছে।

ছুঁয়ে দিই অরণ্যের চোখ

নতজানু আকাশে একটি তারা

অপার নিস্তব্ধতায় ম্লান হয়ে যায়

সফেদ  আলোগুলো চলে যায় সুবেহ সাদিকের দিকে।

আমি প্রদীপ নিভিয়ে রাখি,

দেখি একটি মৃত মাছ ভেসে উঠছে জলের ওপর!

দেখি একটি শুকনো পাতা আস্তে-আস্তে ডুবে যাচ্ছে সে-জলে।

 

মৃত্যু এক মৌনতা, ডুমুরের ফুল!

==========================

 

জলের নিচে স্বপ্ন

রাশিদা তিথি

 

পানির অন্তরালে কাঁপছে,

সে কি কোনো রঙিন ছায়া?

আমি চেয়ে থাকি

ইচ্ছে জাগে, বড়ো ইচ্ছে করে

ডুব দিই। একবার ছুঁয়ে আসি

কম্পমান স্বপ্নের গহন ।

 

সেখানে কি আধোঘুমে

একটি অস্ফুট কুঁড়ি?

আলোয় উঠতে গিয়ে

তার নিঃশ্বাস কি নিঃশেষ প্রায়?

নাকি এখনো সে আশান্বিত প্রতীক্ষায়?

 

হয়তো সেই কুঁড়ি

আলোর আকাঙ্ক্ষায় দিন গুনে গুনে

সময়ের বন্ধুর পথে পথ হারিয়েছে।

হয়তো ভালোবাসার হাত আলগা করে দিয়েছিল কেউ,

তাই বুঝি জলশয্যায় তার স্বেচ্ছা নির্বাসন!

 

তবু সাধ জাগে

ডুব দিয়ে দেখে আসি

সময় কি কেড়ে নেয় সব?

নাকি কোথাও এক ফোঁটা আলো

আজো প্রতীক্ষার রৌদ্র পোহায়?

 

=====================

শেষের পথে গাজা

আবদুল মোমেন

 

শেষ হয়েছে পুরো রাফা

শেষের পথে চলছে গাজা

আরব দেশের যত রাজা

দেখে দেখে নিচ্ছে মজা।

 

বোমায় বোমায় ধ্বংস নগর

সবদিক নির্জন নেই বাড়ি ঘর

বেড়ে চলছে লাশের সারি

বিশ্ববাসীর নেইরে খবর।

 

দেহাবশেষ পড়ে আছে

শকুনের দল খাচ্ছে ঠুকরে

বিশ্ব বিবেক ঘুমিয়ে আছে

মানবতা কাঁদছে ডুকরে।

 

জালেমরা সব এক হয়েছে

মুসলিম বিশ্বে দূতিয়ালি

ধুঁকে ধুঁকে মারছে তাদের

মুসলিমরা সব নির্বিবাদী।

 

===========================

 

হৃদয়ের গহীন কোঠরে

শারমীন আফরোজ

 

শহরটা  তোমার বা আমার নয়-

তবুও-

অনন্তকাল ধরে বসবাস করছি

তুমি আর আমি।

স্পর্শে নয়, অনুভবে।

 

আমিটা কোথায় যেনো,

হারিয়ে ফেলেছি।

তোমার অবহেলায়, নির্লিপ্ততায়।

তোমাকে বদলানোর সাধ্য

আমার ছিলো না,

তাইতো নিজেকেই বদলে নিয়েছিলাম।

 

প্রতিনিয়তই বদলের ফলে

তাল মিলাতে পারছিলাম না,

আমি আমার সাথে।

চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না আমার।

তবুও হারালে তুমি।

 

আমি জানি এভাবেই হয়তো খুঁজতে হবে

জীবনের অসমাপ্ত বাকিটা পথ,

কারণ সব ভালোবাসা ভালোলাগা

হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায় না।

খুঁজে নিতে হয় অনুভব আর অনুভূতিতে

রেখে দিতে হয় হৃদয়ের গহীন কোঠরে।

 

========================

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

মোঃ আসিফ ইকবাল

 

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

বীর বাঙালির ঠিকানা

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

আমাদের অস্তিত্বের নিশানা।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

আমার চেতনার স্মারক

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

আমাদের ইতিহাসের বাহক।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

আমাদের গৌরবদীপ্ত অর্জন

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

শহীদের জীবন বিসর্জন।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

বাঙালির হাজার বছরের সাধনা

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম সীমানা

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

বীর বাঙালির শ্রেষ্ঠ ইতিহাস

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

লাখো রক্তস্রোতের এক উপন্যাস।

কাজী নজরুল ইসলাম : বাংলা সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণপুরুষ

আ.ম.ম. মামুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামই প্রথম মৌলিক কবি। রবীন্দ্র অনুবর্তী একগুচ্ছ কবির একজন তিনি নন। তিনি অন্যরকম স্বতন্ত্র। শিল্প সাধনায়,

আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ 

প্রবীর বিকাশ সরকার ১৯২৯ সালে বহির্বিশ্বে অবস্থানকালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে ঘটেছে যুগপৎ দুঃখজনক এবং আনন্দদায়ক কিছু ঘটনা। যা নিয়ে বাংলায় সামান্যই আলোচনা হয়েছে, অথবা

হিংস্র ও বুনো অপশক্তির বিনাশ চাই

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় গ্রীষ্মকালটা বড়ই অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এই ঋতুটির তেজ আগে কখনও এত তীব্র ছিলো না। ইতোমধ্যেই