রৌদ্রের মতো সমুজ্জ্বল
অধরাকে বলছি ….
সবাই বদলায় পার্থিব সুখে – দুখে, অমাবস্যা- পূর্ণিমায়
আমি রয়ে গেছি ঠিক পঁচিশ বছরের বসন্ত সাম্পানে
রৌদ্রের মতো সমুজ্জ্বল এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীতে।
অবয়ব দেখে বুঝার সাধ্য নেই কারো
এই আমি এখনও যুগল পাখির আলিঙ্গন দেখে
পথের বাঁকে চমকে উঠি প্রাণবন্ত এক হরিণের মতো।
অধরাকে বলছি ….
কোনো ভুলের কাঁটায় আমাকে আহত করোনা
লৌকিক বাড়ি নির্মাণে তৃষ্ণাকাতর হয়ে যতোদূর যাই ,
প্রাপ্তি সব হারায় কালের মুক্তধারায়
কেবল অবশিষ্ট থাকে নিসর্গ, মায়াবতী রমণীর মায়াটান।
অধরাকে বলছি ….
নিন্দার ঝড়ে ভেঙোনা আমার স্বপ্নবিলাস
আমি আজন্ম তোমাকে পৌরুষের গল্প শুনিয়ে যাবো
স্মৃতির ভূমিতে জন্ম নেবে নতুন নতুন রিলকের গোলাপ।
রবীন্দ্রনাথ
আমি এক ছোট্ট ডুবুরি, জল সেচে নিভৃতে নিশীথে
সমুদ্রের অতলে মুক্তা কুড়াবার সাধ্য নেই আমার
বোধের নিরিখে পেয়েছি যা, সাবলীল সুন্দর হীরকতূল্য।
কষ্ট ভুলতে চেয়ে সে গড়েছিল শান্তি নিকেতন
তবু অশান্তির দহনে পুড়ে নিজকে অঙ্গার করেছে একা
কাঁটালতার আলিঙ্গন থেকে মুক্তি পায়নি কখনও।
ইৃদপিণ্ডের দাগ মুছতে চেয়ে জল ডুবুডুবু পদ্মার চরে
সোনার নৌকো ভাসিয়ে শুনেছিল লালনের বিচ্ছেদ
বাড়ির পাশে খুঁজেছিল আরশিনগর, মুক্তি মেলেনি তার।
সুখের অলিরা বারবার এসে বসেছিল সুদুরের শাখায়
ফিরে গেছে বারবার গলায় পরিয়ে বিরহের কণ্টকমালা
চেয়েছিল যা কিছু রবি , কর্পুরের মতো উড়ে গেছে সবই।
পুষে গেছে সারাজীবন বেদনার ভার;
অক্টোপাসের মতো চারপাশে ছিল গহীন আঁধার।
বৃষ্টিভেজা রাতের বাঁশরী
দূর থেকে দেখতে পাই নিঃশব্দ
কত সুখ তোমার বাড়ির দহলিজে উড়ছে অনুপম!
ভুলে গেছো নদীর জলে দোল খাওয়া সাম্পান স্মৃতি
ভুলে গেছো কবির কবিতা ‘ একটু দাঁড়াও সুমিত্রা ‘
আড়িয়াল খাঁর জলে সাঁতার কাটা ইস্টিমারের শিস।
আমি কিছুই ভুলিনি
জোছনাবনে দাঁড়িয়ে বুকে জড়ানোর সুখ
রমনার উদ্যানে বকুল ফুলের শুভ্র মাতাল ঘ্রাণ
রাতের দ্বিপ্রহরে তোমার গাওয়া নজরুলের গান
লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া………..
এইতো আমার বিরহ জাগানিয়া পৃথিবী!
চারদশক আগে প্রজাপতির মতো যে রঙ ছড়িয়ে গেলে
সেই রঙের দ্যুতি আজো আমাকে পোড়ায়
সেই রঙের পূজারী হয়ে আজো শুনতে পাই একা
বৃষ্টিভেজা রাতের বাঁশরী।
দিগন্তরেখা
আমি একা নই,
অপেক্ষায় থাকে রঙিন পৃথিবীর বিচিত্র মানুষ
কেউ ভালোবেসে অফুরন্ত ভালোবাসা পেতে
কেউ আকাশ ছোঁয়া সম্পদের টাওয়ার বানাতে
আবার কেউ অপেক্ষায় থাকে অনন্য ধ্যানে
অদৃশ্য সিঁড়ি বেয়ে সাত আসমানে পৌঁছার জন্য।
শুধু মানুষ কেন? বৃক্ষেরাও অপেক্ষায় থাকে
মাটির নির্যাস লুট করে ডালপালার সাম্রাজ্য বাড়াতে
সমুদ্রও অপেক্ষায় থাকে কবে ফুঁসে উঠবে
কবে প্রলয় স্রোতে ভাসাবে জনপদ,পাপের আধার ।
অগনন রাত্রি জেগে আমিও অপেক্ষায় আছি
একটি কবিতার জন্য, যে কবিতাটি লেখা হলে
সৃষ্টির দ্যুতিতে যোগ হবে স্বর্ণকস্তুরী এবং
কাল আমাকে নিয়ে যাবে মহাকালের দিগন্তরেখায়।