লোকটা দাঁড়িয়েছিলো
লোকটা দাঁড়িয়েছিলো সবার সাথে
যাঁর যাবার কথা ছিলো আগুনে কিংবা সমুদ্রে।
লোকটা তারুণ্যের স্পর্ধায়
পথরোধ করে
আমাদের জ্বলতে ও জ্বালাতে বলেছিলো
অথচ লোকটা সবার অলক্ষ্যে লুকিয়ে রেখেছিলো
দহনের এক নদী
অথচ আমরা পুড়তে পুড়তে
ছাই থেকে ভস্মে রূপান্তরিত হলাম
লোকটা দাঁড়িয়েছিলো
শেওলাজলে ডুবুরি হয়ে তারপর উধাও
শুধু বাতাসে অদৃশ্যে রয়ে গেলো
তার স্মৃতিচিহ্ন অগোছালো অবয়ব আর
শরীরের সুগন্ধ
জ্বলন্ত শেওলার ঘ্রাণ
[২]
এখন এখানে বৃষ্টি হয় না, কান্না ঝরে
এখন এখানে বৃষ্টি হয় না!
অবিরত কান্না ঝরে
পাল্টে গেছে বিজ্ঞাপনের ধরন
দেখতে হয় সবকিছু উল্টো করে
আলো আঁধারের উৎস
সত্য মিথ্যার তফাৎ
ইতিহাস ঐতিহ্যের বয়ান
এমনকি সম্পর্ক-বুনন
এখন এখানে বৃষ্টি হয় না!
অবিরত কান্না ঝরে
আজকাল পাল্টে গেছে
অভিবাদন অভিনন্দন
সমাদর সম্ভাষণের তাবৎ রীতিনীতিও
অতএব এখন দেখতে হয় সবকিছু
উল্টো করে উল্টো চোখে
কেননা এখন হাতে ভর দিয়ে হাঁটছে মানুষ
সদরে চৌরাস্তায় বেমালুম বেশরম
এখন এখানে বৃষ্টি হয় না!
অবিরত কান্না ঝরে
এখন সবই স্বাভাবিক
ধর্ষণের শোভাযাত্রায় ফুলেল শুভেচ্ছা কিংবা
ধর্ষকের গলায় সসম্মানে মালা পরায় ধর্ষিতা মায়ের সন্তান
এখন এখানে বৃষ্টি হয় না!
অবিরত কান্না ঝরে
[৩]
মানুষও এক নদী, বহে নিরবধি
আমাদের প্রতিটি ক্ষণ জন্মের
আমাদের প্রতিটি ক্ষণ মৃত্যুর
আমাদের প্রতিটি ক্ষণ সৃষ্টি ও সৃজনের
আমাদের প্রতিটি ক্ষণ প্রলয় ও বিনাশের
আমাদের প্রতিটি ক্ষণ আলোর সংকেত
সম্মুখে এগিয়ে যাবার
আসলে মানুষ
পৃথিবীর সমান বয়সী এক নদী
প্রাণের স্পন্দন আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসে—
বহে নিরবধি
[৪]
অলৌকিক যাত্রা
রাতের বাস চলছে—
সারিবদ্ধ আলোর মিছিল
মনে হয় যাত্রী আমি দূরগামী নক্ষত্রযানের
রাতের বাসে অচেনা মানুষের ভিড়
নিজেকে মনে হয় ভিন গ্রহের কেউ, কিংবা
ধূসর আলোয় ধূলিমাখা অস্বচ্ছ কুয়াশা-কণা
শূন্যে ভেসে বেড়াই নক্ষত্র-আলোয় অপরিচিতজন
রাতের বাস থামে, যাত্রী নামে
এক-একজন ঝরে পড়া নক্ষত্র-কণা
ছুটছে আলোর বেগে নতুন কোনো গন্তব্যে
ভাবি, আমিও—
হাতের মুঠোয় এক টুকরো পৃথিবী—
জ্বলন্ত এবং ঘূর্ণায়মান এক অগ্নিগোলক
অন্ধকারে আলো হয়ে ছুটছি— নিরুদ্দেশ যাত্রায়